Thikana News
০৪ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪

ভারত-যুক্তরাষ্ট্র কেমিস্ট্রি বিশ্বকে কোথায় দাঁড় করাবে

ভারত-যুক্তরাষ্ট্র কেমিস্ট্রি বিশ্বকে কোথায় দাঁড় করাবে
বাংলাদেশের ৭ জানুয়ারির নির্বাচন থেকে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের একটা নতুন কেমিস্ট্রি বিশ্ববাসী লক্ষ করে আসছে। ভারতে মোদির নির্বাচনী বক্তব্য মুসলিমদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট উসকানি বলে মনে করা হচ্ছে। আর মনে না করার কারণও নেই। ভারতে নির্বাচন চলমান। সেখানে চরম সাম্প্রদায়িক দল মোদির বিজেপি অংশ নিচ্ছে এবং গণভাবনায় এবারও মোদির বিজেপির জয়ের সম্ভাবনা অধিক। নির্বাচনে বিশ্লেষকদের মতে, গতবারের চেয়ে আসন কিছু কম হলেও, ক্ষমতা বিজিপির হাতেই যাবে।

ইতিমধ্যেই ভারতের দুবারের প্রধানমন্ত্রী দমোদর নরেন্দ্রনাথ মোদি মুসলমানদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিতে শুরু করেছেন। এই বক্তব্যের পক্ষে দু-একটি ঘটনাও ঘটতে দেখা যাচ্ছে, যাতে করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে মোদির বক্তব্যের জেরও দেখা যাচ্ছে। মোদিজি কোনো পর্দা না রেখেই বলে যাচ্ছেন, কংগ্রেস যদি ক্ষমতায় ফিরে আসে এবং একই সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসে প্রার্থী হয়, তবে হিন্দুরা সহায়-সম্পত্তি হারাবে এবং দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত হবে। কংগ্রেস যদি ক্ষমতায় আসে, তবে হিন্দু নারীদের সব অলংকার খুলে নেওয়া হবে। এ ছাড়া বাঙালিরা বহিরাগত-এমন মন্তব্য তো বিজেপির রয়েছেই। এসব বক্তব্যে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, নেপালের পরিস্থিতিও উত্তপ্ত হয়েছে। মালদ্বীপে ইতিমধ্যেই অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভারতের বিরুদ্ধে চীনপন্থী রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ মুইজ্জুর পিএনপি পার্টির ভূমিধস বিজয় হয়েছে। এই বিজয়ে ভারতের একটি বিশ্বস্ত মিত্র, যারা এত দিন ভারতের পক্ষ নিত বলে প্রচারণা ছিল, সেই প্রতিবেশী মালদ্বীপ এখন ভারত থেকে সরে গিয়ে চীনের পক্ষে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা অবশ্যই বৃদ্ধি পেল। দক্ষিণ এশিয়ার জটিল ভূ-রাজনৈতিক অবস্থায় প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু শেষতক কতটা সফল হবেনÑএ প্রশ্ন থাকা সত্ত্বেও এটি ভারতের জন্য ছোট হলেও একটি থ্রেট হয়ে থাকল।

অন্যদিকে মোদির বিজয় হলে সেটা প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ হয়ে সামনে এসে দাঁড়াবে। বিশেষ করে, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোয় বিশেষ প্রভাব পড়বে বলে অভিজ্ঞজনদের অভিমত। একটি বিষয় সুস্পষ্ট, ভারত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ‘দাদাগিরি’ করতে চায়। তারা চায়, এ অঞ্চলের সব দেশ ভারতের বশ্যতা স্বীকার করে চলুক। ভারতের সহযোগিতা যদি না পাওয়া যায়, তবে দেশগুলোর চরম বিরোধিতার মুখে পড়ার শঙ্কা থাকবে। না মানলেই বিপদ। বিপদ মানে মহাবিপদ। বলা হয়, ভারতের পররাষ্ট্রনীতি চলে চাণক্য দর্শনে। এই চাণক্য দর্শন হচ্ছে নিজ দেশ, নিজ নীতি, দর্শন ছাড়া অন্য আর কিছু নেই তাদের কাছে।

বিশ্ব পরিসরে যেমন ‘আমেরিকা গ্রেট’-সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বজ্রনিনাদ ঘোষণা, তেমনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ‘ভারত গ্রেট’-এটাই মোদি গংদের বিশ্বাস। সেই বিশ্বাসের আলোকেই ভারতের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালিত হয়। সেই দর্শন ‘বলা যায়’ অনেকটাই আশপাশের জনপদকে পদানত করে রাখা। বাংলাদেশে তাদের হস্তক্ষেপ অনেকটাই প্রকাশ্য। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব থেকে শুরু করে ভারতের রাষ্ট্রপতিকে পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে দেখা যায়। সে হস্তক্ষেপ অনেকটা উলঙ্গ হস্তক্ষেপ। একজন সাধারণ মানুষও সাদা চোখে দেখতে পায় এবং এ বিষয়ে তারা এতটাই বেপরোয়া যে পরবর্তী সময়ে তাদের লিখিত গ্রন্থেও প্রকাশিত হয়ে থাকে, তাতে তাদের কিছু যায় আসে না।

এ কারণে দেখা যায়, ভারত সরকারের সঙ্গে আমাদের সরকার যতটা ঘনিষ্ঠ, জনগণের ততটা সম্পর্ক দেখা যায় না। ভারত আমাদের সবচেয়ে বড় এবং সব দিক থেকে পরাক্রমশালী। তাই হয়তো তাদের কোনো কিছু পরোয়া করার নেই। তবে এ রকম সম্পর্ক অর্থাৎ বৃহৎ শক্তির প্রতিবেশী দেশগুলোকে তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করে রাখার পরিণতি শেষ কথায় খুব ভালো হয় না। ভারতের চেয়ে অনেক ক্ষমতাধর দেশ আমেরিকা। আমেরিকা বিশ্বজুড়ে দাপট দেখিয়ে বেড়ালেও প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতে দেখা যায়। কখনো দাদাগিরি দেখানোর চেষ্টা করে-এমনটা কখনো দেখা যায় না।

আমেরিকার সঙ্গে তার প্রতিবেশীদের যে রকম সম্পর্ক দেখা যায়, তা আর কোনো বৃহৎ রাষ্ট্রের সঙ্গে তার প্রতিবেশীদের দেখা যায় না।
প্রতিবেশী হোক, না হোক, সব বৃহৎ দেশের সঙ্গে অন্য সব দেশের সুসম্পর্কটাই সভ্যজগতের সব মানুষ আশা করে। জোর করে, ভয় দেখিয়ে প্রতিবেশী কোনো রাষ্ট্রের কিছু আদায় করে নেওয়াটা প্রত্যাশিত নয়। বর্তমান সময়ে ভারতের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের প্রবণতা যেমন লক্ষ করা যায়, আর কোনো দেশের মধ্যে তা দেখা যায় না। ভবিষ্যতে ভারত সব প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
 

কমেন্ট বক্স