Thikana News
০৪ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪

বাঙালির চাওয়া-পাওয়া

বাঙালির চাওয়া-পাওয়া
বাঙালির বড় বড় যত উৎসব উদ্্যাপন আছে, তার মধ্যে অন্যতম বৃহৎ জাতীয় উৎসব এবং একই সঙ্গে অসাম্প্রদায়িক উৎসব পহেলা বৈশাখ। বারো মাসের মধ্যে মনে হয় একমাত্র বৈশাখের আহ্বান সবাই বরণ করে নিই। বৈশাখ নতুন একটা বছরের শুরুর মাস বলে তার কাছে আমাদের প্রত্যাশাও থাকে অনেক। আমরা তাই উৎসবমুখর পরিবেশে সমস্বরে গেয়ে উঠি : ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো...।’ আমরা অন্তর থেকে গাই: ‘মুছে যাক গ্লানি, মুছে যাক জরা। অগ্নিস্নানে সূচি হোক ধরা।’
সেই শত প্রত্যাশার বৈশাখ এল এবং চলেও যাচ্ছে। প্রত্যাশা কি বাঙালিদের পূরণ হবে? যদি অতীতের অভিজ্ঞতার দিকে চোখ তুলে চাই, সেই অভিজ্ঞতা থেকে আশা বা আনন্দের বেশি একটা কিছু মেলে না। গ্লানি মুছে যায় না, জরাও ঘোচে না। সূচিও ধরা দেয় না। এভাবেই চাওয়া এবং না-পাওয়ার ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়েই বৈশাখ শেষ হয়, বছরও শেষ হয়। সেই যা, তাই। বাঙালির, বলা যায়, দৈনন্দিন জীবনচক্র। হালখাতা হয় পহেলা বৈশাখে। হালখাতায় কিছু পুরোনো বাকি উশুল হলেও সমষ্টিগতভাবে কোনো উন্নয়ন চোখে পড়ে না তেমন একটা। পুরনো প্রত্যাশা উশুল হয় না। 
বাঙালি জাতি হিসেবে যেমন উদারত্ব, মানবিকতা, পরোপকারী এবং প্রয়োজনে বীরত্বের পরিচয় দিতে পারে, পরিবেশ, প্রকৃতিপ্রেমের নিদর্শনও রাখতে পারে। অতীতে বাঙালি এসবের অনেক উদাহরণ রেখে এসেছে। ইতিহাস, কবিতা, গান, নাটকেও বাঙালিদের এসব মানবিক গুণের অনেক পরিচয় মিলবে। বাঙালিদের আরেকটি বড় গুণÑকারও বশ্যতা বা অধীনতা, অন্য কথায় পরাধীনতা মেনে না নেওয়া। বাঙালিরা দারুণভাবে স্বদেশপ্রেমী। তারা জান দেবে, তবু মান দেবে না। বাঙালিদের যেমন মন বর্ষায় নরম মাটি, ঠিক তেমনি চৈত্রে কঠিন মাটি। বাঙালিরা যুদ্ধও কম করেনি। ১৯৫২, ১৯৬৯-এর যুদ্ধ, ৭১-এ ‘স্বর্গের চেয়ে প্রিয় জন্মভূমি’র স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ। সেই যুদ্ধে পাকবাহিনীর কী নির্মম বর্বরতা!
প্রিয় জন্মভূমির অবকাঠামোগত প্রভূত উন্নয়ন হয়েছে। আহারে সোনার দেশ আমার! কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান মিলে ১৯ বা ২১ পরিবারের বিরুদ্ধে আমরা ‘নিপাত যাক’ স্লোগান দিতাম। কিন্তু সেই শোষকচক্রের সংখ্যা এখন হাজার হাজার। স্বাধীন কোনো দেশের প্রাথমিক লুটতরাজ শুরু হয় এভাবেই। তাই বলে এতটা! গুটি কয়েক মানুষ সব সম্পদ লুটে নেবে? বাজারে যেকোনো পণ্যে হাত দেওয়া যায় না, পুড়ে যায় হাত! কারও সন্তানেরা ভালোমতো খেতে পায় না, ঈদ-পূজা-পার্বণে একটা ভালো পোশাক পায় না। অনেক মানুষ জাকাত-ফিতরার অর্থ নিতে গিয়ে পিষ্ট হয়ে মৃত্যুবরণ করে।
কিন্তু স্পষ্ট বোঝা যায়, জরাও ঘোচেনি, গ্লানিও ঘোচেনি। অতীতে বড় বড় ব্যবসা-বাণিজ্য করে ধনী হতে জীবনপাত করতে হতো। এখন? আলু-পটল, তেল-নুনের ব্যবসা করেও বড়লোক! রাজনীতি, আমলাগিরি করেও হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ! শুধু এতে সিন্ডিকেট, ওতে সিন্ডিকেট শোনা যায়। দেখা যায় না, নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। শুধু বড় বড়, ক্ষমতাবান মানুষের মুখেই শোনা যায়। বাংলাদেশের মুদ্রার মূল্য বিশ্ববাজারে ভবিষ্যতে গ্রহণ করতে কি-না ভাবনার বিষয়। বাংলাদেশের মুদ্রার অভাব। অথচ বিদেশে বাঙালিদের ‘এ পাড়া-ও পাড়া’। বয়ান আরও দেওয়া যাবে। কিন্তু লাভ কী? আজ যা, কালও তা!
বাংলাদেশে ধনী হতে কোনো ওষুধ-মন্ত্র লাগে না। কেবল লাগে কপাল। আজ যা, কালও তা-ই।
 

কমেন্ট বক্স