Thikana News
০৪ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪

মৃত্যু সত্য জেনেও মৃত্যুকে বরণ করে নিতে ভয় হয়

মৃত্যু সত্য জেনেও মৃত্যুকে বরণ করে নিতে ভয় হয়
মৃত্যু নিয়ে বলার কিছু নেই। সব সময় মৃত্যু সঙ্গে সঙ্গে চলে। কোন মানুষের কখন মৃত্যু হবে-এ কথা কোনো ধর্মগ্রন্থে কিংবা কোনো বিজ্ঞানী বলতে পারেননি। ভবিষ্যতেও কারও পক্ষে বলা সম্ভব হবে না। মৃত্যু চরম সত্য, পরম সত্য। মৃত্যু চরম সত্য হলেও সব মরণকে একশ্রেণিতে ফেলা যাবে না। মানুষের জীবনকে যেমন একশ্রেণিতে ফেলা যাবে না, ঠিক সে রকমই। ভালো-মন্দ, উত্তম-অধম, উৎকৃষ্ট-নিকৃষ্ট, কল্যাণকামী-অকল্যাণকামী, উপকারী-অনুপকারী। কেউ মানুষের কর্মকে ধ্বংসমূলক, অনেকের সৃষ্টিকে ধ্বংসমূলক বলে শ্রেণিবদ্ধ করে থাকে। কারও মৃত্যুকে পাহাড়ের মতো ভারী এবং কারও মৃত্যুকে পাখির পালকের মতো হালকা বলে মনে করা হয়। নিউইয়র্কে বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে বেশ কজন কল্যাণকারী, পরোপকারী মারা গেছেন এবং একজন সম্ভাবনাময় তরুণের মৃত্যু ঘটেছে। যারা প্রবীণ, তারা আমাদের প্রবাস সম্প্রদায়কে অনেক দিয়েছেন। বেঁচে থাকলে আরও দিতে পারতেন। আমাদের দুর্ভাগ্য, তাদের মৃত্যুতে আমরা বাঙালি, বাঙালি কমিউনিটির মানুষ হতভাগা, তাদের কল্যাণকর কর্ম থেকে বঞ্চিত হলাম। তিনি একজন বর্ণাঢ্য চরিত্রের মানুষ ছিলেন। তিনি গত ২৪ মার্চ হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করলেও নয়, বাংলাদেশের মানুষকেও কাঁদিয়ে চলে অনেক দিন থেকেই হৃদরোগ, ডায়াবেটিস রোগে ভুগছিলেন। তিনি অনেক সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। কমিউনিটির অনেকেই জানতেন, বিশেষ করে 'দি অপটিমিস্ট'র সঙ্গে তার সম্পর্ক কমিউনিটির অনেকেই প্রত্যক্ষ করতেন। প্রফেসর সারোয়ার বি. সালামের কর্ম সম্পর্কে আমাদের কমিউনিটির যথেষ্ট পরিচয় ছিল। ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়েও তাকে অপটিমিস্টের অনুষ্ঠানে দেখা যেত। শেষের দিকে সবাই বেশ বুঝতে পারতেন, তিনি অসুস্থ। আসলে যারা অন্যের জন্য নিজেদের সমর্পণ করেন, তারা নিজেদের ব্যক্তিগত অবস্থার কথা ভুলেই নিজেদের উৎসর্গ করেন। মৃত্যুকে তুচ্ছজ্ঞান করেন। আমাদের কমিউনিটির আরেকজন ড. আবু সু-ফিয়ান খন্দকার। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পানি বিশেষজ্ঞ। দেশে দেশে তিনি বাংলার লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়ে গেছেন। বাঙালির গর্বের নামগুলো কেমন যেন হারিয়ে যাচ্ছে। সব না-ফেরার দেশে। বাংলার হয়ে একজন ড. খন্দকার বিশ্বজুড়ে বাংলার আলো ছড়িয়ে গেছেন। আজ সেসব আলোকে যেন ধীরে ধীরে অন্ধকার গ্রাস করছে। ড. খন্দকারও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে.... প্রবাস বাঙালি শুধু আরেকজন আন্তর্জাতিক পরিসরের সক্রিয় মানবাধিকার কর্মী হিসেবে সক্রিয় নেতা হিসেবে তৈরি হচ্ছিলেন। তিনি শহিদুল ইসলাম তালুকদার। তিনি গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। মানবাধিকারকর্মী ছাড়াও তার কর্মক্ষেত্র তিনি সাফল্যের সঙ্গে গড়ে তুলছিলেন। কিন্তু তিনিও তার প্রিয় প্রবাস কমিউনিটিকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন। ব্রুকলিনে এক সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হন। নাসাউ কাউন্টি মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে চলে গেলেন জীবনের ওপারে। কমিউনিটির এত পরিচিত, এত প্রিয় শুভানুধ্যায়ী-কেউ ধরে রাখতে পারল না শহিদুল ইসলামকে। আরেকজন তরুণ তুর্কি রায়ান ইফতেখার জামান। বয়স মাত্র ২৯ বছর। দীর্ঘ জীবন তার সামনে। চোখে নিজের কী স্বপ্ন এঁকে চলেছিলেন কে জানে? তার পিতা কৃষিবিদ ও একজন কমিউনিটি নেতা আশরাফুজ্জামান এবং মা মোর্শেদা জামান। দুজনই রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনে সক্রিয় ছিলেন। এমন তরুণের মৃত্যু পিতা-মেঘে বজ্রপাতের মতো।
মাতা, স্বজনদের মাথায় আকাশ ভেঙে বিনা গেলেন না-ফেরার দেশে। আমরা যেন আন্তর্জাতিক বিশ্বে অভিভাবকহীন-প্রতিনি- ধিত্বহীন হয়ে পড়ছি।
রায়ানের মৃত্যু কীভাবে হলো তা পরিষ্কারভাবে এখনো জানা যায়নি। তবে হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রায়ানের মৃত্যু হয়েছে। গত ১৪ মার্চ দুপুরের পর থেকে রায়ানের বাবা-মা তার খোঁজ পাচ্ছিলেন না। কর্মস্থলে যারা রায়ানের সহকর্মী, তাদের ফোন করে জানেন, তিনি ওইদিন কাজে যাননি। আত্মীয়-স্বজনদের ফোন করেও কোনো খোঁজখবর পাওয়া যাচ্ছিল না রায়ানের। গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সময় কাটতে থাকে পিতা-মাতার। একপর্যায়ে বাবা-মা খুঁজতে খুঁজতে বাড়ির গ্যারেজে, রায়ানেরই হাতে গড়া ব্যায়ামাগারের মেঝেতে, রায়ানের নিথর দেহ পড়ে আছে দেখতে পান!
মৃত্যু স্বাভাবিক হলেও এসব মৃত্যু মেনে নেওয়া সবার পক্ষেই কঠিন। যেকোনো মৃত্যুই কষ্টের। বাবা-মায়ের পক্ষে সন্তানের মৃত্যু সহজে মেনে নেওয়া প্রচণ্ড কঠিন। আমাদের সবারই দোয়া-প্রার্থনা, মৃতরা সব আজাব থেকে মুক্তি পাক। জান্নাতবাসী করুন মানুষের মহান স্রষ্টা, সর্বশক্তিমান আল্লাহ আলামিন। প্রিয়জনহারা স্বজনদের শোক সইবার শক্তিদান করুন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন।

কমেন্ট বক্স