Thikana News
০৪ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪

বাংলাদেশের ৫৩তম স্বাধীনতা দিবসের  আলোয় সব আঁধার কেটে যাক

বাংলাদেশের ৫৩তম স্বাধীনতা দিবসের  আলোয় সব আঁধার কেটে যাক
যেকোনো জাতির জীবনে স্বাধীনতার চেয়ে বড় কিছু নেই। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের বয়স হচ্ছে ৫৩ বছর। ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। এই দিবসটিতে বাঙালি জীবনে যেমন একদিকে আনন্দের ঢেউ বয়ে যায়, ঠিক অন্যদিকে তেমনি বিষাদের ঘন অন্ধকার। ‘যারা স্বর্গত, তারা এখনো জানে, স্বর্গের চেয়ে প্রিয় জন্মভূমি’। ৩০ লাখ মানুষের জীবন এবং দুই লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতা যেন এই বিপুল ত্যাগের চেয়েও দামি।

এ কথা আমরা সবাই জানি, রক্ত দিয়ে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে, তা রক্ষা করার অঙ্গীকার নিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি প্রায় ১৮ কোটি বাঙালি। এগিয়ে চলেছি অনাদিকালের রথে চড়ে। আমরা জানি না সামনে কী আছে। যা-ই হোক, আমাদের পেছন ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। অনেক রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে, অনেক ভয়কে জয় করে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতার ইতিহাসকে বাঙালিদের জীবন দিয়ে, সম্ভ্রম দিয়ে জয় করতে হয়েছে। কত শত বছরের ধারাবাহিক নিপীড়ন, নির্যাতন, অপমান, বঞ্চনা, মা-বোনদের সম্ভ্রম দিয়ে যে স্বাধীনতা আমাদের অর্জন করতে হয়েছেÑসে ইতিহাসের সব পৃষ্ঠা আজও আমাদের পড়া হয়েছে বলে ঠিক মনে হয় না।

যদি তা হতো, তাহলে এ-ও বলা যায়, বাঙালির সর্বস্ব ত্যাগ করে পাওয়া স্বাধীনতা নিয়ে আজও কিছু মানুষরূপী চক্রের হিংসা-বিদ্বেষ, বীর বাঙালিদের কিছু অমানুষরূপী চক্রের কর্ম আমাদের দেখতে হতো না। তাহলে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট দেখতে হতো না। দেখতে হতো না জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর রক্তে ভেজা লাশ। দেখতে হতো না শিশু রাসেলের মৃত্যু। ইতিহাসের সবচেয়ে ঘৃণ্য কাজ আমাদের দেখতে হতো না। সব স্বাধীনতাসংগ্রামই রক্ত বিনে অর্জিত হয়নি। কিন্তু স্বাধীনতার জন্য বাঙালিদের যে লড়াই, যে সংগ্রাম করতে হয়েছে, তার তুলনা ইতিহাসে মেলা ভার।

বলা হয়ে থাকে, বাঙালিরা যেমন নরম, তেমনি গরম। বর্ষায় যেমন নরম ভেজা মাটি, চৈত্রে ঠিক উল্টো। মাটি আর মাটি থাকে না, হয়ে যায় ইটের মতো কঠিন, শক্ত। তাই যেমন বিনীত, তেমনি বিদ্রোহী। স্বাধীনতাসংগ্রামে শহীদ হয়েও বাংলার মানুষ মুক্তিযুদ্ধে দিশেহারা হয়নি। শত্রুর মোকাবিলায় পিছু হটেনি। বাঙালিরা ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বে পাওয়া পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকেই শোষিত ও বঞ্চিত হয়ে আসছিল। সবকিছু মেনে নিয়ে তবু একসঙ্গে থেকে সত্যের পরীক্ষা দিয়েছে বাঙালিরা। কিন্তু প্রথমেই যখন বাংলা ভাষার ওপর আঘাত হানল স্বয়ং মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং ১৯৫২ সালে সালাম, রফিক, শফিক, জব্বার, বরকতসহ বহু বাঙালির রক্তে যখন পাকিস্তানের দুই ডানার একটি ডানার পরিণতি অনুধাবন করল, তখন রাজনৈতিক কলাকৌশলও পাল্টে ফেলা হলো। তখন নতুন নীতি, নতুন কৌশল। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলন শুরু হলে নতুন নেতারও মঞ্চে আবির্ভাব ঘটল। তিনি শেখ মুজিব। পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু। তারপর জাতির পিতা। তখন বাঙালির সামনে নতুন স্বপ্ন, নতুন আশা। স্বাধীনতা চাই বাঙালিদের। প্রস্তুত হতে থাকেন নেতা। সঙ্গে নতুন সংকল্পে ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে জনতা। চূড়ান্ত লড়াই ১৯৭১-এ। ৭ মার্চ চরম ঘোষণা নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের : ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ রণবাদ্য বেজে গেল। বাঙালিদের মুক্তিযুদ্ধ। ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর। ৩০ লাখ বাঙালির জীবন বিসর্জন। দুই লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রমহানি। কিন্তু বাঙালি জাতি আর মানে না। জয় বাংলার জয়। স্বাধীন বাংলাদেশ।

বাঙালির স্বপ্ন গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। বাংলাদেশ আজ বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের রোল মডেল। বৃহৎ বৃহৎ দৃশ্যমান পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী ট্যানেল। মেগা মেগা প্রকল্প। সাত লাখ কোটি টাকার বাজেট। গ্রাম-বাংলার গ্রাম উধাও। সর্বত্র নগর উন্নয়নের ছাপ। তবু কিছু প্রশ্ন নাগরিক সমাজে। বাংলার মানুষ পেয়েছে অনেক। কিন্তু মৌলিক কিছু প্রশ্ন তাদের রয়ে গেছে। গণতন্ত্রের পূর্ণ বিকাশ এখনো ঘটেনি। ঘুষ, দুর্নীতি, অর্থপাচার অনিয়ন্ত্রিত। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে।

বর্তমান সরকার টানা চতুর্থ টার্ম ক্ষমতায়। তারা বঙ্গবন্ধুর দল। মুক্তিযুদ্ধের দল। বর্তমান সরকারেরও দল। এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনা। এই দল এবং সরকারের কাছে গণপ্রত্যাশা তাই বেশি। আমরা প্রত্যাশা করিÑএই সরকার সেসব খামতি পূরণে এবার মনোযোগী হবে। মানুষের সর্বাধিক ভালোবাসা ও আস্থা অর্জন করতে পারবে। ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়, তবে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে কর্ম দিয়ে।
স্বাধীনতা দিবস উদ্্যাপন সফল হোক। ঠিকানার পক্ষ থেকে প্রবাসী-স্বদেশি সবাইকে স্বাধীনতার শুভেচ্ছা।

কমেন্ট বক্স