কেউ বিশ্বাস করুন, আর না-ই করুন, প্রবাসীরা নিজের দেশ বা মাতৃভূমিকে একটু বেশী ভালোবাসেন। দেশের খারাপ খবরে তারা ব্যথিত হন। দেশের জন্য তাদের মন কাঁদে। শুধু রেমিট্যান্স পাঠিয়ে নয়, দেশের যে কোনো দুঃসময়ে প্রবাসীরা পাশে দাঁড়ান। এবারের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায়ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা প্রায় দুই কোটি প্রবাসী নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। বাড়িয়েছেন সাহায্যের হাত।
গত কয়েক দিন ধরে নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রে দুই শতাধিক বাংলাদেশি সংগঠনসহ সমবেত প্রবাসীরা বড় বড় শহরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বন্যার্তদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করছেন।
বাংলাদেশ সোসাইটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ জানান, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি অঞ্চল। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত আমাদের স্বজনদের পাশে দাঁড়াতে বাংলাদেশে সোসাইটি মহতী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রাথমিকভাবে সোসাইটির তহবিল থেকে ৩০ লাখ টাকা অনুদান প্রদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গত সোমবার ২৬ আগস্ট বাংলাদেশ সোসাইটির কার্যালয়ে জরুরি যৌথসভার আয়োজন করা হয়। সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ রব মিয়ার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মো. রুহুল আমিন সিদ্দিকীর পরিচালনায় সভায় বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্যসহ কার্যকরী পরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় সকলের মতামতের ভিত্তিতে সর্বসম্মতিক্রমে প্রাথমিকভাবে ৩০ লাখ টাকা সোসাইটির তহবিল থেকে দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
রিজু মোহাম্মদ আরো জানান, বৃহৎ পরিসরে তহবিল গঠনের লক্ষ্যে প্রবাসীদের কাছে সহযোগিতার আহ্বান করার বিষয়েও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, সেখানে সোসাইটির কার্যকরী পরিষদ, বোর্ড অব ট্রাস্টি ও নির্বাচন কমিশনসহ সাবেক কর্মকর্তা এবং সাধারণ প্রবাসীদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ করা হবে, যা বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনের কাজে ব্যবহার করা হবে। ৩০ লাখ টাকার অনুদান নিউইয়র্ক বাংলাদেশ কনস্যুলেটর মাধ্যমে সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বাংলাদেশ সোসাইটির এই উদ্যোগের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর অথবা ব্যক্তি উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত নিজ নিজ এলাকার দুর্গত মানুষের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন সংগঠনের কর্মকর্তারা।
এদিকে নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের দুই শতাধিক সংগঠন ও ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান বন্যার্তদের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন। তারা সরাসরি মাঠে নেমে কেউ কেউ গো-ফান্ড ও ব্যাংকিং সফটওয়্যার জেল-এর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করছেন। এ পর্যন্ত তারা অর্ধ লক্ষাধিক ডলার সংগ্রহ করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। সংগৃহীত এসব অর্থ অনেকেই সরাসরি প্রধান উপদেষ্টার হিসাব নম্বরে পাঠাবেন বলে জানা গেছে।
প্রবাসীরা বলছেন, দেশের যে কোনো দুর্যোগে সবার আগে প্রবাসীরাই এগিয়ে এসেছেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দু’হাত খুলে প্রবাসীরা বন্যার্তদের সহায়তা করছেন। তাদের মতে, বন্যা পরবর্তী দুর্ভোগ আরো বাড়ে। পুনর্বাসনের জন্য বিপুল অর্থ সাহায্য দরকার। এজন্য প্রত্যেক প্রবাসীর উচিত সাধ্যমত সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের জনবহুল ও বাংলাদেশি অধুষ্যিত নিউজার্সি, পেনসিলভেনিয়া, ওয়াশিংটন ডিসি, ভার্জিনিয়া, ম্যাসাচুসেটস, কানেকটিকাট, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, ফ্লোরিডা, ওহাইও, ইলিনয়, কলারাডো, ডেলাওয়ার, জর্জিয়া, ক্যানসাস, ম্যারিল্যান্ড, মিশিগান, সাউথ ক্যারোলিনা, ওয়াশিংটন ও কেন্টাকি শহরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রবাসীরা বন্যার্তদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করছেন বলে জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ বন্যার্তদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে। তারা অর্থ সংগ্রহ করে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে পাঠাচ্ছেন।
