যুক্তরাষ্ট্রের নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন আগেই নিশ্চিত করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত ২২ আগস্ট শিকাগোতে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলনে কমলা হ্যারিসের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেওয়া হয়েছে দলীয়
মনোনয়ন। নির্বাচনের বাকি আর ৯ সপ্তাহ। ২৩ আগস্ট থেকে বিজয় ছিনিয়ে আনার চূড়ান্ত লড়াইয়ে নামলেন ট্রাম্প ও কমলা।
বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে সরাসরি বিতর্কের তিন সপ্তাহও হাতে নেই। আর এক মাস পরই সশরীরে আগাম ভোট দেওয়া যাবে। এর আগে হওয়া বিভিন্ন জরিপে দেখা যাচ্ছে, হোয়াইট হাউসে যাওয়ার দৌড়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে ট্রাম্প ও কমলার মধ্যে।
শিকাগোতে সদ্য সমাপ্ত চার দিনব্যাপী ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে (ডিএনসি) শুধু ডেমোক্র্যাটরাই বক্তব্য দেননি, ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে সমর্থন দিয়ে এতে অংশ নেন রিপাবলিকানরাও। যাদের মধ্যে বর্তমান ও সাবেক নির্বাচিত রিপাবলিকান প্রতিনিধি এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তারাও ছিলেন। ডিএনসিতে অংশ নিতে যাওয়া রিপাবলিকানদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা হলেন সাবেক কংগ্রেসম্যান অ্যাডাম কিনজিঞ্জার, অ্যারিজোনার রিপাবলিকান মেয়র জন গাইলস, জর্জিয়ার লেফটেন্যান্ট গভর্নর জিওফ ডানকান, ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক সিকিউরিটি কর্মকর্তা অলিভিয়া ট্রয়ে এবং হোয়াইট হাউসের সাবেক প্রেস সেক্রেটারি স্টেফানি গ্রিশাম।
সিএনএনের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট জেমি সু গাঙ্গেল বলেন, এর আগেও ডিএনসিতে রিপাবলিকানরা অংশ নিলেও এবারের সংখ্যাটি নজিরবিহীন। অ্যারিজোনার রিপাবলিকান মেয়র জন গাইলস বলেন, রিপাবলিকান ভোটারদের কাছে তার নিজের কিছু দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতেই ডিএনসিতে অংশ নিয়েছেন তিনি। এ সময় জন গাইলস বলেন, তার মতো অনেক রিপাবলিকান দলে এখন কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। তাদের সবার এখন ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। ট্রাম্পকে কোনোভাবেই ভোট দেওয়া যেতে পারে না বলে মন্তব্য করেন জন গাইলস। রিপাবলিকান কৌশলবিদ আনা নাভারো এবারের ডিএনসি সঞ্চালকদের একজন। তিনি সম্মেলনে সঞ্চালনার দায়িত্ব পেয়ে রোমাঞ্চিত। আনা নাভারো বলেন, তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আবার ক্ষমতায় দেখতে চান না। অভিবাসন ও নারী বিরোধী ট্রাম্প শারীরিক প্রতিবন্ধীদের নিয়েও উপহাস করতে ছাড়েন না। তার মতো ব্যক্তিকে সমর্থন দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক কমিউনিকেশন ডিরেক্টর অ্যালিসা ফারাহ গ্রিফিন বলেন, ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টার ডিএনসিতে অংশগ্রহণে নির্বাচনে কোনো প্রভাবই পড়বে না।
এদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় মনোনয়ন গ্রহণের পর ভাষণে কমলা হ্যারিস বলেন, তিনি সব মার্কিনির প্রেসিডেন্ট হবেন। পাশাপাশি বলেছেন, তিনি বিশ্বজুড়ে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়বেন। এ সময় গাজা যুদ্ধ বন্ধেরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। কমলা বলেন, ‘জনগণের পক্ষ থেকে, প্রত্যেক মার্কিনের পক্ষ থেকে; দল, জাতি, লিঙ্গ বা আপনার দাদি যে ভাষায় কথা বলেন, তা নির্বিশেষে আমি আপনাদের মনোনয়ন গ্রহণ করছি।’ অতীতের তিক্ততা, বিদ্বেষ ও বিভেদমূলক লড়াইকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। তবে তা কোনো একটি দল বা উপদলের সদস্য হিসেবে নয়, মার্কিনি হিসেবে।
কমলা নিজের মনোনয়নকে একটি নতুন পথ তৈরির সুযোগ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি সব মার্কিনির প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’ এ সময় প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পকে ‘বিপজ্জনক’ মন্তব্য করে কমলা বলেন, ট্রাম্প মার্কিন ভোটারদের রায় ছুড়ে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন। তা করতে ব্যর্থ হয়ে তিনি একটি সশস্ত্র উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ক্যাপিটলে পাঠান, যেখানে তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ওপর হামলা চালায়।
দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে কমলার প্রচার দলের পরিচালকের দায়িত্বে আছেন ড্যান ক্যানিনেন। অবশ্য সম্মেলনের ফাঁকে একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সতর্ক আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। ক্যানিনেন বলেন, নির্বাচনী লড়াইয়ে মৌলিকভাবে সেই অর্থে কোনো পরিবর্তন আসেনি এবং এটি এখনো খুবই কঠিন লড়াইয়ের জায়গায় আছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা আছে। আমি মনে করি, পরিস্থিতি আমাদের পক্ষে। তবে এর সঙ্গে আমাদের আরও কিছু করতে হবে এবং এই শরতে ভোটারদের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে।’
এদিকে ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশন-পরবর্তী কমলা হ্যারিসের জনপ্রিয়তা ২ থেকে ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় ডেমোক্র্যাট শিবিরে রীতিমতো উচ্ছ্বাস শুরু হয়ে গেছে। নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনে প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাটদের অনেকেই ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলার বিজয় সম্পর্কে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। পলস্টার টনি ফাবরিজিয়ো এবং ট্রাভিস টুনিসের বর্ণনা অনুসারে, ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের জনপ্রিয়তায় প্রাণপ্রাচুর্যের বান ডেকেছে। সিএনএন পল অব পলসের বরাত দিয়ে টনি ফাবরিজিয়ো বলেন, জুলাই মাসে রেজিস্টার্ড ভোটারদের ৪৯ শতাংশ ট্রাম্পের প্রতি এবং ৪৫ শতাংশ বাইডেনের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেছিলেন। কিন্তু বাইডেন সরে দাঁড়িয়ে কমলা হ্যারিসকে সমর্থন করলে কনভেনশনের পর তালিকাভুক্ত ভোটারদের ৫০ শতাংশ কমলা হ্যারিসের এবং ৪৮ শতাংশ ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দলীয় প্রভাবশালীদের চাপের মুখে সরে দাঁড়ানোর ফলে কমলা হ্যারিসের ভাগ্যে মেঘ না চাইতেই প্রবল বারিবর্ষণ শুরু হয়ে গেছে। তাই কমলার বিজয়প্রত্যাশীদের উদ্দেশে দিল্লি দুরস্ত হায় বললে সম্ভবত বাড়িয়ে বলা হবে না।
বিতর্কে অংশগ্রহণ নিয়ে ট্রাম্পের সংশয়: প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বিতর্ক চলাকালে ট্রাম্প টিম একমাত্র প্রার্থীর বক্তব্যদানের সময় ছাড়া অন্য সময় মাইক্রোফোন নীরব রেখে বিশেষ ফায়দা লুটেছিল। আগামী মাসে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সঙ্গে নির্ধারিত বিতর্ক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প টিম একই প্রক্রিয়া অনুসরণের বুদ্ধি আঁটছে বলে জানা গেছে। তবে রিপোর্টার জোনাথান কার্ল এবং ট্রাম্প হেইটারস অন হিজ ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম প্যানেলকে বায়াসড (বিদ্বেষপ্রসূত) আখ্যায়িত করে ট্রাম্প বিতর্ক অনুষ্ঠানের আগাগোড়া মাইক্রোফোন অন রাখাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তা ছাড়া সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরে ট্রাম্প বিতর্ক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।