Thikana News
২৫ জুন ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫
ঢাকায় র-ছারখার ♦ ফেরারিদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ভারত ♦ মৃত্যু বা পাকড়াও

মোদির ছলের কলে হাসিনা

মোদির ছলের কলে হাসিনা ফাইল ছবি



 
  1. ভারত বাংলাদেশে দ্রুত স্থিতিশীলতা ও স্বাভাবিকতার জন্য উতলা। কবে বাংলাদেশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে- সেই উদ্বেগের কথা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে জানিয়েছেন বলে নিজেই জানান দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু, বিশেষ করে ‘হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার’ বিষয়েও আলোচনা করেছেন বলে টুইট বার্তায় জানিয়েছেন। ঢাকা-দিল্লির হাল অবস্থা নিয়ে তিনি সঠিক জায়গায়ই কথা বলেছেন বলে মূল্যায়ন কূটনীতিকদের। মোদি বুঝে গেছেন তার দেশের ডিসিশনও বিদেশের মাটিতেই হয় এবং হবে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ পর্বের পর এখন ভারতের রাজনীতির ছক ঘোরানোর চাল চালছে বলে গুঞ্জনের মাঝেই বাইডেনের সঙ্গে মোদির কথা বলা।
ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পলাতক শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের নাকের ডগায় রেখে দিয়ে মোদির এই ভূমিকার দিকে তীক্ষ্ণ নজর ড. ইউনূস সরকারের। বাংলাদেশের সাধারণ জনগণও যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি সতর্ক ভারতের বিষয়ে। ঢাকায় জুডিশিয়াল ক্যু, আনসার বিদ্রোহসহ এখনো নানা গন্ডগোল পাকানোর চেষ্টার মাঝে ভারতের সম্পৃক্ততা বেশ আলোচিত। এর আগে একটি অজনপ্রিয় সরকারকে বছরের পর বছর টিকিয়ে রাখতে যাচ্ছেতাই করা এবং করানোর পেছনেও ভারতের সরাসরি কারসাজি প্রমাণিত। এর অনিবার্য জেরে ভারত জুজু এখন বাংলাদেশে অচল হওয়ার চরম সন্ধিক্ষণে। যুক্তরাষ্ট্র সেই সিগন্যাল বাংলাদেশকে দিয়েই রেখেছে। চীনের বার্তাও এ রকমই। চীনের রাষ্ট্রদূত প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের পর জানিয়েছেন, অভ্যন্তরীণ যত পরিবর্তনই আসুক, বাংলাদেশের পাশে থাকবে চীন।
আগ্রাসন, অত্যাচার, অহমিকা, অপমান মানুষকে ভারত ও আওয়ামী লীগের প্রতি কী মাত্রায় ক্ষুব্ধ করেছে, যার এক শোডাউন চলছে গোটা দেশে। কট্টর রাজনীতিবিমুখ মানুষও রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখতে পারছে না। জুলাই থেকে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে যে রাজনৈতিক আন্দোলনের ঝড় বয়ে গেছে, তা এই উপমহাদেশের মানুষেরও ধারণার বাইরে। মৃত্যু, রক্ত আর কান্না মিশিয়ে এত সাহস আর দ্রোহ দেখেনি মানুষ আগে। গণ-আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ এবং দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন ৫ আগস্ট। ক্ষমতায় টিকে থাকতে ৫ আগস্ট এবং তার পরদিন পর্যন্ত দেশে যত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, তা স্বাধীনতার পর পাঁচ দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। এসব কীর্তির জন্য ভারত এবং আওয়ামী লীগ সমান্তরাল জাতশত্রু হয়ে গেছে বাংলাদেশে।
এত দিন ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং’র এর নাম শুনলেই মানুষ আতঙ্কে ভুগত। ২০০৮ থেকে ২০২৪ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করত এই সংস্থাটি। সেই র-এর চরম ব্যর্থতা ফুটে ওঠে চব্বিশ সালের আগস্টে এসে। তাদের সব ছক ও আনলিমিটেড দম্ভ ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে ছাত্র-জনতার কাছে। র-এর এজেন্টদের এখন খোঁজাখুঁজি হচ্ছে। এই খোঁজাখুঁজিতে র এর এজেন্ট সন্দেহে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনুপম ঘোষসহ কয়েকজনকে পাকড়াও করে উত্তম-মধ্যম দিয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তরও করা হয়েছে। সামনে এ ধরনের আরও ঘটনার সম্ভাব্যতা আছে। বাংলাদেশের তিন দিক থেকে ঘিরে রেখেছে বলে ভারতের পদতলে থাকা ছাড়া উপায় নেই- সেই ধারণাও আর খাটছে না। বাংলাদেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব এবং পূর্ব দিকে ভারতের সেভেন সিস্টার প্লাস রাজ্যগুলোর অবস্থান। এই রাজ্যগুলোর সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের চেতনা- এরা দিল্লির অতিনিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্তি চায়। উলফা নামক সংগঠন দীর্ঘদিন কেন্দ্রীয় সরকার নিয়োজিত নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র গেরিলা যুদ্ধ করেছে। এই সংগঠনের চেয়ারম্যান পরেশ বড়ুয়া চীনের কুনমিংয়ে বসবাস করছেন। ভারতের এই রাজ্যগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বাংলাদেশের ভূখণ্ড অতি জরুরি।
ভারতের এই রাজ্যগুলো থেকে বাংলাদেশের ওপর কোনো রাজনৈতিক বা সামরিক চাপ নেই। বাংলাদেশের পশ্চিমে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। এই রাজ্যের মানুষের সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক মানুষের রয়েছে আত্মীয়তা এবং বন্ধুত্ব। দক্ষিণ-পূর্ব কোণে রয়েছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য, যা এখন ভারতের শত্রু চীন সমর্থিত আরাকান আর্মির দখলে। ভারত অযথা চাপাচাপি করলে ‘শত্রুর শত্রু বন্ধু’ নীতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সামনে চলে আসবে। চীন হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সফল সিপাহি জনতার বিপ্লবের পর এই বাস্তবতা বাংলাদেশের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান সঠিকভাবে বুঝেছিলেন। কাজেও লাগিয়েছিলেন। জিয়া বাংলাদেশের চতুর্দিকে অবস্থিত ভারতের রাজ্যগুলোর মানুষের চোখের ভাষা বুঝতে পেরেছিলেন ১৯৭১ এর স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়। সে কারণে এত বড় মাপের ঝুঁকি তিনি নিতে পেরেছিলেন। এর পরপরই ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী বাংলাদেশ সীমান্তে অস্থিরতা তৈরি করার সকল কার্যকলাপ বন্ধ করে দেয়। এবার বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা জুজুর ভয়ে ভীত নয় বলেই ভারতকে অন্ধকারে রেখে ৫ আগস্ট বিপ্লব সফল করেছে।
এ রকম প্রেক্ষাপটে ভারত একটা চরম ধাক্কা খেয়েছে। তা বুঝতে পেরে এখন নেমেছে আরেক চাতুরীতে। বাংলাদেশকে গোনায় ধরছে, আবার ত্রিপুরা রাজ্যের ডুম্বুরের পর এবার ফারাক্কা বাঁধের ১০৯টি গেটও খুলে দিয়েছে। এতে বাংলাদেশের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জসহ আশপাশের জেলাগুলো বন্যার ঝুঁকিতে পড়েছে। গঙ্গার পানির স্তর বাড়ায় বাঁধটি থেকে ১১ লাখ কিউসেক পানি ছাড়া হয়েছে। ভারতের দাবি- বিহার, ঝাড়খণ্ডে প্রবল বৃষ্টি হওয়ায় সেই পানির চাপ কমাতে ফারাক্কা বাঁধের গেটগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্পের পানি বিপৎসীমা পার করায় পানি ছাড়ার পরিমাণও বাড়ছে। বাংলাদেশও তা বুঝতে পারছে। এখনো বোঝার বাকি আওয়ামী লীগ নেতা ও সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তির। শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিলেও বাদবাকিদের সামান্যতম অনুকম্পাও করছে না। বিচারক মানিকের মতো পালিয়ে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করলে সীমান্তে নাজেহাল, এমনকি প্রাণহানির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। দুই পাশেই দালাল চক্র সক্রিয়। টাকা নিয়ে পালাচ্ছে, বুঝতে পারলে মারধর করে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয় এরা। ব্রিটিশ পাসপোর্ট, বাংলাদেশি পাসপোর্টসহ ৬০-৭০ লাখ টাকা নিয়ে ভারতে পালাচ্ছিলেন মানিক। সেখানে রহস্যজনকভাবে নিহত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইসহাক আলী খান পান্না আরেক ঘটনার শিকার। এর আগে এমপি আনারকে কুপিয়ে কেটেকুটে কিমা বানানো হয়েছে। সব মিলিয়ে এই পলায়নপরদের কাছে এখন পালানোর জন্যও অনিরাপদ দেশ ভারত।
কমেন্ট বক্স