Thikana News
০৪ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪
তারেক-জামায়াত রুখতে খালেদা জিয়াকে রাজনীতিতে নামানোর টোপ

বিএনপি মেরামতে ভারত বিভ্রম

বিএনপি মেরামতে ভারত বিভ্রম
 
বিশেষ প্রতিনিধি : সংসদ, রাজনীতি, রাজপথ- সবখানে ঠাঁই হারিয়েও ঘুরে দাঁড়ানোর আশা বিএনপির। চেষ্টাও করছে। কিন্তু কূল পাচ্ছে না। কিনারের কাছেও যেতে পারছে না। পথ পেয়েও পাচ্ছে না। ধরতে পারছে না মূল সুতা। দলের মধ্যেই পথ নিয়ে নানা বাগড়া। নিজস্ব শক্তিতে বিএনপির খেই হারিয়ে ১৮-তে ড. কামাল, ২৪-এ যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের ভরসায় থেকে মাঠে মারা যাওয়ার দশা।
এখন কোন কোন ভরসা বা সুতা ধরবে, তা নিয়েও সকালে এক সিদ্ধান্ত, বিকেলে আরেক। সন্ধ্যায় বা রাতে ঘুরপাক খাচ্ছে আরেক চোরাগলিতে। বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থক বিভ্রাট-বিভ্রমে। নেতাদের কাছে পাচ্ছেন না স্পষ্ট দিকনির্দেশনা। লন্ডন থেকে তারেক রহমানের বার্তা পাচ্ছেন কেবল হাতে গোনা কয়েকজন। তারাও করছেন তথ্যের ব্যাপক হেরফের। নিজেদের মনগড়া ও সুবিধাজনক তথ্য দিয়ে কর্মীদের ফেলছেন আরও বিভ্রান্তিতে।
দেশি-বিদেশি শুভাকাক্সক্ষী-হিতাকাক্সক্ষী মহল থেকে বারবার বলা হচ্ছে মিত্রদের, বিশেষ করে জামায়াতের বিষয়টি খোলাসা করতে। দলকে আওয়ামী লীগের বিপরীত শক্তি বানাতে। অ্যান্টি ইন্ডিয়ান আইডেনটিটি পরিষ্কার করতে। কিন্তু বিএনপি ভারত ও জামায়াত দুই প্রশ্নেই কখনো লুকোচুরি, কখনো ধোঁয়াশা জিইয়ে রাখছে। নামে জাতীয়তাবাদী হলেও দলটির ভারতনীতিতে অস্পষ্টতা। দিল্লির সঙ্গে অধীনতামূলক মিত্রতায় ঝুঁকে বারবার হোঁচট খাওয়ার পরও ভারতকে চটালে রাষ্ট্রক্ষমতা মিলবে না-এমন একটি ধারণা মগজগ্রস্ত করে দেওয়া হয়েছে নানা আয়োজনে। আয়োজকেরা এতে কামিয়াবি। বেশ পুলকিত-তৃপ্ত। ভারতীয় আধিপত্যবাদ এবং হিন্দুত্ববাদ নিয়ে একটু চড়া কথা বললেই ধমক আসে দলের ভেতর থেকেই। লাগিয়ে দেওয়া হয় জামায়াতপন্থী, ইসলামিস্ট, ভারতবিদ্বেষীর সিল। বলা হয়, ভারত প্রশ্নে রয়েসয়ে কথা বলতে। এ গ্রুপটির বিশেষ নেতৃত্ব ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর হাতে। সঙ্গে আছেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল আওয়াল মিন্টো, শামা ওবায়েদসহ কয়েকজন।
বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতীয় অশুভ পরিকল্পনা, ইসলামিক ধর্মীয় বিশ্বাস, বাঙালি মুসলমানের আলাদা সাংস্কৃতিক পরিচয়, বিএনপির জাতীয়তাবাদী আদর্শ নিয়ে কথা বললে তারা সাবধান করেন। তারেক রহমানকে ভারত দেখতে পারে না, তাই তাকে দলের নেতৃত্বে রাখলে ভারত কোনো দিন বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে দেবে না- এমন প্রচারণার সঙ্গে কয়েক নেতার চাতুরী এখন অনেকটা ওপেন সিক্রেট। নিজেদের ভারতের বিশ্বস্ত-পরীক্ষিত দাবি করলেও আদতে তারা দলের জন্য ভারতীয় কোনো সাকসেস রেজাল্ট আনতে পারেননি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে দিল্লির রাস্তায় যথেষ্ট ঘোরাঘুরি করলেও মোদি কিংবা বিজেপির কোনো গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ পেতে তাদের ব্যর্থতা গোপন থাকেনি। ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির মধ্যম স্তরের কয়েকজনের সঙ্গে তাদের কথাবার্তার রেকর্ডও আছে কারও কারও হাতে। কিন্তু তারা কোণঠাসা। তাদের রাখা হয় চোখে চোখে। কোণঠাসা বা কর্ণার এ গ্রুপটি মনে করে, তারেক রহমানকে ভারতের অপছন্দ করাই হতে পারে বিএনপির শক্তি এবং আইডেন্টিটি। ভারত এবং দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও বেশি চক্ষুশূল তারেক রহমান, যা একসূত্রেই গাঁথা। এখানে বুঝ-উপলব্ধির অনেক কিছু আছে। ওই সময় দিল্লির ব্যর্থ মিশনের পরও ভারত তোষণকারী গং হতোদ্যম না হয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর প্রভাব অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়। ড. কামাল, কাদের সিদ্দিকী, সুলতান মনসুরদের নির্বাচনী জোটের নেতৃত্বে বসিয়ে বিএনপিকে নয়া সেক্যুলার দলরূপে ভারতীয় ডিপ স্টেটের খোঁয়াড়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
২০১৮ সালের তিক্ত অভিজ্ঞতার পরও বিএনপি নেতৃত্বের ভারত বিভ্রমের অবসান ঘটেনি। এ নির্বাচনের আগে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিএনপি দিল্লির সমর্থনের আশায় অপেক্ষা করেছে। তার মধ্যেও ভারতের মন গলেছে, সমীকরণ পাল্টেছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে খাতির কমে গেছে- এ ধরনের গুজব রটানো ক্ষ্যান্ত দেয়নি। সেই সঙ্গে এ-ও প্রচার করেছে, জামায়াতকে ত্যাগ করলে বিএনপির এবার ক্ষমতা নিশ্চিত। দিল্লিকে খুশি করতে বিএনপি একদিকে যেমন জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য ইসলামিক দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেছে; খুশি করার বাড়তি তোহফা হিসেবে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে করিডোর বানানো, সমুদ্রবন্দর ব্যবহার, উজানে বাঁধ দিয়ে নদ-নদীর প্রবাহ আটকে দেওয়া, রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে ভারতীয় গোয়েন্দাদের অনুপ্রবেশ ইত্যাদির কোনো প্রতিবাদ করেনি। এই ধোঁকাতেও চরমভাবে প্রতারিত হয়ে বিএনপির মধ্যে এখন ভারত ও জামায়াত প্রশ্নে ইউটার্ন করার চেষ্টা। সেখানেও দলের ভেতর থেকে কড়া বাধা। নির্বাচনের কয়েক দিন আগে ভারত কর্তৃক লুণ্ঠিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার-হিন্দুত্ববাদের থাবা থেকে দেশমুক্তির ডাক দেওয়ার একটি পরিকল্পনা বানচাল করে দেয় এরা। এই পথে গেলে কেবল ক্ষমতাই নয়, বিএনপিকে বাংলাদেশের রাজনীতির মানচিত্র থেকেই ‘নাই’ করে দেওয়া হতে পারে বলে ভয়ের বস্তায় ঢুকিয়ে দেওয়ার জুজুতে ফেলা হয়। এতেও সফল হয় তারা।
এসব পর্বের পর এখন স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে নতুন কোনো সাঁড়াশি আক্রমণ, মামলা না হওয়া এবং নেতাকর্মীদের আস্তে আস্তে জামিনে মুক্তি দিয়ে একটি রাজনৈতিক শান্ত আবহ তৈরির। এ সুযোগে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতির মাঠে নামানোর ব্যবস্থা করার টোপও ফেলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টানা চতুর্থ দফায় শপথের সান্ধ্য সময়েই খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে বাসায় আনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সহানুভূতির রাজনীতির উপাদান দেখানো হচ্ছে। ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খানসহ কারামুক্ত থাকা কয়েক নেতার সঙ্গে এরই মধ্যে বেগম খালেদা জিয়ার বেশ যোগজিজ্ঞাসার তথ্য ঘুরছে বিএনপির কর্মীদের মুখে মুখে। তাকে সদরে না হোক অন্দরমহলে অ্যাকটিভ করার চেষ্টা আছে। তার নির্দেশনামতো তারেকমুক্ত বিএনপি পুনর্গঠনের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। সেই প্রক্রিয়ায় আন্দোলনের চেয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে নেতাকর্মীদের কারামুক্ত করাকে।

কমেন্ট বক্স