Thikana News
২২ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪


 

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রাজা নন : অধ্যাপক গারহার্ডট

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রাজা নন : অধ্যাপক গারহার্ডট


নির্বাচনে বাধাপ্রদান ফেডারেল মামলায় সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কমপ্লিট অ্যান্ড টোটাল প্রেসিডেন্সিয়াল ইমিউনিটি দাবি করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সংবিধান বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মাইকেল গারহার্ডট বলেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রাজা নন। উল্লেখ্য, আপিল কোর্টের সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে নির্বাচনী হস্তক্ষেপ ফেডারেল মামলা খারিজপ্রত্যাশী ডোনাল্ড ট্রাম্প ফক্স নিউজ হোস্ট সিয়ান হ্যানিটির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে কমপ্লিট অ্যান্ড টোটাল (আক্ষরিক ও পুরোপুরি) প্রেসিডেন্সিয়াল ইমিউনিটি দাবি করেন। সাক্ষাৎকারে জাতির সামনে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার ‘গধশব অসবৎরপধ এৎবধঃ অমধরহ’ বার্তাও উপস্থাপন করেন বলে জানা যায়। ট্রাম্প বলেন, দপ্তর ত্যাগের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের অবশ্যই ইমিউনিটি থাকতে হবে। দপ্তর ত্যাগের পর অভিযুক্ত হওয়ার ভীতি না থাকলে প্রেসিডেন্টগণ বলিষ্ঠতার সঙ্গে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন। ট্রাম্প বলেন, সুপ্রিম কোর্টও সম্ভবত ওই রুলিং প্রদান করবেন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। ট্রাম্প আও বলেন, ইমিউনিটি না থাকলে প্রেসিডেন্টগণ সাহসিকতার সঙ্গে নিজেদের ওপর অর্পিত সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবেন না। তারা শুধু দপ্তর পাহারা দেবেন এবং কোনো কিছু করতে সর্বদা শঙ্কিত ও ভীত থাকবেন।
ট্রাম্পের উপরিউক্ত দাবির বিরোধিতা করে চ্যাপেল হিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক ও সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞ মাইকেল গারহার্ডট এবিসি নিউজকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ফৌজদারি অভিযোগ থেকে ট্রাম্পের পুরোপুরি অব্যাহতি দাবি সংবিধান এবং সংবিধান প্রণেতাদের অভিপ্রায়ের সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট রাজা হলে দাবিটি সত্য হতো। তবে বাস্তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রাজা নন এবং জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি।
প্রেসিডেন্সিয়াল প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ালেন রামস্বামী : রিপাবলিকান দলীয় প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থিতা থেকে বিদায় নেওয়া বায়োটেক ব্যবসায়ী এবং কনজারভেটিভ ভাষ্যকার বিবেক রামস্বামী দলীয় ফ্রন্টরানার ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। আমেরিকা ফার্স্টের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক রামস্বামী ট্রাম্প সমভিব্যাহারে নিউ হ্যাম্পশায়ারের এটকিনসনের মঞ্চে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি নিজ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।
প্রেসিডেন্সিয়াল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইতি টানলেন ডিস্যান্টিস : রিপাবলিকান উদীয়মান তারকা, ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিসও দলীয় মনোনয়ন লাভের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইতি টেনেছেন। নিউ হ্যাম্পশায়ারের রিপাবলিকান প্রাইমারির প্রায় ৪৮ ঘণ্টা আগে ২১ জানুয়ারি সাড়ে চার মিনিটের এক ভিডিওতে ডিস্যান্টিস প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। জনমত জরিপে ব্যাপক ব্যবধানে ট্রাম্পের চেয়ে পিছিয়ে থাকায় ডিস্যান্টিস প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যাম্পেইনের ইতি টেনেছেন বলে জানা যায়। ফ্লোরিডায় ফিল্মকৃত ভিডিও বার্তায় রন ডিস্যান্টিস বলেন, জয়লাভের আশা না থাকায় তিনি ক্যাম্পেইন থেকে স্বেচ্ছায় বিদায় নিচ্ছেন। আইওয়া ককাসে ২১ শতাংশ ভোট পেয়ে ডিস্যান্টিস দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিলেন।
ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট তালিকায় হ্যালি অনুপস্থিত : ট্রাম্পের সম্ভাব্য ভাইস প্রেসিডেন্টের তালিকায় সাউথ ক্যারোলিনার সাবেক গভর্নর নিকি হ্যালি অনুপস্থিত। নিকি হ্যালি প্রেসিডেন্সিয়াল টিম্বার (দারুবৃক্ষ) নন বলে নিউ হ্যাম্পশায়ারের কনকর্ডে মন্তব্য করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। নিউ হ্যাম্পশায়ারের রিপাবলিকান প্রাইমারিকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অব্যাহতভাবে আক্রমণ করায় ১৯ জানুয়ারি ট্রাম্প হ্যালিকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে বাছাই না করারও ঘোষণা দিয়েছেন। ট্রাম্প বলেন, আমি হ্যালিকে ভালোভাবে চিনি। প্রেসিডেন্ট জি কিংবা পুতিনের সঙ্গে এঁটে ওঠার সামর্থ্য তার নেই। প্রচারণার কাজে ব্যস্ত হ্যালি ওই মন্তব্যের সরাসরি কোনো জবাব দেননি। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, নিউ হ্যাম্পশায়ারে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিকি হ্যালির চেয়ে ১১ থেকে ১৬ শতাংশ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছেন ট্রাম্প : চলতি বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। লড়াইয়ে কারা মুখোমুখি হচ্ছেন, এ নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে নানা জল্পনা-কল্পনা, হিসাব-নিকাশ ও ছক-কষাকষি। বিভিন্ন নির্বাচনী জরিপের ফলাফল অনুযায়ী যদিও এত দিন ধারণা করা হতো যে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দুই দল থেকে প্রার্থী হিসেবে দেখা যাবে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে, কিন্তু বর্তমানে এই ধারণা বাস্তবে রূপান্তর হওয়া শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।
ইতিমধ্যেই রিপাবলিকান পার্টি থেকে মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে শক্তিশালী প্রতিযোগী হিসেবে যার নাম সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল, সেই রন ডিস্যান্টিস সরে দাঁড়িয়েছেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড় থেকে। আর এর মাধ্যমেই প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে ট্রাম্পের পথ যেন আরও সুগম হয়ে গেল। সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পই আসছেন ক্ষমতায়, বর্তমানে এমনটাই ধারণা করছেন বিশ্লেষকেরা।
মামলা যেন শাপেবর : অনেকেই মনে করেন, ট্রাম্পের আবারও নজরের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠার পেছনে তার বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো বেশ ভালো গুরুত্ব বহন করেছে। জো বাইডেনের কাছে হেরে যাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ডজনখানেক মামলা হয়েছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। বহু আমেরিকানদের ধারণা, তাকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই তার বিরুদ্ধে যত ফৌজদারি মামলা। আর এ কারণেও বহু আমেরিকানের সমর্থনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপে ট্রাম্প জ্বর : যতই ঘনিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, ততই আলোচনা চলছে ট্রাম্পকে নিয়ে। মার্কিন সরকারে, বিরোধী শিবিরে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আলোচ্য এখন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রেস অনেক লম্বা। শুরু করতে হয় নিজ দল থেকে। তাও বিভিন্ন রাজ্যে ভাগ হয়ে নিজ দলের প্রার্থীদের সঙ্গে লড়তে হয়। রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রথম লড়াইয়ে জিতে গেছেন বেশ ভালো ব্যবধানেই। অর্ধেকের বেশি ভোট পেয়ে রিপাবলিকানদের হয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প এগিয়ে গেছেন, যা ভয় ধরিয়ে দিয়েছে তার প্রতিপক্ষ ডেমোক্র্যাট শিবিরে শুধু নয়, নিজ দলেও। এমনকি ইউরোপও শঙ্কিত এ খবরে।
সিএনএন জানাচ্ছে, প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের এ প্রত্যাবর্তন অন্য কারণে আরও চমকপ্রদ। ৯১টি ফৌজদারি অভিযোগ এবং অন্যান্য আইনি জটিলতা সত্ত্বেও তিনি জিতেছেন। এ বিজয়ের পরদিন মঙ্গলবার মানহানির মামলায় ম্যানহাটনের একটি আদালতে তাকে উপস্থিত হতে হয়। ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে হেরে ইউএস ক্যাপিটল ভাঙচুরে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ আছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। তিনি তখন তার সমর্থকদের বলেছিলেন, ‘নরকের মতো লড়াই’ করতে। এর মাত্র তিন বছর পর আইওয়ায় জয়ী হলেন তিনি। ৩ থেকে ৯ জানুয়ারি রয়টার্স পরিচালিত ৩ হাজার ৮১৫ জন নিবন্ধিত ভোটারের একটি জরিপে দেখা যায়, বাইডেন পেয়েছেন ৪০ এবং ট্রাম্প ৩৮ শতাংশ ভোট। একইভাবে ১ হাজার ৪৭২ নিবন্ধিত ভোটারের অংশগ্রহণে ১৪ এবং ১৬ জানুয়ারির মধ্যে দ্য ইকোনমিস্টের জন্য পরিচালিত সমীক্ষায় বাইডেন ৪৪ শতাংশ এবং ট্রাম্প ৪৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। দেখা গেছে, বিগত শাসনামলে নানা বিতর্কের জন্ম দেওয়া, বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ার পরও ট্রাম্প খুব বেশি বিপাকে নেই। তিনি ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছেন।
ট্রাম্পের এ বিজয়ে সবচেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইউরোপ। এএফপির খবরে বলা হয়, বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডি ক্রো হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বছরের শেষ দিকে হোয়াইট হাউসে ফিরে গেলে ইউরোপকে প্রস্তুত থাকতে হবে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে এক বক্তৃতায় সতর্কবার্তা দেন তিনি।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের জ্যেষ্ঠ জার্মান সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট সদস্য ক্যাটারিনা বার্লি বলেন, ট্রাম্প এমন এক ব্যক্তি, যিনি গণতন্ত্রের প্রতি তার অবজ্ঞা গোপন রাখেন না। তিনি আবার প্রেসিডেন্ট হওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। ইউরোপকে নিজের ওপর ফোকাস করতে হবে।
জার্মানির খ্রিষ্টান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের জ্যেষ্ঠ আইনপ্রণেতা নরবার্ট রটজেন ট্যাগেস্পিগেল বলেছেন, জার্মান সরকারকে এখন ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার জন্য আগের চেয়ে আরও নিবিড়ভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। এর অর্থ হলো আমাদের অস্ত্র উৎপাদন বাড়াতে হবে, যাতে ইউক্রেন মার্কিন সাহায্য ছাড়াই রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে নিজেকে রক্ষা করতে পারে। ইউরোপের স্বাধীনতা এর ওপর নির্ভর করে।
অবশ্য যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি যুক্তি দিয়েছেন, ট্রাম্পকে এ মুহূর্তে বিশ্বের প্রয়োজন হতে পারে।
 

কমেন্ট বক্স