Thikana News
২৩ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪


 
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-২০২৪

ট্রাম্পের পক্ষে-বিপক্ষে উচ্চ আদালতের রায়

ট্রাম্পের পক্ষে-বিপক্ষে উচ্চ আদালতের রায়


এম এস হক : চতুর্দশ সংশোধনীর অনুচ্ছেদ-৩ এর দোহাই দিয়ে কলারাডোর পর মেইন স্টেটও জিওপি ব্যালটে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অযোগ্য ঘোষণা করেছে। গত ২৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার মেইনের ডেমোক্র্যাটিক দলীয় সেক্রেটারি অব স্টেট শেনা বেলোজ ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ইউএস ক্যাপিটল দাঙ্গা-হাঙ্গামা সমর্থন করার অভিযোগে সাংবিধানিক অনুচ্ছেদের আওতায় ট্রাম্পকে অযোগ্য ঘোষণা করেন।
এর এক সপ্তাহ আগে কলারাডোর সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্পকে অযোগ্য ঘোষণা করেছিলেন। তবে মেইন ও কলারাডো উভয় স্টেটের রুলিং মূলত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা এবং উচ্চ আদালতের পুনঃসিদ্ধান্তের ওপর এগুলোর কার্যকারিতা নির্ভরশীল। এদিকে ট্রাম্পের আইনজীবীরাও আপিল করার সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করেছেন। ইতিমধ্যে ট্রাম্পের আইনজীবীরা মেইনের স্টেট সেক্রেটারি বেলৌজের সিদ্ধান্তের পাঁচ দিনের মধ্যে ২ জানুয়ারি মঙ্গলবার মেইনের সুপেরিয়র কোর্টে আপিল করেছেন বলে জানা গেছে।
মিশিগান সুপ্রিম কোর্ট : মিশিগান স্টেটের ২০২৪ রিপাবলিকান প্রাইমারি ব্যালটে নাম স্থান পাওয়া প্রশ্নে মিশিগান সুপ্রিম কোর্ট সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে রায় দিয়েছেন। মূলত কিছুসংখ্যক মিশিগান ভোটারের পক্ষে ওয়াশিংটনভিত্তিক ‘দ্য ওয়াচ ডগ ফ্রি স্পিচ ফর পিপল’ শীর্ষক সংস্থা মিশিগান স্টেটের রিপাবলিকান ব্যালটে ট্রাম্পের নাম অন্তর্ভুক্তি নিষিদ্ধ করার জন্য একটি  মামলা মিশিগান কোর্ট অব আপিলসে রুজু করেছিল। আপিল কোর্ট ওই মামলাটি ডিসেম্বরের গোড়ার দিকে খারিজ করে দিয়েছিলেন। তবে সম্প্রতি কলারাডো সুপ্রিম কোর্ট ব্যাটেলগ্রাউন্ড (যুদ্ধক্ষেত্র) স্টেট হিসেবে পরিচিত কলারাডোর জিওপি প্রাইমারি ব্যালটে ট্রাম্পের নাম অন্তর্ভুক্তি নিষিদ্ধ করায় ফ্রি স্পিচ ফর পিপল নামের সংস্থাটি আপিল কোর্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মিশিগান সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হয়েছিল। অবশেষে মিশিগান সুপ্রিম কোর্ট প্রসিডিউরাল গ্রাউন্ডে আপিলটি খারিজ করে দেওয়ায় বস্তুত মিশিগান আপিল কোর্টের রুলিংয়ের কার্যকারিতা বহাল থাকল।
ক্যালিফোর্নিয়া সুপ্রিম কোর্ট : ক্যালিফোর্নিয়া স্টেটের ডেমোক্র্যাটিক লেফটেন্যান্ট গভর্নর এলেনিট কুনালাকিস চতুর্দশ সংশোধনীর ৩ অনুচ্ছেদের দোহাই দিয়ে ট্রাম্পকে অযোগ্য ঘোষণা করা সত্ত্বেও সেক্রেটারি অব স্টেট শার্লি ওয়েবার ২০২৪ রিপাবলিকান প্রাইমারি ব্যালটে ট্রাম্পের নাম রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন। ডেমোক্র্যাট ওয়েবার গত ২৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ক্যালিফোর্নিয়ার ৫ মার্চ ২০২৪ প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাইমারি নির্বাচনের দাপ্তরিক প্রার্থী তালিকা সার্টিফাই করেছেন।
স্পেশাল কাউন্সেল স্মিথ : প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ভিত্তির প্রতি ভয় দেখানোর অভিযোগের দায় থেকে ট্রাম্প অব্যাহতিপ্রাপ্তÑসাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওই দাবি নাকচ করার জন্য কলাম্বিয়া সার্কিট ডিস্ট্রিক্টের ইউএস আপিলস কোর্টে অনুরোধ জানিয়েছেন স্পেশাল কাউন্সেল জ্যাক স্মিথ। স্মর্তব্য, গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী হাউসে পাস হওয়া অনুচ্ছেদ-৩ এর ভিত্তি একেবারেই দুর্বল এবং এর আওতাও তেমন সম্প্রসারিত নয়। জিওপি ব্যালটে ট্রাম্পের নাম অন্তর্ভুক্তি প্রশ্নে অনুচ্ছেদ-৩ এর জোরেশোরে দোহাই দেওয়া হলেও ইতিপূর্বে এর বাস্তব প্রয়োগ ঘটেনি। এমন বাস্তবতায় স্মিথ চতুর্দশ সংশোধনীর অনুচ্ছেদ-৩ এর বরাত দিয়ে ট্রাম্পের দাবি খারিজের অনুরোধ জানালেও মূলত তার ভাগ্য নির্ভর করবে ইউএস সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের ওপর।
ইউএস সুপ্রিম কোর্ট : কলারাডো, মেইন, মিশিগান, ক্যালিফোর্নিয়াসহ আমেরিকার প্রায় ৩০টি স্টেটে ২০২৪ রিপাবলিকান প্রাইমারি ব্যালটে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নাম অন্তর্ভুক্তি প্রশ্নে আইনি লড়াইয়ের পর্যাপ্ত সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় ইউএস. সুপ্রিম কোর্টই ট্রাম্পের শেষ ভরসাস্থল বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
নজিরবিহীন নির্বাচনে ফের ক্ষমতায় ফিরছেন ট্রাম্প!
আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে বেশ উত্তেজনার মধ্যেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সময়। চলতি জানুয়ারিতেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রাইমারি ভোট শুরু হতে যাচ্ছে। আগামী ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে ফের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের লড়াইয়ের আভাসও মিলছে। যদি তা-ই ঘটে, আর জো বাইডেন হেরে যান; তাহলে ১৩১ বছর আগের ঘটনারই পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে দেশটিতে।
একজন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট তার চার বছর আগের পুরোনো প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে লড়ে হেরে গেছেনÑ মার্কিন ইতিহাসে এ রকম ঘটনা কেবল একবার ঘটেছে, ১৮৯২ সালে। তখন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন হ্যারিসনকে পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইট হাউসে যান স্টিফেন গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড।
অর্থাৎ ডেমোক্র্যাট দলীয় ক্লিভল্যান্ড দুবার প্রেসিডেন্ট হলেও সেখানে ধারাবাহিকতা ছিল না। প্রথমে বেঞ্জামিন হ্যারিসন তখনকার প্রেসিডেন্ট ক্লিভল্যান্ডকে পরাজিত করেন। পরের বার হ্যারিসনকে হারিয়ে ফের প্রেসিডেন্ট হন পূর্বসূরি ক্লিভল্যান্ড। যুক্তরাষ্ট্রের বাইশ ও চব্বিশতম প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। ২০২৪ সালের নির্বাচনে সেই ১৩১ বছর আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
রিপাবলিকান দলের সাধারণ ভোটারদের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। তারা তাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করেন। কারণ তৃণমূল পর্যায়ের সমর্থকদের তিনি বোঝাতে পেরেছেন যে ২০২০ সালের নির্বাচনের ফল তার কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে।
এরমধ্য দিয়ে নিজেকে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হিসেবে তৈরি করে নিয়েছেন ট্রাম্প। অবিশ্বাস্য হলেও এই সত্য অস্বীকার করা যায় না।
তবে ট্রাম্পকে আটকে দিতে বিরোধীরাও সব ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি মেইন অঙ্গরাজ্যের সেক্রেটারি অব স্টেট জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য নিউ ইংল্যান্ডের ‘প্রাইমারি ব্যালট’ বরাদ্দ রাখা হবে না।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সাবেক প্রেসিডেন্টকে এমন নিষ্ঠুর নিন্দার মুখে পড়তে হয়নি।
মেইনের শীর্ষ নির্বাচনী কর্মকর্তা শেনা বেলাওস ৩৪ পাতার শুনানিতে বলেন, এরআগে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বিদ্রোহে জড়াননি, যেটা ট্রাম্প করেছেন। আমাদের সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠানে হামলা মার্কিন সংবিধান বরদাশত করে না।
কলোরাডোর পর দ্বিতীয় রাজ্য হিসেবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণে ট্রাম্পকে অযোগ্য ঘোষণা করে মেইন। ডিসেম্বরের শুরুতে রাজ্য সুপ্রিম কোর্টের শুনানির পর একই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কলোরাডো।
জানুয়ারিতে আইওয়া ও নিউ হ্যাম্পশায়ারে প্রাইমারি ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই রাজ্য দুটির নির্বাচনে তিনি অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
মার্চের শুরুতে মেইন ও কলোরাডো রাজ্যে প্রেসিডেন্টশিয়াল প্রাইমারি হবে। সেখান থেকে যে ফল বেরিয়ে আসবে, তাতে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হয়ে যাবে। ট্রাম্পকে ভোটবঞ্চিত করার যে সিদ্ধান্ত রাজ্য দুটি নিয়েছে, মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে তা বাতিল হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের বিজয় অস্বীকারের যে নজিরবিহীন চেষ্টা ডোনাল্ড ট্রাম্প করেছেন, মেইন ও কলোরাডোর সিদ্ধান্ত সেই কথাই মার্কিন ভোটারদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। ট্রাম্প কেবল নিজের পরাজয়কেই অস্বীকার করেননি, বিদ্রোহের মাধ্যমে ভোটের ফলও উল্টে দিতে চেয়েছেন।
 ট্রাম্প দেখাতে চেয়েছেন যে তিনি রাজনৈতিকভাবে নিগ্রহের শিকার। এর মধ্য দিয়ে রিপাবলিকান দলের মধ্যে তিনি ব্যাপক সহানুভূতি কুড়িয়েছেন।
মার্কিন জরিপব্লগ ফাইভ থার্টিএইট ডটকমের হিসাব বলছে, রিপাবলিকান দলের ভোটারদের মধ্যে অন্তত ৬১ শতাংশ সমর্থন রয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের। তার নিকটবর্তী ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিস ও জাতিসংঘে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিক্কি হ্যালির চেয়ে তিনি ৫০ শতাংশ পয়েন্ট এগিয়ে রয়েছেন।
এ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের চেয়ে ট্রাম্প এগিয়ে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প যে অরাজকতা তৈরি করেন কিংবা মার্কিন গণতন্ত্রের জন্য তিনি যে হুমকি, দোদুল্যমান ভোটরসহ অনেক ডেমোক্র্যাটও তা উপেক্ষা করে যেতে পারেন পুরোপুরি। তিনি প্রেসিডেন্ট পদে লড়তে চাইলে অন্য রাজ্যগুলোও তাতে বাধা দিতে অনিচ্ছুক।
চলতি সপ্তাহেরই ঘটনা। প্রাইমারি ব্যালট থেকে সাবেক এই প্রেসিডেন্টের নাম প্রত্যাহারে রাজি হয়নি সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য ক্যালিফোর্নিয়া। রাজ্যটির ডেমোক্র্যাটিক গভর্নর গ্যাভিন নিউসামই এই বিরোধিতা করেন।
গ্যাভিন বলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে ট্রাম্প আমাদের স্বাধীনতার জন্য হুমকি, এমনকি আমাদের গণতন্ত্রের জন্যও । কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়ায় একজন প্রার্থীকে আমরা ভোটের মাধ্যমে হারাতে চাই। এর বাইরে কিছু ঘটলে তা হবে রাজনৈতিক বিভ্রান্তি।
মার্কিন সংবিধানের চৌদ্দতম সংশোধনীর ওপর ভিত্তি করে প্রেসিডেন্ট পদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রার্থিতাকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে। উনিশ শতকের গৃহযুদ্ধের পর এই সংশোধনী আনা হয়ছিল।
সংবিধান অনুসারে শপথ নেয়ার পর কোনো ব্যক্তি যদি সেটির বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ করেন, তবে সরকারি পদে তিনি কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে তাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য যে কয়েকটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তার মধ্যে এটি অন্যতম। এ ছাড়াও প্রার্থীকে অন্তত ৩৫ বছর বয়সী এবং যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জন্ম নেয়া নাগরিক হতে হবে।
প্রতিটি রাজ্যের প্রাইমারি ও সাধারণ নির্বাচনে ট্রাম্পকে অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া হলেও ২০২৪ সালের পুরোটা সময় তার বিচারিক ঝক্কিই সামলাতে হবে। নির্বাচনী প্রচারেও এটির আধিপত্য বহাল থাকবে।
জর্জিয়া, ফ্লোরিডা, নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটন ডিসিতে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য কৌঁসুলিরা তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা করেছেন। এসব মামলার মোকাবিলা করতে হবে ট্রাম্পকে। ব্যবসায়িক নথি জাল করা, স্পর্শকাতর সরকারি নথির অব্যবস্থাপনা ও ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল উল্টে দেয়ার চেষ্টা করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
তবে নির্বাচনী প্রচারে কোনো কিছুকেই পাত্তা দিচ্ছে না ট্রাম্পশিবির। মেইন, কলোরাডোর মতো রাজ্যের প্রাইমারিতে তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হলেও তা আমলে নিচ্ছেন না তারা। 
ট্রাম্পের প্রচার মুখপাত্র স্টিফেন চুয়াং বলেন, ভোটচুরির চেষ্টা কিংবা মার্কিন ভোটারদের অধিকারহরণের যে চেষ্টা করা হচ্ছে, তা আমরা দেখতে পাচ্ছি। বাইডেন ও ডেমোক্র্যাটদের ‘অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনে মার্কিন ভোটারদের প্রতি আস্থা নেই। যে কারণে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ভর করে তারা ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছে।
৬ জানুয়ারির বিদ্রোহের জন্য বাইডেনের কঠোর সমালোচনা করেন শেন্না বেলাওস। ২০২৪ সালের প্রাইমারি নির্বাচনের প্রচার যখন উত্তাপ ছড়াচ্ছে, তখনও যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সেই ঘটনার প্রতিফলনের শঙ্কা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সেদিন সহিংসতার শঙ্কা নিয়ে ট্রাম্প পুরোপুরিই সতর্ক ছিলেন। কিন্তু তা বন্ধ করার বদলে উত্তপ্ত রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে তাতে সমর্থন যুগিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট হলে ট্রাম্পকে ক্ষমা করবেন ডিস্যান্টিস
ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিস বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বর্তমানে চালু কয়েক ডজন ফৌজদারি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলেও তাকে ক্ষমা করবেন। তিনি মনে করেন দেশের সর্বোত্তম স্বার্থে ক্ষমা করা দরকার। 
ডিস্যান্টিস বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের একটি দেশ হিসেবে এগিয়ে যেতে হবে। আপনারা জানেন, ফোর্ডও নিক্সনের সাথে অনুরূপ আচরণ করেছিলেন, কারণ বিভাজনগুলো দেশের স্বার্থে নয়।’
২৯ ডিসেম্বর শুক্রবার আইওয়াতে একটি প্রচারণা অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ের সময় ডিস্যান্টিস এসব কথা বলেন।
২০২৩ সালের মে মাসে প্রচারাভিযান শুরুর পর থেকে ডিসান্টিস এই ধরনের ক্ষমার জন্য খোলাখুলি কথা বলেন। তবে এবার তার মন্তব্য থেকে বুঝা যায় তিনি প্রথমবারের মতো ট্রাম্পকে অভিযোগ থেকে বাঁচাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ট্রাম্পকে সাহায্যের জন্য ডিস্যান্টিসের প্রেসিডেন্সি কি পরিমাণে এগিয়ে আসতে পারে তার একটা সীমা আছে। তবে জর্জিয়ায় কারসাজির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলে ট্রাম্পকে জর্জিয়া স্টেট বোর্ড অফ পারডনস অ্যান্ড প্যারোলস প্যানেলে আপিল করতে হবে।
হোয়াইট হাউসে জয়ী হলে ট্রাম্পকে বিশেষভাবে ক্ষমা করবেন কিনা তা নিয়ে আবার চাপ দেওয়া হলে, ডিসান্টিস আবারও বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি কয়েক মাস আগে একথা বলেছি।’ 
তিনি বেলন, ‘আমি যা বলেছি তা খুবই সহজ। আমি দেশের জন্য যা সঠিক তা করতে যাচ্ছি। আমি মনে করি না যে প্রায় ৮০ বছর বয়সী একজন সাবেক প্রেসিডেন্টকে কারাগারে যাওয়া দেশের পক্ষে ভালো হবে।’
সম্ভাব্য আরেক রিপাবলিকান দলীয় প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জাতিসংঘের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি ২৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার নিউ হ্যাম্পশায়ারে একটি প্রচারাভিযানে ডিস্যান্টিসের অনুরূপ যুক্তি তুলে ধরেন। 
দর্শকদের এক প্রশ্নের জবাবে হ্যালি বলেন, ‘ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হলে আমি ক্ষমা করে দিব। দেশের বৃহত্তর স্বার্থ কি- তা একজন নেতাকে ভাবতে হবে। ৮০ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে কারাগারে রেখে দেশকে বিভক্ত না করাই শ্রেয়। সর্বোত্তম স্বার্থ কী? আমরা যাতে একটি দেশ হিসেবে এগিয়ে যেতে পারি এবং তার সম্পর্কে আর কথা না হয়- এজন্য তাকে ক্ষমা করা হবে।’ হ্যালির এই মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন সহকর্মী রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ক্রিস ক্রিস্টি। 
ট্রাম্পের অন্যতম সমালোচক নিউজার্সির প্রাক্তন গভর্নর ক্রিস্টি বলেন, ‘আমাদের এই সম্পর্কে সত্য বলা দরকার।’
তিনি নিউ হ্যাম্পশায়ারের সীকোস্ট অঞ্চলে এক অনুষ্ঠানে ভোটারদের বলেন, ট্রাম্পকে ক্ষমা করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘বিশ্বজুড়ে এই টিনের পাত্রের গণতন্ত্রের চেয়ে বেশি ভালো করে তুলবে না।’
জিওপি প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বিবেক রামাস্বামী বলেন, তিনি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমা করাকে সমর্থন করেন এবং এটি দেশকে পুনরায় একত্রিত করতে সহায়তা করবে। 
ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে চারটি ফৌজদারি মামলায় কয়েক ডজন অপরাধমূলক অভিযোাগের মোকাবেলা করছেন।
(প্রথম পাতার পর)
ইউএস ক্যাপিটল দাঙ্গা-হাঙ্গামা সমর্থন করার অভিযোগে সাংবিধানিক অনুচ্ছেদের আওতায় ট্রাম্পকে অযোগ্য ঘোষণা করেন।
এর এক সপ্তাহ আগে কলারাডোর সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্পকে অযোগ্য ঘোষণা করেছিলেন। তবে মেইন ও কলারাডো উভয় স্টেটের রুলিং মূলত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা এবং উচ্চ আদালতের পুনঃসিদ্ধান্তের ওপর এগুলোর কার্যকারিতা নির্ভরশীল। এদিকে ট্রাম্পের আইনজীবীরাও আপিল করার সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করেছেন। ইতিমধ্যে ট্রাম্পের আইনজীবীরা মেইনের স্টেট সেক্রেটারি বেলৌজের সিদ্ধান্তের পাঁচ দিনের মধ্যে ২ জানুয়ারি মঙ্গলবার মেইনের সুপেরিয়র কোর্টে আপিল করেছেন বলে জানা গেছে।
মিশিগান সুপ্রিম কোর্ট : মিশিগান স্টেটের ২০২৪ রিপাবলিকান প্রাইমারি ব্যালটে নাম স্থান পাওয়া প্রশ্নে মিশিগান সুপ্রিম কোর্ট সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে রায় দিয়েছেন। মূলত কিছুসংখ্যক মিশিগান ভোটারের পক্ষে ওয়াশিংটনভিত্তিক ‘দ্য ওয়াচ ডগ ফ্রি স্পিচ ফর পিপল’ শীর্ষক সংস্থা মিশিগান স্টেটের রিপাবলিকান ব্যালটে ট্রাম্পের নাম অন্তর্ভুক্তি নিষিদ্ধ করার জন্য একটি  মামলা মিশিগান কোর্ট অব আপিলসে রুজু করেছিল। আপিল কোর্ট ওই মামলাটি ডিসেম্বরের গোড়ার দিকে খারিজ করে দিয়েছিলেন। তবে সম্প্রতি কলারাডো সুপ্রিম কোর্ট ব্যাটেলগ্রাউন্ড (যুদ্ধক্ষেত্র) স্টেট হিসেবে পরিচিত কলারাডোর জিওপি প্রাইমারি ব্যালটে ট্রাম্পের নাম অন্তর্ভুক্তি নিষিদ্ধ করায় ফ্রি স্পিচ ফর পিপল নামের সংস্থাটি আপিল কোর্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মিশিগান সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হয়েছিল। অবশেষে মিশিগান সুপ্রিম কোর্ট প্রসিডিউরাল গ্রাউন্ডে আপিলটি খারিজ করে দেওয়ায় বস্তুত মিশিগান আপিল কোর্টের রুলিংয়ের কার্যকারিতা বহাল থাকল।
ক্যালিফোর্নিয়া সুপ্রিম কোর্ট : ক্যালিফোর্নিয়া স্টেটের ডেমোক্র্যাটিক লেফটেন্যান্ট গভর্নর এলেনিট কুনালাকিস চতুর্দশ সংশোধনীর ৩ অনুচ্ছেদের দোহাই দিয়ে ট্রাম্পকে অযোগ্য ঘোষণা করা সত্ত্বেও সেক্রেটারি অব স্টেট শার্লি ওয়েবার ২০২৪ রিপাবলিকান প্রাইমারি ব্যালটে ট্রাম্পের নাম রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন। ডেমোক্র্যাট ওয়েবার গত ২৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ক্যালিফোর্নিয়ার ৫ মার্চ ২০২৪ প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাইমারি নির্বাচনের দাপ্তরিক প্রার্থী তালিকা সার্টিফাই করেছেন।
স্পেশাল কাউন্সেল স্মিথ : প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ভিত্তির প্রতি ভয় দেখানোর অভিযোগের দায় থেকে ট্রাম্প অব্যাহতিপ্রাপ্তÑসাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওই দাবি নাকচ করার জন্য কলাম্বিয়া সার্কিট ডিস্ট্রিক্টের ইউএস আপিলস কোর্টে অনুরোধ জানিয়েছেন স্পেশাল কাউন্সেল জ্যাক স্মিথ। স্মর্তব্য, গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী হাউসে পাস হওয়া অনুচ্ছেদ-৩ এর ভিত্তি একেবারেই দুর্বল এবং এর আওতাও তেমন সম্প্রসারিত নয়। জিওপি ব্যালটে ট্রাম্পের নাম অন্তর্ভুক্তি প্রশ্নে অনুচ্ছেদ-৩ এর জোরেশোরে দোহাই দেওয়া হলেও ইতিপূর্বে এর বাস্তব প্রয়োগ ঘটেনি। এমন বাস্তবতায় স্মিথ চতুর্দশ সংশোধনীর অনুচ্ছেদ-৩ এর বরাত দিয়ে ট্রাম্পের দাবি খারিজের অনুরোধ জানালেও মূলত তার ভাগ্য নির্ভর করবে ইউএস সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের ওপর।
ইউএস সুপ্রিম কোর্ট : কলারাডো, মেইন, মিশিগান, ক্যালিফোর্নিয়াসহ আমেরিকার প্রায় ৩০টি স্টেটে ২০২৪ রিপাবলিকান প্রাইমারি ব্যালটে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নাম অন্তর্ভুক্তি প্রশ্নে আইনি লড়াইয়ের পর্যাপ্ত সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় ইউএস. সুপ্রিম কোর্টই ট্রাম্পের শেষ ভরসাস্থল বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
নজিরবিহীন নির্বাচনে ফের ক্ষমতায় ফিরছেন ট্রাম্প!
আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে বেশ উত্তেজনার মধ্যেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সময়। চলতি জানুয়ারিতেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রাইমারি ভোট শুরু হতে যাচ্ছে। আগামী ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে ফের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের লড়াইয়ের আভাসও মিলছে। যদি তা-ই ঘটে, আর জো বাইডেন হেরে যান; তাহলে ১৩১ বছর আগের ঘটনারই পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে দেশটিতে।
একজন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট তার চার বছর আগের পুরোনো প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে লড়ে হেরে গেছেনÑ মার্কিন ইতিহাসে এ রকম ঘটনা কেবল একবার ঘটেছে, ১৮৯২ সালে। তখন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন হ্যারিসনকে পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইট হাউসে যান স্টিফেন গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড।
অর্থাৎ ডেমোক্র্যাট দলীয় ক্লিভল্যান্ড দুবার প্রেসিডেন্ট হলেও সেখানে ধারাবাহিকতা ছিল না। প্রথমে বেঞ্জামিন হ্যারিসন তখনকার প্রেসিডেন্ট ক্লিভল্যান্ডকে পরাজিত করেন। পরের বার হ্যারিসনকে হারিয়ে ফের প্রেসিডেন্ট হন পূর্বসূরি ক্লিভল্যান্ড। যুক্তরাষ্ট্রের বাইশ ও চব্বিশতম প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। ২০২৪ সালের নির্বাচনে সেই ১৩১ বছর আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
রিপাবলিকান দলের সাধারণ ভোটারদের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। তারা তাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করেন। কারণ তৃণমূল পর্যায়ের সমর্থকদের তিনি বোঝাতে পেরেছেন যে ২০২০ সালের নির্বাচনের ফল তার কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে।
এরমধ্য দিয়ে নিজেকে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হিসেবে তৈরি করে নিয়েছেন ট্রাম্প। অবিশ্বাস্য হলেও এই সত্য অস্বীকার করা যায় না।
তবে ট্রাম্পকে আটকে দিতে বিরোধীরাও সব ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি মেইন অঙ্গরাজ্যের সেক্রেটারি অব স্টেট জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য নিউ ইংল্যান্ডের ‘প্রাইমারি ব্যালট’ বরাদ্দ রাখা হবে না।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সাবেক প্রেসিডেন্টকে এমন নিষ্ঠুর নিন্দার মুখে পড়তে হয়নি।
মেইনের শীর্ষ নির্বাচনী কর্মকর্তা শেনা বেলাওস ৩৪ পাতার শুনানিতে বলেন, এরআগে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বিদ্রোহে জড়াননি, যেটা ট্রাম্প করেছেন। আমাদের সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠানে হামলা মার্কিন সংবিধান বরদাশত করে না।
কলোরাডোর পর দ্বিতীয় রাজ্য হিসেবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণে ট্রাম্পকে অযোগ্য ঘোষণা করে মেইন। ডিসেম্বরের শুরুতে রাজ্য সুপ্রিম কোর্টের শুনানির পর একই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কলোরাডো।
জানুয়ারিতে আইওয়া ও নিউ হ্যাম্পশায়ারে প্রাইমারি ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই রাজ্য দুটির নির্বাচনে তিনি অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
মার্চের শুরুতে মেইন ও কলোরাডো রাজ্যে প্রেসিডেন্টশিয়াল প্রাইমারি হবে। সেখান থেকে যে ফল বেরিয়ে আসবে, তাতে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হয়ে যাবে। ট্রাম্পকে ভোটবঞ্চিত করার যে সিদ্ধান্ত রাজ্য দুটি নিয়েছে, মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে তা বাতিল হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের বিজয় অস্বীকারের যে নজিরবিহীন চেষ্টা ডোনাল্ড ট্রাম্প করেছেন, মেইন ও কলোরাডোর সিদ্ধান্ত সেই কথাই মার্কিন ভোটারদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। ট্রাম্প কেবল নিজের পরাজয়কেই অস্বীকার করেননি, বিদ্রোহের মাধ্যমে ভোটের ফলও উল্টে দিতে চেয়েছেন।
 ট্রাম্প দেখাতে চেয়েছেন যে তিনি রাজনৈতিকভাবে নিগ্রহের শিকার। এর মধ্য দিয়ে রিপাবলিকান দলের মধ্যে তিনি ব্যাপক সহানুভূতি কুড়িয়েছেন।
মার্কিন জরিপব্লগ ফাইভ থার্টিএইট ডটকমের হিসাব বলছে, রিপাবলিকান দলের ভোটারদের মধ্যে অন্তত ৬১ শতাংশ সমর্থন রয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের। তার নিকটবর্তী ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিস ও জাতিসংঘে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিক্কি হ্যালির চেয়ে তিনি ৫০ শতাংশ পয়েন্ট এগিয়ে রয়েছেন।
এ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের চেয়ে ট্রাম্প এগিয়ে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প যে অরাজকতা তৈরি করেন কিংবা মার্কিন গণতন্ত্রের জন্য তিনি যে হুমকি, দোদুল্যমান ভোটরসহ অনেক ডেমোক্র্যাটও তা উপেক্ষা করে যেতে পারেন পুরোপুরি। তিনি প্রেসিডেন্ট পদে লড়তে চাইলে অন্য রাজ্যগুলোও তাতে বাধা দিতে অনিচ্ছুক।
চলতি সপ্তাহেরই ঘটনা। প্রাইমারি ব্যালট থেকে সাবেক এই প্রেসিডেন্টের নাম প্রত্যাহারে রাজি হয়নি সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য ক্যালিফোর্নিয়া। রাজ্যটির ডেমোক্র্যাটিক গভর্নর গ্যাভিন নিউসামই এই বিরোধিতা করেন।
গ্যাভিন বলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে ট্রাম্প আমাদের স্বাধীনতার জন্য হুমকি, এমনকি আমাদের গণতন্ত্রের জন্যও । কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়ায় একজন প্রার্থীকে আমরা ভোটের মাধ্যমে হারাতে চাই। এর বাইরে কিছু ঘটলে তা হবে রাজনৈতিক বিভ্রান্তি।
মার্কিন সংবিধানের চৌদ্দতম সংশোধনীর ওপর ভিত্তি করে প্রেসিডেন্ট পদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রার্থিতাকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে। উনিশ শতকের গৃহযুদ্ধের পর এই সংশোধনী আনা হয়ছিল।
সংবিধান অনুসারে শপথ নেয়ার পর কোনো ব্যক্তি যদি সেটির বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ করেন, তবে সরকারি পদে তিনি কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে তাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য যে কয়েকটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তার মধ্যে এটি অন্যতম। এ ছাড়াও প্রার্থীকে অন্তত ৩৫ বছর বয়সী এবং যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জন্ম নেয়া নাগরিক হতে হবে।
প্রতিটি রাজ্যের প্রাইমারি ও সাধারণ নির্বাচনে ট্রাম্পকে অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া হলেও ২০২৪ সালের পুরোটা সময় তার বিচারিক ঝক্কিই সামলাতে হবে। নির্বাচনী প্রচারেও এটির আধিপত্য বহাল থাকবে।
জর্জিয়া, ফ্লোরিডা, নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটন ডিসিতে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য কৌঁসুলিরা তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা করেছেন। এসব মামলার মোকাবিলা করতে হবে ট্রাম্পকে। ব্যবসায়িক নথি জাল করা, স্পর্শকাতর সরকারি নথির অব্যবস্থাপনা ও ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল উল্টে দেয়ার চেষ্টা করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
তবে নির্বাচনী প্রচারে কোনো কিছুকেই পাত্তা দিচ্ছে না ট্রাম্পশিবির। মেইন, কলোরাডোর মতো রাজ্যের প্রাইমারিতে তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হলেও তা আমলে নিচ্ছেন না তারা। 
ট্রাম্পের প্রচার মুখপাত্র স্টিফেন চুয়াং বলেন, ভোটচুরির চেষ্টা কিংবা মার্কিন ভোটারদের অধিকারহরণের যে চেষ্টা করা হচ্ছে, তা আমরা দেখতে পাচ্ছি। বাইডেন ও ডেমোক্র্যাটদের ‘অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনে মার্কিন ভোটারদের প্রতি আস্থা নেই। যে কারণে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ভর করে তারা ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছে।
৬ জানুয়ারির বিদ্রোহের জন্য বাইডেনের কঠোর সমালোচনা করেন শেন্না বেলাওস। ২০২৪ সালের প্রাইমারি নির্বাচনের প্রচার যখন উত্তাপ ছড়াচ্ছে, তখনও যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সেই ঘটনার প্রতিফলনের শঙ্কা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সেদিন সহিংসতার শঙ্কা নিয়ে ট্রাম্প পুরোপুরিই সতর্ক ছিলেন। কিন্তু তা বন্ধ করার বদলে উত্তপ্ত রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে তাতে সমর্থন যুগিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট হলে ট্রাম্পকে ক্ষমা করবেন ডিস্যান্টিস
ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিস বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বর্তমানে চালু কয়েক ডজন ফৌজদারি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলেও তাকে ক্ষমা করবেন। তিনি মনে করেন দেশের সর্বোত্তম স্বার্থে ক্ষমা করা দরকার। 
ডিস্যান্টিস বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের একটি দেশ হিসেবে এগিয়ে যেতে হবে। আপনারা জানেন, ফোর্ডও নিক্সনের সাথে অনুরূপ আচরণ করেছিলেন, কারণ বিভাজনগুলো দেশের স্বার্থে নয়।’
২৯ ডিসেম্বর শুক্রবার আইওয়াতে একটি প্রচারণা অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ের সময় ডিস্যান্টিস এসব কথা বলেন।
২০২৩ সালের মে মাসে প্রচারাভিযান শুরুর পর থেকে ডিসান্টিস এই ধরনের ক্ষমার জন্য খোলাখুলি কথা বলেন। তবে এবার তার মন্তব্য থেকে বুঝা যায় তিনি প্রথমবারের মতো ট্রাম্পকে অভিযোগ থেকে বাঁচাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ট্রাম্পকে সাহায্যের জন্য ডিস্যান্টিসের প্রেসিডেন্সি কি পরিমাণে এগিয়ে আসতে পারে তার একটা সীমা আছে। তবে জর্জিয়ায় কারসাজির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলে ট্রাম্পকে জর্জিয়া স্টেট বোর্ড অফ পারডনস অ্যান্ড প্যারোলস প্যানেলে আপিল করতে হবে।
হোয়াইট হাউসে জয়ী হলে ট্রাম্পকে বিশেষভাবে ক্ষমা করবেন কিনা তা নিয়ে আবার চাপ দেওয়া হলে, ডিসান্টিস আবারও বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি কয়েক মাস আগে একথা বলেছি।’ 
তিনি বেলন, ‘আমি যা বলেছি তা খুবই সহজ। আমি দেশের জন্য যা সঠিক তা করতে যাচ্ছি। আমি মনে করি না যে প্রায় ৮০ বছর বয়সী একজন সাবেক প্রেসিডেন্টকে কারাগারে যাওয়া দেশের পক্ষে ভালো হবে।’
সম্ভাব্য আরেক রিপাবলিকান দলীয় প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জাতিসংঘের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি ২৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার নিউ হ্যাম্পশায়ারে একটি প্রচারাভিযানে ডিস্যান্টিসের অনুরূপ যুক্তি তুলে ধরেন। 
দর্শকদের এক প্রশ্নের জবাবে হ্যালি বলেন, ‘ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হলে আমি ক্ষমা করে দিব। দেশের বৃহত্তর স্বার্থ কি- তা একজন নেতাকে ভাবতে হবে। ৮০ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে কারাগারে রেখে দেশকে বিভক্ত না করাই শ্রেয়। সর্বোত্তম স্বার্থ কী? আমরা যাতে একটি দেশ হিসেবে এগিয়ে যেতে পারি এবং তার সম্পর্কে আর কথা না হয়- এজন্য তাকে ক্ষমা করা হবে।’ হ্যালির এই মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন সহকর্মী রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ক্রিস ক্রিস্টি। 
ট্রাম্পের অন্যতম সমালোচক নিউজার্সির প্রাক্তন গভর্নর ক্রিস্টি বলেন, ‘আমাদের এই সম্পর্কে সত্য বলা দরকার।’
তিনি নিউ হ্যাম্পশায়ারের সীকোস্ট অঞ্চলে এক অনুষ্ঠানে ভোটারদের বলেন, ট্রাম্পকে ক্ষমা করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘বিশ্বজুড়ে এই টিনের পাত্রের গণতন্ত্রের চেয়ে বেশি ভালো করে তুলবে না।’
জিওপি প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বিবেক রামাস্বামী বলেন, তিনি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমা করাকে সমর্থন করেন এবং এটি দেশকে পুনরায় একত্রিত করতে সহায়তা করবে। 
ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে চারটি ফৌজদারি মামলায় কয়েক ডজন অপরাধমূলক অভিযোাগের মোকাবেলা করছেন।
 

কমেন্ট বক্স