Thikana News
০৭ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা রবিবার, ০৭ জুলাই ২০২৪

মায়ের মুখে খোকা ডাক

মায়ের মুখে খোকা ডাক
মোহাম্মদ সোহরাব আলী

খোকা, ভালো আছিস রে বাবা। কত দিন তোর খোঁজখবর জানি না রে বেটা। বুকটা ফেটে যায় রে বাজান। কী খাস না খাস নিজ চোখে দেখতে পারি না রে খোকা। একটা ভালো মাছ রান্না করলে তোর কথা কত মনে পড়ে। খোকা, তোরে ছাড়া আমার সেই মাছ খেতে ইচ্ছা করে না। তোর কথা মনে পড়লে মনের অগোচরে চোখে পানি চলে আসে। কোনো কিছু আর ভালো লাগে না রে বেটা। অন্যরা সব চোখের সামনে থাকলেও তুই থাকিস প্রবাসে। কত অনুষ্ঠান হয় বাড়িতে, যেমন সুন্নাতে খাতনা ও বিয়ে। কত জায়গা থেকে কত আত্মীয়স্বজন এসে কত মজা করে। সবাই একসঙ্গে বসে খাওয়াদাওয়া ও গল্পগুজব করে, কিন্তু আমার একটুও ভালো লাগে না রে খোকা। একবার ছুটে যাই এদিকে আবার ওদিকে। মাঝে মাঝে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে খোকা বলে ডাকি। বাবা, তোর রুমে তোর একটা ছবি ঝোলানো আছে, সেই রুমে গিয়ে একাগ্রচিত্তে ছবির দিকে তাকিয়ে দেখি আর বলি কী সুন্দর আমার কলিজা বেটারে, কোথায় সাত নদী তেরো বিল পাড়ি দিয়ে প্রবাসে পড়ে আছে। কবে আসবে কাছে? পাশে দাঁড়িয়ে মা বলে ডাক দেবে আর সেই ডাক শুনে আমার কলিজা জুড়ে যাবে।

মায়ের ভালোবাসা কোনো ভালোবাসার সঙ্গে তুলনা হয় না। একমাত্র মা স্বার্থহীনভাবে ভালোবাসে। একজন মা সব সময় চায় তার সন্তানেরা থাকুক দুধে-ভাতে। সব সন্তান মায়ের কাছে সমান। মায়ের মন সবার জন্য কাঁদে। মা নিজে না খেয়ে সেই খাবার সন্তানদের দেয়। সন্তান অসুস্থ হলে মায়ের চিন্তার শেষ থাকে না। মা সারা রাত জেগে সেবাযত্ন করে।

আমরা যেখানে যাই, সেখানেই মায়ের কথা মনে পড়ে। যারা প্রবাসে থাকে, তাদের আরও বেশি মনে পড়ে। জীবনের সুখ-দুঃখের কথা আমরা মায়ের কাছে কত বলি। মায়ের সঙ্গে কথা বলার সময় মা খোকা বলে ডাক দিলে প্রাণ যায় ভরে। আমরা হেসে কথা বললেও মা দেয় কেঁদে। মা কত চিন্তা করে আমাদের নিয়ে। যার মা দুনিয়াতে বেঁচে নেই, তার মতো এতিম ও অসহায় কেউ নেই। মা ছাড়া দুনিয়া অন্ধকার মনে হয়। পৃথিবীতে আমরা কতজনকে দেখি কিন্তু মায়ের মতো কাউকে খুঁজে পাই না। গানে বলেÑবিদেশে যদি কারও বেটা মারা যায়, সবার আগে জানে তার মা। মা বেঁচে থাকতে তার মূল্যায়ন আমরা করি না কিন্তু যখন আর ভবে থাকে না আমরা বুঝি কী মধু আমরা হারিয়েছি।
মনে পড়ে ছোটবেলার কত স্মৃতি। বাইরে থেকে আসতে দেরি হলে মা খোকা বলে ডাক দিত। খোকা কোথায় গেল। এত বেলা হলো বাড়িতে আসে না কেন? ভাত বেড়ে টেবিলের ওপর রেখে খোকাকে খোঁজাখুঁজি করতে বের হয়। মা দুধ-ভাত সবরি কলা দিয়ে মাখিয়ে চাঁদমামার গান বলে আমাদের খাইয়ে দিত। কী সুন্দর করে আম্মু গোসল করিয়ে দিত। সুন্দর করে জামাকাপড় পরিয়ে, হাতে-পায়ে সুন্দর করে তেল মাখিয়ে, চিরুনি দিয়ে সুন্দর করে মাথা আঁচড়ে দিয়ে স্কুলে পাঠাত। স্কুল থেকে বাসায় এলে খোকা বলে কোলে তুলে নিত।

যাদের জন্মধারিণী মা আর দুনিয়াতে বেঁচে নেই, তারা জানে মা হারানোর কী বেদনা? প্রবাসে যারা থাকে, তারা অনেক সময় মাকে শেষ বারের মতো দেখতেও পারে না। তাদের মনে কী যে বেদনা থাকে? মায়ের সেই খোকা ডাকটা তারা আর শুনতে পারে না। ঈদের দিনে প্রবাসীদের মনে ভেসে ওঠে মায়ের কত কথা। মা কত রকম খাবার রান্না করত ঈদের দিনে।

ঈদের দিনে মায়ের সঙ্গে কথা বললে মন যায় ভালো হয়ে। আর মায়ের মুখে সেই খোকা ডাক শুনলে মনে আনন্দের সুবাতাস প্রবাহিত হতে থাকে। যাদের মা আর বেঁচে নেই, তাদের মায়ের কথা মনে পড়লেই কাঁদে নীরবে আর নিভৃতে। প্রবাসীদের জীবনে কত দুঃখ যে থাকে। মায়ের সঙ্গে কথা বলে মা যদি বলে ভালো আছে, তাদের মন যায় আনন্দে ভরে, তখন দুঃখ যে কোথায় চলে যায়। মা অসুস্থ থাকলে মায়ের সেবাযত্ন ও চিকিৎসার জন্য প্রবাসীরা টাকা পাঠান। মা সুস্থ হয়ে উঠলে তারা কত যে খুশি হন।

মা ছাড়া কত লোকই তো খোকা বলে ডাকে কিন্তু মায়ের খোকা ডাকে জাদু লুকিয়ে আছে। মায়ের কাছে তার ছেলেমেয়ে বড় হয়ে গেলেও খোকাই থাকে। মা সব সময় বলে সাবধানে চল। মা কত চিন্তা করে ছেলেমেয়েদের নিয়ে। প্রবাসে থেকেও মায়ের সঙ্গে কথা বললে মন আনন্দে ভরে যায়। মা মরে যাওয়ার পরে মনটা কত কাঁদে। আমরা মিস করি তার খোকা ডাক। দেশে গেলে সবাইকে দেখতে পারলেও মাকে আর দেখতে পাই না। কারণ মা সৃষ্টিকর্তার ডাকে পরপারে চলে গেছে। সৃষ্টিকর্তা যেন সব মাকে জান্নাত দান করেন, যারা তাঁর ডাকে চলে গেছে দুনিয়া ছেড়ে।
 

কমেন্ট বক্স