Thikana News
০৪ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪
সাহিত্য একাডেমির আসরে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা

‘এ আসরে আমার গুরু, কবি শহীদ কাদরীকে আমি দেখতে পাচ্ছি’ 

‘এ আসরে আমার গুরু, কবি শহীদ কাদরীকে আমি দেখতে পাচ্ছি’ 
‘সাহিত্য একাডেমি, নিউইয়র্ক’র মাসিক সাহিত্য আসর গত ৩১ মে জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারে আয়োজন করা হয়। এবারের আসরে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। পুরো আসরটি পরিচালনায় ছিলেন একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন। আবৃত্তিকার পারভীন সুলতানার আবৃত্তির মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, এ আসরে আমার গুরু, কবি শহীদ কাদরীকে আমি দেখতে পাচ্ছি। ভালো লাগছে তিনি এসেছিলেন বলেই বদলে গেছে এ শহরটি। তাঁর তিরোধানের পর তাঁকে আবার ধারণ করেছে বাংলার মাটি-মা। আমি তখনই বুঝতে পেরেছি, যতদূরেই যাক, তিনি বাংলার মাটিতেই থাকেন, বাংলার আকাশেই থাকেন, অথবা বাংলা বিস্তারে থাকেন। কবিতার পাদ্রি কবি শহীদ কাদরীর অন্তর থেকে উঠে আসা সৃষ্টিশীলতার এক প্রবাহ, যে প্রবাহ তিনি রেখেছিলেন বাংলাদেশে, সে প্রবাহের অনুরূপ একটি প্রবাহ তিনি সৃষ্টি কর‍তে পেরেছেন এই শহরে এবং সাহিত্য একাডেমিতে এর চর্চা আমি দেখতে পাচ্ছি।

স্বীকার করতে চাই, আজ সাহিত্য একাডেমিতে যে কবিতাগুলো শুনেছি, অধিকাংশ কবিতা আমার ভালো লেগেছে। তবে কিছু কিছু কবিতায় ব্যাকরণের যে প্রক্রিয়া আছে, তার অভাব আছে, সেটিও লক্ষ্য করেছি।
কবিতার আরেকটি বিষয় আছে, সেটি হলো- বোধ থেকে যে কথাগুলো উৎসারিত হয়, সেটি অবশ্যই কবিতা হয়ে যায়। সে ছন্দকে আমরা বলি বোধের ছন্দ, সেটা অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত, স্বরবৃত্ত ছন্দ না। আপনি যদি প্রকৃত কবি হতে চান, তাহলে কবিতার ব্যাকরণ শেখা ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা নেই।
সঙ্গীতজ্ঞ মুত্তালিব বিশ্বাস বলেন, ‘যতদূর বাংলা ভাষা, ততদূর এই বাংলাদেশ’ কথাটি যদি সত্য হয়, তাহলে আমি একজন ভালো বাঙালি। আমার জন্ম ভারতে, ওখানে বাঙালি ছিলাম, পরে বাংলাদেশে এলাম, এখন আমেরিকার নাগরিক। তিন দেশ ঘুরে আমি বাঙালিই রয়ে গেলাম। সাহিত্য একাডেমির শুরু থেকেই আছি, ভালোলাগা থেকে পারতপক্ষে তখন কোন আসর মিস করতাম না। ২০২০ সাল থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করায় এখন নিয়মিত আসতে পারি না। আমার প্রিয় স্থান সাহিত্য একাডেমিতে আজকে এসেছি আপনাদেরকে দেখতে, দেখা দিতে নয়। সাহিত্য একাডেমির আসরে সবার স্বরচিত পাঠ, সাহিত্য আলোচনা শুনে অবাক হয়ে ভাবি, এরা এত জ্ঞান রাখে! তো, আজকেও আমি কিছু বলতে আসিনি, এসেছি শুনতে।
কাশবন প্রকাশনীর কর্ণধার ও লেখক আমিনুল ইসলাম বলেন, সাহিত্য একাডেমির আসরে এসে মন্ত্রমুগ্ধের মতো সবার কবিতা শুনছিলাম। এত নিষ্ঠা, এত সাধনার সঙ্গে এই দূরদেশে এমন কাব্যচর্চা হয়, এটা আমার ভাবনারও অতীত ছিল। ভিন দেশে কোথা হতে এত প্রেরণা পায়, আমি উত্তর খুঁজছিলাম, উত্তর পেয়েও গেলাম। বাংলার মায়েরা এখনও ছড়া পড়ে বাচ্চাদের ঘুম পাড়ায়, এই শহরেও এর অনুরণন দেখছি। পরে তিনি কবি বেনজির শিকদারের একটি কবিতার অংশবিশেষ পাঠ করেন।
বিদ্যাপ্রকাশের কর্ণধার ও লেখক মজিবর রহমান খোকা বলেন, ২০১১ সালে সাহিত্য একাডেমির আসরে একবার উপস্থিত ছিলাম। এরপর আর আসার সুযোগ হয়নি। আসরে না এলেও বিভিন্ন মাধ্যমে আমি নিয়মিত সাহিত্য একাডেমির খবর জেনেছি, রেখেছি। আজকে আমি শুরু হতেই সাহিত্য একাডেমির আসরে উপস্থিত থেকেছি শুধু দেখার জন্য, কীভাবে বছরের পর বছর এঁরা নিয়মিতভাবে এই সাহিত্য আসরটি করে যাচ্ছেন! লক্ষ্য করলাম, যার যার মতো করে সব কাজ স্বল্প সময়ের মধ্যে এমনভাবে শেষ হলো, মনে হলো, সবাই জানেন কিংবা বলা আছে কে কোন কাজটি করবেন! আমি বিস্মিত হয়েছি সাহিত্য একাডেমির সবার মধ্যে এমন শৃঙ্খলাবোধ দেখে।
লেখক নীরা কাদরী বলেন, সাহিত্য একাডেমির একমাত্র উপদেষ্টা কবি শহীদ কাদরী সবসময় বলতেন, অনেক ঝড়-ঝাপটা আসবে সামনে, কিন্তু সাহিত্য একাডেমির আসর কখনো যেনো বন্ধ না হয়।
কবি কাজী আতীক বলেন, এখন পৃথিবীজুড়ে অস্থিরতা বিভিন্ন কারণে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কিছুদিন আগে মধ্যপ্রাচ্য ডুবে গেলো বন্যার পানিতে, সিলেট শহর এখন পানির নিচে। এই যে দুর্যোগ, দুর্ভোগের মধ্যে যাঁরা আছেন, গাজার মানুষ, রাশিয়ার মানুষ- যারা যুদ্ধের মধ্যে আছেন, তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে তিনি স্বরচিত পাঠ করেন। একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি নাজমুন নেসা পিয়ারী বলেন, প্রথম সাহিত্য একাডেমিতে এসে যে আন্তরিকতা পেলাম, সত্যিই ভালো লাগছে। কবিতার প্রতি ছোটবেলা হতে আমার দূর্বলতা। দেশে বিভিন্ন কবিতার আসরে যাই, কিন্তু একসঙ্গে এতলোক দেখি না।
আসরে আরো আবৃত্তি করেন, আবীর আলমগীর, তাহরীনা পারভীন প্রীতি, শারমীন রেজা ইভা ও এমএ সাদেক।
স্বরচিত পাঠে ছিলেন, শামস আল মমীন, এবিএম সালেহ উদ্দিন, মনিজা রহমান, কাউসারী রোজী, মিনহাজ আহমদ, স্বপন বিশ্বাস, তাহমিনা খান, বেনজির শিকদার, লুৎফা শাহানা, সুরীত বড়ুয়া, রিমি রুম্মান, এলি বড়ুয়া, নাহিদা আশরাফি, জেবুন্নেসা জ্যোৎস্না, মাসুম আহমদ, আহমেদ ছহুল, শহীদ উদ্দীন, এসএম মোজাম্মেল হক, সবিতা দাস, আব্দুল আজিজ, মাসুমা রহমান, শান্তি আহমেদ, পলি শাহীনা প্রমুখ।
আসরে উপস্থিত ছিলেন, মনজুর আহমেদ, আবেদীন কাদের, প্রহ্লাদ রায়, সাইদা হুদা, আহমদ মাজহার, জাকারিয়া মাসুদ জিকো, আখতার আহমেদ রাশা, শিরীন বকুল, মণিকা রায় চৌধুরী, ওবায়দুল্লাহ মামুন, নাসির শিকদার, শ্যামলী আহমেদ, লিপি রায়হান, তাহমিনা শহীদ, ভায়লা সালিনা, সুলতানা খানম, শেলী জামান খান, স্বপন কুমার, সাহা পলাশ, মাহফুজুর রহমান, ইমাম চৌধুরী, রওশন হক, মুনমুন সাহা, তুহিন সেলিনা আক্তার, এইচএম আজাদ, মিয়া এম আছকির, আব্দুল কাইয়ুম, সুমা রোজারিও, ফিরোজ শরীফ, শাহ আলম, সেলিম আফসারী, জাহিদ শরীফ প্রমুখ।
সাহিত্য একাডেমির আসরে উপস্থিত প্রায় সবাইকে নিয়ে অন্বয় প্রকাশের কর্ণধার ও লেখক হুমায়ূন কবির ঢালী ‘অন্বয় প্রকাশ সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩’ ক্রেস্ট তুলে দেন পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক-অভিনেত্রী রেখা আহমেদের হাতে।
উপস্থিত সবার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা এবং আগামী আসরের আমন্ত্রণ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানেন মোশাররফ হোসেন।

কমেন্ট বক্স