Thikana News
২২ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪


 

অস্থিরতায় কোটি প্রবাসী

দেশ অস্থিতিশীল, বাড়ছে সহিংসতা  * যাত্রা বাতিল করায় ট্রাভেল ব্যবসায় ধস
অস্থিরতায় কোটি প্রবাসী


প্রতিবছর গ্রীষ্মের ছুটিতে বিপুল প্রবাসী সপরিবারে বাংলাদেশে বেড়াতে যান। এয়ার টিকেটের চড়া দামের কারণে যারা ওইসময় দেশে যেতে পারেন না, তারা অপেক্ষা করেন শীতকালের। এসময় এয়ার টিকেটের দাম তুলনামূলক কম থাকে। এমনকী এয়ার টিকেটে বিশেষ সেল ঘোষণা করে এয়ারলাইন্সগুলো। সারা বছরের  ট্রাভেল এজেন্সিগুলোও ভালো ব্যবসা করে এই সময়ে। কিন্তু এ বছর সময়টা খারাপ যাচ্ছে। অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ক্রমবর্ধমান সহিংসতায় বহু প্রবাসী বাংলাদেশে যাওয়া বাতিল করছেন। একাধিক ট্রাভেল ব্যবসায়ী বলছেন, প্রতি বছর নভেম্বর ও ডিসেম্বর শুধুমাত্র নিউইয়র্ক  থেকে ৭ থেকে ১০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশে বেড়াতে যান। কিন্তু এ বছর নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। শুরু হয়েছে হরতাল-অবরোধ। অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা আসতে পারে। ফলে কোনো প্রবাসী চান না এই সময়ে যেতে গিয়ে ঝামেলায় পড়তে। এসব কারণে যারা দেশে যেতে মনস্থির করেছিলেন, তারা এখন সিদ্ধান্ত বদলাচ্ছেন। অনেকে এয়ার টিকেটও কিনেছিলেন। তারাও এখন সেই যাত্রা বাতিল করছেন। আর এসব কারণে নিউইয়র্কে ট্রাভেল এজেন্সিগুলো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। 
এস্টোরিয়া ডিজিটাল ট্রাভেলের কর্ণধার নজরুল ইসলাম ঠিকানাকে জানান, দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে ট্রাভেল এজেন্সিগুলো অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। সারা বছর এই সময়টাতে আমরা ভালো ব্যবসা করি। কিন্তু এ বছর একপ্রকার খরা চলছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ব্যবসা ভালো হওয়ার আর সুযোগ নেই। 
ওয়ার্ল্ড ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলের প্রেসিডেন্ট শামসুদ্দিন বশির ঠিকানাকে জানান, রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি না হলেও ট্রাভেল ব্যবসায় ধ্বস নামবে। তিনি বলেন, অধিকাংশ প্রবাসী দেশে যাত্রা বাতিল করছেন। বিশেষ করে এই মুহূর্তে কেউই পরিবার নিয়ে দেশে যাচ্ছেন না। তবে খুব জরুরি কাজে অনেকেই দেশে যাচ্ছেন। কিন্তু তাদের অভিজ্ঞতা সুখের নয়। অনেকে যাত্রা সংক্ষিপ্ত করে ফিরে আসছেন। 
আমেরিকান ট্রাভেল এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (অ্যাটাব) সাধারণ সম্পাদক সেলিম হারুণ ঠিকানাকে জানান, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কটের প্রভাব পড়েছে প্রবাসেও। এই মুহূর্তে অনেকে সপরিবারে দেশে বেড়াতে যেতে ভয় পাচ্ছেন। যারা স্বল্প সময়ের জন্য দেশে বেড়াতে যেতে চান, তারাও সাহস পাচ্ছেন না যেতে। এই পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হওয়া প্রয়োজন। 
নিউইয়র্ক প্রবাসী আলমগীর কবীর তাপস জানান, গত ১৫ অক্টোবর জরুরি কাজে তিনি দেশে গিয়েছিলেন। দুই সপ্তাহ থাকার কথা ছিল। কিন্তু এক সপ্তাহ পরই নিউইয়র্কে ফেরত এসেছেন। তিনি জানান, ঢাকায় প্রতিদিন গাড়ি পুড়ছে। সভা-সমাবেশ হচ্ছে। সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হচ্ছে। বোমা-গুলি ফুটছে। একটা গুমোট পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। এ অবস্থায় নিজেকে নিরাপদ মনে করছিলাম না। 
বাংলাদেশি ক্যাবি আসিফুর রহমান সুজন জানান, আগামী ২১ নভেম্বর তিনি দেশে যাবার জন্য টিকেট কিনেছিলেন। কিন্তু আপাতত তিনি যাবেন না। তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলার পাশাপাশি গার্মেন্ট শ্রমিকদের আন্দোলন চলছে। পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ হচ্ছে। পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হচ্ছে। নির্বাচনের পর কবে দেশের পরিস্থিতি ঠিক হবে তা বলা মুশকিল। ্আর এ কারণে আপাতত দেশে যাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়েছেন। 
নিউইয়র্কের উডসাইডের বাসিন্দা আফসানা আফরিন কলি জানান, গ্রীষ্মের ছুটিতে দেশে গিয়ে গরমে টিকতে পারি না। ছোট বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে যায়। এ কারণে শীতের সময়টা বেছে নেই। শীতে বাংলাদেশ বেড়াতে খুব আনন্দের। কিন্তু এ বছর আর যাওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, যেভাবে আন্দোলনের তীব্রতা ও সহিংসতা বাড়ছে, তাতে পরিবার নিয়ে স্বাচ্ছন্দবোধ করছি না। তাই এই বছর আর দেশে যাওয়া হচ্ছে না। 
জানা গেছে, শুধু নিউইয়র্ক বা যুক্তরাষ্ট্র নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা প্রায় দেড় কোটি প্রবাসী বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। নিজের স্বজনদের নিয়ে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। 
নিউইয়র্কের ওজোনপার্কের বাসিন্দা আজিজুল হাসান খান বলেন, তার পরিবারের সবাই দেশে থাকেন। বড় ছেলে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে। টেস্ট শেষ হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে ফাইনাল। জানুয়ারিতে নির্বাচন হলে পরীক্ষা ফেব্রুয়ারিতে হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু নির্বাচন শেষে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবার স্বাভাবিক হবে বলে মনে হচ্ছে না। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইমিগ্রেশনে পরিবারের আবেদন পেন্ডিং আছে। যতদিন পরিবারের সদস্যদের আনতে না পারছেন ততদিন শান্তি নেই তার মনে। 
কানেকটিকাটের প্রবাসী আবুল ফজল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, কবে যে নিজের দেশটাকে স্থিতিশীল দেখবো, জানি না। দেশের জন্য, দেশে থাকা স্বজনদের নিয়ে জানি না কবে এই অস্থিরতার অবসান হবে। রাজনীতিবিদরা আসলে কি চান?
 

কমেন্ট বক্স