চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউসহ উপস্থিত ২৫টি দেশের মধ্যে সমন্বয় এবং অভিন্ন করণীয় স্থির করতে “ব্লেচলি ঘোষণাপত্র” হচ্ছে সম্মেলনের তাৎক্ষণিক প্রাপ্তি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ঝুঁকি নিরসন এবং দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলা এই প্রযুক্তি ঘিরে এক নিরাপদ বলয় তৈরি করতে এক টেবিলে বসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং চীন। সংশ্লিষ্ট সব দেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে সম্মত হয়েছে তারা।
প্রযুক্তিটির ক্রমশ উন্নয়নকে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে তা পুরো বিশ্বের জন্য অস্তিত্ব সংকট তৈরি করবে –এমন আশংকার কথা বলে আসছেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং প্রযুক্তি অঙ্গণের জ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরা। তাই বিভিন্ন সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা যখন প্রযুক্তিটির নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উঠে পড়ে লেগেছে, তখনি যুক্তরাজ্য আয়োজন করল এ সংশ্লিষ্ট এক শীর্ষ সম্মেলনের।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কম্পিউটারের জনক অ্যালান টিউরিং ও তার দল ব্রিটেনের জন্য শত্রুপক্ষের গুপ্তবার্তার পাঠোদ্ধার করতেন যে স্থানটিতে তার নাম ব্লেচলি পার্ক। ঠিক সেখানেই ব্রিটেন আয়োজিত প্রথম বিশ্ব এআই নিরাপত্তা সম্মেলনে মার্কিন ও ইইউ নেতৃবৃন্দসহ ইলন মাস্ক এবং চ্যাটজিপিটির স্যাম অল্টম্যানের মতো পাশ্চিমের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসলেন চীনা একজন উপমন্ত্রী।
চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউসহ উপস্থিত ২৫টি দেশের মধ্যে সমন্বয় এবং অভিন্ন করণীয় স্থির করতে “ব্লেচলি ঘোষণাপত্র” হচ্ছে সম্মেলনের তাৎক্ষণিক প্রাপ্তি।
প্রযুক্তটি থেকে সৃষ্ট ঝুঁকি সবাই মিলে খুঁজে বের করা এবং সেগুলোর বিজ্ঞানসম্মত সমাধান বের করার মতো দুটি দীর্ঘ কর্মপরিকল্পনার পাশাপাশি এতে ঝুঁকি নিরসনে আন্তঃদেশীয় নীতিমালা প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে।
দুদিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপমন্ত্রী উও জাওহুই বলেন এআই নিরাপত্তায় একটি আন্তর্জাতিক “প্রশাসনিক কাঠামো” সৃষ্টিতে সহযোগিতার হাত বাড়াতে প্রস্তুত বেইজিং।
“এআই তৈরি এবং ব্যবহারের হার ও প্রভাব নির্বিশেষে সবদেশের রয়েছে সমান অধিকার” – বলেন তিনি।
গত বছর নভেম্বরে মাইক্রোসফট সমর্থিত চ্যাটজিপিটি বাজারে এলে অর্থনীতি এবং সামাজিক পরিমণ্ডলে এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে ব্যপক ভীতি তৈরি হয়েছে।
প্রযুক্তিটি একসময় মানুষের চেয়েও বেশি বুদ্ধিমত্তা অর্জন করে সীমাহীন অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে– বিশ্বব্যাপী নানা মহলে এমন আশংকা ছড়িয়ে পড়ে।
আর তাই, প্রযুক্তিটি তার পূর্ণ সক্ষমতায় পৌঁছানোর আগেই বিভিন্ন দেশের সরকার এআই কোম্পানিগুলোর সঙ্গে মিলে নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে সম্ভাব্য ঝুঁকি কমিয়ে আনার উপায় খুঁজছে।
“আমি জানি না সঙ্গত এবং প্রয়োজনীয় আইন কী হতে পারে, তবে আপনাদেরকে এর তদারকির পর্যায় শুরুর আগে অবশ্যই পুরো ব্যাপারটি নিয়ে পরিষ্কার বোঝাপড়া থাকতে হবে।” -- গণমাধ্যমকে বলেন ইলন মাস্ক। সেইসঙ্গে এআই নিয়ন্ত্রণে সোচ্চার এই বিলিওনেয়ার আরও যোগ করেন, যখনই কোনো ঝুঁকি সৃষ্টির উপক্রম হবে তখনই “তৃতীয় কোনো পক্ষ” সাবধান করার কাজটি করতে পারে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন যখন নজরদারি এবং ডেটা প্রাইভেসির প্রশ্নে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি থাকায় এআই নিয়ন্ত্রণে মনযোগ দিচ্ছে, তখন ব্রিটেন আয়োজিত সম্মেলনের মনোযোগ দৈনন্দিন ব্যবহার উপযোগী উচ্চক্ষমতার এআই মডেলের ঝুঁকি নিয়ে, যেগুলোকে বলা হচ্ছে ‘ফ্রন্টিয়ার-এআই’।
গুগল ডিপমাইন্ডের সহপ্রতিষ্ঠাতা মুস্তফা সুলেইমান গণমাধ্যমকে বলেন, বর্তমানে প্রচলিত ফ্রন্টিয়ার এআই মডেলগুলো বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টিতে সক্ষম বলে তিনি মনে করেন না । তবে তিনি বলেন, ইন্ডাস্ট্রি আরও বড় আকারের এআই মডেলকে ট্রেইনিং দেওয়ার আগে এ ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত।
অনেকগুলো প্রথম সারির পক্ষকে এক জায়গায় আনতে পারাকে এই সম্মেলনের সাফল্য বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ ডিজিটাল মন্ত্রী মিশেলে ডনিলান। তিনি আরও দুটো এআই নিরাপত্তা সম্মেলনের ঘোষণা দেন, যার প্রথমটি আগামী ছয় মাসের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় এবং দ্বিতীয়টি পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত হবে।
ঠিকানা/এসআর