চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীদের মধ্যে আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিদের সহায়তা করতে না পারার বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান। তার ভাষায়, প্রতি সপ্তাহে হাজারখানেক মানুষ আত্মহত্যার আগে চ্যাটজিপিটির সঙ্গে কথা বলেন। তাদের কাউকে যদি থামানো যেত, সেটাই এখন তার বড় আফসোস। সম্প্রতি মার্কিন সাংবাদিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব টাকার কার্লসনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে অল্টম্যান এসব কথা বলেন।
অল্টম্যান একটি বাস্তব উদাহরণ দেন আত্মহত্যা প্রতিরোধ নিয়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতিবছর প্রায় ৭ লাখ ২০ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করেন। অল্টম্যানের ধারণা, যদি তাদের মাত্র ১০ শতাংশও চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে প্রতি সপ্তাহে গড়ে প্রায় দেড় হাজার ব্যবহারকারী আত্মহত্যার আগে চ্যাটজিপিটির সঙ্গে কথা বলেছেন। অল্টম্যান বলেন, ‘হয়তো আমরা কিছু ভালো বলতে পারতাম, হয়তো আরও সক্রিয় হতে পারতাম।’
তবে অল্টম্যানের এই উদ্বেগ তাত্ত্বিক নয়, বাস্তব। সম্প্রতি এক কিশোরের আত্মহত্যার জন্য চ্যাটজিপিটিকে দায়ী করে তার পরিবার একটি মামলা করেছে ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে। অল্টম্যান একে ‘একটি মর্মান্তিক ঘটনা’ বলে বর্ণনা করেন এবং জানান, ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে কর্তৃপক্ষকে জানানো যায়, তা নিয়ে তারা গবেষণা করছেন। যদিও এখনো কোনো স্থায়ী নীতি প্রণয়ন করা হয়নি, কারণ এতে গোপনীয়তা লঙ্ঘনের আশঙ্কাও রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কানাডা ও জার্মানির মতো দেশগুলোতে যেখানে আত্মহত্যায় সহায়তা করা আইনসিদ্ধ, সেখানে প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে চ্যাটজিপিটি সেই অপশনগুলো উল্লেখ করতে পারে। তবে মডেলটি যেন কখনোই কোনো মতবাদ চাপিয়ে না দেয় বা নৈতিক সিদ্ধান্তে মূল্যায়ন না করে—বিষয়টি স্পষ্ট করেন অল্টম্যান। তার মতে, প্রাপ্তবয়স্কদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহ দেওয়া উচিত, তবে নিরাপত্তা নিয়ে কিছু ‘স্পষ্ট সীমারেখা’ থাকা জরুরি।
তিনি জানান, ওপেনএআইয়ের সিদ্ধান্তে নৈতিক বিশেষজ্ঞ ও উপদেষ্টাদের মতামত নেওয়া হয় ঠিকই, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তিনিই ও বোর্ড মিলে নেন। অল্টম্যান বলেন, ‘এ বিষয়ে যাকে দায়ী করা উচিত, তিনি আমি।’
সাক্ষাৎকারে আরও উঠে আসে, চ্যাটজিপিটি কীভাবে মানুষের লেখার ধরনে প্রভাব ফেলছে। অল্টম্যান মজা করে বলেন, এমনকি চ্যাটজিপিটির লেখার ছন্দ বা কাঠামোও মানুষের লেখালেখিতে ঢুকে পড়ছে। তার মতে, এ ধরনের সূক্ষ্ম, তবে গভীর পরিবর্তনই তাকে প্রতিনিয়ত ভাবিয়ে তোলে—কল্পবিজ্ঞানভিত্তিক রোবট বিপ্লব নয়।
ঠিকানা/এনআই