প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র সফরে এসেই প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। প্রবাসীদের দেওয়া বিভিন্ন সংবর্ধনায় তিনি সংসদে প্রবাসীর প্রতিনিধিত্ব
নিশ্চিত করা, প্রবাসীদের ভোটাধিকারসহ বিভিন্ন দাবির প্রতি একমত পোষণ করেন। দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে প্রবাসীদের ন্যায়সংগত সকল দাবি পূরণ করারও আশ্বাস দেন জামায়াত আমির।
গত ২২ অক্টোবর নিউইয়র্ক সময় সকাল ১১টা ২০ মিনিটে দুই সফরসঙ্গীকে নিয়ে সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন ডা. শফিক। নিউইয়র্কে পৌঁছেই ব্যস্ত সময় পার করেন তিনি। ৮ দিনের ব্যস্ত সফর শেষে তিনি ২৯ অক্টোবর ওয়াশিংটন থেকে লন্ডনের পথে যাত্রা করেন। সেখানে একদিনের সংক্ষিপ্ত অবস্থান শেষে তার দেশে ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে। গত ২২ অক্টোবর নিউইয়র্কে পা রেখে রাতেই স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন জামায়াত আমির। সপ্তাহব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে তিনি বাফেলো, মিশিগান ও নিউইয়র্ক সিটিতে তিনটি বড় সমাবেশে অংশ নেন। এসব সমাবেশে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন, দলের কার্যক্রম, প্রবাসীদের ভোটাধিকার ও সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব এবং নারীদের নিয়ে তার ভাবনার কথা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তুলে ধরেন। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আগামী নির্বাচনে জনগণের ভোটে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে জাতীয় স্বার্থে সব রাজনৈতিক শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে জামায়াত। দেশ থেকে দুর্নীতির ক্যানসার সমূলে উপড়ে ফেলা হবে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিজ্ঞান ও টেকনোলজি-নির্ভর আধুনিক যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। তিনি আরও বলেন, প্রবাসে বাংলাদেশের যত শতাংশ নাগরিক বসবাস করেন, সংসদে তত শতাংশ প্রবাসী প্রতিনিধি নিশ্চিত করা হবে। দেশের নারীদের কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৫ ঘণ্টা করা হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারও অব্যাহত রাখা হবে। আর ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক হবে পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে। দেশভাগের পর থেকে এখন পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর দ্বারা কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে তার জন্য বিনা শর্তে ক্ষমাও চান ডা. শফিকুর রহমান।
নিউইয়র্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়
২২ অক্টোবর সকালে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেই রাতে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাংবাদিকদের সঙ্গে কুইন্সের ওয়ার্ল্ড ফেয়ার মেরিনায় মতবিনিময় করেন জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান। যুক্তরাষ্ট্র জামায়াতের মুখপাত্র ডা. নকিবুর রহমানের পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, ‘জাতীয় স্বার্থে সবাইকে এক থাকতে হবে। আমরা কোয়ালিশন সরকার গঠন করতে চাই।’ তিনি জানান, বিএনপি-এনসিপির সঙ্গে আসন ভাগাভাগির আলোচনায় এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি; তবে ‘দেশের স্বার্থে প্রয়োজন হলে নিজের আসনটিও ছেড়ে দিতে’ তিনি প্রস্তুত। এ সময় তিনি নিশ্চিত করেন, ৩০০ আসনেই জামায়াত প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছে এবং প্রার্থীরা মাঠে আছেন।
ডা. শফিকুর রহমান জোর দিয়ে বলেন, ক্ষমতায় যাওয়াকে তিনি ‘জনসেবা’র অংশ হিসেবে দেখেন। প্রতিশ্রুতি দেন দুর্নীতিকে ‘শূন্যে’ নামাতে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হবে; ‘যেই হোক, অপরাধী কাউকে ছাড়া হবে না।’ বিচারব্যবস্থায় কাঠামোগত সংস্কারের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে, ‘বিচারের পাল্লা সবার জন্য সমান থাকবে।’ তিনি ১৯৪৭ থেকে ২০২৫ সালের ২২ অক্টোবর রাত ৮টা ১১ মিনিট পর্যন্ত সংঘটিত সব ভুলের জন্য দেশ ও জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চান। বলেন, ‘আমরা মানুষ, ভুল হতে পারে; ভুলকে সঠিক করার জন্যই ক্ষমা চাইছি- দেশে, বিদেশে সর্বত্র।’
বিদেশনীতি ও প্রতিবেশী সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘পড়শি বদলানো যায় না’-ভারতসহ সব দেশের সঙ্গে সম্মানজনক সম্পর্ক বজায় রেখে এগোতে হবে। দেশের স্বার্থে যেসব চুক্তি হয়েছে, সেগুলো বহাল থাকবে; যেগুলোতে স্বার্থহানি হয়েছে, আলোচনার মাধ্যমে সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
প্রবাসীদের প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, ‘আপনারা বিবেকের আয়না।’ প্রবাসী অধিকার প্রশ্নে তিনি এনআইডি প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ, জন্মসনদ/পুরোনো পাসপোর্টের ভিত্তিতে নিবন্ধন, দক্ষ প্রবাসীদের জ্ঞান-অভিজ্ঞতা রাষ্ট্রগঠনে যুক্ত করা এবং দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হিসেবে প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। দেশের মোট জনসংখ্যার অনুপাতে প্রবাসীদের সংসদীয় প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ‘প্রবাসী গণনা’র উদ্যোগের কথাও জানান।
নির্বাচন-পদ্ধতি নিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বে ৯১টি দেশে প্রচলিত প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতির বিভিন্ন মডেল পর্যালোচনা করে বাংলাদেশের জন্য উপযোগী কাঠামো নিয়ে জাতীয় আলোচনার প্রয়োজন আছে। নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে তিনি জানান, সংলাপে উত্থাপিত বিষয়গুলোর সমাধান হলে বর্তমান কমিশনের অধীনেই নির্বাচন সম্ভব। বড়-ছোট দলের তর্কে না গিয়ে ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে পারস্পরিক সম্মান’ এবং ‘সমঝোতার রাজনীতি’র ওপর তিনি জোর দেন।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে ডা. শফিকুর রহমান জানান, অতীতে দুবার যুক্তরাষ্ট্রে আসার ভিসা থাকলেও পরিস্থিতির কারণে তিনি আসতে পারেননি। এবার ওমরাহ সম্পন্ন করে ২২ অক্টোবর সকালে নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন। ব্যস্ত কর্মসূচির মধ্যে তিনি সাংবাদিকদের ধৈর্য ধরে কথা শোনেন, প্রশ্নের উত্তর দেন এবং সবাইকে বাংলাদেশে এসে দেখার আমন্ত্রণ জানান, ‘শুধু ভোট দিতে নয়, নিজের জন্মভূমিকে দেখার টানে।’
বাফেলোতে সংবর্ধিত হলেন জামায়াত আমির
নিউইয়র্কের বাফেলোর আলেকজান্ডার অ্যাভিনিউতে ‘বাংলাদেশ আমেরিকান কমিউনিটি, বাফেলোর আয়োজনে ২৪ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানকে বিশাল সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমরা দেশ-জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে মর্যাদার সঙ্গে থাকতে চাই। দুনিয়ার সবাইকে সম্মান করব কিন্তু কাউকে প্রভু মানব না। আমাদের প্রভু একমাত্র আল্লাহ। পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মানের ভিত্তিতে সম্পর্ক হবে। ন্যায্য পাওনা আমরা বুঝিয়ে দেব, অন্যদের কাছ থেকে বুঝে নেব। অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, দেশটাকে ফোকলা করে ফেলা হয়েছে। লুটপাট করে দেশের অর্থনীতিকে নষ্ট করা হয়েছে। রুগ্্ণ অর্থনীতিকে চাঙা করার জন্য সদিচ্ছা, সততা ও কঠোর পরিশ্রম থাকলে জাতিকে কেউ ঠেকাতে পারবে না।
এ সময় প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার অনুরোধ জানান জামায়াতের আমির। তিনি বলেন, ‘যত বাংলাদেশি প্রবাসী এখানে আছেন, তাদের সবাইকে ভোট নিশ্চিত করতে সহযোগিতা করবেন। এটা দেখবেন না সে কোন ধর্মের, কোন দলের। আমরা সবার অধিকারটা দিতে চাইছি।’
ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, ‘গ্রাম্য আদালত থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্ট কোথাও আমাদের দেশে ন্যায়বিচার পাই না। আমরা মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করে ঘোষণা দিয়েছি, পবিত্র কোরআন যে ন্যায়বিচার এই জাতিকে, বিশ্ববাসীকে উপহার দিয়েছে, তার ভিত্তিতে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য তার ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা হবে ইনশা আল্লাহ। রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী, তিনিও যদি কোনো অপরাধ করেন, তার মুখের দিকে আইন তাকাবে না। আইন তার অপরাধকে দেখবে, তাকে দেখবে না। আইন সমাজের মর্যাদা অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হবে না। আইনের পাল্লা সমান হবে ইনশা আল্লাহ।’
মিশিগানে বিশাল সংবর্ধনা
মিশিগানের হ্যামট্রামিক শহরের গেইটস অব কলম্বাস হলে ২৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় বাংলাদেশ-আমেরিকান কমিউনিটি অব মিশিগানের পক্ষ থেকে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানকে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ডা. মোতাহের আহমদ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন ডা. নকিবুর রহমান, ডা. খালেদুজ্জামান, আল ফালাহ মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা আব্দুল লতিফ আজম, অ্যাটর্নি রুহুল মোমেন শাকির, বাংলাদেশি আমেরিকান ফোরামের শাহেদুল ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মাওলানা সুহেল আহমদ। ডা. শফিকুর রহমানকে মিশিগান প্রবাসী কুলাউড়াবাসীর পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।
সমাবেশে জামায়াত আমির বলেন, ‘আমরা দেশ ও জাতির সেবা করার সুযোগ পেলে দুর্নীতির ক্যানসার সমূলে উপড়ে ফেলব। দুর্নীতির জট কেটে দেব। আমরা জানি, এ কাজটি খুব সহজ হবে না। কিন্তু বাধা যতই হিমালয়সম হোক- আমরা তা করবই ইনশা আল্লাহ। আমরা প্রথমেই ভঙ্গুর শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাব। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিজ্ঞান ও টেকনোলজি-নির্ভর আধুনিক যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলব। কেননা শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। আপনারা আর বেকারদের মিছিল দেখবেন না। তবে এ জন্য সময় লাগবে। তবে ৫ বছর সময় পেলে এসব ঠিক করে গাড়ি উল্টো দিকে ছোটানো যাবে।’
ডা. শফিক বলেন, আমাদের দেশে বর্ণবৈষম্য নেই। এই অভিশাপ থেকে জাতি মুক্ত। আমরা হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মিলেমিশে বহুকাল ধরে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে আসছি। আমাদের দেশ একটি অহিংস দেশ, তবে পৃথিবীর সব জায়গার মতো মাঝেমধ্যে সামান্য ব্যতিক্রম যে হয় নাÑতা নয়। আমরা সেই ব্যতিক্রমটাও দেখতে চাই না। আমাদের দেশে শ্রেণিবৈষম্য আছে।
জামায়াত আমির আওয়ামী লীগের নাম না নিয়ে বলেন, তারা দায়িত্বজ্ঞানহীন হতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ প্রমাণ করেছেন জনগণ দায়িত্বজ্ঞানহীন নয়। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী জুলাই শহীদ পরিবারগুলোর দিকে দৃষ্টি দেয়। এই শহীদ পরিবারগুলো আমাদের কাছে আমানত। আমরা প্রত্যেকটি পরিবারে গিয়েছি, চেষ্টা করেছি তাদের সান্ত্বনা দিতে, দুঃখের সামান্য অংশীদার হতে। আমরা বহু পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছি। ডা. শফিক প্রবাসী মিশিগানবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমি আপনাদের কাছে ভোট চাইব না। আপনারা যাকে খুশি ভোট দেবেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ৫ দফা অঙ্গীকার তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের ৪১টি এমন অঙ্গীকার রয়েছে। এই পরিসরে সবগুলো তুলে ধরা সম্ভব নয়। তবে আপনাদের সেবা করার সুযোগ পেলে আমরা দুর্নীতির মূল উৎপাটন করে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করব, ইনশা আল্লাহ।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশি আমেরিকানদের গণসংবর্ধনা
নিউইয়র্ক সিটির এস্টোরিয়া ওয়ার্ল্ড মেনারে ‘কোয়ালিশন অব বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন’-এর উদ্যোগে ২৬ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানকে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে জামায়াত আমির বলেন, ‘ক্ষমতায় গেলে মায়েদের কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৫ ঘণ্টা করা হবে। একজন মা সন্তান জন্ম দিচ্ছেন, লালন-পালন করছেন এবং ক্ষেত্রবিশেষে পেশাজীবী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। পুরুষ ৮ ঘণ্টা কাজ করলে নারীরও সমান সময় দেওয়া কি ন্যায্য? আমরা ক্ষমতায় এলে তাদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে ৫ ঘণ্টা করব, যাতে মা হিসেবে তারা সন্তানের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারেন।’
প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, শুধু রেমিট্যান্স নয়, দেশের উন্নয়নে প্রবাসী মেধাবীদেরও ফিরিয়ে আনা হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের তরুণরা বিভিন্ন দেশে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করছে। দেশের উন্নয়নে তারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। আমরা তাদের অন্তত একটি অংশ বাংলাদেশে চাই।’
প্রবাসীদের ভোটাধিকারের প্রসঙ্গেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘যারা যেতে পারবেন না, এখান থেকে দোয়া করবেন কিন্তু ভোট মিস করবেন না। প্রবাসীদের ভোট দেশের উন্নয়নে শক্তি হিসেবে কাজে লাগবে।’
বাফেলোতে জামায়াত আমির
যত শতাংশ মানুষ বিদেশের মাটিতে বসবাস করে, সংসদে তত শতাংশ প্রবাসীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের বলি রেমিট্যান্স-যোদ্ধা। তা আপনি যারে বীর বললেন তারে আপনি বীরের মর্যাদা দেবেন না। কিন্তু মর্যাদা না দিয়েই একটা বায়বীয় শব্দ দিয়ে প্রবাসীদের শান্ত রাখতে চায়।’
২৪ অক্টোবর শুক্রবার নিউইয়র্কের বাফেলোতে ‘বাংলাদেশ-আমেরিকান কমিউনিটি বাফেলো’ আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ডা. শফিক। বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামী যুক্তরাষ্ট্রের মুখপাত্র অধ্যাপক ড. নাকীবুর রহমান, ঢাকা-১৭ আসনের এমপি প্রার্থী ডা. খলিদুজ্জামান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন অধ্যাপক ড. ইকবাল হোসাইন, ব্যবসায়ী তালহা বকস প্রমুখ।
ডা. শফিকুর রহমান প্রবাসীদের উদ্দেশে বলেন, আপনার নিজের ভোটটা নিশ্চিত করবেন এবং যত বাংলাদেশি প্রবাসী এখানে আছেন, তাদের সবাইকে ভোট নিশ্চিত করতে সহযোগিতা করবেন। এটা দেখবেন না যে সে কোন ধর্মের, কোন দলের। আমরা সবার অধিকার দিতে চাচ্ছি। এই অধিকার যদি প্রতিষ্ঠিত হয়, এটা ভোট নয়, ইনশা আল্লাহ এটা ভেটো হিসেবে কাজ করবে আপনাদের জন্য। এটি হবে আপনাদের হাতে ভেটো পাওয়ার। তখন আপনাদের সব অধিকার দিতে বাধ্য হবে।
জামায়াত আমির বলেন, আমরা দেশসেবার সুযোগ পেলে কয়েকটি বিষয়ে অগ্রাধিকার দেব। আমরা ভাঙাচোরা, বিধ্বস্ত ও অপ্রয়োজনীয় শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করব। যে শিক্ষা মানুষকে মানুষ বানায়, নাগরিককে দেশ গড়ার কারিগর বানায়। এমন শিক্ষা দিতে চাই, যাতে শিক্ষার্থীরা সার্টিফিকেট নিয়ে বের হলেই যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি বা উদ্যোক্তা হতে পারে। আমরা দুর্নীতির জট কেটে বা উপড়ে ফেলতে চাই। ক্ষমতায় না গেলেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে। দেশে ন্যায়বিচার নেই। পবিত্র কোরআন যে ন্যায়বিচার দিয়েছে, প্রত্যেকের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে। আইন তার অপরাধকে দেখবে, অপরাধীকে নয়। আইনের পাল্লা (দাঁড়িপাল্লা) কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই পাল্লা ধরে রাখব।
জামায়াত আমির বলেন, আমরা দেশ-জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে মর্যাদার সঙ্গে থাকতে চাই। দুনিয়ার সবাইকে সম্মান করব কিন্তু কাউকে প্রভু মানব না। আমাদের প্রভু একমাত্র আল্লাহ। পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মানের ভিত্তিতে সম্পর্ক হবে। ন্যায্য পাওনা আমরা বুঝিয়ে দেব, অন্যদের কাছ থেকে বুঝে নেব। দেশটাকে ফোকলা করে ফেলা হয়েছে। লুটপাট করে দেশের অর্থনীতিকে নষ্ট করা হয়েছে। রুগ্ণ অর্থনীতিকে চাঙা করার জন্য সদিচ্ছা, সততা ও কঠোর পরিশ্রম থাকলে জাতিকে কেউ ঠেকাতে পারবে না।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশে হায়েনার তাণ্ডব শুরু হয়েছিল। চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আল্লাহ সেই জাতিকে গজব ও লানত থেকে হেফাজত করেছেন। প্রবাসীরাও রাস্তায় নেমে ও রেমিট্যান্স বন্ধ করে দিয়ে জালিমের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। প্রবাসীদের ভোটাধিকার আদায়ে নানা উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি এই ভোট নিশ্চিতের আহ্বান জানান।
এ সময় তিনি বাফেলো প্রবাসীদের পক্ষ থেকে উপস্থাপিত স্থায়ী কনস্যুলেট স্থাপন, এনআইডি রেজিস্ট্রেশনের তারিখ বাড়ানো, বৈধ নাগরিকত্বের পুলিশ ভেরিফিকেশন বন্ধ করা, বিমানবন্দরে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধসহ বিভিন্ন দাবির প্রতি একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় যাই বা না যাই, এসব দাবি আদায়ের চেষ্টা করব। আর দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে দাবি পূরণ করে সবার কাছে পৌঁছে দেব।
প্রবাসীদের জন্য ৫০টি আসনের দাবি জানালেন এম এম শাহীন
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের কাছে প্রবাসীদের জন্য ৫০টি আসনের দাবি জানিয়েছেন ঠিকানা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এম শাহীন। ২৪ অক্টোবর নিউইয়র্কে জামায়াতের আমিরের সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাতে প্রায় দেড় ঘণ্টা তাদের মধ্যে একান্ত বৈঠকে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ বিমানের নিউইয়র্ক-ঢাকা রুট দ্রুত চালুর ব্যবস্থা, সংবিধানের ৬৬(গ) অনুচ্ছেদ সংশোধন যাতে জন্মসূত্রে বাংলাদেশি হলেও পরবর্তীতে দ্বৈত নাগরিকত্ব নেওয়া ব্যক্তিরাও জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগসহ প্রবাসীদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া তুলে ধরেন তিনি।
এম এম শাহীন জানান, আগামীতে সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে থাকবেন। তবে একজন প্রবাসী হিসেবে দাবিদাওয়া আদায়ে বিগত ৪০ বছরের মতো আগামীতেও সোচ্চার থাকবেন। একজন জাতীয় নেতা হিসেবে ডা. শফিকুর রহমান পলিসি মেকিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন, তাই তার কাছেও দাবিগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।


ঠিকানা রিপোর্ট


