Thikana News
২৩ অক্টোবর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

ক্যুমোর চেয়ে এখনো এগিয়ে মামদানি

বিতর্ক ও সর্বশেষ জরিপ
ক্যুমোর চেয়ে এখনো এগিয়ে মামদানি



 
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনের তিন প্রার্থীর প্রথম টেলিভিশন বিতর্ক হয়ে গেলো গত ১৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাতে। এই তিন প্রার্থীর দ্বিতীয় টেলিভিশন বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে ২২ অক্টোবর। প্রথম বিতর্ক ও সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী এখনো অ্যান্ড্রু ক্যুমোর চেয়ে স্পষ্ট এগিয়ে আছেন জোহরান মামদানি। আর তৃতীয় অবস্থানে কার্টিস স্লিওয়া। প্রথম বিতর্কে মুখোমুখি হন তিন প্রধান প্রার্থী- অ্যান্ড্রু ক্যুমো, জোহরান মামদানি ও কার্টিস স্লিওয়া। দুই ঘণ্টার এই প্রাণবন্ত বিতর্কে একে অপরের বিরুদ্ধে বাক্যবান ও তোপ দাগলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিবেশ। শহরের জীবনযাত্রার ব্যয়, জননিরাপত্তা, শিক্ষা, ইসরায়েল-গাজা সংঘাতসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তুমুল তর্ক-বিতর্ক হয়। বিতর্ক শেষে তিনজনই নিজেকে বিজয়ী দাবি করেন। এই বিতর্ক আয়োজন করে এনবিসি ৪, নিউইয়র্ক/ডাব্লিউএনবিসি, টেলেমুন্ডো ৪৭/ডাব্লিউএনজেইউ এবং পলিটিকো।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তি-তর্কে সবচেয়ে শক্ত অবস্থানে ছিলেন মামদানি।
ক্যুমোর প্রচার শিবির জানায়, ‘অ্যান্ড্রু ক্যুমো একমাত্র প্রার্থী যিনি প্রথম দিন থেকেই দায়িত্ব নিতে পারবেন। মামদানির কোনো বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা নেই- শুধু কর বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি।’ তাদের দাবি, ক্যুমোই একমাত্র প্রার্থী যিনি ৫ হাজার নতুন এনওয়াইপিডি কর্মকর্তা নিয়োগের পরিকল্পনা দিয়েছেন এবং আবাসন সংকটের সমাধানে কাজ করতে পারেন।
অন্যদিকে মামদানির প্রচারদল জানায়, ‘আজ রাতে জোহরান মামদানি ছিলেন নির্ভুল ও আত্মবিশ্বাসী। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন কীভাবে ভাড়া স্থগিত রাখা, দ্রুত ও বিনামূল্যের গণপরিবহন এবং সর্বজনীন শিশুযত্ন কর্মসূচি চালু করে নিউইয়র্ককে কর্মজীবী পরিবারগুলোর জন্য সাশ্রয়ী করা যায়।’ তারা ক্যুমোকে ‘ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ, দুর্নীতিগ্রস্ত প্রাক্তন গভর্নর’ আখ্যা দিয়ে বলেন, তিনি শুধু ‘অজুহাত ও অস্বীকারের আশ্রয় নিয়েছেন।’
রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমি ছিলাম স্পষ্ট বিজয়ী। ক্যুমো ব্যর্থ হয়েছে, এবার তার সরে দাঁড়ানোর সময়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক নিক রেইসম্যানের মতে, ‘জোহরান মামদানি বিতর্কে প্রবেশ করেছিলেন পরিষ্কার ফ্রন্টরানার হিসেবে এবং একই অবস্থায়ই বেরিয়ে এসেছেন। ক্যুমো তাকে কয়েকটি কঠিন প্রশ্নে ফেলতে চাইলেও মামদানি জীবনযাত্রার ব্যয় ও সাশ্রয়ী শহর সম্পর্কিত মূল বার্তায় অটল ছিলেন।’
অন্য এক বিশ্লেষক জে.সি. পোলানকো বলেন, ‘ক্যুমো অভিজ্ঞতা ও বিষয়জ্ঞান দেখিয়েছেন, কিন্তু রক্ষণাত্মক অবস্থান থেকে বেরোতে পারেননি। মামদানি মঞ্চে স্বাচ্ছন্দ্য ও বার্তায় ধারাবাহিক ছিলেন এবং শ্রোতাদের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করেছেন। স্লিওয়া সরাসরি কথা বলেছেন, কিন্তু মূল বিতর্কে ছাপ ফেলতে পারেননি।’
তিন প্রার্থীর দাবির ভেতরেও বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়ন পরিষ্কার- নিউইয়র্কের মেয়র দৌড়ে এখনো এগিয়ে আছেন জোহরান মামদানি।
বিতর্কের সময় মামদানির সাশ্রয়ী মূল্যের উপর নিরলস মনোযোগ নিউইয়র্কবাসীর মধ্যে আবারও অনুরণিত হয়েছে, ভাড়া স্থগিতকরণ, দ্রুত ও বিনামূল্যে বাস এবং সর্বজনীন শিশু যত্ন নীতির মাধ্যমে জীবনযাত্রার ব্যয়ের বিষয়ে সকলের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
অন্যদিকে বিতর্ক চলাকালে ক্যুমোর কেলেঙ্কারির একটি তালিকা কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসলে তিনি বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এর মধ্যে রয়েছে তার কোভিড নীতির কারণে ১৫ হাজার নার্সিং হোমের মৃত্যু, যৌন হয়রানির অভিযোগের বিরুদ্ধে নিজেকে রক্ষা করার জন্য করদাতাদের কাছ থেকে ৬০ মিলিয়ন ডলার ব্যবহার করা এবং নিউইয়র্ক এজি লেটিশিয়া জেমসকে ট্রাম্পের লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে তার সাম্প্রতিক ব্যর্থতা।
সর্বশেষ জরিপে মামদানি ৫২% ভোটে এগিয়ে : মামদানি এখনো ভোটারদের কাছে জনপ্রিয়তার প্রথম পছন্দের তালিকায় রয়েছেন। নতুন সর্বশেষ জরিপে দেখা যাচ্ছে, মামদানি মেয়র পদে সম্ভাব্য ভোটারদের ৫২% সমর্থন পেয়ে এগিয়ে আছেন। 
মামদানি নির্বাচনী প্রচার অফিস থেকে জানানো হয়, নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে প্রথম বিতর্কে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর, ফক্স নিউজের সর্বশেষ এই নতুন জরিপে মামদানি ৫২% ভোট পেয়েছেন, যা অ্যান্ড্রু ক্যুমোর চেয়ে ২৪ পয়েন্ট এগিয়ে। 
নতুন জরিপের প্রতিক্রিয়ায় মামদানির প্রচার ক্যাম্পের মুখপাত্র ডোরা পেকেক বলেন, ‘নিউইয়র্কবাসীর বেশিরভাগই অ্যান্ড্রু ক্যুমোর অতীতের কোটিপতি-সমর্থিত রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করছেন এবং জোহরান মামদানির আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন। 
এদিকে কুইনিপিয়াক ইউনিভার্সিটির জনমত জরিপ বলছে, এই টিভি বিতর্কের কারণে বেশির ভাগ ভোটারের মতের বদল হবে না। জোহরান ও ক্যুমোর ১৮ শতাংশ সমর্থক তাঁদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার ‘সম্ভাবনা নেই’; অন্যদিকে স্লিওয়ার সমর্থকদের মধ্যে এই হার ২৪ শতাংশ।
সর্বশেষ জরিপে ১৯৭১ সালে গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেলস ভিজিল্যান্ট গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করা ৭১ বছর বয়সী স্লিওয়া ১৫ শতাংশ সমর্থন নিয়ে বেশ পিছিয়ে, তৃতীয় স্থানে রয়েছেন। অন্যদিকে ক্যুমোর প্রতি জনসমর্থন রয়েছে ৩৩ শতাংশ এবং জোহরান মামদানির প্রতি ৪৬ শতাংশ।
এর আগে সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ালে অ্যান্ড্রু ক্যুমো মামদানির সঙ্গে প্রায় সমান অবস্থানে চলে আসবেন।
‘গথাম পোলিং’ ও ‘এএআরপি’-এর যৌথ এই জরিপে দেখা যায়, স্লিওয়া প্রার্থী না হলে মামদানি পান ৪৪.৬ শতাংশ সমর্থন, আর ক্যুমো পান ৪০.৭ শতাংশ ভোট। চার শতাংশ ত্রুটিসীমা বিবেচনায় দুজনই কার্যত হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে।
তবে তিন প্রার্থী একসঙ্গে থাকলে মামদানি এখনো ৪৩.২ শতাংশ ভোটে এগিয়ে। অন্যদিকে ক্যুমোর ২৮.৯ ও স্লিওয়ার ১৯.৪ শতাংশ।
জরিপে আরও দেখা গেছে, অনির্ধারিত ভোটারদের ৭৮ শতাংশের বয়স ৫০ বছরের বেশি- যা ক্যুমোর জন্য হতে পারে বড় সুযোগ। বিশ্লেষকদের মতে, ‘নির্বাচনের ভাগ্য নির্ধারণ করবেন প্রবীণ ভোটাররাই।’
অন্যদিকে, তরুণদের মধ্যে মামদানির জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তাঁর প্রচারণায় যুক্ত হয়েছে হাজার হাজার নতুন তরুণ ভোটার, যা নভেম্বরের নির্বাচনে শক্ত অবস্থান এনে দিতে পারে তাঁকে।
খরচের চাপ, জননিরাপত্তা ও বাসস্থানের সংকট- এই তিন ইস্যুই এখন নিউইয়র্কবাসীর প্রধান উদ্বেগ। জরিপে ৬৩.৬ শতাংশ ভোটার বলেছেন, ‘জীবনযাত্রার ব্যয়’ তাঁদের সবচেয়ে বড় চিন্তা।
মামদানির উত্থানে নতুন জোয়ার: জোহরান মামদানির উত্থানে আমেরিকার রাজনৈতিক পরিসরে নতুন তরঙ্গ বইছে। দীর্ঘদিন প্রান্তিক ভাবা ‘ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্টস অব আমেরিকা’ (ডিএসএ) এখন নিজেদের সবচেয়ে বড় অর্জনের দ্বারপ্রান্তে দেখছে। অ্যান্ড্রু ক্যুমোর মতো প্রতিষ্ঠিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামদানির জয় কেবল এক নির্বাচনী সাফল্য নয়- এটি মার্কিন প্রগতিশীল রাজনীতির গতিপথ বদলে দেওয়ার এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। 
ডিএসএ সদস্যরা বলছেন, মামদানির জনপ্রিয়তা এখন ‘মামদানি বুম’  যা ২০১৮ সালের ‘এওসি বুম’-এর চেয়েও বড়। নিউইয়র্ক সিটির ডিএসএ অধ্যায়ের সদস্য সংখ্যা জুনের পর দ্বিগুণ হয়ে ১১ হাজারে পৌঁছেছে, আর জাতীয়ভাবে সংগঠনের সদস্যসংখ্যা ছাড়িয়েছে ৮০ হাজার। তাদের দাবি- এটাই আমেরিকায় বামপন্থার পুনর্জাগরণের ইঙ্গিত।
জোহরান মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারে ভাড়া স্থিরকরণ, সর্বজনীন শিশুসেবা, এবং বিনামূল্যে গণপরিবহনসহ সাশ্রয়ী জীবনের পক্ষে স্লোগান তুলেছেন। তাঁর সমর্থকেরা এসব দাবিকে গান ও উৎসবের মতো করে গ্রহণ করছেন- যেন রাজনীতি আবার মানুষের জীবনের ছন্দে ফিরে এসেছে।
ডিএসএ-র সমর্থকদের মতে, মামদানি এমন এক নেতৃত্বের প্রতীক যিনি শ্রমজীবী মানুষের পক্ষে নির্ভীকভাবে কথা বলছেন। তাদের যুক্তি, মধ্যপন্থী ডেমোক্র্যাটরা বারবার ব্যর্থ হয়েছে ‘ফ্যাসিস্ট রাজনীতি’র বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়তে, আর মামদানির মতো নেতারাই সেই শূন্যতা পূরণ করছেন।
তবু তরুণ প্রজন্মের কাছে ডিএসএ এখন নতুন আশার প্রতীক। সাম্প্রতিক গ্যালাপ জরিপে দেখা গেছে, ডেমোক্র্যাট ভোটারদের ৬৬ শতাংশ এখন সমাজতন্ত্রকে ইতিবাচকভাবে দেখেন- যা মার্কিন ইতিহাসে নজিরবিহীন।
এদিকে, মামদানির গতি এখনো সমর্থন ক্রমশ বাড়ছে। ৮৭ হাজার স্বেচ্ছাসেবক আগাম ভোটের আগে সপ্তাহান্তে দরজায় কড়া নাড়ছেন। ১৬ অক্টোবর প্রচারে ঘোষণা করা হয়েছে, আগামী সপ্তাহান্তে, ‘নিউইয়র্ক সিটি বিক্রির জন্য নয়’ শীর্ষক বিশাল সমাবেশে মামদানির সাথে যোগ দেবেন প্রতিনিধি ওকাসিও-কর্টেস এবং সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স।
মামদানি ‘অপ্রতিরোধ্য’ : জোহরান মামদানিকে দুঃসাহসী ও এখনো পর্যন্ত ‘অপ্রতিরোধ্য’ বলে মন্তব্য করেছে প্রভাবশালী মার্কিন দৈনিক দ্য নিউইয়র্ক টাইমস। গত ১৪ অক্টোবর দৈনিকটির প্রতিবেদনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনীত এই প্রার্থীর উত্থানের পেছনের গল্প তুলে ধরা হয়। 
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জোহরান মামদানি নীরবে-নিভৃতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করে যাচ্ছেন। যাতে তাঁদের ভোট তাঁর বাক্সে পড়ে। যাতে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরা পিছিয়ে পড়েন। এগুলোর কিছু কিছু সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও বেশির ভাগ ঘটনাই প্রকাশ্যে আসে না।
মামদানি কিভাবে নিজ দলের জন্য আশার পাশাপাশি নিরাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন, সে কথাও তুলে ধরা হয়েছে। হতাশ স্থানীয় ডেমোক্র্যাট নেতাকর্মীদের সঙ্গেও কথা বলছেন তিনি।
তাঁরা সবাই নতুন রাজনৈতিক তারকার সঙ্গে আগ্রহ নিয়ে কথা বলছেন। এর মাধ্যমে দুই ধরনের সুবিধা হচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়। 
বলা হয়, জোহরান মামদানি একদিকে যেমন নিজের দুর্বলতাগুলো জানতে পারছেন, অন্যদিকে সেগুলো দূর করার উপায় সম্পর্কেও পরামর্শ পাচ্ছেন। সবাই একমত হতে পারেন এমন বিষয়গুলো তিনি তুলে ধরছেন।
তিনি সমালোচকদের বক্তব্য শুনছেন। বিশেষ করে ধনকুবের নিউইয়র্কবাসী ও ইসরায়েলপন্থী অ্যাক্টিভিস্টদের, যারা মামদানির করনীতি ও ফিলিস্তিনের পক্ষে তাঁর অবস্থানকে নিয়ে ভীত।
বিল অ্যাকম্যানের সতর্কবার্তা: নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচন ঘিরে বিতর্ক আরও তীব্র হয়েছে বিলিয়নিয়ার বিনিয়োগকারী বিল অ্যাকম্যানের নতুন মন্তব্যে। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ অ্যাকম্যান বলেছেন, রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে না দাঁড়ান, তাহলে ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট জোহরান মামদানি প্রায় নিশ্চিতভাবেই মেয়র নির্বাচিত হবেন। অ্যাকম্যানের দাবি অনুযায়ী, প্রেডিকশন মার্কেটের সাম্প্রতিক তথ্য মামদানির জয়ের সম্ভাবনা ৯০ শতাংশে পৌঁছেছে। অ্যাকম্যান ১৭ অক্টোবর শুক্রবার তার এক্স অ্যাকাউন্টে পলিমার্কেটের তথ্য শেয়ার করে লেখেন, ‘এটা মামদানির বিতর্কে পারফরম্যান্সের ফল নয়, বরং স্লিওয়ার ঘোষণাই তাকে ৯০ শতাংশ জয়ের পথে ঠেলে দিয়েছে।’ 
প্রাইমারির পর থেকে অ্যাকম্যান সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু ক্যুমোর স্বতন্ত্র প্রচারণার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং স্লিওয়াকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে ক্যুমো মামদানির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সুবিধা পান।
স্লিওয়া অবশ্য কোনোভাবেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়তে রাজি নন। তার মুখপাত্র মারিয়া স্লিওয়া বলেন, ‘বিলিয়নিয়াররা এই নির্বাচনের ফল নির্ধারণ করবে না, জনগণই করবে। ভোটারদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’ তিনি আরও বলেন, ‘ক্যুমো ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে হেরেছেন, এখন তিনি স্বাধীন প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। কার্টিস বড় দলের প্রার্থী, তাই চাইলে ক্যুমোরই সরে দাঁড়ানো উচিত।’
অন্যদিকে ক্যুমো গত শুক্রবার এক রেডিও সাক্ষাৎকারে স্লিওয়াকে নির্বাচন ‘স্পয়লার’ আখ্যা দিয়ে বলেন, স্লিওয়া থাকলে মামদানির জয় নিশ্চিত। তার দাবি, রিপাবলিকান নেতারা ইচ্ছাকৃতভাবে স্লিওয়াকে মাঠে রেখেছেন যাতে মামদানি জিতে যান এবং পরে তাঁকে ব্যবহার করে ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে ‘চরমপন্থী’ হিসেবে দেখানো যায়।
মামদানিকে এখনো সমর্থন করেননি জেফরিস : যুক্তরাষ্ট্রের হাউস মাইনরিটি লিডার হাকিম জেফরিস এখনো নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনের ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ও শীর্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী জোহরান মামদানিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন জানাননি। তবে তিনি বলেছেন, আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করবেন।
১৯ অক্টোবর রবিবার এবিসি নিউজের দিস উইক অনুষ্ঠানে জেফরিস বলেন, ‘আমি আশা করছি, এই সপ্তাহেই মামদানির সঙ্গে কথা বলবÑ আগামী সপ্তাহান্তে নিউইয়র্ক সিটিতে আগাম ভোট শুরু হওয়ার আগে। আমরা একাধিকবার ফলপ্রসূ আলোচনা করেছি, বিশেষ করে তাঁর উদ্যোগে নিউইয়র্ককে আরও সাশ্রয়ী শহর হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে। সেটিই তাঁর জয়ের মূল কারণ।’
অ্যান্ড্রু ক্যুমোর অঙ্গীকার: ১৬ অক্টোবর এক সমাবেশে অ্যান্ড্রু ক্যুমো আসন্ন নির্বাচনে শহরের প্রশাসন, নিরাপত্তা ও অর্থনীতির নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছেন। তিনি বলেন, বর্তমান প্রশাসনের ব্যর্থতায় শহর অবনতির দিকে যাচ্ছে এবং এখন ‘ব্যাক-টু-বেসিকস’ পদ্ধতিতেই সমাধান খুঁজতে হবে।
ক্যুমো নিউইয়র্ক সিটির পুলিশ সংকটকে প্রধান ইস্যু হিসেবে তুলে ধরেছেন। তিনি দাবি করেন, ‘আমরা আধুনিক ইতিহাসে সবচেয়ে কম সংখ্যক পুলিশ নিয়ে কাজ করছি। এর পেছনে দায়ী ‘ডিফান্ড দ্য পুলিশ’ আন্দোলন, যা পুলিশের বাজেট থেকে এক বিলিয়ন ডলার কমিয়ে দেয়।’ তিনি ৫,০০০ নতুন পুলিশ সদস্য নিয়োগের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন, যার মধ্যে ১,৫০০ জনকে সাবওয়ে টহলে নিয়োজিত করা হবে। পাশাপাশি তিনি পুলিশের বেতন বাড়ানোরও প্রতিশ্রুতি দেন, যাতে নতুন নিয়োগে আগ্রহ বাড়ে।
নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ক্যুমো বলেন, ‘আমি এখনো নিরাপদ বোধ করি না। আমার মেয়ে সাবওয়ে ধরলে আমি ঘুমাতে যাওয়ার আগে তার ফোনের অপেক্ষা করি। খুনের সংখ্যা কমেছে ঠিকই, কিন্তু ধর্ষণ ও হামলার ঘটনা বেড়েছে- এটা নিশ্চিন্ততার খবর নয়।’
তিনি বর্তমান প্রশাসনের ওপর ‘ম্যানহাটন-কেন্দ্রিক মানসিকতা’র অভিযোগ এনে বলেন, বাইরের বরো- বিশেষ করে স্ট্যাটেন আইল্যান্ড, কুইন্স, ব্রঙ্কস ও ব্রুকলিন-উপেক্ষিত হচ্ছে। ক্যুমোর মতে, বাইরের এলাকায় গাড়ির ওপর নির্ভরতা বেশি, তাই বাইক লেন ও ট্রাফিক নীতিতে শহরকে ‘বাস্তবতাবোধ’ ফিরিয়ে আনতে হবে।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রসঙ্গে ক্যুমো বলেন, নিউইয়র্কে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হলে ট্যাক্স ইনসেনটিভ নীতি প্রয়োজন। তিনি সাবেক মেয়র বিল দে ব্লাসিওর আমাজন সদরদপ্তর চুক্তি বাতিলের সমালোচনা করে বলেন, ‘আমাদের বড় কোম্পানিগুলোর জন্য আবারও ‘নো ইনকাম ট্যাক্স, নো করপোরেট ট্যাক্স’ প্রণোদনা দিতে হবে। চাকরি হারানোর হার এখন ভয়াবহ।’
খাদ্য সহায়তা প্রসঙ্গে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, শহর সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে স্ন্যাপ প্রোগ্রামের আয়ের যোগ্যতা ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করবে, যাতে মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষরা ক্রমবর্ধমান খাদ্যদ্রব্যের দামে সহায়তা পান।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করা প্রসঙ্গে ক্যুমো বলেন, ‘তিনি যদি নিউইয়র্কের জন্য ভালো কিছু করেন, আমি সহযোগিতা করব; না করলে বিরোধিতা করব।’ 
মামদানিবিরোধী প্রচারণায় বিল অ্যাকম্যানের ১০ লাখ ডলার অনুদান: মামদানিবিরোধী প্রচারের জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী বিল অ্যাকম্যান ‘ডিফেন্ড এনওয়াইসি’ নামের এক সুপার প্যাককে ১০ লাখ ডলার অনুদান দিয়েছেন। অ্যাকম্যান এর আগে প্রাইমারির আগে ক্যুমো সমর্থিত ‘ফিক্স দ্য সিটি’ সুপার প্যাককে দিয়েছিলেন ৫ লাখ ডলার। নতুন অনুদানের ফলে তিনি এখন মেয়র নির্বাচনের অন্যতম বৃহৎ দাতা। তবে মাইকেল ব্লুমবার্গের ৮.৩ মিলিয়ন ডলারের অনুদান এখনো শীর্ষে।
ইসরায়েলপন্থী অবস্থানের জন্য পরিচিত অ্যাকম্যান সামাজিক মাধ্যমে মামদানির সমালোচনা করে আসছেন। তার মতে, মামদানিকে হারাতে সক্ষম একমাত্র প্রার্থী ক্যুমো।
ফুটবল বিশ্বকাপে ট্রাম্পকে স্বাগত জানাবেন মামদানি : জোহরান মামদানি বলেছেন, ২০২৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনাল মেটলাইফ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হলে তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর ছেলে ব্যারনকেও স্বাগত জানাবেন। ফক্স নিউজে মার্থা ম্যাককালামের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মামদানি বলেন, ‘ট্রাম্প আমাকে ‘কমিউনিস্ট উন্মাদ’ বলেছিলেন, তবু আমি তাঁকে স্বাগত জানাব। ফুটবল বিশ্বকাপ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ক্রীড়া আসর- এটা রাজনীতির ঊর্ধ্বে।’
আগামী বছরের জুলাইয়ে নিউইয়র্ক অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ফাইনালকে কেন্দ্র করে মামদানি ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি একটি ‘ওয়ার্ল্ড কাপ সিজার’ বা বিশেষ সমন্বয়ক নিয়োগ করবেন, যিনি পুরো আয়োজনের তত্ত্বাবধান করবেন। তাঁর ভাষায়, ‘এমন বিশাল এক টুর্নামেন্টের জন্য নিউইয়র্ক সিটি সরকারের কোনো প্রস্তুতি নেই। এই সিজার নিশ্চিত করবেন যেন বিশ্বকাপ শুধু পর্যটকদের জন্য নয়, নিউইয়র্কবাসীর জন্যও লাভজনক হয়- ছোট ব্যবসা, পর্যটন ও শহর অন্বেষণের সুযোগ বাড়ে।’
ফিফার টিকিটমূল্য নীতির সমালোচনা করে মামদানি আগেই বলেছিলেন, ৬ হাজার ডলারের টিকিট ‘অযৌক্তিক ও অমানবিক।’ তিনি দাবি তুলেছেন, নিউইয়র্কের বাসিন্দাদের জন্য অন্তত ১৫ শতাংশ টিকিট কম দামে সংরক্ষণ করা হোক। 
‘সাউথইস্ট এশিয়ানস ফর ক্যুমো’ জোটের আত্মপ্রকাশ : নিউইয়র্ক সিটিকে আরও নিরাপদ, ন্যায়সঙ্গত ও সাশ্রয়ী করে গড়ে তোলার অঙ্গীকার নিয়ে ‘সাউথইস্ট এশিয়ানস ফর ক্যুমো’ নামের এক নতুন বহুধর্মীয় তৃণমূল জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। ১৮ অক্টোবর শনিবার কুইন্সে এই জোটের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হিন্দু, মুসলিম ও শিখ কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ ও সমর্থকরা অংশ নেন।
এই জোটের মাধ্যমে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় নিউইয়র্কবাসীরা সাবেক গভর্নর ও বর্তমান মেয়র প্রার্থী অ্যান্ড্রু ক্যুমোর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ সমর্থন জানিয়েছেন। আয়োজকরা একে ‘এক শক্তিশালী ও বৈচিত্র্যময় তৃণমূল উদ্যোগ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
আগাম ভোট শুরু ২৫ অক্টোবর : নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনসহ বিভিন্ন পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৪ নভেম্বর মঙ্গলবার। ইতোমধ্যে নিউইয়র্ক সিটি বোর্ড অব ইলেকশন নির্বাচনের প্রায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। যারা সাধারণ নির্বাচনের দিন ভোট দিতে চান তারা ভোট দিতে পারবেন সকাল ছয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত। যারা মনে করছেন ওই দিন ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে যেতে পারবেন না কিংবা ভোট দেওয়ার জন্য অন্য দিন সুযোগ নিতে চান সেটিও তারা পারবেন। আগাম ভোট দেওয়া যাবে ২৫ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত। এই সময় তারা প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভোট দিতে পারবেন। ইতোমধ্যে এর সময়সূচিও ঘোষণা করা হয়েছে। 
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে নির্বাচন করছেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী জোহরান কোয়ামী মামদানি, স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু এম ক্যুমো এবং রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসাবে রয়েছেন কার্টিস সিলভা, তবে এরিক অ্যাডামস নির্বাচনে না থাকলেও এবং সড়ে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেও এখনও তার নাম ব্যালটে রয়ে গেছে। পাবলিক এডভোকেট পদে নির্বাচন করছেন ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জুমানি ডি উইলিয়ামস, রিপাবলিকান প্রার্থী গনজালো ডুরান, সিটি কম্পট্রোরাল পদে নির্বাচন করছেন বেশ কয়েকজন প্রার্থী। এর মধ্যে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী মার্ক ডি লিভেইন এবং রিপাবলিকানপ্রার্থী পিটার কেফালাস। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নির্বাচন করতে একাধিক প্রার্থী রয়েছেন, চারজনকে বিচারক নির্বাচন করতে হবে। এছাড়াও নিউইয়র্ক ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি, নিউইয়র্ক ডিস্ট্রিক্ট প্রেসিডেন্টসহ সিটি কাউন্সিলের বিভিন্ন ডিস্ট্রিক্টে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সিটি কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্টের ১০টি আসনেও নির্বাচন হবে।  নিউইয়র্ক সিটির  মিনিসিপ্যাল ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের সিভিল কোর্টের জজ পদে নির্বাচন হবে বেশ কয়েকটি ডিস্ট্রিক্টে। এছাড়াও ছয়টি প্রপোজাল রয়েছে সেই প্রপোজালের মধ্য হ্যাঁ অথবা না ভোট দিতে হবে।   

 

কমেন্ট বক্স