[মানুষের কণ্ঠ]
মৃত্যু, তুমি আনন্দ নাকি যন্ত্রণা?
আমাদের চোখের সামনে
তুমি এলে শবযাত্রার ঢাক বাজিয়ে,
কেউ কাঁদল, কেউ হাঁফ ছাড়ল,
কেউ ফিসফিস করে বলল-
‘শেষ হলো বেচারার কষ্ট।’
[মৃত্যুর কণ্ঠ]
আমি আনন্দও নই, যন্ত্রণাও নই,
আমি কেবল একটি দরজা-
যার এক পাশে আলো, অন্য পাশে অন্ধকার।
তোমরা কে কোন দিকে দাঁড়িয়ে আছ,
সে-ই ঠিক করে দেয় আমার রূপ।
[সময়ের কণ্ঠ]
মৃত্যু আমার সন্তান,
যাকে আমি জন্ম দিই প্রতি সেকেন্ডে।
তুমি যখন ক্যালেন্ডারের পাতায় জন্মদিন লেখো,
আমি ততক্ষণে তোমার মৃত্যুর তারিখও লিখে ফেলিÑ
শুধু তুমি তা পড়তে পারো না।
[মানুষের কণ্ঠ]
তাহলে তুমি অর্জন?
যেন জীবনের সমস্ত কষ্টের শেষে
এক সোনার মেডেল ঝুলিয়ে দেবে আমাদের গলায়?
[মৃত্যুর কণ্ঠ]
না, আমি বিসর্জনও, অর্জনও।
আমি নদীর শেষ স্রোত,
যা সাগরে পৌঁছে
নিজেকে বিলিয়ে দেয় অনন্ত জলে।
[পাখির কণ্ঠ]
আমি তো প্রতিদিন দেখি-
আলোর ভোর আর আঁধারের রাত
কী সহজে মিশে যায়।
আমার কাছে মৃত্যু মানে-
এক নতুন ডানার ঝাপটানি।
[পৃথিবীর কণ্ঠ]
হাজার বছর ধরে আমি দেখছি,
রাজাদের কবর, চাষিদের ঘাম,
শিশুর অসমাপ্ত কান্না-
সব আমার বুকেই সমান ভারে জমা হয়।
মৃত্যু আমার কাছে অপমান নয়,
বরং এক মহাসমতার মমতায় দেদীপ্যমান অগ্নিশিখা।
[মানুষের কণ্ঠ]
তাহলে মৃত্যু কি সার্থকতা?
আমরা যে গল্প লিখলাম,
যে সন্তান রেখে গেলাম,
যে গান গাইলাম-
সব মিলিয়ে কি তোমার কাছে কোনো মানে আছে?
[মৃত্যুর কণ্ঠ]
আমি বিচারক নই।
তোমাদের লেখা গল্প
আমি পড়িও না।
আমার কাজ-তাঁর নির্দেশ শুধু বইয়ের
শেষ পৃষ্ঠা বন্ধ করা।
[অলৌকিক সত্ত্বার কণ্ঠ]
তোমরা মানুষ ভুলে যেয়ো না-
মৃত্যুই সব কথার শেষ কথা নয়,
বরং সে এক অনন্ত জীবনের সূচনা,
যেখানে তোমাদের জন্য আরেক আকাশ, আরেক জন্ম,
আরেক খেলা অপেক্ষা করছে।
[মানুষের কণ্ঠ]
তাহলে মৃত্যু আসলে কে?
কী তার সত্যিকার পরিচয়?
সে মানুষের বন্ধু না শত্রু?
[মৃত্যুর কণ্ঠ]
আমি সবকিছু, আবার কিছুই নই।
আমি তোমারই ছায়া,
যাকে তুমি ভয় পাও, ভালোবাসো, ঘৃণা করো, খুঁজে ফেরো।
আমি সেই মুখোশধারী নাট্যকারের রঙ্গমঞ্চ,
যার পর্দা নামলে
তুমিই আবিষ্কার করো-
তোমার অচেনা মুখ।