ভারত কর্তৃক পুশইন উদ্বেগজনকভাবে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গত চার মাসেই আড়াই হাজার বাংলা ভাষাভাষীকে ভারত থেকে জোরপূর্বক বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে হত্যা না করতে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ। তবু বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশিদের হত্যা করা বন্ধ হয়নি। ভারতের এই বৈরী আচরণ দুই দেশের সীমান্ত এলাকাগুলোসহ বাংলাদেশের জনসাধারণের মধ্যে তীব্র ভারতবিরোধী মনোভাব গড়ে তুলছে।
সরকার পরিবর্তনের পরই ভারতের বাংলাদেশবিরোধী কার্যক্রম, প্রচার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ভারতের মধ্যে এবং বাইরে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশবিরোধী নানা অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। বাংলাদেশ সরকারিভাবে এসবের আপত্তি জানিয়ে তা বন্ধ করতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অনুরোধ করার পরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এর পাশাপাশি পুশইন করা হচ্ছে। আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, পশ্চিমবঙ্গ, নয়াদিল্লি, উত্তরপ্রদেশ এবং আরও কয়েকটি রাজ্য থেকে বাংলা ভাষাভাষীদের ধরে এনে সীমান্তে জড়ো করা হয় এবং তাদের জোর করে ঠেলে দেওয়া হয়। বাংলা ভাষাভাষী হলেই আটক করা হয়। পরিবারের সদস্যসহ সীমান্তে নিয়ে আসা হয়। বাংলা ভাষাভাষী অনেক ভারতীয়ও রয়েছে। ভারতীয়দের বাংলাদেশে পুশইন করার ঘটনাও ঘটেছে। পরে আবার তাদের ভারতে ফেরতও পাঠানো হয়। বাংলাদেশিদের অমানবিকভাবে সীমান্তবর্তী এলাকায় ফেলে রাখা হয়। তাদের ঠিকমতো খাবারও দেওয়া হয় না। বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন সময়ে কর্মহীন মানুষ ভারতের বিভিন্ন স্থানে যায় কাজের সন্ধানে। সেখানে তারা কাজের সংস্থানও করে নেয়। বিষয়টি দুই দেশেরই সংশ্লিষ্টদের কাছে অজানা নয়। ভারতের বিভিন্ন বেসরকারি, ব্যক্তি মালিকানার কোম্পানি তাদের প্রয়োজনে এদের কাজে নিয়ে থাকে। মজুরি তুলনামূলক কম এবং কাজেও অনেক বেশি আন্তরিক বলে এদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। বিষয়টি জানা থাকলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বরাবর সাধারণত তা এড়িয়ে চলে। সম্প্রতি তারা কঠোর অবস্থান নিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে রাজ্য সরকারগুলোও কঠোর হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় প্রতিদিনই কয়েকজন করে পুশইন করা হচ্ছে। মৌলভীবাজার, খাগড়াছড়ি, আখাউড়া, লালমনিরহাট, সাতক্ষীরা, কুমিল্লা, পার্বত্য চট্টগ্রাম, যশোর, মেহেরপুরসহ সীমান্তবর্তী বিভিন্ন জেলায় পুশইনের ঘটনা ঘটছে। চার মাসে আড়াই হাজার বাংলাদেশিকে পুশইন করা হয়েছে। তারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বলে সরকারিভাবে বাংলাদেশ এর প্রতিবাদও করতে পারছে না। তবে বিষয়টি মানবিকভাবে দেখার জন্য অনুরোধের মধ্যেই কূটনৈতিক তৎপরতা সীমিত রাখতে হচ্ছে। এদিকে বিএসএফ কর্তৃক সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা বন্ধ হয়নি। গত ফেব্রুয়ারিতে নয়াদিল্লিতে বিএসএফ ও বিজিবির মহাপরিচালক পর্যায়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশ থেকে সীমান্তে বিএসএফের প্রাণঘাতী বুলেট ব্যবহার না করা এবং মানুষ হত্যা না করার ব্যাপারে জোর দাবি জানানো হয়। সম্মত সিদ্ধান্ত হয়, বিএসএফ প্রাণঘাতী বুলেট ব্যবহার, মানুষ হত্যা করবে না। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত নয়াদিল্লির সম্মেলনে এ-সংক্রান্ত কার্যবিবরণীতে তা লিখিতভাবে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু তার পরও বিএসএফ হত্যাকাণ্ড চালিয়েই যাচ্ছে।
কূটনৈতিক মহল মনে করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর কার্যকর চাপ রাখার উদ্দেশ্যেই ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এসব করছে। পুশইন, সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা প্রত্যাশিত মৈত্রীর বদলে বৈরিতা, হিংসাত্মক আচরণ বাড়িয়েছে।