যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আদালতে হাজির হয়েছেন, জামিনও পেয়েছেন। জামিন পাওয়াটা বড় কথা নয়। হাজির হওয়াটাই ছিল বড় কথা। মি. ট্রাম্প আদালতে হাজির হবেন কি না, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে বিরাট একটি ফাটল লক্ষ করা যায়। অনেকটা বাজি ধরার মতো অবস্থা। শেষ পর্যন্ত তিনি আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেন। জামিন নিয়ে তিনি যে কথাটি বলেছেন, সেই কথাটি সকল প্রশ্ন, বিস্ময় ছাপিয়ে গেছে। ২১ আগস্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দেন, তিনি ২৪ আগস্ট জর্জিয়ার আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন। তখন থেকেই একদল বলে আসছিলেন, ট্রাম্প তার জেদ ত্যাগ করে আদালতে হাজির হবেন। আরেকটি দল মনে করছিলেন, তিনি তার ইগো ত্যাগ করে কখনোই আদালতে হাজির হবেন না।
অবশেষে সবার সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে তিনি আত্মসমর্পণ করেন এবং দুই লাখ ডলারে জামিন নিয়ে বের হয়েই যে কথাটি বলেন, সেটাকেই আমেরিকানরা এ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় বিস্ময় বা বড় কৌতুক বলে মনে করছেন। তিনি জামিনে বের হয়েই নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। তিনি যে মামলায় আদালতে হাজির হন, সে মামলাটি ছিল ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জার্জিয়া রাজ্যে হেরে যাওয়ার পর ভোটের ফল পাল্টে দেওয়ার অভিযোগ। আত্মসমর্পণের জন্য যাওয়ার পূর্বে তিনি তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়ে দেন, ‘আমি আগামী ২৪ আগস্ট বৃহস্পতিবার জর্জিয়ার আটলান্টায় যাচ্ছি গ্রেফতার হতে।’
জামিন নিয়ে বের হয়েই তিনি নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন, যেটা এখন শুধু টক অব দ্য আমেরিকা নয়, টক অব দ্য ওয়ার্ল্ড। এটাই এখন আমেরিকানদের কাছে বড় কৌতুক বলে মনে হচ্ছে। ২০২০ সালের নির্বাচনে পপুলার ও ইলেকটোরাল উভয় ভোটেই উল্লেখযোগ্য ব্যবধানে পরাজিত হলেও তিনি ভোটের ফল পাল্টে দিতে নানা ছলনা, নানা অসত্য কাহিনির অবতারণা করে ভোটের ফলাফল ঘোষণা কয়েক দিন পিছিয়ে দেন এবং পুরো বিশ্ববাসীকেই একটা টেনশনের মধ্যে রাখেন। তিনি নির্বাচনী কর্মকর্তা ও আদালতকে ব্যবহার করে তার পক্ষে ফল নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। অবশেষে আমেরিকার আইন-শাসন মজবুত থাকায় ট্রাম্পের সব রকম চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
এর পরও ট্রাম্প থেমে থাকেন না। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে ইলেকটোরাল ভোটারদের সমর্থন এবং অসমর্থন ঘোষণার মাধ্যমে চূড়ান্ত ঘোষণার সময় তার গোঁড়া রিপাবলিকান সমর্থকেরা ক্যাপিটল হিলে এই অধিবেশন পণ্ড করে দিতে রীতিমতো দাঙ্গা বাধিয়ে দেন। এই অধিবেশনে সংবিধানমতে সভাপতিত্ব করেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। তার ওপরও চাপ সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু মাইক পেন্সের সংবিধানের প্রতি প্রগাঢ় বিশ্বাস এবং দৃঢ় ব্যক্তিত্বের কারণে সে চেষ্টাও ব্যর্থ হয়ে যায়। এতে মাইক পেন্সকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে গালগাল, ক্যাপিটল হিলে রায়ট পর্যন্ত বাধিয়ে দেওয়া হয়। এতে পুলিশসহ কয়েকজন মানুষও নিহত হন।
ঘটনাগুলো সবই আমেরিকানদের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববাসীও প্রত্যক্ষ করেন নানা মাধ্যমে। সব ঘটনার পেছনেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাত ছিল বলে সাধারণ মানুষের দৃঢ় বিশ্বাস। বিচারে কী হবেÑসে আইনই বলবে, তবে সাধারণ মানুষ কখনোই তাকে ‘নির্দোষ’ বলে ভাবতে পারবেন না। কেননা তিনি গায়ের জোরে, অসত্যের জোরে আমেরিকার সংবিধান, ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি-সংস্কৃতিÑসবকিছু পাল্টে দেওয়ার চেষ্টায় মত্ত হয়ে উঠেছিলেন।
তিনি ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ স্লোগানের আড়ালে আমেরিকার ভাবমূর্তি ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি ক্যাপিটল হিলে মানুষ হত্যার পেছনে উসকানি দিয়েছেন বলেই গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষ মনে করে। সে কারণে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করুন কিংবা আইনের মারপ্যাঁচে তিনি অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি পান, মানুষের পারসেপশনে দোষী হয়েই থাকবেন, যা মানুষ এখনো মনে করে।