Thikana News
০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নুর ট্র্যাজেডি ►জাতীয় পার্টি এখন ‘যাত্রা পার্টি’🔸মবের মুখোমুখি ‘মুক্তিযুদ্ধ’🔸নিউইয়র্কে ইউনূসকে ঠেকাতে আ.লীগের মব-প্রস্তুতি🔸‘মব-সন্ত্রাস’ ঠেকাতে গিয়ে সরকার বিপাকে

হাসিনার উড়ন্ত টাকায় দেশের পুড়ন্ত পরিস্থিতি

হাসিনার উড়ন্ত টাকায় দেশের পুড়ন্ত পরিস্থিতি
মগের মুল্লুক’ গালিটি এখন ‘মবের মুল্লুক’। সারা বাংলাদেশে ‘মব’ যেন সংক্রামক। গত ২৮ আগস্ট ‘মব’ অত্যাচার চলে তিন স্থানে। রাজধানী ঢাকায়, গাজীপুরের শ্রীপুরে এবং দিনাজপুরে। সর্বশেষ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বনাম এলাকাবাসীর সশস্ত্র মব চলমান। ‘মঞ্চ ৭১’ নামের নতুন সংগঠন গত ২৯ আগস্ট ‘সেমিনার’ ডাকে। ‘ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’ বা ‘ডিআরইউ’ প্রাঙ্গণে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বহাল রাখতে এই আয়োজন। প্রধান অতিথি ড. কামাল বা আহ্বায়ক জেড আই পান্না ছিলেন অনুপস্থিত। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সপক্ষের বুদ্ধিজীবী-উদ্যোক্তারা ছিলেন। তবে ২০২৪-এর জুলাই যোদ্ধারা বাধা দেন। তাদের ভাষ্য-সেমিনারটি আওয়ামী লীগের পক্ষে আয়োজিত। তারা আগের দিন হল বাতিলের আহ্বান জানান ‘ডিআরইউ’কে।
তদুপরি সেমিনার আয়োজিত হলে চলতে থাকে প্রতিবাদ। তরুণ প্রজন্ম প্রবীণ অংশগ্রহণকারীদের অপমান করে। সাবেক এমপি-মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা লতিফ সিদ্দিকীও উপস্থিত ছিলেন। পরে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আরও ১৬ জন গ্রেফতার হন। মবের মাধ্যমে সেমিনার বন্ধের বিষয়টি বিশ্বব্যাপী সমালোচিত হয়। অনেকের মতে, ‘মুক্তিযুদ্ধ এখন মবের মুখোমুখি।’

নুর ট্র্যাজেডি ► মব ঠেকাতে গিয়ে সরকার বিপাকে * হাসিনার উড়ন্ত টাকায় দেশের পুড়ন্ত পরিস্থিতি
গত ২৯ আগস্ট ছিল ‘গণঅধিকার পরিষদ’ কর্তৃক জাপা অফিস ঘেরাও। ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে সন্ধ্যায় মিছিল হয়। ‘জাতীয় পার্টি’ ঘেরাও করতে গেলে চলে পাল্টা আক্রমণ। কাকরাইলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে আঘাত করে। নেতা নুরসহ ২১ নেতা-কর্মী চরমভাবে আঘাতপ্রাপ্ত। একাধিক পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। তবে দলনেতা নুরের শারীরিক পরিস্থিতি চরম আশঙ্কাজনক।
বিএনপির পক্ষে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন দেখতে যান। পরে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও দেখে আসেন। আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলও মধ্যরাতেই মেডিকেলে হাজির হন। এ সময় বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা প্রতিবাদ জানান। জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিতে বলেন। পেছনের দরজা দিয়ে বাসায় চলে যান আইন উপদেষ্টা।
এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ কড়া বিবৃতি দেন। নির্বাচন নয়, ফ্যাসিবাদের বিচার দাবি করেন। জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দেন। বলেন, ভারতের চালে জাপা নতুন ষড়যন্ত্র করছে!
তবে সরকারি সূত্র দিচ্ছে ভিন্ন তথ্য। ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এ ঘোষিত নির্বাচন বাস্তবায়নে পিছুটান নেই। জামায়াত, এনসিপি নির্বাচন পেছানোর পক্ষে। ‘পিআর পদ্ধতি’র দাবি তুলে বেকায়দায় ফেলেছে সরকারকে। হাসিনা গং-এর বিচার ও সংস্কার অন্যতম লক্ষ্য।
বৃহত্তম দল বিএনপির আহ্বানে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনী টার্গেট। কিন্তু এনসিপি, জামায়াত ‘মব’ করতে পারে বলে ভীতি জন্মেছে। তাই অতিদ্রুত মব-প্রক্রিয়া বন্ধে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারই ফসল হিসেবে ‘নুর-বাহিনী’র ওপর সাঁড়াশি আক্রমণ। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার একটি ‘কড়া টেলি-নির্দেশনা’ এখন ভাইরাল।
সদিচ্ছা থাকলেও প্রক্রিয়াটি অমানবিক বলে সমালোচনা হচ্ছে। দায়দায়িত্ব গিয়ে পড়ছে ‘নোবেলজয়ী’ ড. ইউনূসের ওপর। কোটাবিরোধী আন্দোলনের সূচনাকারী ছিলেন নুরুল হক নুর। জুলাই আন্দোলনের অধিকাংশ নেতা ‘ভিপি নুরে’র ক্যাডার। ফলে একই ধারায় ক্ষমতাপ্রাপ্ত বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। বস্তুত, আপনজনের আঘাতে নিজেরাই জর্জরিত। আঘাতটিকে নিজেদের ওপর পড়েছে বলে ‘জুলাইযোদ্ধা’রা ক্ষুব্ধ।
নুর-গং আক্রান্ত হওয়ায় আওয়ামীপন্থীরা মহাখুশি। ঘটনাটিকে সূত্র ধরে নির্বাচনী জটিলতা বাড়তে পারে। বহুধারায় বিভক্ত ‘জাতীয় পার্টি’ এখন বিরোধী টার্গেট। আওয়ামী লীগের ছায়াসঙ্গী হিসেবে ভূমিকা রাখবে বলে অভিযোগ। তাদের মতে, দিল্লিতে থাকা শেখ হাসিনা টাকা লগ্নি করছেন। পলাতক এস আলম সাড়ে চার হাজার কোটি দিচ্ছেন। হাসিনার শাসনামলে সর্বাধিক অর্থ পাচারের রেকর্ড এস আলমের বিরুদ্ধে। হাসিনা পরিবারের ‘স্লিপিং পার্টনার’ও বলা হতো চাটগাঁর এই ব্যবসায়ীকে। ইতোমধ্যে আড়াই হাজার কোটি টাকা হস্তান্তরিত হয়েছে বলে প্রকাশ। সমালোচকদের মতে, ‘জাপা’কে ব্যবহার করছেন রাজনীতিক হাসিনা। ওনার ‘উড়ন্ত টাকায় পুড়ন্ত পরিস্থিতি’ দেশের। সুস্থ ধারার রাজনীতি মনে হয় সুদূরপরাহত।

* জাতীয় পার্টি এখন যাত্রা পার্টি * ৭টি রঙ্গমঞ্চের উত্থান-পতন
জাপার প্রতিষ্ঠাতা এরশাদের সহোদর জিএম কাদের একা নন। জাপার নেতৃত্বের দাবিদার আরও অনেকে। ১৫ দিন পূর্বেও বহিষ্কৃত কেন্দ্রীয় নেতারা কমিটি বানিয়েছেন। ঘনিষ্ঠ সূত্রমতে, তাদের টার্গেট ‘হাসিনার টাকা’। ২০১৩-এর নির্বাচনকালেও ২০ মিলিয়ন ডলার পেয়েছিল তৎকালীন জাপা। ১১ মিলিয়ন অর্থ রাখা হয় ‘সুইস ব্যাংক’-এ। তৎকালীন কোষাধ্যক্ষ অকালে প্রয়াত হওয়ায় সে টাকা ‘হাওয়া’। জাপার ব্যানারে এখনো চেষ্টা-তদবির চলছে উদ্ধারের।
এক জাতীয় পার্টির উত্তরাধিকার অনেকেই। বেগম রওশন এরশাদ, জিএম কাদের। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, কাজী জাফর। নাজিউর রহমান মঞ্জু, বিদিশা এরশাদ। প্রয়াত বাবার হাত ধরে ব্যারিস্টার আন্দালিব পার্থ। ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ গং। রওশন-ঘরের ‘এরশাদপুত্র’ শাদ এরশাদ। শামসুল হুদা চৌধুরী থেকে মোস্তফা জামাল হায়দার প্রমুখ।
নব্বইয়ের গণআন্দোলনে এরশাদের পতনের পর হুদা-মতিনের নেতৃত্বে প্রথমবার ভাগ হয় জাপা। এরপর ১৯৯৭ সালে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও শেখ শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে দ্বিতীয় দফা এবং ১৯৯৮ সালে কাজী জাফর ও শাহ মোয়াজ্জেমের নেতৃত্বে তৃতীয় দফা ভাঙে দলটি। এরপর ২০০১ সালে নাজিউর রহমানের নেতৃত্বে চতুর্থ দফা এবং ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর বিশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে পঞ্চম দফা ভাঙন ঘটে। ষষ্ঠবারের মতো ভাঙন হয় এরশাদের মৃত্যুর পর। ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই দলের প্রতিষ্ঠাতা এরশাদ মারা যান। তার মৃত্যুর পর চেয়ারম্যান পদ নিয়ে দ্বন্দ্বে ২০২৪ সালের ৯ মার্চ ষষ্ঠবারের মতো ভাঙে এরশাদের জাতীয় পার্টি। এরশাদের অসিয়তমতো তার ছোট ভাই জিএম কাদের চেয়ারম্যান হলে বেঁকে বসেন স্ত্রী রওশন এরশাদ। নিজেকে জাপার চেয়ারম্যান ঘোষণা করে দলের কমিটি গঠন করেন, যার মহাসচিব করা হয় কাজী মামুনুর রশীদকে। সর্বশেষ নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে আনিস-হাওলাদার-চুন্নুর নেতৃত্বে সপ্তমবারের মতো ভাঙল জাপা। সবার ঘরে ঘরে ‘মিনি জাতীয় পার্টি’। সমালোচকেরা বলেন, ‘জাতীয় পার্টি এখন যাত্রা পার্টি।’ ঘটছে ৭টি রঙ্গমঞ্চের উত্থান-পতন।
উল্লেখ্য, ১৯৮৬-এর পয়লা জানুয়ারি জাপার জন্ম। সামরিক শাসক জে. এরশাদ ক্ষমতা বৈধকরণে দলটি গড়েন। আওয়ামী লীগ ও জামায়াত তৎকালীন নির্বাচনে অংশ নেয়। ফলে বিজয়ী দলটি ক্ষমতার রাজনীতিতে আসন পেয়েছিল। ১৯৯০-এর ৬ ডিসেম্বর গণ-আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী সহযোগী ছিল ‘জাপা’। ‘এনসিপি’ চায় আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ‘জাপা’রও আপাত কবর হোক। বিএনপি, জামায়াতসহ ২২ দলও জানাচ্ছে সংহতি।

* জাতিসংঘে ইউনূসের জন্য আওয়ামী ‘মব’ উপহার-প্রস্তুতি
আওয়ামী শাসনামলেও মব-সংস্কৃতির ব্যাপক চর্চা চলে। বিএনপির মেয়র মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা রক্তাক্ত। ‘আমার দেশ’ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান আদালতে রক্তাক্ত হন। যুবলীগের হাতে মারা যান নিরীহ বিশ্বজিৎ। ২০০৬-এর ২৮ অক্টোবরে লগি-বৈঠায় মরেন শিবিরকর্মী।
‘জুলাই আন্দোলন’-এ ছাত্রলীগ ও হেলমেট বাহিনী ছিল আক্রমণাত্মক। নুর ট্র্যাজেডির পরদিনও সম্প্রতি আক্রান্ত হয় ‘জাপা অফিস’। কাকরাইলে গিয়ে দেখা গেল করুণ দৃশ্যপট। অফিস সম্মুখে এরশাদের পাথরবাঁধানো প্রতিকৃতির ভগ্নদশা। ‘৫ আগস্টের’ পর বঙ্গবন্ধু-শেখ হাসিনার প্রতিচ্ছবি আক্রান্ত হয়। এবার জাপা-প্রধান প্রয়াত এরশাদও হলেন টার্গেট।
সরকার ‘মবমুক্ত’ নির্বাচনী আয়োজন সুসংহত করতে চায়। কিন্তু ‘নুর-নির্যাতন’ ইস্যুতে কিছুটা বিপাকে পড়ল। রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া নির্বাচন অসম্ভব বলে অনেকের অভিমত।
‘মব রাজনীতি’ দেশের চেয়ে প্রবাসে সর্বাধিক। রাষ্ট্রপ্রধানরা বিদেশে গেলেই ‘মব-আক্রমণে’ পড়েন। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে খালেদা-হাসিনা আক্রান্ত হন। সরকার-প্রধান ড. ইউনূসও বাদ যাননি। ব্রিটেন সফরকালে তিক্ত অভিজ্ঞতার ভারত্ব ছিল বিশাল। সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে জাতিসংঘ অধিবেশন নিউইয়র্কে। এতে যোগ দিতে আসছেন ড. ইউনূস। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে মব-আক্রমণের।
গত মধ্য আগস্টে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম নিউইয়র্কে ছিলেন। কনস্যুলেটে মিলনমেলায় গেলে আক্রমণাত্মক পরিস্থিতিতে পড়েন। অশ্লীল ভাষায় গালাগালি, দরজায় লাত্থি, ভাঙচুর। এ বিষয়ে মার্কিন প্রশাসনকে অভিযোগ দিয়েছে কনস্যুলেট। অনেকের ধারণা, লীগের আগ্রাসী ভূমিকা প্রশমিত হবে। কিন্তু সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান জানান দিলেন- না। ড. ইউনূসের জাতিসংঘ সফর ‘হারাম’ করতে তারা তৎপর।
 

কমেন্ট বক্স