Thikana News
০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নির্বাচনের বিকল্প ভাবনা♦বিএনপিকে জাপার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট♦জুডিশিয়ারিতে নতুন হাইপ♦অঘটনের মাস্টারপ্ল্যানে আওয়ামী লীগের বিশাল বাজেট

ইউনূস-ওয়াকারে বোঝাপড়া

ইউনূস-ওয়াকারে বোঝাপড়া ইউনূস-ওয়াকারে বোঝাপড়া
কেবল দিনে নয়, রাত-বিরাতেও গুজবের উৎসবে ভাসছে বাংলাদেশ। সাথে গুঞ্জনও। গুজব-গুঞ্জনের মধ্যে ঘটছে ঘটনার ঘনঘটাও। এর বাইরেও আচমকা ঘটে যাচ্ছে নানা ঘটনা। তা রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, সেনাপ্রধান, প্রধান বিচারপতিকে নিয়েও। গুজবের এ তাপ-উত্তাপের মাঝেই এখন থেকে সারা দেশের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলার দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের হাতে থাকার আদেশনামা জারি। বিচারপতি আহমেদ সোহেল ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। সেই সঙ্গে নিম্ন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি ও শৃঙ্খলা নিয়ে পঞ্চদশ সংশোধনী ও চতুর্থ সংশোধনীর বিধান বাতিল ঘোষণা করা হয়। তিন মাসের মধ্যে বিচার বিভাগীয় সচিবালয় গঠনের নির্দেশ তো রয়েছেই।
রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষাঙ্গন এমনকি সেনাবাহিনী নিয়ে নানা গুজব-গুঞ্জনের মাঝে আদালতের দিকে অনেকের চোখ না থাকার সময়েই এল বিচারিক এ নির্দেশনাটি। এর ফলে এখন থেকে সারা দেশের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করবে সুপ্রিম কোর্ট। দেখবে নিম্ন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতিও। এ নিয়ে পঞ্চদশ সংশোধনী ও চতুর্থ সংশোধনীর বিধান বাতিল করে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে বেশ হাইপ অনেকের। দেশের আদালত তথা বিচার বিভাগের জন্য এটি একটি বড়দাগের ঘটনা।
আদালতের গত ১৩ আগস্ট বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ-সংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষ হলো। গত ২৩ এপ্রিল বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ-সংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শুরু হয়। বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ-সংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদন নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টে বেঞ্চ গঠন করে দেন প্রধান বিচারপতি। গত ২০ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ এ বেঞ্চ নির্ধারণ করেন। এ রায়টি এমন সময় এল, যার দুদিন আগে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে গিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সাক্ষাতের বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত। এ নিয়ে বাতাসে বইছিল প্রাসঙ্গিক-অপ্রাসঙ্গিক যত গুঞ্জন। গুরুত্বপূর্ণ এই ঘটনা কাকতালীয়ও মনে করছেন অনেকে। সেনাপ্রধান রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গেও আলাদা বৈঠক করেছেন। জেনারেল ওয়াকার ক্ষমতা নিচ্ছেন, জরুরি অবস্থা জারি হচ্ছে. ড. ইউনূসকে বাদ দিয়ে ভারত ও আওয়ামী লীগবান্ধব একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন হচ্ছে-এসব গুজব-গুঞ্জনের মাঝেই সেনাপ্রধানের নড়াচড়া। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসেরও কড়া বার্তা। ‘কেউ যদি’ নির্বাচনের বিকল্প কিছু ভাবে, তাতে দেশের ক্ষতি ও বিপদের শঙ্কা জানিয়েছেন তিনি।
পূর্ণ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দিয়ে ক্ষমতায় বসানো ড. ইউনূসের এ সময়ে এসে এখন এই ‘কেউ যদি’টা কে?-এ প্রশ্নের চক্করের পূর্বাপরেই তার সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ। বৈঠকটির বার্তাও বেশ ইন্টারেস্টিং। সেখানে কোনো ধরনের গুজবের দিকে মনোযোগ না দিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অনুরোধ করেছেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ণ সহযোগিতার ব্যাপারে সরকারপ্রধানকে আবারও আশ্বস্ত করেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকেই এসব তথ্য জানানো হয়েছে। বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা সেনাবাহিনীর ভূমিকা সুসংহত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। বলেছেন, তিনি ভোটার উপস্থিতি, নতুন ও নারী ভোটারদের অংশগ্রহণ, নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নিশ্চিত করবে, এমন একটি নির্বাচনের ব্যাপারে জাতির সঙ্গে অঙ্গীকারবদ্ধ। সরকারের সব উদ্যোগ ও কর্মসূচি সফল করতে পুরো সেনাবাহিনী অঙ্গীকারবদ্ধ বলেও জানান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
নির্বাচনী তোড়জোড়ের মাঝে এসব ঘটনা নানা মাত্রা যোগ করছে। নির্বাচন সামনে রেখে শেখ হাসিনার টানা তিন মেয়াদের একান্ত সহযোগী জাতীয় পার্টিকে নিয়েও নানা ঘটনা। গণঅধিকার পরিষদ সভাপতি ভিপি নুরের ওপর হামলা, তাকে দেখতে বিভিন্ন দলের নেতাদের হাসপাতালে ছুটে যাওয়া, বিএনপি অফিসে এনসিপি নেতাদের শুভেচ্ছা জানাতে যাওয়াসহ অগুনতি ঘটনা। সেখানে প্রকাশ্যে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে বিএনপির আপত্তি। তার ওপর দেশ ও রাজনীতির স্বার্থে জাতীয় পার্টিকে রক্ষা করার দায়িত্ব এখন বিএনপির-প্রকাশ্য মন্তব্য জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর। কেবল আওয়ামী লীগের দোসর হওয়াই একমাত্র কারণ নয়। জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার দাবির পেছনে আছে ভোটের হিসাবও। জামায়াতে ইসলামী বিষয়টি স্বীকার করতে রাজি না হলেও জাতীয় পার্টি এবং বিএনপির নেতারা পেছনের এই সমীকরণকে আমল দিচ্ছেন। জামায়াত-এনসিপির এতে তীব্র আপত্তি। এ নিয়ে রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ।
এ সময়েই চারটি ছাত্রসংসদ নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতিও চলমান। এগুলো হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ-ডাকসু, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ-জাকসু, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ- চাকসু এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ-রাকসু। আর এই ছাত্রসংসদ নির্বাচনগুলোকে কেন্দ্র করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে নতুন কৌশলে এগোচ্ছে পতিত আওয়ামী লীগ। কৌশল বাস্তবায়ন করতে নতুন করে নির্দেশনা আসছে বিদেশে পলাতক আওয়ামী নেতাদের কাছ থেকে। সাথে ব্যাপক অর্থ। বিশাল বাজেটে তাদের মূল টার্গেট জাতীয় সংসদ এবং চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদ নির্বাচন ভণ্ডুল করা। অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি তৈরি করা। তা আংশিক সফল হতেও শুরু করেছে। চট্টগ্রামে ঘটেছে ধারণাতীত ঘটনা। তা আপাতত কোনোমতে সামাল দেওয়া গেছে। রাজশাহীতেও অবস্থা উত্তেজনাকর। এর বাইরে ভিন্ন ইস্যুতে ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও গন্ডগোল পাকিয়ে দেওয়া হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব রটানোর বাজেট ও আয়োজনও বিশাল। ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে দিনরাত সমানে এগুলো থেকে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। দেশে নানা ন্যারেটিভ তৈরি ও বিভ্রান্তি ছড়াতে এগুলোতে বেশ সুফল পাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ছাড় দেয়নি সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকেও। অবস্থার ভয়াবহতায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআরের মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়ে বলতে হয়েছে, সেনাপ্রধানের কোনো ফেসবুক প্রোফাইল বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট নেই এবং ভবিষ্যতেও এ ধরনের কোনো অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করার পরিকল্পনা নেই। এ অবস্থায় জনসাধারণ ও গণমাধ্যমকে এ ধরনের ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচারিত তথ্যের মাধ্যমে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে আইএসপিআরের বার্তায়।

কমেন্ট বক্স