Thikana News
২৯ অগাস্ট ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৫
রয়টার্স/ইপসোস জরিপ

মার্কিন গণতন্ত্র হুমকির মুখে

মার্কিন গণতন্ত্র হুমকির মুখে ছবি সংগৃহীত
মার্কিন গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে দেখছেন অধিকাংশ আমেরিকান। রয়টার্স/ইপসোস পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, অর্ধেকেরও বেশি আমেরিকান মনে করছেন, দলীয় স্বার্থে জেরিম্যান্ডারিং বা আসনের সীমানা কাটাছেঁড়া করা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর এবং এর ফলে আমেরিকা তীব্র রাজনৈতিক বিভাজনের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

জরিপে অংশ নেওয়া ৫৭ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা আশঙ্কা করছেন আমেরিকান গণতন্ত্রই হুমকির মুখে। এই দৃষ্টিভঙ্গি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ১০ জনে ৮ জন এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিপাবলিকান দলের মধ্যে ১০ জনে ৪ জনের।

রয়টার্স/ইপসোস ছয় দিন ধরে মোট ৪ হাজার ৪৪৬ জন প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকানকে নিয়ে এই জরিপ করেছে। সোমবার (১৮ আগস্ট) শেষ হওয়া এই জরিপে ওয়াশিংটনসহ রাজ্যের রাজধানীগুলোতে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক বিভাজন নিয়ে গভীর অস্বস্তি দেখা গেছে। বর্তমানে কংগ্রেসের দুই কক্ষই রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে।

জরিপে দেখা গেছে, মোট ৫৫ শতাংশ উত্তরদাতা (যার মধ্যে ৭১ শতাংশ ডেমোক্র্যাট ও ৪৬ শতাংশ রিপাবলিকান) মনে করেন, টেক্সাস ও ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নরদের হাতে থাকা বর্তমান আসন পুনর্বিন্যাস পরিকল্পনা বা ‘জেরিম্যান্ডারিং’ গণতন্ত্রের জন্য খারাপ।

ট্রাম্পের তাগিদে টেক্সাসের রিপাবলিকান গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট একটি বিশেষ অধিবেশন ডাকেন, যাতে ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে রাজ্যের কংগ্রেস আসনগুলো নতুনভাবে আঁকতে পারে আইনসভা। এর উদ্দেশ্য রিপাবলিকানদের ২১৯-২১২ আসনের ক্ষীণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখা।

প্রচলিতভাবে দেখা যায়, মধ্যবর্তী নির্বাচনে হোয়াইট হাউসে থাকা প্রেসিডেন্টের দল রিপ্রেজেনটেটিভ পরিষদের আসন হারায়। এতে তাদের আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া আটকে যায়। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে এ রকম ঘটেছিল এবং তাকে দুটি অভিশংসন তদন্তের মুখোমুখি হতে হয়েছিল।

অন্যদিকে ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট গভর্নর গ্যাভিন নিউসম হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘রিপাবলিকানদের টেক্সাসে বাড়তি সুবিধার পাল্টা হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়ার মানচিত্র নতুন করে আঁকতে চেষ্টা করবেন এবং পাঁচটি অতিরিক্ত ডেমোক্র্যাট আসন যোগ করবেন।’

উল্লেখ্য, নিউসম ২০২৮ সালে হোয়াইট হাউসে নির্বাচিত হওয়ার জন্য একজন প্রতিদ্বন্দ্বী।

এই প্রথা নতুন কিছু নয়, তবে এ নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে কারণ এবার এটি হচ্ছে দশক শেষে জনগণনার আগেই, ট্রাম্পের মেয়াদের মাঝামাঝি সময়ে। এর ফলে রিপ্রেজেনটেটিভ পরিষদের অধিকাংশ আসন প্রতিদ্বন্দ্বিহীন হয়ে পড়েছে। গত কয়েক দশকে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আসনই ২০ শতাংশের বেশি ব্যবধানে জয়ী হয়েছে।

ট্রাম্প তার প্রেসিডেন্সির সময় গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ভঙ্গ করেছেন—যেমন প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগকে নামিয়ে দেওয়া, স্বাধীন ফেডারেল রিজার্ভকে চাপ দিয়ে সুদের হার কমানোর চেষ্টা এবং ওয়াশিংটন ডিসির পুলিশ বাহিনীর ওপর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।

টেক্সাস রিপাবলিকানদের মধ্যে অনেকেই পুনর্বিন্যাস পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছেন, তবে ডেমোক্র্যাটরা এটিকে ‘প্রতারণা’ বললেও পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে ডেমোক্র্যাট-নিয়ন্ত্রিত রাজ্যগুলোতে একইভাবে আসন বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন।

সব উত্তরদাতার ক্ষেত্রে জরিপের সম্ভাব্য ভুলের সীমা ছিল প্রায় ২ শতাংশ, আর রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের ক্ষেত্রে প্রায় ৩ শতাংশ।

আমেরিকানরা দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিদ্বন্দ্বী দলের রাজনীতিবিদদের অপছন্দ করে আসছেন, কিন্তু জরিপে দেখা গেছে তারা প্রতিপক্ষ দলের সাধারণ মানুষকেও অবিশ্বাস করেন।

ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ বলেছেন, রিপাবলিকানদের বিশ্বাস করা যায় না। আর ৩২ শতাংশ দ্বিমত পোষণ করেছেন। রিপাবলিকানদের মধ্যে ৪৩ শতাংশ বলেছেন, ডেমোক্র্যাটদের বিশ্বাস করা যায় না, আবার ৪৪ শতাংশ দ্বিমত করেছেন।

জরিপে আরও দেখা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে রাজনীতির প্রভাব বেড়েছে, বিশেষ করে ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে। তাদের মধ্যে ২৭ শতাংশ বলেছেন, গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন তাদের বন্ধুত্বের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

২০১৭ সালের এপ্রিলের এক জরিপে, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের শুরুর দিকে, মাত্র ১৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছিলেন রাজনীতি তাদের বন্ধুত্বে সমস্যা তৈরি করেছে। রিপাবলিকানদের মধ্যে এই সংখ্যা ছিল ১০ শতাংশ, যা এখনো অপরিবর্তিত।

ডেমোক্র্যাটদের প্রায় অর্ধেক (৪৬ শতাংশ) বলছেন তাদের দল পথ হারিয়েছে। তুলনায় রিপাবলিকানদের মধ্যে মাত্র ১৯ শতাংশ একই কথা বলেছেন।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, রিপাবলিকানদের প্রতি সাধারণ ডেমোক্র্যাটদের অবিশ্বাস ও বন্ধুদের সঙ্গে টানাপোড়েন এটাই নির্দেশ করছে, তারা প্রতিপক্ষ দলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে অনিচ্ছুক—যা দলটির রাজনৈতিক অবস্থান পুনরুদ্ধারের পথে বাধা হতে পারে।

ঠিকানা/এনআই

কমেন্ট বক্স