জুলাই আন্দোলন যাদের নেতৃত্বে হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সেই সমন্বয়কদের কয়েকজন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হয়েছেন। এভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার কারণে এখন তাদের গ্রহণযোগ্যতা আগের তুলনায় কমে গেছে। ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন টকশোতে এসে এমন মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. শামীমা সুলতানা।
তিনি আরো যোগ করেন, ছাত্রদের নেতৃত্বে চব্বিশে জনসাধারণ একটি কাতারে এসেছিল। কিন্তু হাসিনার পতনের পর সেই ছাত্ররা চলে গেল ক্ষমতায়। এভাবে তারা নিজেরাই বৈষম্য তৈরি করলো। কারণ জুলাই আন্দোলন তাদের নেতৃত্বে হলেও আরো অনেক শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে যোগ দিয়েছিল। ছিল ঢাকার বাইরের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ছিলেন শ্রমিক, ছিলেন বিভিন্ন বয়সী নারীরা। এতো রকম অংশগ্রহণকারীদের কথা বিবেচনায় রেখে সমন্বয়করা ক্ষমতায় না গিয়ে যদি রাস্তায় থাকতেন, তাহলে তারা এখন আরো বেশি গ্রহণযোগ্য থাকতে পারতেন বলে মনে করেন ড. শামীমা সুলতানা।
৫ আগস্ট মঙ্গলবার এই টকশোতে অতিথি হিসেবে আরো ছিলেন গণসংহতি আন্দোলন-এর প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। নিউইয়র্ক সময় বেলা ১১টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা) এই অনুষ্ঠান সরাসরি দেখা গেছে ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন ইউটিউব চ্যানেলে। চব্বিশের ৫ আগস্ট গণ আন্দোলনের মুখে হাসিনা সরকারের পতন হয়। দিনটিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস হিসেবে পালন করছে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই দিনের প্রত্যাশা কতটা পূরণ হয়েছে এই এক বছরে? জুলাই স্পিরিট কতটা বিকশিত করতে পেরেছে জুলাই মিত্ররা? তারা এখন বিভাজিত কেন? জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়করা কী নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখতে পেরেছেন? এসব প্রশ্ন সামনে রেখে ঠিকানা টিভির প্রধান সম্পাদক খালেদ মুহিউদ্দীন সঞ্চালনা করেন এই টকশো।
প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, ছাত্ররাই তাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। এর মাধ্যমে জুলাই মিত্রদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয় বলে একমত হন অনুষ্ঠানের দুই অতিথি। তবে সমন্বয়কদের ক্ষমতায় যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক ভাষ্যকার জোনায়েদ সাকি বলেন, সমন্বয়কদের সবাই রাজনীতিতে যুক্ত হননি। কিন্তু যারা যুক্ত হয়েছেন তাদের উচিত ছিল ক্ষমতার বলয় থেকে বের হয়ে এনসিপির প্রতিষ্ঠা করা। ক্ষমতা থেকে বের হয়ে তাদের জনগনের কাছে গিয়ে রাজনীতি করা দরকার ছিল। কিন্তু তরুণরা সেটা করেনি।
“জুলাইয়ের বিপ্লবীরা আসলে পুরনো বন্দোবস্তে ঢুকে গেছেন। এটা বিপ্লবের বড় এক অপচয়। তবু তরুণদের বিষয়ে আশাবাদী হতেই হবে। কারণ চব্বিশের অভ্যুত্থান যারা করতে পেরেছে, তারা এখনকার সংকটও কাটিয়ে উঠতে পারবে”, বলেন জোনায়েদ সাকি।
ড. ইউনূস সরকারের মধ্যে সার্বিকভাবেই দৃঢ়তার অভাব দেখছেন তিনি। গণসংহতি আন্দোলন-এর এই নেতা বলেন, সরকারের উপদেষ্টারা আমলাতন্ত্রের কাছে বন্দী হয়ে গেছেন। পুরনো বন্দোবস্তের জোয়ালেই আটকে যাচ্ছেন তারা। তাদের যারা ম্যান্ডেট দিয়েছিল, সেই রাজনৈতিক দল ও জনগণের শক্তির কাছাকাছি থাকতে পারলে এটা হতো না। সেখানে তারা পৌঁছাতেই পারেননি- মনে করেন রাজনীতিক জোনায়েদ সাকি।
জুলাই আন্দোলন দমনে সরকারের হত্যাকাণ্ড, নিপীড়নের প্রতিবাদে নিজের দপ্তর থেকে তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সরিয়ে ফেলেছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. শামীমা সুলতানা। সেই সময় ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। তবে অল্প দিনের মধ্যেই হাসিনা সরকারের পতনে তার বড় কোনো ক্ষতি হয়নি। স্বৈরাচারের বিদায় বড় অর্জন মনে করলেও এই এক বছরের অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম নিয়েও খুশি হতে পারছেন না অধ্যাপক ড. শামীমা সুলতানা। তিনি বলেন, “আমরা ন্যায়ভিত্তিক সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু ৬ আগস্ট থেকেই নারীর ওপর নৃশংসতা শুরু হয়। নারীর পোশাক নিয়ে নানা কথা বলতে দেখি। নারীর প্রতি সহিংসতা দেখি। নানারকম মব তৈরি হচ্ছে। তাই নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে স্বস্তি আসেনি। আসলে কোনো দেশে নিরাপত্তার অভাব থাকলে মূল্যবোধের অবক্ষয় দেখা দেয়। সেটাই এখন দেশে দেখা যাচ্ছে।”
ঠিকানা/এসআর