যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরোপিত শুল্ক কমিয়ে আনতে দেশটির সঙ্গে গোপন চুক্তি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিগত ৫৩ বছরে কোনো সরকারই কারো সঙ্গে এমন ‘গোপন চুক্তি’ করেনি। ভারতের সঙ্গে গোপন চুক্তি করেছিলেন- এমন অভিযোগ সামনে এনে শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দীন আহমদের সমালোচনা করা হয়। কিন্তু এই অভিযোগের বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই। এসব কথা বলেছেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম।
২৯ জুলাই মঙ্গলবার ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন টকশোতে এসে তিনি আরো বলেন, ‘বাড়তি শুল্কের কারণে অন্য অনেক দেশের মতো ট্রাম্পের রাজনীতির শিকার হয়েছি আমরাও। এখন আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন, শুল্ক কমাতে তারা যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সরকার প্রতিনিধি দলে ব্যবসায়ীদের কাউকে যুক্ত করেনি।’
“শুল্ক না কমলে পোশাক শিল্পখাত বিপজ্জনক জায়গায় চলে যাবে। অথচ সরকার নিজেও ডিল করতে পারেনি, আবার ব্যবসায়ীদেরও ডাকেনি। এটা দেশের বিরুদ্ধে এক ধরনের অপকর্ম। এর জবাব ড. ইউনূসের সরকারকেই দিতে হবে”, যোগ করেন হাসনাত কাইয়ুম।
এই টকশো নিউইয়র্ক সময় বেলা ১১টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা) সরাসরি প্রচারিত হয়েছে ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন ইউটিউব চ্যানেলে। যেখানে অতিথি হিসেবে আরো ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ। চলমান সংস্কার উদ্যোগ, জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি, অন্তর্বর্তী সরকারের সক্ষমতা- এসব নিয়ে ঠিকানা টিভির প্রধান সম্পাদক খালেদ মুহিউদ্দীনের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন দুই অতিথি।
আগে ঘুষ দিতে হতো ১ লাখ টাকা, এখন দিতে হয় ৫ লাখ টাকা। সম্প্রতি এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মূলত একজন ব্যবসায়ীর অভিযোগ সামনে এনেছেন তিনি। অন্তর্বর্তী সরকারের সময় শুধু ঘুষ নয়, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, ছিনতাই- নানা অপরাধ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। বিশেষত চাঁদাবাজিতে বিএনপি, এনসিপি, জামায়াতের কেউ কেউ জড়িত। প্রায়ই প্রকাশিত হচ্ছে এমন প্রতিবেদন।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, ‘বিএনপি কিন্তু ক্ষমতায় নেই। তবু অভিযোগ এলে দল ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু সমন্বয়ক শব্দটি এখন গালিতে পরিণত হয়েছে চাঁদাবাজির কারণে। এমন অনেকের নামই আমি জানি। প্রশাসনে জামায়াতের অনেক লোক প্রভাব খাটাচ্ছে। যত সমন্বয়ক সচিবালয়ে ঘোরাফেরা করে, সেই তুলনায় বিএনপির আধ শতাংশ লোকও সেখানে যায় না। তারপরও বিএনপি ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু জামায়াত-এনসিপি কী ব্যবস্থা নিচ্ছে?’
এই সরকারে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রভাব বেশি, সেই দিকটি তুলে ধরে শামা ওবায়েদ বলেন, লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের কথা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু জামায়াত নেতারাই সবার প্রথম এই মাসটির কথা বলেছিলেন। বিএনপির দাবিটা ছিল ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজন। তবু দেশের স্বার্থে ফেব্রুয়ারি মাস মেনে নেওয়া হয়েছে, মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার নিজেদের কাজের কোনো অগ্রাধিকার তালিকা এক বছরেও ঠিক করতে পারেনি বলে অভিযোগ করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম। তিনি আরো যোগ করেন, সরকার দুর্বল নাকি সবল, এরচেয়ে যা বেশি সামনে আসছে সেটা হলো এই সরকার অদক্ষ। প্রশাসন, বিচারালয়- কোথাও তারা সুশাসন ফিরিয়ে আনতে পারেনি। অথচ তারা স্বচ্ছতার উদাহরণ তৈরি করবে, এমন আকাঙ্খা ছিল জনমনে।
হাসনাত কাইয়ুম বলছেন, কোনো কিছুতেই এই সরকার ভালো নমুনা তৈরি করতে পারছে না। তাই ফেব্রুয়ারির মাসের মধ্যেই নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর ছাড়া তাদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই, মনে করেন তিনি।
ঠিকানা/এসআর