Thikana News
২৩ জুলাই ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫
ভোট ভণ্ডুল চক্রান্ত ♦ ডেঙ্গু কষ্টে বিএনপি

জামায়াতের চালে বলির পাঁঠা এনসিপি

জামায়াতের চালে বলির পাঁঠা এনসিপি সংগৃহীত ছবি
দুমড়ে-মুচড়ে হাড্ডি-মাংস এক করে ফেলার দুঃসহ ব্যথা-বেদনায় বিএনপি। শ্বাসকষ্ট ঘরে-বাইরে সবখানেই। সহ্য করা ছাড়া গতি নেই। মুখ খুলে বলার অবস্থা নেই। আবার সহসাই সেরে ওঠার সম্ভাবনাও নেই। সরকার, জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন কর্নার থেকে এ জ্বালায় আরও বাতাস দেওয়া হচ্ছে। সুকৌশলে নির্বাচন আয়োজনে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে, তা বুঝতে পেরেও প্রতিকারের রাস্তা পাচ্ছে না দলটি। অন্তর্বর্তী সরকারের ঘাড়ে বন্দুক রেখে যারা নিজেদের ফায়দা হাসিল করতে চায়, তারাই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে বাধা সৃষ্টি করছে-এর বেশি আর সফট রিঅ্যাকশন দেওয়ার অবস্থা নেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের।
কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পিআর, সংস্কার, বিচার নিয়ে গন্ডগোল পাকানোর বেদম চেষ্টা চলছে। তা বুঝেও মারমুখী হতে পারছে না বিএনপি। দ্রুত নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপি থেকে এত দিন দেওয়া হতো চাপ-তাপ। করা হতো সন্দেহ-সমালোচনা। এখন সরাসরি অভিযোগ। প্রশ্ন ছোড়া হচ্ছে, সরকার কি নির্বাচনের বিষয়ে আন্তরিক? দলের মধ্যম সারির নেতারা সোজা বাংলায় বলছেন, সরকার নির্বাচন দিতে চায় না। চায় ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে। অবশ্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভাষা এত সরাসরি নয়, খানিকটা কোমল। তিনি প্রশ্নাকারে বলেছেন, সরকারের পক্ষে আদৌ নির্বাচন করা কি সম্ভব? প্রশ্নটা করেছেন, ‘কোনো কোনো’ মহলের বরাত দিয়ে। অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো একটি অংশের সহায়তায় কেউ কেউ দেশে উদ্দেশ্যমূলক পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে কি না, এমন প্রশ্ন ঘুরছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে আদৌ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব কি না, প্রশ্ন এ কারণেই।
দেশে ফ্যাসিবাদের কাঠামো সম্পূর্ণরূপে ভেঙে দিতে হলে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প দেখছে না বিএনপিসহ সমমনারা। একসময়ের সহযাত্রী জামায়াতের আমির বলেছিলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে কিসের নির্বাচন?’ এনসিপি-ইসলামী আন্দোলন নেতাদের কথাবার্তাও এমনই। এ ছাড়া এনসিপি এখন অনেকটাই জামায়াতের কব্জায়। তা নির্বাচনমুখী দল বিএনপির জন্য ভাবনার বিষয়। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ঘাটতির কারণে নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার বা পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টার নমুনা দেখা স্বাভাবিক।
নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা না থাকা সমমনা কোনো কোনো দলের নানা বাগড়া বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে জ্বর-সর্দিসহ মারাত্মক কষ্টে ফেলেছে। কিন্তু এই নব্য প্রতিপক্ষকে চূড়ান্তভাবে চটাচ্ছেও না। কিছুটা পিঠ বুলিয়ে চলছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত লন্ডন বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এই টাইমলাইন নির্দিষ্ট করেছে। কদিন আগে প্রধান উপদেষ্টা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্নের নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর আর বিপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু বাস্তবে বিপত্তি বাড়ছে। গোলমাল পাকছে, পাকানো হচ্ছে। আগে বিচার-সংস্কার, পরে নির্বাচন; আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন, পরে জাতীয় নির্বাচন; সংখ্যানুপাতে ভোটের হিসাব, উচ্চকক্ষ-নিম্নকক্ষসহ নানা ফেরকা সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে। নির্বাচন পেছানোই এসবের উদ্দেশ্য বলে সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক। রাজনীতির চলমান বিভক্তি এ সন্দেহকে করছে আরও শক্তপোক্ত। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাদের উদ্দেশ করে কুরুচিপূর্ণ এবং অশ্লীল মন্তব্য এবং তার প্রতিক্রিয়ায় সভামঞ্চ ভেঙে দেওয়ার মতো ঘটনা বিভাজনকে তাড়িত করছে। যার যোগফলে স্টেশন ছাড়াই ইলেকশন ট্রেনের চেইনে টান দেওয়া। তা অনিবার্যভাবে জুলাই আন্দোলনের বিজয়কে পিছু টেনে ধরছে। নির্বাচনকে করছে প্রলম্বিত। বেকায়দায় ফেলছে বিএনপিকে।
এই সর্বজনীন ঐক্য বিনষ্ট হলে কার লাভ ও কার ক্ষতি, তার নানা হিসাব-নিকাশ চলছে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সময়কে দীর্ঘায়িত করা ও বিরাজনৈতিকীকরণকে নানাভাবে উৎসাহিত করাও জুলাই অভ্যুত্থানের ঐক্য বিনষ্ট করার পেছনে কাজ করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই সরকারকে পাঁচ বছর রাখা এবং প্রচলিত রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে যে প্রচারণা, তা বিরাজনৈতিকীকরণের পক্ষে জনমত তৈরি করতে সহায়তা করে। লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক এই অনিশ্চয়তা অনেকটাই কমিয়ে আনে। কিন্তু একটি গোষ্ঠী জনগণের ম্যান্ডেটের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ভালো চোখে দেখেনি। তাই স্থিতিশীলতার বদলে জুলাইয়ের পক্ষ শক্তিগুলোর মধ্যে ফাটল ধরানো ও অনৈক্যের বীজ বপন করার চেষ্টা চলতে থাকে। সেই চেষ্টায় এরই মধ্যে ব্যাপক সাফল্য এর আয়োজকদের। তারা জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের ফ্রন্টলাইনার এনসিপিকে আচ্ছারকমভাবে টার্গেট করে প্রকারান্তরে বলির পাঁঠা বানিয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ এ অংশটিকে বিএনপির প্রতিপক্ষও বানিয়ে দিতে পেরেছে জামায়াত। এ সাফল্যে বেশ স্বস্তি এবং রিলাক্স মুডে জামায়াত। একদিকে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নির্ভার, অন্যদিকে বিদেশি যোগাযোগেও বেশ আগোয়ান। নিয়মিত ঢাকাস্থ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে দেনদরবার, মোলাকাত চলছে জামায়াত নেতাদের। ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনই চলে যাচ্ছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। বিদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবনা কমিয়ে আনার আন্তর্জাতিক সংবাদটি জামায়াতকে কিছুটা পুলকিত করেছে। বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের ভিনদেশের নির্বাচন নিয়ে মতামতে নিষেধ করার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের অভ্যন্তরীণ নোটটি আরও কিছু দলকেও নানাভাবে ভাবাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে বিশ্বজুড়ে সব মার্কিন দূতাবাসে পাঠানো তারবার্তায় বলা হয়েছে, দেশের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সুস্পষ্ট ও জরুরি স্বার্থ জড়িত নয় এমন বিষয়ে এই দপ্তর নির্বাচন-সংক্রান্ত কোনো বিবৃতি দেবে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেবে না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন দেশে নির্বাচনী স্বচ্ছতা ও গণতন্ত্রের প্রচারে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের নীতিতে বড় পরিবর্তন এল। রুবিওর তারবার্তায় আরও বলা হয়েছে, শীর্ষ নেতৃত্বের অনুমতি ছাড়া কোনো মার্কিন কূটনীতিক বিদেশের নির্বাচন নিয়ে বিবৃতি দিতে পারবেন না।

কমেন্ট বক্স