বাংলাদেশ সোসাইটি এ বছর ৫০ বছর পূর্ণ করতে চলেছে। সেভাবে উদ্্যাপনের জন্য বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বর্তমান কমিটির উদ্যোগে এই উদ্্যাপন হবে সামনের জুলাই কিংবা আগস্ট মাসে। অনুষ্ঠানটি সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে মহিউদ্দিন দেওয়ান, আবুল কালাম ও হারুনূর রশীদকে নিয়ে প্রাথমিক একটি কমিটি করা হয়েছে। তারা ইচ্ছা করলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে পরামর্শ করে কমিটির পরিসর বাড়াতে পারেন। কমিউনিটির সবার প্রত্যাশা-তাদের মাদার সংগঠন সোসাইটির ৫০ বছর পূর্তি যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে উদযাপিত হোক।
তবে কথায় বলে, ভালো চিন্তা সবার কাছে ভালো মনে না-ও হতে পারে। বিশেষ করে, বাংলাদেশ সোসাইটির ক্ষেত্রে অনেক দিন ধরে লক্ষ করা যাচ্ছে, মুষ্টিমেয় কিছু মানুষকে সোসাইটির প্রায় সব কাজে বাগড়া দিতে। তেমনি সোসাইটির ৫০ বছর পূর্তির আয়োজন ঘিরে বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের মধ্যে চরম বিরোধ চলছে বলে জানা যাচ্ছে। সোসাইটির সাবেক কর্মকর্তারা একটি রিইউনিয়ন করার লক্ষ্যে সম্প্রতি একটি কমিটি গঠন করতে এক বৈঠকে মিলিত হন। জানা যায়, মতবিনিময় সভা সাবেক কর্মকর্তারা করতে পারলেও শেষ পর্যন্ত কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। কমিটি না করার কারণ হিসেবে জানা গেছে, তারা যেভাবে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেন, সেটা হলে তা হতো সোসাইটির গঠনতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সোসাইটির গঠনতন্ত্রে বলা আছে, সোসাইটির রিইউনিয়ন করতে হলে সেটা করতে হবে সোসাইটির বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে।
বাংলাদেশ সোসাইটির ৫০ বছর পূর্তি ও রিইউনিয়ন উদযাপন সফল করার লক্ষ্যে সোসাইটির বর্তমান কমিটির নেতৃবৃন্দ, ট্রাস্টি বোর্ডের নেতৃবৃন্দ এবং বিদায়ী ট্রাস্টি বোর্ডের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সোসাইটির শীর্ষ এক কর্মকর্তা। কিন্তু সোসাইটির ‘মালিক’ যারা, সেই সাধারণ সদস্যদের সম্পৃক্তির কোনো কথা নেই। সোসাইটি ৫০ বছর আগে যারা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তাদের অনেকেই হয়তো আজ আর আমাদের মধ্যে নেই। তারা না থাকলেও কোন লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে তারা সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তাদের সঙ্গে সঙ্গে চলে গেছেÑতা নয়। এ কথা ঠিক, যারা সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন, তাদের সঙ্গে সে সময়ের কমিউনিটির সম্পর্ক তেমন একটা ছিল না, কিন্তু গঠনতন্ত্রে তার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য তো বিধৃত ছিল এবং গঠনতন্ত্র নামক একটি পুস্তিকা এখনো আছে।
কিন্তু অবস্থা তো একই। কমিউনিটির সাধারণ সদস্যদের সম্পৃক্তি নেই সেকালে এবং একালেও। সোসাইটির সাধারণ সদস্যদের সোসাইটিতে সম্পৃক্ত করতে একসময় জোরেশোরে কথা ওঠে। একে সাধারণ মানুষের সংগঠনে পরিণত করতে সে সময়ের যারা অগ্রগামী নেতা ছিলেন, তাদের মধ্যে আজ অনেককে সোসাইটির কার্যক্রমে দেখা যায় না। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের কল্যাণের লক্ষ্যে সোসাইটি কী করছে না করছে, সে কথাও আর সাধারণ মানুষ জানতে পারছে না। সাধারণ মানুষ দূরের মানুষ হয়েই রয়েছে। তখন শিক্ষা-দীক্ষা-সংস্কৃতিতে যারা নিজেদের সাধারণ মানুষ থেকে উপর শ্রেণির ভাবতেন, তারা যেমন সাধারণ সদস্যদের দূরে রাখতেন, আজও সে কায়দাতেই সোসাইটি চলছে। যেমন আজ নেতৃবৃন্দ সাধারণ সদস্যদের থেকে উঠে এলেও, সাধারণ সদস্যরা কর্মকর্তা থেকে দূরেই থেকে গেলেন। শুধু সেদিনের সেই মানুষগুলো নেই।
আজ সোসাইটির দিকে তাকালে মনে হবে, সোসাইটি একটি লিমিটেড কোম্পানি। সদস্যসংখ্যা হাজার হাজার কিন্তু নিজেরা জানে না তারা সদস্য কি না। কে কী হচ্ছেন না হচ্ছেনÑতা-ও তাদের জানা নেই। ঠিক যেন দেশের রাজনীতির মতো। সবাই বলেন-দেশটি জনগণের। তবে সেই জনগণ যে কোন জনগণ, সে খবর জনগণও রাখে না বা তাদের রাখতে দেওয়া হয় না। এই চক্র যেমন দেশেও আজ প্রবল শক্তিশালী, ভাঙা কঠিন, সোসাইটির বেলাতেও একই সত্য। সেই চক্র ভাঙার কথা যারা বলেন, তারা নিজেরাই নেতা এবং জনতা।
সিনেমায় একটি গান শুনেছিলাম, ‘... এ তালা ভাঙব আমি কেমন করে...।’ আমাদেরও আজ যেন সেই অবস্থা। ‘তালা’ ভাঙার কথা বলে সবাই, সময়কালে তালা ভাঙার লোক মেলে না।