Thikana News
১৭ জুন ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
আ.লীগের নতুন ভেন্যু থাইল্যান্ড♦হাওয়া বদলে বিএনপি

নিষিদ্ধের ক্রেডিট নিয়ে টানাটানি

নিষিদ্ধের ক্রেডিট নিয়ে টানাটানি ছবি: সংগৃহীত



 
গেল বছরের এ সময়টাতেই জঙ্গি সম্পৃক্ততা ও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিএনপিকে নিষিদ্ধ করার আওয়াজ দিতেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। দলীয় আজ্ঞাবহ সাংবাদিকদের দিয়ে প্রশ্ন করা হতো, বিএনপিকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি এখন কোন পর্যায়ে? মনমতো প্রশ্নটি লুফে নিয়ে মন্ত্রী বা আওয়ামী     
লীগ নেতারা চিবিয়ে চিবিয়ে জবাব দিতেন। এ বছরের এ সময়ে এসে আওয়ামী লীগ কেবল নিষিদ্ধ নয়, দলটির নিবন্ধনও বাতিল। এর কৃতিত্ব কার বেশি, তা জাহিরের চেষ্টাও হাস্যকর পর্যায়ে।
দিন কয়েক আগেও যে বিএনপি বলেছে তারা কোনো দল নিষিদ্ধের পক্ষে নয়, এখন বলছে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণে তাদের ভূমিকাই বেশি। তাদের দাবি, এনসিপিসহ কয়েকটি দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের জন্য মাঠে নামলেও ভেতরে ভেতরে তারাই (বিএনপি) বেশি সক্রিয় ছিল। প্রধান উপদেষ্টাকে নাকি গোপন চিঠিও লিখেছিল। জামায়াত আর আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রেক্ষাপট এক না হলেও বাজারে এ নিয়ে নানামুখী আলোচনা ও বিশ্লেষণ চলছে।
এর আগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার পর বিএনপিকেও ধরা হতে পারে, এমন সংশয় ব্যক্ত করে ব্যাপক ভাইরাল দলটির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী নেতা গয়েশ্বর রায়। হাওয়ার গতি দেখে পরিস্থিতির অনিবার্যতায় গত কদিন চুপ তিনি। তবে ঘনিষ্ঠদের বলছেন, জমে কিন্তু বিএনপির বাড়ি চিনে ফেলেছে। আবার ড. ইউনূসের মাস্টারমাইন্ড-খ্যাত উপদেষ্টা মাহফুজ আলমও নতুন করে ভাইরাল। একাত্তরে জামায়াতের ভূমিকা ও গণহত্যায় সহযোগিতার প্রশ্ন সামনে এনেছেন তিনি। এ-সংক্রান্ত পোস্ট সরিয়ে আরও বেশি আলোচনায় তিনি।
সেদ্ধ-সিদ্ধ-নিষিদ্ধের এ বাতাবরণে যত কর্ম তত ফলে আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগের হাতেই রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার কার্যক্রম শুরু হয়। এখন ওই দলই নিষিদ্ধের শিকার। রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার মতো তিনটি আইন রয়েছে বাংলাদেশে। এর দুটিই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন পাস করা হয়েছেÑবিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪ এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯। আওয়ামী লীগ প্রণীত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হলো। রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার মতো আরেকটি আইন হলো পলিটিক্যাল প্র্যাকটিস অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৮। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে এসে ক্ষমতাসীন হয়ে জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগের তিনটি অংশ, পিডিপিসহ সব ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেন। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠনের নামে এসব দল নিষিদ্ধ করা হয়। স্বাধীনতার পর মতিন আলাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (এম‌এল), সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বাধীন পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি ও আব্দুল হকের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টিসহ সকল চীনপন্থী কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে একদলীয় শাসন বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ- বাকশাল কায়েম করেন শেখ মুজিব। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে সামরিক অভ্যুত্থানের পর বাকশালের রাজনৈতিক তৎপরতা বন্ধ করা হয় সামরিক আইনে। ১৯৮১ সালের মে মাসে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসার পর আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ভেঙে আবার বাকশাল গঠিত হয়। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ থাকলেও দলটির নেতারা ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ আইডিএল নামের একটি দলের প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেন। ২০০৫ সালে বিএনপির শাসনামলে দেশজুড়ে বোমা হামলার পর জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ-জেএমবি এবং হরকাতুল জিহাদকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ করা হয়। একই আইনে ২০০৯ সালে হিজবুত তাহরীর নিষিদ্ধ হয়। আওয়ামী লীগের শাসনামলে ২০১৩ সালে হাইকোর্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেন। ২০১৮ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। ছাত্রশিবির‌ও নিষিদ্ধ হয় এই আমলে। যেসব অভিযোগে রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন সরকারের আমলে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি অপরাধ করেছে আওয়ামী লীগ ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ এর ৫ আগস্ট পর্যন্ত।
এবার কাকতালীয়ভাবে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ বন্ধের দিনেই নিষিদ্ধ হলো আওয়ামী লীগ। আবার ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, চীন থেকে নেওয়া পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্ক কমতে পারে। আর এ সময়টাতেই ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যাতে অন্য কোনো দেশ হস্তক্ষেপ করতে না পারে, তার জন্য সজাগ থাকবে তার দেশ। কিসের মধ্যে কী অবস্থা, অনেকটাই দুর্বোধ্য। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গত সেপ্টেম্বর মাসের ৫ তারিখে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তা চেপে যাওয়া হয়। আলোচিত দুজন সমন্বয়ক আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের জন্য দুটি রিটও করেছিলেন। পরে তা প্রত্যাহার করা হয়।
এত দিন পর ঘটা করে তা সামনে আনার পূর্বাপরে অনেক ফের। এর মাঝে আওয়ামী লীগের সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে দেশত্যাগের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। গ্রেফতার করা হয় আওয়ামী লীগের আলোচিত দুই নেত্রীকে। নারায়ণগঞ্জ থেকে সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, ধানমন্ডি থেকে সাবেক এমপি গায়িকা মমতাজকে গ্রেফতারসহ এসব ঘটনার পরতে পরতে অনেক খেলা। এসব খেলার মাঝে আওয়ামী লীগের দিক থেকে টুঁ শব্দটিও নেই। দেশের বাইরে থেকে একটি প্রতিবিপ্লবের নানা আয়োজন চলছে। তা এক পা এগোলে তিন পা পিছিয়ে যায়। নেতাদের বেশির ভাগ ভারতে থাকলেও সেখানে সম্প্রতি আগের মতো গোপনীয়তা রক্ষা হচ্ছে না তাদের। কোথাও জড়ো হলেই পেছনে টিকটিকি লাগছে। বৈঠক করলে এর খবর এমনকি তথ্যও চলে আসছে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের হাতে। তাই ভেন্যু পাল্টে থাইল্যান্ডে ভারতপন্থীদের গোপন দেনদরবার বসছে। প্রশাসনের নানা পর্যায়ের কিছু ব্যক্তিও তাতে জড়িত।

কমেন্ট বক্স