নারীদের নিয়ে দুই বক্তার আপত্তিকর শব্দচয়ন নিয়ে হেফাজতে ইসলাম নিজেই এখন দুঃখপ্রকাশ করেছে। তাই তাদের বক্তব্য কোনোভাবেই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বক্তব্য হতে পারে না। তাদের বক্তব্য ধারণ করারও প্রশ্নই আসে না। এমনই দাবি করেছেন এনসিপির যুগ্ম-আহ্বায়ক আশরাফ মাহদি আযহারী। ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন টকশোতে এসে তিনি বলেন, ‘হেফাজতের সমাবেশে আমরা অতিথি হিসেবে গিয়েছি। সেখানে আমাদের দলের অবস্থান বলেছি আমরা। নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে আমাদের কিছু দ্বিমত আছে। সেটা বিস্তারিত তুলে ধরতে আমরা কাজ করছি। কিন্তু কমিশন বাতিলের কথা আমরা কখনোই বলিনি।’
গত ৬ মে মঙ্গলবার নিউইয়র্ক সময় সকাল ১১টায় সরাসরি সম্প্রচারিত এই আলোচনা অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরো ছিলেন লেখক-গবেষক মীর হুযাইফা আল মামদূহ।
ঠিকানা টিভির প্রধান সম্পাদক খালেদ মুহিউদ্দীন উপস্থাপিত এই টকশোতে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন নিয়ে কথা বলেন দুই অতিথি।
হেফাজতে ইসলাম নারী বিষয়ক সংস্কার নিয়ে আপত্তি তুলছে শুরু থেকেই। এমনকি পুরো কমিশনই বাতিল দাবি করছে তারা। এর সমালোচনা করে গবেষক মীর হুযাইফা আল মামদূহ বলেন, ‘আমি দেখেছি নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে চমৎকার কিছু বিষয় আছে। যা তৃণমূলের নারীদের জন্য খুবই জরুরি। যেমন- অভিবাসী নারীদের সুরক্ষার বিষয়ে কিছু কথা আছে। নারীর স্বাস্থ্য বিষয়ক কিছু প্রস্তাব আছে। যেমন সিজার নিয়ন্ত্রণ করা। এগুলো নিয়ে কাজ করা উচিৎ। এ ধরনের সুপারিশ যদি প্রয়োগ করা যায়, তাহলে অনেক ভালো হবে।’
এদিকে বৈবাহিক ধর্ষণ বা ‘ম্যারিটাল রেপ’-এর প্রতিকার প্রসঙ্গও এসেছে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে। এ ধরনের বিষয় নিয়ে আইন কী হবে, কীভাবে হবে- এগুলোর জন্য বাংলাদেশ এখনো প্রস্তুত নয়, বলছেন মীর হুযাইফা আল মামদূহ। তবে তিনি যোগ করেন, বিয়ের পরে বাংলাদেশের নারীরা অনেক নিপীড়নের শিকার হন। এর প্রতিকারে অবশ্যই আইন দরকার। এক্ষেত্রে বঞ্চনার কথা বলার সুযোগ তাদের জন্য অবশ্যই থাকা দরকার। হেফাজতে ইসলাম যদি প্রকৃতই নারীদের কল্যাণ চায়, তবে তাদের এ ধরনের আইন মানা উচিৎ- মন্তব্য করেন তিনি।
হেফাজতে ইসলাম অন্তর্বর্তী সরকারের সময় একটি প্রভাবশালী সংগঠন হিসেবে সক্রিয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারও তাদের সুপারিশ আমলে নিয়ে পাঠ্যপুস্তকে নানা পরিবর্তন এনেছিল। একপর্যায়ে হেফাজতই শেখ হাসিনাকে ‘কওমি জননী’ খেতাব দিয়েছিল।
এ বিষয়ে এনসিপির যুগ্ম-আহ্বায়ক আশরাফ মাহদি আযহারী দাবি করেন, ‘কওমি জননী উপাধি যারা দিয়েছিল, তারা কিন্তু হেফাজতের কেউ ছিল না। নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগই দেখাতে চেয়েছিল কওমিপন্থীরা আমাদের সঙ্গে আছে। কিন্তু কিন্তু আমরা আসলে ছিলাম না। তাই একসময় আমাদের ওপর জেল-জুলুমের মতো নির্যাতন নেমে আসে।’