প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইমিগ্রেশন ক্র্যাকডাউনে বর্তমান যে সংকট দেখা দিয়েছে, সে সম্পর্কে করণীয় কী জানাতে প্রবাসে আমব্রেলা সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটি এক পরামর্শ সভার আয়োজন করেছিল। সভায় অভিজ্ঞ অ্যাটর্নি ও পরামর্শকরা বিভিন্ন আইনি পরামর্শ দিয়েছেন।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি সোমবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে একটি পার্টি হলে অনুষ্ঠিত পরামর্শ সভায় ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নি খায়রুল বাশার বলেন, ২০ জানুয়ারি ট্রাম্পের বিশেষ আদেশ জারির পর জেএফকে এয়ারপোর্টে অবতরণ করে অনেক বাংলাদেশি ও ভারতীয় স্টুডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে পারেনি। এয়ারপোর্ট থেকেই তাদেরকে নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এজন্যে আমি স্টুডেন্ট ভিসাধারিদের সতর্ক করতে চাই যে, স্টুডেন্ট ভিসাধারীর অনেকে সঙ্গতকারণে টুকটাক কাজ করেন। ব্যাংকে অনেকের ডলারও জমা হয়। যারা বাংলাদেশ থেকে আসছেন তারা নানাবিধ প্রশ্নবাণে জর্জরিত হচ্ছেন। কেন এত ডলার জমা হয়েছে? কোত্থেকে এসেছে এই অর্থ? এমন বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়ানোর অভিপ্রায়ে সাথে সেলফোন না রাখাই শ্রেয়।
একজন ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টের পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি উল্লেখ করেন- সেমিস্টার পরবর্তী ছুটি শেষে তিনি বাংলাদেশ থেকে ফেরার সময় জেএফকে এয়ারপোর্টে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হন। জানতে চাওয়া হয় যে, নতুন সেমিস্টার শুরু হবে আরো ৪৫দিন পর। তাহলে এতো আগে কেন এসেছো? এ ধরনের আরো কিছু প্রশ্ন করা হয়। সেটি ঘটেছে ২০ জানুয়ারির কদিন আগে অর্থাৎ ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের প্রাক্কালে ১৭ জানুয়ারি। জিজ্ঞাসাবাদকালেই তার ফোন নিয়ে পরীক্ষা করেন ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস কর্মকর্তারা। টেলিফোনে অনেক তথ্য তারা উদঘাটনে সক্ষম হন যে সে ভিসার বিধি লংঘন করে কাজ করেছেন। এরপরই তাকে আটক করা হয়। দু’ঘণ্টার মধ্যেই আটক শিক্ষার্থী আমার সাথে যোগাযোগ করেন এবং আমাকে তার অ্যাটর্নি হিসাবে নিয়োগ দেন। তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন। তবে সে সময়েই তাকে মুক্তি দেয়া হয়নি। সপ্তাহখানেক কাটাতে হয়েছে প্যারলে মুক্তির আদেশ পাওয়া পর্যন্ত।
অ্যাটর্নি খায়রুল বাশার উল্লেখ করেন, যারা ট্যুরিস্ট ভিসায় আসবেন বা এসেছেন-তারাও ফোন সাথে না রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কারণ বাংলাদেশ থেকে আসার সময় ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস কর্মকর্তারা সার্চ করে দেখতে পারেন আপনি যুক্তরাষ্ট্রে কোন ঠিকানায় থাকবেন। সেই ঠিকানা সার্চ দিলে উদঘাটিত হতে পারে যে, ঐ ঠিকানায় কয়েকজন অবৈধ অভিবাসীও আছেন। এছাড়া একজন বাংলাদেশ থেকে ট্যুরিস্ট ভিসায় আসার সময় এমন একজনের কিছু কাগজপত্র সাথে এনেছিলেন যাকে আগেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
সতর্কতা হিসেবে খায়রুল বাশার আরো বলেন, ট্যুরিস্ট ভিসায় আগত একজনকে জেএফকে এয়ার পোর্ট থেকেই বহিষ্কার করা হয়েছে। সে সময় জিজ্ঞাসাবাদকালে ঐ ভিসাধারী বাংলাদেশি ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস কর্মকর্তাকে জানিয়েছিলেন যে তিনি তিন সপ্তাহের জন্যে এসেছেন। অথচ তার ফোন পরীক্ষাকালে দেখা যায় যে, তিনি হোটেল বুকিং দিয়েছেন মাত্র দুদিনের। এমন ঘটনা ঘটছে বিভিন্ন এয়ারপোর্ট এবং কোন কোন সিটিতেও।
অ্যাটর্নি বাশার বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের টার্গেট হচ্ছে ক্রিমিনাল অবৈধ অভিবাসীরা। এছাড়া যাদের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন নাকচ হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও বহিষ্কারের আদেশ জারি হয়। তেমন লোকজনকে খুঁজে পেলেই গ্রেফতার করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের জন্যে। এক্ষেত্রে যদি কারো বাসায় আইস (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) এর এজেন্ট আসে এবং দরজা নক করেন, তাহলে কখনোই দরজা খোলা উচিত হবে না। আইসের এজেন্ট যদি বহিষ্কারাদেশের নথিও দেখায়, তবুও দরজা খুলবেন না। তবে তারা যদি আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখায় তাহলে ভিন্ন কথা। গ্রেফতারি পরোয়ানা ব্যতিত কোন বাসায় জোরপূর্বক প্রবেশের অধিকার কোন সংস্থারই নেই। এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলেই নিজের আইনজীবীকে ফোন করতে হবে। এছাড়া, আইসের এজেন্টের কোন কথার জবাবদান থেকে বিরত থাকা উচিত। বলতে হবে আইনজীবী ছাড়া আমি কথা বলবো না।
আটর্নি বাশার বিশেষভাবে উল্লেখ করেন- অনেক আগে যাদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন নাকচ হয়েছে এবং বহিস্কারের আদেশ জারি হয়েছে, তারা এখন ঐ আবেদন পুনরুজ্জীবিত করতে পারবেন। কারণ বাংলাদেশের পরিস্থিতি পাল্টেছে। দেশে ফিরলেই প্রাণনাশের মারাত্মক হুমকি অথবা গ্রেফতার-নির্যাতনের প্রবল আশংকা তৈরী হয়েছে-এমন যুক্তির অবতারণা করে। মামলাটি যদি পুনরুজ্জীবিত হয় তাহলে ট্রাম্পের এই অভিযান থেকে নিজেকে রক্ষার একটি সুযোগ তৈরী হবে।
অ্যাটর্নি বাশার আরো উল্লেখ করেন, যারা ওয়ার্ক পারমিট পেয়েছেন তারা সবসময় তা সাথে রাখবেন। আরা যারা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন, কিন্তু ওয়ার্ক পারমিট পাননি, তারা আবেদনের রশিদটি সাথে রাখবেন। সেটিও আইসের অভিযান থেকে আপনাকে রক্ষা করতে সহায়ক হবে।
বর্তমানের ভীতিকর পরিস্থিতির কারণে সপ্তাহে একদিন তিনি ফ্রি পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যে নিজের অফিস খোলা রাখেন বলে জানালেন অ্যাটর্নি খায়রুল বাশার। এক্ষেত্রে তিনি সংশ্লিষ্টদেরকে বাংলাদেশ সোসাইটির মাধ্যমে তার কাছে যাবার পরামর্শ দিয়েছেন। কমিউনিটির অনেকে আইনজীবী সেজে কাগজপত্রহীনদের সাথে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছেন। এমন গুরুতর অপকর্মে লিপ্ত দুষ্টুলোকদের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, সবসময় নিজের অ্যাটর্নি সাথে যোগাযোগ রাখবেন, এবং অভিজ্ঞ এটর্নীর পরামর্শ অনুযায়ী পথ চললে ভীতি মুক্ত থাকা সম্ভব হবে।
এই পরামর্শ সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সোসাইটি’র সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম। সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলীর সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল হুদা, অ্যাটর্নি স্ট্যানলি এম ওয়াইন, অ্যাটর্নি সুজান স্কোইয়্যার, কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার শাহনেওয়াজ প্রমুখ।
সভা পরিচালনায় বিশেষভাবে সহযোগিতায় ছিলেন বাংলাদেশ সোসাইটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মহিউদ্দিন দেওয়ান, ভাইস প্রেসিডেন্ট কামরুজ্জামান কামরুল, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অনিক রাজ, প্রচার সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ, স্কুল ও শিক্ষা সম্পাদক হাসান জিলানী, নির্বাহী সদস্য জাহাঙ্গীর সোহরাওয়ার্দী প্রমুখ।
সোসাইটির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী, জ্যাকসন হাইটস এলাকা থেকে সিটি কাউন্সিল মেম্বার প্রার্থী শাহ শহিদুল হক সাঈদ, কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, জ্যাকব মিল্টন, নীরা রাব্বানী প্রমুখ ছিলেন এ সভায়।