যুক্তরাষ্ট্রে অনেক অভিবাসী আছেন, যারা বৈধ স্ট্যাটাস পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। তাদের কারও কেস আদালতে চলামান, কারও কেস শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ। যতক্ষণ পর্যন্ত এ ধরনের মানুষেরা বৈধ স্ট্যাটাস পাচ্ছেন না, ততক্ষণ ঝুঁকির মুখে রয়েছেন। যাদের কেস একবার ডিনাই হয়েছে, পরে তারা আপিল করেছেন, আপিল পেন্ডিং আছে, তারাও ঝুঁকির মধ্যে আছেন। অথবা যারা মোশন টু রিওপেন করেছেন, তাদের কেস প্রক্রিয়াধীন থাকলে তারাও ঝুঁকিতে আছেন। প্রকৃতপক্ষে যার কোনো বৈধ স্ট্যাটাস নেই, তাদের টেনশনের শেষ নেই। তবে যাদের স্ট্যাটাস পাওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, তারা অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকলে তেমন সমস্যা হবে না। যারা অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে গেছেন, তারা ধরা পড়ার টার্গেটে রয়েছেন।
এ জন্য অ্যাটর্নি ও বিশেষজ্ঞরা সবাইকে সাধারণ একটি পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তা হলো এ দেশে কোনোভাবেই কেউ যেন অপরাধের সঙ্গে না জড়ান। কেউ ফেলনি টাইপের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লে, পুলিশের কাছে গ্রেফতার হলে, দোষ স্বীকার করলে, শাস্তি হলে তিনিও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। ড্রাগ-সংক্রান্ত অপরাধ, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, হত্যা, ধর্ষণ, হত্যাচেষ্টা, ডমেস্টিক ভায়োলেন্সসহ বিভিন্ন গুরুতর অপরাধ যারা করেছেন, তারা যেকোনো সময় বিপদে পড়তে পারেন। কারণ আমেরিকান নিয়ম হচ্ছে, একজন মানুষ গ্রিনকার্ড কিংবা সিটিজেনশিপ পাওয়ার সময় তাকে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। সেখানে হ্যাঁ/না উত্তর দেওয়ার মাধ্যমে কারও অপরাধ-সংক্রান্ত হিস্ট্রি থাকলে উল্লেখ করতে হয়। প্রমাণ করতে হয় তিনি গুড মোরাল ক্যারেক্টারের মানুষ কি না। আবেদন প্রক্রিয়াধীন থাকাকালে প্রমাণ করতে হবে ভালো চরিত্রের অধিকারী ও নিরপরাধ।
সূত্র জানায়, ওয়ার্ক পারমিট, সোশ্যাল সিকিউরিটি কার্ড ও গ্রিনকার্ড পাওয়ার পরও কেউ বড় অপরাধ করলে সমস্যায় পড়তে পারেন। যারা সিটিজেন হয়েছেন, তারাও ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারেন। কোনো মানুষ যখন কোনো অপরাধ করেন, তখন তিনি এ দেশে কী স্ট্যাটাসে আছেন, তা দেখা হয়। তাই একজন ব্যক্তি যখন অপরাধ করেন, তখন তার আগের বিষয়গুলোও সামনে চলে আসে। তিনি যদি কখনো এ দেশে স্ট্যাটাস পাওয়ার জন্য মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকেন অথবা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে থাকেন, তিনি সমস্যায় পড়তে পারেন। এ জন্য প্রত্যেক মানুষকে হতে হবে সৎ, নিরপরাধ ও ভালো চরিত্রের অধিকারী।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমেরিকায় যারাই আছেন, তাদের প্রতি পরামর্শ হলো আপনারা যখন যে অবস্থাই থাকেন না কেন, সৎভাবে থাকুন। অপরাধমুক্ত থাকুন। কখনো কোনো মিথ্যা কথা বলবেন না। মিথ্যা কথা বলে বা তথ্য দিয়ে সরকারি কোনো সুবিধা নেবেন না। মিথ্যা বলে সুবিধা নেওয়ার কারণে যেকোনো দিন যেকোনো সময় বিপদে পড়তে পারেন। আর্থিক সুবিধা নিয়ে থাকলে সকল অর্থ জরিমানাসহ ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি জেল-জরিমানাও হতে পারে। আর মিথ্যা তথ্য দিয়ে কোনো ধরনের স্ট্যাটাস পেয়ে থাকলে সেটি প্রমাণিত হলে স্ট্যাটাসও হারাতে পারেন। হতে পারেন ডিপোর্টেশনও। আইস অপরাধীকে ধরতে বাড়িতে কিংবা অ্যাপার্টমেন্টে বাসিন্দাদের বৈধ আইডি চেক করতে পারে। অফিস, দোকান, বাসস্ট্যান্ড, সাবওয়ে, বিভিন্ন সরকারি অফিসেও আইস থাকতে পারে। কোর্টের বাইরেও আইস থাকতে পারে। যেখানে অবৈধরা কিংবা অপরাধীরা আছেন বলে আইসের কাছে তথ্য রয়েছে, সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হলে গ্রেপ্তার হতে পারেন। এক্সপিডাইট ক্যাটাগরিতে যদি কেউ ডিপোর্টেশনে পড়েন, তাহলে তাকে ডিপোর্ট করা হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। তাকে ডিপোর্ট করতে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। রিমুভাল ডিপোর্টেশন হলেও খুব দ্রুতই আমেরিকা থেকে ডিপোর্ট করবে। ফলে যারা বৈধ নন, কোনো ধরনের নথিপত্র নেই, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো আবেদন জমা নেই, প্রক্রিয়াধীন নেই কিংবা আদালতেও কোনো আবেদন নেই, কোনো মামলা চলমান নেই, তারা অপরাধ করে থাকলে ধরা পড়লে ডিপোর্টেশন হবেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সবার উচিত পারিবারিক সহিংসতা এড়িয়ে চলা। কারণ পারিবারিক ভায়োলেন্সের কারণে অনেকেই অনেক সময় পুলিশ ডাকেন। রাগের মাথায় পুলিশে রিপোর্ট করেন। পর ভুল বুঝতে পারেন। কিন্তু যা ক্ষতি হবার তা হয়ে যায়। এ কারণে এখন সবাইকে পারিবারিক সহিংসতা থেকে সম্পূর্ণভাবে দূরে থাকতে হবে। পারিবারিক সহিংসতার কারণে কেউ অপরাধী হলে তিনিও ঝুঁকিতে পড়বেন।
এ বিষয়ে অ্যাটর্নি খায়রুল বাশার বলেন, যারা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে এ দেশে স্ট্যাটাস পাওয়ার জন্য কোনো ধরনের আবেদন করেছেন, পেন্ডিং আছে, আবেদন রিসিভ হয়েছে, তারা অবশ্যই তাদের রিসিভ নোটিশ সঙ্গে রাখবেন। এ ছাড়া একজন আইনজীবীর কার্ড রাখবেন। পাশাপাশি একটি জি-২৮ ফর্ম সঙ্গে রাখুন। এটি হচ্ছে একজন মানুষের পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করার ফর্ম, যেখানে আইনজীবী ও আবেদনকারী দুজনের স্বাক্ষর রয়েছে। কখনো আইসের কাছে কেউ ধরা পড়লে তাদেরকে এটি দেখালে তারা আইনজীবী সঙ্গে যোগাযোগ করবে। কারও যদি কোনো কিছুই না থাকে, তারাও একজন আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। কোনো কেস আগে ডিনাই হয়ে থাকলে মোশন টু রিওপেন করতে পারেন। এখন যারা সিটিজেন ও গ্রিনকার্ডধারী আছেন, তাদের নিজ নিজ ডকুমেন্ট থাকলেই হবে। যারা চলমান কেসের মধ্যে আছেন, তারা অবশ্যই তার আইনজীবীর কার্ড ও ওকালতনামার কপি রাখুন। এতে করে আইনজীবী আপনাকে তৎক্ষণাৎ সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসতে পারেন।
এদিকে বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে যারা নথিপত্রহীন আছেন, তারা অনেকটাই আড়ালে চলে গেছেন। এ জন্য বাংলাদেশি অধ্যুষিত নিউইয়র্কের এলাকাগুলো অনেকটাই ফাঁকা। এ ছাড়া অন্যান্য দেশের যে অবৈধরা রয়েছেন, তারাও অনেকটাই আড়ালে চলে গেছেন। ফলে বেশির ভাগ রাস্তাঘাট ফাঁকা। আগে যেখানে রাস্তাঘাটে মানুষ গিজগিজ করত, মোড়ে মোড়ে আড্ডা ছিল, সেগুলো প্রায় নেই বললেই চলে। বিশেষ করে, জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজা অনেকটাই ফাঁকা। জ্যামাইকায় ১৬৯ স্ট্রিটের সাবওয়ের ওপর রাস্তার দুই পাড়ে বসত অনেক মানুষের আড্ডা। এখন সেই সব মানুষের বেশির ভাগকে দেখা যাচ্ছে না। ওখানে সিগারেটের ধোঁয়া ও রাস্তার দুই ধারে মানুষ বসে থাকা ও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আড্ডা দেওয়ার কারণে অনেক মানুষ চলাচল করতে পারতেন না। বিশেষ করে, মহিলারা চলাচল করতে পারতেন না। এখন সেসব রাস্তায় তেমন ভিড় নেই। আড্ডা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। দোকানে দোকানে অল্পবিস্তর মানুষ। আইসের অভিযান শুরুর পর অনেক দোকানপাটেও ক্রেতা কমেছে। ফলে ব্যবসায়ীরা অনেকটা আর্থিক সংকটে পড়েছেন। এদিকে বিভিন্ন দোকানে কর্মীসংখ্যারও অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। কোনো কোনো দোকানে পণ্য সরবরাহও কম।