ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে বহুল ব্যবহৃত একটি ওষুধ অ্যাসপিরিন। সাধারণত হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতেও হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা এ ওষুধটি গ্রহণ করেন। গবেষকরা বলছেন, যাদের এরইমধ্যে হার্ট ফেইলিউরের ঝুঁকি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে সাবধানে গ্রহণ করা উচিত অ্যাসপিরিন।
তবে, নতুন গবেষণা বলছে, কিছু মানুষের জন্য অ্যাসপিরিন গ্রহণের বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাদের হার্ট ফেইলিওরের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে এটি।
হার্ট ফেইলিওর একটি গুরুতর শারীরিক অবস্থা, যেখানে হার্ট কার্যকরভাবে পুরো দেহে রক্ত পাম্প করতে পারে না। ফলে শ্বাসকষ্ট, খুব ক্লান্তি বোধ এবং পা ও গোড়ালিতে ফোলাভাবের মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তবে এর মানে এই নয় যে, হার্ট পুরোপুরি কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে, এর মানে হচ্ছে এটি দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং যতটা সক্ষমতার সঙ্গে পুরো দেহে রক্ত সঞ্চালন করা উচিত ততটা সক্ষমতার সঙ্গে রক্ত সঞ্চালন করতে পারছে না।
উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্থূলত্ব, ধূমপান ও হৃদরোগের মতো নানা কারণ হার্ট ফেইলিওরে ভূমিকা রাখে। এর কোনও নিরাময় নেই, তবে বেশিরভাগ সময় ওষুধ, জীবনযাত্রার পরিবর্তন ও কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে রোগীর শারীরিক পরিস্থিতি সামলে নেন চিকিৎসকরা।
অ্যাসপিরিন গ্রহণের সঙ্গে হার্ট ফেইলিওরের কোনও সংযোগ রয়েছে কি না খতিয়ে দেখেছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ ফ্রেইবার্গ’-এর একদল গবেষক। এজন্য হার্ট ফেইলিওরের ঝুঁকিতে আছেন এমন ৩০ হাজার ৮২৭ জনের স্বাস্থ্য তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন তারা।
এ গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের বয়স ছিল ৪০ বছরের বেশি এবং গবেষণা শুরুর আগে তাদের কারোরই হার্ট ফেইলিওর ধরা পড়েনি।
গবেষণার শুরুতে কোনো অংশগ্রহণকারী অ্যাসপিরিন গ্রহণ করছেন কি না তা রেকর্ড করেছেন গবেষকরা। এরপর পাঁচ বছর ধরে অংশগ্রহণকারীদের তারা অনুসরণ করেন দেখেন যে কাদের হার্ট ফেইলিওর হয়েছে।
গবেষণা শেষে এক হাজার তিনশ ৩০ জনের হার্ট ফেইলিওর ধরা পড়ে। গবেষকরা বলছেন, যারা অ্যাসপিরিন গ্রহণ করেছিলেন তাদের হার্ট ফেইলিওরের ঝুঁকি যারা ওষুধ গ্রহণ করেননি তাদের চেয়ে ২৬ শতাংশ বেশি ছিল।
উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের মতো অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার বিষয়টি বিবেচনা করার পরেও অ্যাসপিরিন ও হার্ট ফেইলিওরের মধ্যে সংযোগটি দৃঢ় ছিল।
হৃদরোগের ইতিহাস রয়েছে এমন অংশগ্রহণকারীদের বাদ দেওয়ার পরও গবেষণার এসব ফলাফলের বদল ঘটেনি। এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, অ্যাসপিরিন নিজেই হার্ট ফেইলিওরের ঝুঁকি বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, যাদের এরইমধ্যে হার্ট ফেইলিউরের ঝুঁকি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে অ্যাসপিরিন সাবধানে গ্রহণ করা উচিত।
অনেক মানুষ অ্যাসপিরিনের ঝুঁকি সম্পর্কে চিন্তা না করেই এটি গ্রহণ করে তাই গবেষকরা বলছেন, এর নানা প্রভাব আরও ভালভাবে বোঝার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন। গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘ইএসসি হার্ট ফেইলিওর’-এ।
এখনও অনেক মানুষের জন্য অ্যাসপিরিন গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ হলেও গবেষকরা বলছেন, সবার জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে এই ওষুধ।
ঠিকানা/এসআর