Thikana News
১৮ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪


 

এই অসূরসীয় ধ্বংসযজ্ঞের শেষ কোথায়!

এই অসূরসীয় ধ্বংসযজ্ঞের শেষ কোথায়!


ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম উপকূল এবং লেবাননসহ মধ্যপ্রাচ্যে দখলদার ইসরায়েলের বর্বরোচিত সাম্প্রতিক হামলার প্রথম বর্ষ শেষ হয়েছে ৭ অক্টোবর ২০২৪। পৈশাচিক হামলার বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ইসরায়েলি প্রচারমাধ্যমগুলো গাজা-লেবাননসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে হামাস-ফিলিস্তিন-হিজবুল্লাহর দুই সহস্রাধিক স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়ার এবং তথাকথিত সন্ত্রাসী প্রধানসহ অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতাকে হত্যার বিজয়দর্প ঘোষণা দিয়েছে। তবে বিগত এক বছরের পৈশাচিক হামলায় শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাসহ ৪৩ সহস্রাধিক নিরীহ আপামর মুসলিম জনতাকে নৃশংসভাবে খুন করার কথা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু একবারও মুখে উচ্চারণ করেনি। এদিকে সতী মায়ের সতী মেয়ে পদবিধারী বিশ্বের তথাকথিত ত্রাতাগোষ্ঠী এবং দেবেশ্বররাও পঞ্চমুখে ইসরায়েলি বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছে। অধিকন্তু সভ্যতার লেবাসধারী ইসরায়েলের দুষ্কর্মের দোসররা হামাস-হিজবুল্লাহদের নির্মূলে ইসরায়েলকে পূর্ণ সমর্থনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। বিশ্বের লেফাফা দুরস্ত ত্রাতাগোষ্ঠী বাস্তুহারা ফিলিস্তিনি এবং স্বাধীনতাকামী হিজবুল্লাহ-হামাসের বিরুদ্ধে পরিচালিত যুদ্ধে ইসরায়েলকে প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র, অর্থসহ সর্বাত্মক সহযোগিতার বজ্রকঠোর সংকল্পও পুনর্ব্যক্ত করেছে।
যাহোক, বিশ ও একুশ শতকের মানবসভ্যতার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে সৃষ্টি এবং ধ্বংসের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যপূর্ণ এক ভয়াবহ চিত্র আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। এ পর্যায়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান, বিশেষত চিকিৎসা ও মহাকাশ অভিযান এবং নিত্য-নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও আবিষ্কার সন্দেহাতীতভাবে মানবসমাজ ও সভ্যতার সনাতনী চেহারায় আমূল পরিবর্তন এনেছে। পাশাপাশি বিলাসবহুল জীবনযাত্রার মানের উৎকর্ষ সাধন এবং প্রগতি ও সমৃদ্ধির বিকাশে যুগান্তকারী পরিবর্তন সূচিত করেছে। সনাতনী কলেরা-বসন্ত-কালাজ্বর-প্লেগ, মরণব্যাধি হৃদ্্রোগ, ক্যান্সার ইত্যাদি মহামারির প্রতিকার এবং নির্মূলে অবিশ্বাস্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উদ্ভাবন দূরকে নিকট করেছে, চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-নক্ষত্র তথা মহাকাশ জয়ের পথ সুগম করেছে এবং গোটা বিশ্বকে মানুষের হাতের মুঠোয় এনে দিয়ে জগৎবাসীকে গ্লোবাল ওয়ার্ল্ড উপহার দিয়েছে। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া রয়েছেÑএই অবিনশ্বর প্রবাদ-প্রবচনের অভিশাপ থেকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের কল্যাণমুখী অবদানগুলো রক্ষা পায়নি। ফলে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কাক্সিক্ষত উৎকর্ষ ও সমৃদ্ধির ৯৮ শতাংশই স্বার্থান্বেষী পরাশক্তিগুলোর স্বার্থসিদ্ধির নিছক ক্রীড়নকে পরিণত হয়েছে। গোটা বিশ্বের ওপর প্রভুত্ব বিস্তারের দুর্দমনীয় লোভ-লালসা এবং দুর্মর আকাক্সক্ষার বশে বিশ্বের পরাশক্তির অধীশ্বররা সর্বাধুনিক প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞানের জনকল্যাণমুখী ও প্রাতঃস্মরণীয় অবদানগুলোর গৌরবোজ্জ্বল মুখে প্রতিনিয়ত কলঙ্কের কালিমা লেপন করছে। ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থে প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সিংহভাগের অপব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বমোড়লেরা জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিকে আশীর্বাদের স্থলে অভিশাপের মুখে ঠেলে দিয়েছে এবং দিচ্ছে।
বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল উদ্ভাবিত ডিনামাইট ব্যবহার করে পরাশক্তিগুলো বিশ্বের বহু দেশের সহস্র বছরের গৌরবোজ্জ্বল কীর্তি এবং স্থাপনা চোখের নিমেষে ধূলিসাৎ করে দিচ্ছে। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রায় অবসান মুুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র ইহুদি বিজ্ঞানী আইনস্টাইন আবিষ্কৃত পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মুহূর্তে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে লাখ লাখ লোকের তরতাজা প্রাণ ছিনিয়ে নিয়েছে এবং কয়েক লাখ আবালবৃদ্ধবনিতাকে চিরতরে পঙ্গু করে দিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় গাজা-ফিলিস্তিন-লেবানন তথা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অনেক দেশেই পরাশক্তির অধীশ্বররা অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র, ক্ষেপণাস্ত্র, পারমাণবিক বোমার সাহায্যে ধ্বংসযজ্ঞ এবং তেজস্ক্রিয়তার বিস্ফোরণ ও অপব্যবহার অব্যাহত রেখেছে। গোটা বিশ্বের প্রায় সোয়া ৭০০ কোটি শান্তিপ্রিয় ও নিরীহ জনগণ পারমাণবিক ও তেজস্ক্রিয়তার বিষক্রিয়ার ভয়ানক পরিণতি হৃদয়ঙ্গম করে বর্ণনাতীত ভীতিবিহ্বল জীবন যাপন করছেন।
সাদামাটা ভাষায় বলা যায়, করোনা মহামারির ধকল থেকে কায়ক্লেশে ধড়ে প্রাণ ধরে রাখা বর্তমান বিশ্বের প্রায় ৭৫০ কোটি বাসিন্দা মূলত ১৯১৪ সালে সূচিত প্রথম বিশ^যুদ্ধ এবং ১৯৩৯ সালে সূচিত মহাপ্রলয়ংকরী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চরম ভুক্তভোগীদেরই উত্তরসূরি। স্বজনহারাদের উত্তরসূরি হিসেবে আমরা প্রত্যেকেই প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের কাহিনি বর্ষীয়ান স্বজনদের মুখ থেকে কমবেশি শ্রবণ করেছি। সেসব শোনাকাহিনির স্মৃতি রোমন্থন করতে গেলে এক অজানা আশঙ্কায় শরীরের লোমকূপ খাড়া হয়ে যায় এবং অবর্ণনীয় আতঙ্কে হৃৎকম্প শুরু হয়। জনশ্রুতি রয়েছে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী ভার্সাই চুক্তি এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বার্লিন প্রাচীরের কথা স্মরণ করে জাপান ও জার্মানির লোকজন অদ্যাবধি বিশ্বের পরাশক্তির বিরুদ্ধে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের প্রতিনিয়ত বিস্ফোরণ ঘটায়।
অতিমাত্রায় কৃতজ্ঞ আমেরিকা ও মিত্রশক্তি : পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে : ইন্নাল ইনসানা লাকাফীরুম্ মুবীন (নিশ্চয় মানুষ প্রকাশ্য অকৃতজ্ঞ)। পক্ষান্তরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আধুনিক সভ্যতার ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রশক্তি অকল্পনীয় কৃতজ্ঞতা প্রদর্শনের নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বর্ষীয়ানদের মুখনিঃসৃত বর্ণনানুসারে ১৯৪৫ সালের শুরু থেকেই হিটলারের নাৎসি বাহিনীর পরাজয়ঘণ্টা বেজে ওঠে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তিও সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৪৫ সালের শুরু থেকেই প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহের সঙ্গে ভয়াবহ তুষারপাত আল্পস পর্বত অতিক্রমে নিয়োজিত নাৎসি বাহিনীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। হিমাঙ্কের নিচের তাপমাত্রা ও স্মরণকালের সর্বাধিক ভয়াবহ তুষারপাতের কারণে প্রয়োজনীয় রসদপত্রের সরবরাহ-ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। তাই বরফাচ্ছাদিত ও দুর্লঙ্ঘ্য আল্পস পর্বত মাড়াতে গিয়ে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় জর্জরিত ও অনাহারক্লিষ্ট হাজার হাজার জার্মান বাহিনী প্রাণ হারায়। সেই চরম যুগসন্ধিক্ষণে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জার্মান বাহিনীর মৃত কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেয়। পারমাণবিক বোমার তেজস্ক্রিয়ায় মুহূর্তে লাখ লাখ লোকের প্রাণহানি এবং সহায়-সম্পদের বর্ণনাতীত ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র রাতারাতি বিশ্বে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে। অনবদ্য কারণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তীকালে পারমাণবিক বোমার আবিষ্কারক বিজ্ঞানী আইনস্টাইনকে প্রাতঃস্মরণীয় করার গুরুদায়িত্ব এবং তার অপরিশোধ্য ঋণ কড়ায় গন্ডায় পরিশোধে আমেরিকা মরিয়া হয়ে ওঠে। এরই আবশ্যিক দায়িত্ববোধের অঙ্গ হিসেবে বাস্তুচ্যুত ইহুদিদের পুনর্বাসনে খোদ আমেরিকা ও মিত্রশক্তির আওতাভুক্ত রাষ্ট্রগুলো সারা বিশ্ব থেকে ইহুদি সংগ্রহ এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদি বসতি স্থাপনের অশুভ বিষবৃক্ষের চারা রোপণে আদাজল খেয়ে লাগে।
অবশেষে ১৯৪৭ সাল থেকে পশ্চিম উপকূল, গাজা উপত্যকাসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে স্থানীয় মুসলিম বাসিন্দা ও ফিলিস্তিনিদের বলপ্রয়োগে রাতারাতি উৎখাত করা হয়। আর গোটা বিশ্বের আনাচ-কানাচ থেকে কুড়িয়ে আনা ইহুদি নামক বিষবৃক্ষের চারাগাছটি জোর করে বিতাড়িত মুসলমানদের পরিত্যক্ত ভূমিতে বপন করা হয়। বিশ্ব পরাশক্তির অধীশ্বররা ১৯৪৭ সালে বিষবৃক্ষের যে চারাগাছটি বপন করেছিল, বিগত ৭৫ বছরে তা ডালপালা বিস্তার করে বিশাল মহিরুহে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে শিশুরাষ্ট্র ইসরায়েলের নিরাপত্তার অজুহাতে সকল ধরনের সমরাস্ত্র, ক্ষেপণাস্ত্র এমনকি পারমাণবিক বোমায় সুসজ্জিত করে গোটা ইসরায়েলকে বর্তমানে বিশ্বের পরাশক্তিগুলো ক্ষুদ্র অস্ত্রভান্ডার বা মিনি ক্যান্টনমেন্টে পরিণত করে বলে বিবেকবান বিশ্ববাসীর বদ্ধমূল ধারণা। তাই বিশ্ব পরাশক্তির বিশেষ আশীর্বাদপুষ্ট ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলায় বিগত ৭৫ বছর ধরে বাস্তুহারা ও স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনি জনগণের উষ্ণ রক্তে ফিলিস্তিনের পশ্চিম উপকূল ও গাজা এবং লেবাননসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ঊষর মরুপ্রান্তর প্রতিনিয়ত রঞ্জিত হলেও এ নিয়ে পরাশক্তির অধীশ্বরদের শিরঃপীড়া নেই বললে অত্যুক্তি হবে না।
হব্বুল ওয়াতুনে মিনাল ইমান ঃ সংস্কৃত প্রবচন অনুসারে, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপী গরিয়সী (মা ও মাতৃভূমি স্বর্গের চেয়েও উত্তম)। পবিত্র হাদিসে জন্মভূমিকে ভালোবাসা ইমানের অঙ্গ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তাই ইমানের বলে বলীয়ান নিরস্ত্র বাস্তুহারা ও স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনি মুসলিম জনতা-হামাস-হিজবুল্লাহ দখলদার ইসরায়েলের আগ্রাসী ভূমিকার বিরুদ্ধে মরণসংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে সেই প্রায় ৭৫ বছর আগ থেকে। কখনো নুড়িপাথর ও তীর নিক্ষেপ, কখনো বোমা হামলা চালিয়ে ইসরায়েলের সাঁড়াশি আক্রমণ প্রতিরোধে মরণপণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বাস্তুহারা ও স্বাধীনতাকামী মুসলিম জনতা। অন্যদিকে মানবতার ফেরিওয়ালা বিশ্বমোড়লেরা ফিলিস্তিন, হামাস ও হিজবুল্লাহর অসম স্বাধীনতাযুদ্ধকে সময়বিশেষে সন্ত্রাসী হামলা, মানবতার বিরুদ্ধে অভিযান, আগ্রাসন ইত্যাদি অভিধায় আখ্যায়িত করে দখলদার ইসরায়েল বাহিনীর পাশবিক হামলাকে আইনসিদ্ধ বা জায়েজ করছে এবং নিত্যনতুন জ্বালানি ও ইন্ধন জোগাচ্ছে। অবশ্য প্রবল চাপের মুখে একদা তথাকথিত ফিলিস্তিনি মুক্তিসংগ্রামের প্রাণপুরুষ ইয়াসির আরাফাতকে নোবেল পুরস্কারেও ভূষিত করা হয়েছিল। ঠুঁটো জগন্নাথ জাতিসংঘ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পুঞ্জীভূত ধ্বংসযজ্ঞের ওপর দাঁড়িয়ে বিশ্বের পরাশক্তিগুলো ভবিষ্যৎ যুদ্ধবিগ্রহ চিরতরে বন্ধের প্রতিশ্রুতিতে শুরুতে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ ও পরে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করেছিল। অবশ্য প্রতিষ্ঠালগ্নের পর থেকে সংস্থাটি বৃহত্তর শক্তিগুলোর নিছক স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। জাতিসংঘকে তোয়াক্কা না করে ১৯৬০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করেছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট সম্ভবত ক্রুশ্চেভ ক্রোধান্বিত চিত্তে উচ্চারণ করেছিলেন : দো দ্য ইউএনও ইজ দ্য চেস্ট ডটার অব এ চেস্ট মাস্টার, সি ইজ নাউ সাফারিং সো ম্যানি ডিজিজেস (জাতিসংঘ সতী মায়ের সতী কন্যা হলেও এখন নানাবিধ জটিল রোগে ভুগছে)। সি নিডস এ ডক্টর টু ট্রিট হার অ্যান্ড সার্জিক্যাল অপারেশন টু কিউর হার (চিকিৎসার জন্য তার ডাক্তার এবং পূর্ণ আরোগ্যের জন্য অস্ত্রোপচার অপরিহার্য)। পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘকে পাশ কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ইরাক ও আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। অথচ জাতিসংঘ বরাবরের মতো এ ক্ষেত্রেও ঠুঁটো জগন্নাথের ভূমিকাই পালন করেছিল। বর্তমানে গাজা উপত্যকা-ফিলিস্তিন-লেবানন-ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনীর এক বছরে ৪৩ সহস্রাধিক মুক্তিকামী জনতার প্রাণবায়ু ছিনিয়ে নেওয়া এবং হাসপাতাল, রিলিফ ক্যাম্প, রেডক্রসের দপ্তর, স্কুল-মসজিদ-প্রার্থনালয়সহ দুই সহস্রাধিক স্থাপনা ভেঙে চুরমার করে দেওয়া সত্ত্বেও জাতিসংঘ কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে।
কলিঙ্গ যুদ্ধ ও অশোক : প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসের বর্ণনানুসারে, ঐতিহাসিক কলিঙ্গযুদ্ধে সহায়-সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও লক্ষাধিক লোক প্রাণ হারিয়েছিল। যুদ্ধ শেষে বিকেলে মৌর্য সম্রাট অশোক যুদ্ধের ময়দানে গিয়েছিলেন বাস্তব পরিস্থিতি স্বচক্ষে অবলোকনের জন্য। আহত হাজার হাজার সৈনিকের মরণাপন্ন দশা ও আহাজারিতে যুদ্ধের ময়দানের আশপাশের আকাশ-বাতাস ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছিল। সেই হৃদয়বিদারী আহাজারি স্বকর্ণে শ্রবণ এবং বীভৎস দৃশ্য ও বাস্তব পরিস্থিতি স্বচক্ষে অবলোকনের পর মহারাজ অশোকের মানবতাবোধ উথলে উঠল। বিন্দুমাত্র কালক্ষেপণ না করে যুদ্ধের ময়দানেই সম্রাট অশোক রাজ্য ও রাজসিংহাসন পরিত্যাগ করে সন্ন্যাসব্রত গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেন। এরপর সংসার-বিরাগী অশোক বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হন এবং একমাত্র কন্যাকে নিয়ে জীবনের বাকি অংশ বৌদ্ধধর্মের প্রচার ও প্রসারে ব্যয় করেন। যাহোক, মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোড়া বা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সূচনা হয় ১৯৪৭ সালে। বিগত ৭৫ বছরে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর হাতে এবারের ৪৩ সহস্রাধিকসহ বিভিন্ন সময়ে লক্ষাধিক বাস্তুহারা ও স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনি-হামাস-হিজবুল্লাহর রক্তে ঊষর মরুপ্রান্তর বহুবার রক্তবসন পরিধান করেছে। প্রতিবারই বিশ্বের অনেকগুলো পরাশক্তি সর্বহারা ফিলিস্তিনিদের দুর্দশায় নিছক কুম্ভীরাশ্রু বর্ষণ করেছে এবং সিংহভাগ পরাশক্তি প্রতিবারই আগ্রাসী ইসরায়েলকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে এবং বরাবর তার পাশে দাঁড়িয়েছে। তাই মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠার পটভূমিতে জানতে ইচ্ছে হয় : এই অসুরীয় ধ্বংসযজ্ঞের শেষ কোথায়! লেখক : সহযোগী সম্পাদক, ঠিকানা, নিউইয়র্ক।
 

কমেন্ট বক্স