ভূমিকা : বাংলাদেশের স্বাধীনতা আকস্মিক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছিল। কাজেই তখন সম্পূর্ণ নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। যেহেতু তৎকালীন সরকার ছয় দফার বাইরে নতুন প্রসঙ্গ (যেমন সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা) উত্থাপন করে, তা পাস করেছিল, সুতরাং ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ভিত্তিতে গঠিত সাংবিধানিক পরিষদের এখতিয়ারের বাইরে এই কাজগুলো সম্পন্ন হয়। বর্তমানে নতুন সংবিধান জনগণের ভোটের মাধ্যমে পাস করাতে হবে, যা বর্তমান শাসনতন্ত্রের বেলায় করা হয়নি। স্মরণ রাখতে হবে, গন্ডগোলের মধ্যে রুয়ান্ডা, ইরাক, কি আফগানিস্তানের মতো দেশগুলোতে নতুন শাসনতন্ত্র ভোটের মাধ্যমে গৃহীত হয়েছিল।
আধ্যাত্মিক পরিচিতি : সংগত কারণেই ৩৬০ আউলিয়ার দেশ, ১৯০৫-এর বঙ্গভঙ্গের দেশ, ১৯৪০-এ শেরেবাংলা আ. কা. মো. ফজলুল হকের প্রস্তাবিত স্বপ্নের দেশ বাংলাদেশের সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে ৯৩ শতাংশ জনসাধারণের মূল্যবোধকে স্থান দিতে হবে সম্পূর্ণ শাসনতন্ত্রজুড়ে। এই সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতেই এ দেশকে অখণ্ড ভারত ভেঙে আলাদা করা হয়েছিল এবং সেই জমিই পরবর্তীকালে হয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের অন্য কোনো এলাকা না বাংলাদেশের সঙ্গে যোগ দিয়েছে না চেয়েছে যোগ দিতে। এই নতুন সংবিধান পরিষ্কার করে বলে দেবে বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৮৫৭, ১৯০৫ আর ১৯৪৭ এর তাৎপর্য ও ভূমিকা।
নামে বা কী আসে যায় : দেশের সরকারি নাম সঠিক করার এটা একটা সুযোগ। দুনিয়াজুড়ে রয়েছে নানা দেশের নানা ধরনের নাম। যেমন Belize, Barbados, Burkina Faso, Canada, Hungary; DPRK–Democrat PeopleÕs Republic of Korea; PDRA–PeopleÕs Democratic Republic of Algeria; Islamic Republic of Afghanistan/Pakistan/Iran; Commonwealth of Australia/Bahamas; State of Israel; Principality of Andorra; Kingdom of Saudi Arabia/Bahrain/Bhutan; Union of the Comoros; Republic of Albania/Cuba; Central African/Czech Republic; PeopleÕs Republic of China, United Arab Emirates/United Kingdom/United States of America etc.
বর্তমানে আমাদের দেশের একটু লম্বা ধরনের সরকারি নাম রয়েছে-PeopleÕs Republic of Bangladesh অর্থাৎ জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। এই নাম হতে পারে শুধু বাংলাদেশ কিংবা Republic of Bangladesh অর্থাৎ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। কারণ Republic-এ Public রয়েছে। সুতরাং বাড়তি চবড়ঢ়ষব’ং থাকার প্রয়োজন নেই। অযথা জনগণতান্ত্রিক চায়নাকে খুশি করার কোনো দরকার নেই। চোরের মন খিরা খেতে ছিল সেই ৫০ বছর আগেও। কেবল ‘বাংলাদেশ’ নামকরণ করলে ‘ইসলামিক’ কি ‘গণতান্ত্রিক’ বিশেষণ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়তো এড়ানো যেতে পারে।
শুধুই কি গান গেয়ে পরিচয় : নতুন জাতীয় সংগীত রচনা করতে হবে, যেটা কালজয়ী এবং সময়োপযোগী হবে। তদুপরি বাংলাদেশিদের দ্বারা বাংলাদেশের গোটা ইতিহাস, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে রচিত হবে। জাতির এই নতুন গান জনগণের ভোটের মাধ্যমে গৃহীত হবে। বর্তমান জাতীয় সংগীত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৬০-৬৫ বছর পূর্বে বাংলাদেশের প্রতি কঠোর এক উঁচু জাতের জমিদারের লেখা ধর্মভিত্তিক গান। অনেকের মতে এটা ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধের গান। কেমন করে এবং কেন এমন একটি বিতর্কিত গান আমাদের জাতীয় সংগীত হলো, সেটা ভবিতব্য।
‘শহীদ হয়েও শান্তি নাই’ : এমনি গঠিত হয়েছিল নতুন বাংলাদেশ-১৯৭১। স্বাধীনতাযুদ্ধকালে মোট শহীদ ও বীরাঙ্গনার সংখ্যা ক্রমাগতভাবে ৩ লাখ ও ২০ হাজারের ১০ গুণ নয়, এই ব্যাপারটা স্পষ্ট করতে হবে। সত্যের পথ অবলম্বনই আমাদের ইহকাল আর পরকালের পাথেয় হবে। Fake news, False stories, Propaganda সব এড়িয়ে যেতে হবে। তা ছাড়া পাকিস্তান ১৯৭১-এ যে অতর্কিত হিংসাত্মক হামলা চালিয়েছিল এবং যে পরিমাণ জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করেছিল, তার কাফফারা হিসেবে পাকিস্তান থেকে কিছু ক্ষতিপূরণ পেতে হলে সঠিক সাবুত/প্রমাণ ছাড়া আগানো যাবে না। পাকিস্তানের প্রাক্তন পিএম জনাব ইমরান খান বাংলাদেশের কাছে মাফ চেয়েছেন। তার সেই চলার পথ সুগম করে দেওয়ার জন্য কাফফারা দেওয়াটা সুবিধা করে দিতে হবে। আর আমরা শেষ পর্যন্ত ১৯৭১ ও দৈত্যটাকে কবরস্থ করতে সক্ষম হব এবং আমাদের জাতীয় রাজনীতি সহজ-সরল, নতুন পথে এগিয়ে যাবে আমাদের প্রজন্মের জন্য।
সংশোধন
১. পরিবারতন্ত্র এবং একক দলের ক্ষমতা দখলের সুযোগকে বাধা দিতে এবং একটি গতিশীল ও মেধাভিত্তিক সরকার প্রণয়নের স্বার্থে সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রিত্ব পদ্ধতি পরিহার করে প্রেসিডেনশিয়াল পদ্ধতি চালু করা উচিত।
২. এই সময়ে স্পষ্ট করে দিতে হবে যে উপাসনালয়ে কি শিক্ষালয়ে বা ব্যবসায়ে রাজনৈতিক দলের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ থাকবে না, কমিটিতে রাজনৈতিক সদস্যও থাকবে না।
৩. স্পষ্ট করে দিতে হবে যে ভবিষ্যতে শিক্ষক, ডাক্তার, উকিল, ইঞ্জিনিয়ার, মিলিটারি, পুলিশ, সরকারি কর্মচারী ইত্যাদি এমনকি ছাত্রছাত্রীরাও অধ্যয়নরত অবস্থায় খোলাখুলি রাজনীতিতে অংশ নিতে পারবে না এবং কোনো দলের সদস্যও হতে পারবে না।
সারশূন্য স্তম্ভদ্বয়
এক. প্রাক্তন সংবিধানে চারটি স্তম্ভ রয়েছে। তার মধ্যে দুটি স্তম্ভÑসমাজতন্ত্র আর ধর্মনিরপেক্ষতা, ছয় দফার আলোকে, যুগের আলোকে এবং মূল্যবোধের আলোকে অগ্রহণযোগ্য। ওই সময়ে সমাজতন্ত্র ছিল শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর কংগ্রেস পার্টির রাজনৈতিক নীতি। আজ সমাজতন্ত্র দুনিয়াজুড়ে মর্যাদা হারিয়েছে। ভারতেও তার কোনো মর্যাদা নেই। তা ছাড়া যে তথাকথিত সাম্য সমাজতন্ত্র আনার কথা তা বাংলাদেশের মুসলিম সমাজের অন্তর্নিহিত, আত্মস্থ যুগ যুগ ব্যাপী মূল্যবোধ। তা ছাড়া যে রাজনৈতিক দল এই স্তম্ভ সংবিধানে বসিয়েছে, তারা বছর বছর ধরে এর উল্টোটা করেছে। তদুপরি স্বয়ং শেখ মুজিবুর রহমান এই স্তম্ভ অনুসরণ করতে গিয়ে অকস্মাৎ হাইকোর্টের জজদের বেতন সর্বোচ্চ ৪ হাজার টাকা ধার্য করে দেন। এই অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা জজদের সাংসারিক জীবনে কষ্ট বয়ে আনেনি, সে কথা বলা যাবে না। বলা যাবে না যে ওই কারণেই হাইকোর্টের বেঞ্চে ধীরে ধীরে অসাধুতার অনুপ্রবেশ হয়নি। সুতরাং এই স্তম্ভ বাতিল করা হোক।
দুই. মুসলিম রাজত্বকালে ১০০০ বছরে একবারও সাম্প্রদায়িক রায়ট হয়নি। লাকুম দ্বীনুকুম ওয়ালিয়া দ্বীন, লা ইক্বরাহা ফিদ্বীনÑসায়নেয়াইর সেইন্ট ক্যাথেরিনের মঠের সন্ন্যাসীদের চিরকালের জন্য আমানতের আশ্বাস দেওয়া নবীজির (সা.) চিঠি এবং ওনার মদিনা কম্প্যাক্ট কিংবা বিদায় হজের ভাষণে, কি উমর (রা.) এবং অন্য মুসলিম শাসকদের সুশাসনে অনুপ্রাণিত বাংলাদেশের জনপদকে ছোট করা হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষ স্তম্ভ দিয়ে। এটা ভারতের স্তম্ভ ভারত বিভাগে মুসলিম দাবির বিরুদ্ধে। আমরা এটা সংবিধানে গ্রহণ করে বলে দিয়েছি যে আমাদের পূর্বপুরুষেরা নতুন দেশ কায়েম করে ভুল করেছিলেন। আজকের দিনে ভারতের মোদি সরকার তার সর্বশক্তি দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে সর্বপ্রকার হাতিয়ার হাতে তুলে নিয়েছে। আমরা ১৯৭১-এর রক্তার্জিত স্বাধীনতা পাই আমাদের ভবিষ্যৎ ভারতের মন-মানসিকতার আদলে গড়তে। সুতরাং এই স্তম্ভও বাতিল করা হোক।
নয়া সংসদ
১. এক কক্ষ/হাউস/পরিষদ-বিশিষ্ট সংসদ এক আশ্চর্য অভিনব সৃষ্টি, যা বোধ হয় শুধু বাংলাদেশেই দেখা যায়। স্বৈরাচারী সরকার গঠন ও পরিচালনার জন্য এক কক্ষবিশিষ্ট সংসদ ভীষণ সহায়ক। জাতির ভারসাম্য হারানোর জন্য এটাই যথেষ্ট ছিল। সুতরাং ভবিষ্যতে আমাদের দুই কক্ষ/হাউস/পরিষদ-বিশিষ্ট সংসদ থাকবে। ঊর্ধ্বতন পরিষদের সদস্যরা বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থ, পরিচয়, মূল্যবোধ ও ভাবমূর্তি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো ইত্যাদি রক্ষা করার প্রতি সচেতন থাকবেন। সাধারণ পরিষদের সদস্যরা স্থানীয় অর্থাৎ লোকাল স্বার্থ/ইস্যু নিয়ে দায়িত্বশীল হবেন।
২. ঊর্ধ্বতন পরিষদের সদস্য/সাংসদ থাকবেন ১২৮ জন, অর্থাৎ জেলাপ্রতি দুজন। সুতরাং এই পরিষদের নির্বাচন হবে এলাকাভিত্তিক। এই পরিষদে নমিনেশনের ভিত্তিতে বাড়তি কোনো সাংসদ থাকবে না।
৩. সাধারণ পরিষদের সাংসদ সংখ্যা হবে ৩০০+৩০।
এই পরিষদের নির্বাচন হবে জনসংখ্যাভিত্তিক।
৪. প্রেসিডেন্ট চার বছর মেয়াদকাল ধরে বহাল থাকবেন পদে অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নির্বাচন হবে প্রতি চার বছর অন্তর। তদুপরি প্রেসিডেন্ট দুই টার্ম অর্থাৎ আট বছরের অতিরিক্ত বহাল থাকতে পারবেন না।
৫. ঊর্ধ্বতন পরিষদের সাংসদ মার্কিন সংবিধানের নিয়মানুযায়ী ছয় বছর মেয়াদকাল ধরে বহাল থাকবেন পদে, তবে সর্বোপরি দুই টার্ম অর্থাৎ ১২ বছরের জন্য। প্রতি দুই বছর অন্তর নির্বাচন হবে এই কক্ষের এক-তৃতীয়াংশ সাংসদের। এতে করে পুরো ঊর্ধ্বতন পরিষদ সাংসদদের একসঙ্গে বদলানোর আশঙ্কা থাকবে না এবং যার কারণে ধারাবাহিকতায় বিঘ্ন সৃষ্টি হবে না।
৬. সাধারণ পরিষদের সাংসদ দুই বছর মেয়াদকাল ধরে বহাল থাকবেন পদে, সর্বোপরি ছয় টার্ম অর্থাৎ ১২ বছরের জন্য। নির্বাচন হবে প্রতি দুই বছর অন্তর প্রতিটি পদের জন্য।
প্রেসিডেন্ট ও সাংসদ
১. প্রেসিডেন্টের বয়স হতে হবে কমপক্ষে ৪৫ বছর। ঊর্ধ্বতন পরিষদের সাংসদের বয়স হতে হবে কমপক্ষে ৪০ বছর আর সাধারণ পরিষদের সাংসদের বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২৬ বছর।
২. প্রেসিডেন্ট আর উভয় পরিষদের সাংসদের শিক্ষাগত যোগ্যতা হতে হবে কমপক্ষে মাস্টার্স ডিগ্রি।
৩. কোনো ধরনের গুরুতর অপরাধের জন্য অভিযুক্ত এবং সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি না সরকারপ্রধান না সাংসদ পদের জন্য প্রতিযোগিতা করতে পারবেন।
৪. প্রেসিডেন্ট, সাংসদ, সেনাবাহিনী, জজ-জাস্টিস, সরকারি কর্মচারী ও পুলিশ বাহিনীর পতি/পত্নী জন্মগতভাবে বিদেশি হতে পারবেন না। ব্যতিক্রম হবে সে ক্ষেত্রে, যখন উল্লেখিত পতি/পত্নী বাংলাদেশি মা-বাবার সন্তান হন।
বিল পাস : মার্কিন কংগ্রেসের ন্যায় যেকোনো বিল পাস করতে হলে দুই পরিষদে প্রস্তাবিত বিল দুটির মধ্যে হুবহু অর্থাৎ আক্ষরিক মিল থাকতে হবে। তবেই প্রেসিডেন্ট সেই পাস করা বিল সই কিংবা নাকচ করতে পারেন। তবে ঊর্ধ্বতন পরিষদ দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে প্রেসিডেন্টের ভেটো অকার্যকর করতে পারে।
কিছু বিশেষ অর্থনৈতিক সংশোধনী
স্থানীয় সরকার : গ্রাম,ধ ছোট শহরাঞ্চল, উপশহর ইত্যাদি পরিচালনায় রাজনৈতিক দল যোগ দেওয়া থেকে বিরত থাকবে এবং পাবলিক/জনসাধারণের হাতে ক্ষমতা দেওয়ার খাতিরে প্রয়োজনবোধে সামান্য স্থানীয় কর বসানোর সুযোগ ধথাকা দরকার। পূর্বের মতো সব কর সেন্ট্রাল সরকারের আরোপিত কর না হওয়াটা ভালো। এতে করে আশা করা যায় যে স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচিত কর্মচারীদের কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা বাড়বে এবং স্থানীয় প্রয়োজন অনুযায়ী অতিরিক্ত কর আদায় করা যাবে। এই অতিরিক্ত কর প্রণয়ন ঊর্ধ্বতন সরকারি বিভাগের তত্ত্বাবধানে থাকবে।
ব্যাংকে হরির লুট
১. বেশ কটি ব্যাংক নিয়ে বাংলাদেশে হয়েছে অকল্পনীয় লুট, অপব্যবস্থাপনা আর দুর্দশা। ব্যাংকের মালিক শিল্পপতি এবং তদ্বিপরীত হওয়াতে স্বার্থের সংঘাত সম্পূর্ণ ভর করেছে এবং প্রতিযোগিতা খর্ব হয়েছে। বাংলাদেশে ব্যাংকের সাম্প্রতিক কালের কেলেঙ্কারির মূলে এই ব্যবস্থাপনা মুখ্য ভূমিকা রেখেছে।
২. যেহেতু বাংলাদেশ ৯৩ শতাংশ মুসলিম-অধ্যুষিত দেশ আর যেহেতু বিগতকালে ইসলামি সংস্থা এবং ব্যাংকসমূহ কট্টর বামপন্থীর হাতে লাঞ্ছিত, বৈষম্য, অত্যাচার ও লুণ্ঠনের শিকার হয়েছে; সেহেতু সংবিধানের মধ্যেই তাদের সংরক্ষণের অধ্যাদেশ জারি হোক।
৩. সরকারি বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামি ব্যাংকসমূহকে কমার্শিয়াল ব্যাংকের মতো নিয়ন্ত্রণে রাখবে না, বিশেষ করে মেয়াদি ডিপসিটের ওপর সর্বোচ্চ প্রফিট মার্জিন বসিয়ে, কারণ এই আদেশ ইসলামি ব্যাংকের সরকার কর্তৃক অনুমোদিত চার্টারের বিরুদ্ধে যায়।
৪. বলিষ্ঠ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ইসলামি ব্যাংকসমূহের মুশারাকা লেনদেন সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এই ধরনের বিনিয়োগ আম জনসাধারণের জন্য সুযোগ বাড়াবে, অর্থনীতিতে প্রকল্পসমূহে আরও সহজে অর্থায়ন হবে এবং জনসাধারণের মধ্যে আয় বণ্টনে আরও সমতা আনবে।
৫. এই সময়ে জাতীয়করণের অধীনে থাকা সোনালী কি রূপালী ব্যাংককে ব্যক্তিগত মালিকানার কাছে বিক্রি করার অধ্যাদেশ সংবিধানে সংযুক্ত হোক। অন্য সময়ে স্ট্রাইক করে কর্মচারীরা এই পদক্ষেপ বানচাল করে দেয়। আমাদের ২০২৪-এর পথবিপ্লব আমাদের অভূতপূর্ব সুযোগ করে দিয়েছে এই অতি জরুরি সংস্কার প্রণয়নের জন্য।
স্বাস্থ্য সেক্টর
১. বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালসমূহকে আরও কড়া আইনের চোখে রাখতে হবে, বিশেষ করে আইসিইউতে অ্যাডমিশন, সিজারিয়ান সেকশন, প্রেসক্রিপশন এবং বিলিঙ্গের ব্যাপারে। যেহেতু আমাদের জনসংখ্যা বিপুল এবং তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক, সেহতু জনসাধারণের অসুস্থতায় এই সংস্থাসমূহের সার্বিক ব্যবহার উন্নত মানের হওয়া একান্ত প্রয়োজন।
২. বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেক্টর অনেক যুগ ধরে এক মহা সমস্যার মুখোমুখি। একই সঙ্গে তা অপার সম্ভাবনার সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে। সহজে লব্ধ সুযোগ (low hanging fruit) হলো নার্সিং ট্রেনিং। নতুন সংবিধানে অধ্যাদেশ জারি হোক যে কালবিলম্ব না করে ১০টি নার্সিং টেক্সট বুক বাংলায় লেখা হবে সরকারি খরচে এবং হাতে হাতে (hands-on) বিজ্ঞানশিক্ষা দেওয়া হোক নতুন নার্সিং ছাত্রছাত্রীদের চার বছর দীর্ঘ ডিগ্রির প্রথম বছরের শিক্ষাকালে। এতে দুটি লাভ হবে। নার্স সরবরাহ বাড়বে, কারণ প্রথম বছরের পর ড্রপ আউট রেট কমবে। নার্সিংয়ের মানও বাড়বে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় : বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ সয়লাব। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। আমরা গরিব দেশ। আমাদের সম্পদ সীমিত। বেসরকারি অলাভজনক শিক্ষার নামে সৃষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কি ব্যবসায় পরিণত হয়েছে? নতুন সংবিধানে এই অনুশীলনের বিরুদ্ধে বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অধ্যাদেশ জারি করা হোক।
ভবন নির্মাণ আইন : সময়াসময়ে রাজউক মাল্টাই ভবন বানাতে কেবলই আইন পরিবর্তন করে কারও না কারও সাহায্যার্থে। যেমন ২০০৯-এ নতুন আইন এনে, ২০২৩-এ তা আবার ঢিলা করে দিয়েছে। এই পরিবর্তন হঠাৎ করেই হয় জনসাধারণের জ্ঞানের বাইরে। যেহেতু বাংলাদেশে শহরাঞ্চলে জমির অভাব এবং জনসাধারণের জীবনে অর্থনৈতিক চাপ বিদ্যমান, তাই দেশজুড়ে ভবন নির্মাণ অনুমতি দানকারী সরকারি সংস্থাসমূহকে একই আইনের অধীনে এনে ম্যানেজ করতে হবে।