Thikana News
২১ নভেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

পোস্ট গণঅভ্যুত্থান ও টুকিটাকি

পোস্ট গণঅভ্যুত্থান ও টুকিটাকি
ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে ৫ আগস্ট ২০২৪ যে গণঅভ্যুত্থান ঘটে গেল, তাতে বহুবিধ চমকপ্রদ ঘটনা ঘটছে এবং আরও ঘটবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সীমাবদ্ধতায় বিপ্লবের সুফল ভোগে শ্লথ গতি, বিগত সরকারের আস্থাভাজনদের সরব উপস্থিতি, প্রতিবেশী একটি দেশের ভূমিকা, আনসার বিদ্রোহ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিছুটা বাধাগ্রস্ত করতে পারলেও জনমনে কিন্তু এক অনাবিল প্রশান্তি নতুন করে মাত্রা পেয়েছে। এ ছাড়া কিছু হৃদয়বিদারক ঘটনা, কারও কারও রাজনৈতিক মৃত্যু, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ, সকল নাটের গুরু সাবেক বিচারপতি খায়রুল হক, মিডিয়ার ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে যাওয়া, নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ, গুম হওয়া পরিবারগুলো, বিডিআর হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরের ঘটনা, গণহত্যায় অংশ নেওয়া পুলিশ সদস্যদের ব্যাপারে নিষ্ক্রিয়তা, পালিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রীর সহযোগীদের নিত্যনতুন তথ্য দেওয়া, সদ্য পদত্যাগী প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের কলাম লেখা, মেডিকেল কলেজগুলোতে ধর্মঘট, নতুন করে বিভীষিকাময় পুলিশ বর্বরতার ভিডিও, জাতিসংঘের উপস্থিতি ইত্যাদি অনেক কিছুই সব মিডিয়ার শিরোনামে আছে। তবে সব বিষয়ে আলোকপাত করা না গেলেও দু-চারটি বিষয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।
১.    আওয়ামী লীগ : সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও আলোচিত স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ। দলটির ভবিষ্যৎ আপাতদৃষ্টিতে অন্ধকার বলেই মনে হয়। দলটির প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে বাকশাল গঠন এবং তার কন্যা শেখ হাসিনার ১৬ বছরের স্বৈরাচারিতা দলটিকে এক কঠিন আবর্তে ফেলে দিয়েছে। সেখান থেকে উঠে আসা মোটেই সহজসাধ্য বিষয় নয়। তবে আশার আলো এটুকু যে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতি পাঁচ বছর পরপর গঠিত হওয়ার কথা খুব জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে বা তা বাস্তবায়ন করার জন্য হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। সেটা ফিরে এলে আওয়ামী লীগ দল গোছানোর কিছুটা সুযোগ হয়তো পাবে। বাকশাল করার পর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে ধোঁয়াশা ছিল, তার কন্যা দলীয় দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অনেকটা কেটে গিয়েছিল। কিন্তু সে কন্যাই তার ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য চেতনার ব্যবসা এবং বঙ্গবন্ধুকে বিক্রি করতে করতে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন যে তার প্রতি জনগণের ঘৃণা অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিও সংক্রমিত হয়ে যায়। ফলে নতুন কোনো নেতৃত্ব হাসিনাকে বাদ দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে সামনে রেখে দল গোছাবেন, সেটাও বেশ কষ্টসাধ্য। আরেকটি বিষয়ও পরিষ্কার, শেখ হাসিনার পরিবারের কেউ, যেমন সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বা শেখ রেহানাদের কেউ নেতৃত্বে না আসতে পারলে দল বহুধাবিভক্তিতে রূপ নেবে, যা দলকে আরও তিমিরে নিয়ে যাবে। আবার এই তিনজনের পক্ষে শেখ হাসিনার সমালোচনা করাও অসম্ভব। আবার নেতৃত্বে আসার সম্ভাবনার ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে পুতুল এগিয়ে আছেন, শেখ রেহানা ও জয়ের তুলনায়। কারণ শেখ রেহানার অর্থনৈতিক অনৈতিকতা ও তার দেবর তারেক সিদ্দিকীর সম্পৃক্ততা তাকে পিছিয়ে দেবে এবং শেখ হাসিনার পতনের পর জয়ের অসংলগ্ন কথাবার্তা খোদ আওয়ামী লীগ মহলেই তার নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সুতরাং পুতুলই আওয়ামী লীগের বেঁচে থাকার একমাত্র আশা। নেতৃত্বের সমাধান হলেও ক্ষমতায় ফিরে আসার উপযোগী করার অন্যান্য উপাদানও সহজসাধ্য বিষয় নয়। এসবের অন্যতম হলো জনমত। শেখ হাসিনার শাসন, আরও স্পষ্ট করে বললে, গুম, খুন, আয়নাঘর, তরুণ ছাত্রসমাজের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ, অর্থনৈতিক তছরুপ এবং নির্বাচন ও বিচারব্যবস্থাকে ধ্বংস করায় জনগণের বিশ্বাসের জায়গাটা একেবারেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পালিয়ে যেতে না পারা শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার সদস্যরা, যারা নিজেদের বাঁচাতে বা সত্য বলার প্রয়োজনে বিভিন্ন নেতিবাচক তথ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে আরও পচিয়ে ফেলছেন। তা ছাড়া সামনে আরও আসবে বিডিআর, শাপলা চত্বর, সকল গুম-খুন, আয়নাঘর,     ব্যাংক তছরুপ, দুর্নীতি ইত্যাদি সবকিছুর প্রমাণসহ বিভিন্ন কাহিনি। শেখ হাসিনার শাসনকালেই ভোটার উপস্থিতি ৫-১০% প্রমাণ করে কোথায় গিয়ে ঠেকেছিল আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা। জনপ্রিয়তা হারানোর পাশাপাশি তৃণমূল নেতৃত্বেও শূন্যতা দেখা দিতে পারে। কারণ সেসব নেতৃত্ব, যারা প্রায় সবাই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, ধরা পড়বেন, হয়তো জেল-জুলুমের শিকার হয়ে রাজনীতিতে ফেরার সক্ষমতা হারাবেন। আবার তারা যেভাবে বিএনপিকে দৌড়ের ওপর এবং অর্থনৈতিক নজরদারিতে রেখেছিল, সে অবস্থায় হয়তো তাদেরকেও যেতে হতে পারে। প্রশাসনের সর্বস্তরে যেভাবে আওয়ামীপন্থী লোকজন বসেছিল, আগামী ৫/১০ বছরে ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে ফেলা হবে। সব মিলিয়েই আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ মোটেই ভালো নয়।
২. অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগে ভারতীয় হিন্দু পত্রিকায় ড. ইউনূসের সাক্ষাৎকার, নতুন নির্বাচন দাবি, ফ্রান্সে বসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হতে রাজি হওয়া, বাংলাদেশস্থ প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা কর্তৃক নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা এবং ছাত্র আন্দোলনে কোনো প্রকার সম্পৃক্ততা না থাকার পরও ছাত্রদের ড. ইউনূসকে সরকারপ্রধান করার দাবি এবং এই অভ্যুত্থানের বিশেষ ইনফ্লুয়েন্সার প্যারিসে বসবাসরত পিনাকি ভট্টাচার্য ও বিপ্লবের প্ল্যান এ, বি এবং সি নিয়ে ড. ইউনূসের সঙ্গে কথা বলা; এসবের একটি ইঙ্গিত রয়েছে, কিন্তু সে আলোচনা এখানে নয়। তবে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চালাতে, বিশেষ করে বর্তমান বিরূপ পরিস্থিতিতে, ড. ইউনূস কতটুকু সচেতন ছিলেন, সেটা না জানা গেলেও এখন তিনি সম্যক উপলব্ধি করছেন কাজটি কত কঠিন। প্রথমত, ক্ষমতার তিনটি কেন্দ্রবিন্দুর দুটি; সামরিক বাহিনী, যদিও তারা হাসিনার বিদায়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এবং রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বিগত সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত এবং সেখানে নিজের ইচ্ছামতো কাজ করা একটু ঝুঁকিপূর্ণ। দ্বিতীয়ত, বিগত সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন, অন্যায় ও অত্যাচারগুলো এতই মর্মবিদারী যে ভুক্তভোগীরা দ্রুত প্রতিকার চাচ্ছে, কিন্তু অপর্যাপ্ত লোকবল এবং রাজনৈতিক অনভিজ্ঞতায় সেসব করা যাচ্ছে না। তৃতীয়ত, হাসিনা সরকারের অন্যায় সহযোগীরা পলাতক থেকে বেরিয়ে দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু কোন আইনে তাদের আটক করে রাখবে, তার কোনো সমাধান না পেয়ে বিগত সরকারের পদ্ধতি অনুসরণ করে হত্যা মামলায় আটক রাখার চেষ্টা করছে, যাদের সঙ্গে ওই নেতাদের সম্পৃক্ততা নেই। এসব মামলা নিয়ে ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেছেন, ওইসব মামলা প্রাথমিক ধাপেই টিকবে না। এর বাইরে ভয়াবহ বন্যা, আনসার বিদ্রোহ, ভারতীয় মিডিয়ায় নেতিবাচক প্রচারণা, চরম ঝুঁকিপূর্ণ অর্থনীতি, বিরোধী দলের নির্বাচনী চাপ, পুলিশ প্রশাসনকে ঢেলে সাজানো ইত্যাদি বিষয় নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জ্বলন্ত ডেকে দণ্ডায়মানÑএ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। তবে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের চেয়ে আইন ও সংসদীয় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে প্রফেসর আসিফ নজরুল বেশ দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। তিনি অল্প সময়ের মধ্যে সুপ্রিম ও আপিলেট ডিভিশনের দুর্নীতিগ্রস্ত ও দলীয় বিচারপতিদের ক্যু প্রচেষ্টা ব্যর্থ এবং তাদেরকে পদত্যাগে বাধ্য করতে সক্ষম হয়েছেন, যা সাংবিধানিকভাবে ভীষণ একটি জটিল বিষয়। তা ছাড়া এর মধ্যেই গুমবিষয়ক তদন্ত কমিটি, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।
৩. ভারত : শেখ হাসিনার সরকার পতনে ভারত সরকার যে একেবারেই কিছু জানত না, সেটা বলা যাবে না। আমেরিকা হাসিনার বিদায়ের কথা ভারতকে আগেই জানিয়েছিল বলে ৭ আগস্ট প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়। যে কাজটি আমেরিকা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেই করতে চেয়েছিল, কিন্তু ভারতের নির্বাচনে প্রভাবিত হয় এমন কোনো কাজ না করার অনুরোধের প্রেক্ষাপটে আমেরিকা বিরত ছিল। ঠিক সে কথাই সালমান এফ রহমান ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে বলেছিলেন, আমরা আমেরিকাকে ম্যানেজ করেছি, তা না হলে আগেই আউট হয়ে যেতাম। ভারত হাসিনার পতন সম্পর্কে জানুক বা না-ই জানুক, তারা তাদের পররাষ্ট্রনীতির বিচ্যুতিগুলো একটু গভীরভাবে উপলব্ধি করছে বলেই মনে হয়। হাসিনার বিদায়ের পর ভারতের প্রথম সারির গণমাধ্যমগুলোর সমালোচনা থেকেই তা বোঝা যায়। গত ২৬ আগস্টের স্টেটসম্যান পত্রিকার বরাতে ঢাকার মানবজমিন একটি প্রতিবেদন ছাপে এবং তাতে ভারতের কী কী করণীয় তার একটা ফিরিস্তি দেওয়া হয় : ‘ভারতকে অবশ্যই প্রতিবেশী দেশের জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার কথা মাথায় রেখে আরও সূক্ষ্মদর্শী হতে হবে। প্রতিবেশী দেশগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে এমন মতাদর্শগত চিন্তা পরিহার করতে হবে। ভারতকে অবশ্যই বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে এবং আধিপত্যবাদী চিন্তা-চেতনা থেকে বিরত থাকতে হবে। যদিও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনগণের সমর্থন অর্জন করা কঠিন হবে। তবে মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক উত্তপ্ত পরিস্থিতি ভারতের জন্য যেমন হতাশার, তেমন সম্ভাবনার। কূটনীতি, আর্থিক সহযোগিতা এবং কৌশলগত ধৈর্য ব্যবহার করে ভারতকে আঞ্চলিক নির্ভরযোগ্য অংশীদারিত্ব বাড়ানোর পথ প্রশস্ত করতে হবে।’ তার পরও বিজেপি-বান্ধব মিডিয়াগুলো বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণায় মোটেও বিরত ছিল না। বিবিসি এবং আল-জাজিরার প্রতিবেদনের পর কিছুটা হলেও সংযত হয়েছে। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নিয়ে কথা বলেছেন বলে যে টুইটটি করেছেন, তাতে তাদের পররাষ্ট্রনীতির একটু দুর্বলতাই প্রকাশ পায়। কারণ বাইডেন প্রশাসন থেকে সে সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। আবার পশ্চিমবঙ্গের ছাত্রসমাজ বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনে যে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দিয়েছে, তা এককথায় অভূতপূর্ব। সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শংকর বলেছেন, বাংলাদেশে যারাই ক্ষমতায় থাকুক তাদের সঙ্গেই আমাদের কাজ করতে হবে।
৪. বিএনপি : আওয়ামী লীগের একমাত্র সক্ষম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি দীর্ঘ ১৫ বছর অবিরাম নির্যাতন, গুম, খুন, হামলা, মামলার শিকারে পর্যুদস্ত প্রায়। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া একটি অহেতুক মামলায় অনেক দিন জেল খেটে বিদেশের চিকিৎসাটুকুও নিতে পারেননি। রাজনৈতিক বোদ্ধাদের ধারণা ছিল, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারলে একমাত্র বিএনপিই পারবে। কিন্তু সে ধারণা মিথ্যা প্রমাণ করে ছাত্র-জনতা সে মুকুট ছিনিয়ে নেয়। তাতে বিএনপির আঁতে ঘা লাগলেও অখুশি হয়নি। ওদিকে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের গুঞ্জন এবং ২০০৭ সালের ১/১১ সরকারের চারজন সদস্য বর্তমান সরকারে থাকায় বিএনপির অস্থিরতা বেড়ে যায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমাদেরকে লড়াই করেই ক্ষমতায় যেতে হবে। পিনাকি ভট্টাচার্যও ইউনূসকে পরোক্ষভাবে ভর্ৎসনা করে বলেছেন, এই অভ্যুত্থান ছাত্রসমাজ একা করেনি, সেখানে বিএনপিরও অসামান্য অবদান রয়েছে। বর্তমান পলিটিক্যাল গেমে জামায়াত, হেফাজত, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন জোট করতে যাচ্ছে এবং তাদের সঙ্গে বিএনপির ব্যাপক দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। ড. ইউনূসও বিএনপিকে বাড়াবাড়ি করতে না দিতেই ছাত্র নেতৃত্বকে কাছে রেখেছেন। দেশের মোটামুটি সব রাজনৈতিক দল এ সরকারকে আরও সময় দিতে চায়। কিন্তু বিএনপিকে বাইরে রাখার প্রচেষ্টা হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে বিএনপি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অবশ্য প্রধান উপদেষ্টা সব দলের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করে ইতিমধ্যেই বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করে পারদ নামিয়ে এনেছেন।
৫. গুম ও আয়নাঘরের পরিবারগুলো : দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর স্বৈরাচার বিদায় হলেও গুম হওয়া পরিবারগুলো তাদের স্বজনদের কোনো খবর বা সন্ধান না পেয়ে চরম হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছে। বিশাল প্রত্যাশার এই সরকারের কাছ থেকে তারা জানতে চায় কারা সেই গুম করেছে, কোথায় নিয়ে রাখা হয়েছে বা মেরে ফেলা হয়েছে, সেই খুনিরা কোথায় আছে, কেন তাদেরকে গ্রেফতার করা যাচ্ছে না ইত্যাদি ইত্যাদি। বাস্তবতা হলো বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিধায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে খুব ধীরভাবে এগোতে হচ্ছে। তার পরও সরকার প্রাক্তন বিচারপতি ও মানবাধিকার কর্মীদের সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে ৪৫ দিন সময় বেঁধে দিয়েছে।
৬. মিডিয়া : বিস্ময়ে অবাক করে দিয়ে মিডিয়াগুলো যে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে একটা লম্ফ দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার শুরু করে দিল, তা রীতিমতো দেখার একটি বিষয়। দু-একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। বসুন্ধরা গ্রুপের কালের কণ্ঠ, পত্রিকাটির সাবেক সম্পাদক লেখক ইমদাদুল হক মিলন, প্রধান কাজ ছিল বিএনপির ছিদ্রান্বেষণ করা। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে একটি প্রতিবেদন লিখে বছরের পর বছর অনলাইন পোর্টালে রেখে দিয়েছিল। অন্যান্য খবরের পরিবর্তন করলেও তারেক রহমানের খবরটির পরিবর্তন হতো না। আর সৈয়দ বোরহান কবির তো বিএনপি/তারেকের বিরুদ্ধে এক পা এগিয়ে ছিল। সেই কালের কণ্ঠ ৬ আগস্ট থেকে ‘বিএনপির জনসভায় জনতাল ঢল’ শিরোনাম দিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠল। একই অবস্থা ইত্তেফাক, জনকণ্ঠ এবং অন্যান্য আওয়ামীপন্থী পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলগুলোর। তারা সবাই আওয়ামী লীগ আমলের কেচ্ছা কে কত আগে এবং নেতিবাচকভাবে পরিবেশন করতে পারে, তার প্রতিযোগিতা চলছে। কী বিস্ময়! জগদ্দল পাথরের মতো একটি সরকারকে রক্তাক্ত বিপ্লবের মাধ্যমে সরাতে সক্ষম হলেও কিছুসংখ্যক রাজনৈতিক অভিজ্ঞহীন ব্যক্তি এক বিশাল জঞ্জাল অল্প কদিনেই সাফ করে ফেলবেন, এটা আশা যেমন ঠিক নয়, তেমনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও অনুধাবন করতে হবে, তারা নির্বাচিত নয়। স্থায়ী সমাধানের জন্য একটি নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন। ড. ইউনূস যদি নিজে দল করার চিন্তা করেন, সম্ভবত সেটা ভুল হবে। রিফর্ম করতে বাধা পেলে, সংবিধান স্থগিত রেখে বিপ্লবী সরকার গঠন করে এগোতে চাইলে সব দল সমর্থন করবে বলে মনে হয়। Ñনিউইয়র্ক, ২৮ আগস্ট ২০২৪
 

কমেন্ট বক্স