Thikana News
১৮ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪


 

বাংলাদেশে হিন্দুর শত্রু কে?

বাংলাদেশে হিন্দুর শত্রু কে?


নিজের জীবন রক্ষার জন্য শেখ হাসিনা তার ভাষায় ‘আমার বাবার দেশ,’ ‘আমার দেশ,’ ‘আওয়ামী লীগের দেশ,’ এবং তাকে কখনো ৮৪% আবার কখনো ৮২% ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদে বসানো তার প্রিয় দেশবাসীকে বিপদের মধ্যে পালিয়ে গেছেন। তার পলায়নের পর দেশের বহু স্থানে আওয়ামী লীগের ‘ভোট ব্যাংক’ হিসেবে পরিচিত জনগোষ্ঠী হিন্দুদের মন্দিরে হামলা হয়েছে। আগুন দেওয়া হয়েছে। তাদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটে চলেছে।
উদ্ভুত অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। তারা কারও সহায়তা পাচ্ছেন না। একেবারে অসহায় পড়েছেন। অবশেষে তাদের মন্দির, বাড়িঘরের পাহারা দিতে মাঠে নেমেছে মাদরাসার ছাত্ররা, জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার আক্রোশের পরিণতিতে বহু হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসের মাঝে একটি শুভ দিক। তবে হামলাকারী কারা ছিল বা অতীত থেকে কারা হিন্দুদের ওপর হামলা করেছে, তাদের জমিজিরাত দখল করেছে, তা সকলের জানা আবশ্যক।
বাংলাদেশের হিন্দুরা আওয়ামী লীগকে তাদের ত্রাণকারী দল বলে বিবেচনা করেন। কীভাবে তারা দলটির ওপর এত নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন এবং এখনো নির্ভরশীল আছেন, তা আমার মতো ক্ষুদ্র কৌতূহলী ইতিহাস পাঠকের কাছে রীতিমতো রহস্য। ১৯৪৬ সালে আগস্ট মাসে সংঘটিত কলকাতার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ভয়াবহতা বোঝার মতো বয়স যাদের ছিল ও দাঙ্গা প্রত্যক্ষ করেছেন এবং অবশিষ্ট জীবন দাঙ্গায় আপনজন হারানোর বেদনা বয়ে কাটিয়েছেন। তারা আজ আর বেঁচে নেই অথবা বেঁচে থাকলেও অতিবার্ধক্যজনিত কারণে তারা সবকিছু গুছিয়ে বলার অবস্থায় নেই। কিন্তু দাঙ্গার খুঁটিনাটি ইতিহাস রয়ে গেছে।
কলকাতা দাঙ্গায় নিহতদের সিংহভাগ ছিলেন হিন্দু, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি নগরীতে হিন্দুরা কীভাবে দাঙ্গার প্রাথমিক শিকারে পরিণত হলেন, কী ছিল এর পেছনে কারণ? তখন অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন একজন মুসলিম- হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। কলকাতার মেয়র ছিলেন একজন মুসলিম- সৈয়দ মুহাম্মদ উসমান। কলকাতার এমএলএ ছিলেন একজন মুসলিম- রাগিব আহসান, যিনি ’স্টার অফ ইন্ডিয়া’ নামে একটি পত্রিকার সম্পাদকও ছিলেন। মেয়র সৈয়দ উসমান সাহেব দাঙ্গার ঘটার কয়েক মাস আগে থেকেই কলকাতায় একটি লিফলেট বিতরণ করে আসছিলেন, যার ভাষা ছিল:  "We Muslims have had the crown and have ruled. Do not lose hearts, be readz and take swords. Oh kafir! Your doom is not far."
অপরদিকে এমএলএ রাগিব আহসান কলকাতার প্রতিটি মসজিদে শুক্রবার জুমার জামাতে অংশ নিতে তিনজন করে ভলান্টিয়ার পাঠান  ‘কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদের মর্ম’ বোঝাতে।
সোহরাওয়ার্দী কেমন মুসলমান ছিলেন, তা একমাত্র তার সৃষ্টিকর্তা জানেন। কিন্তু বাহ্যত তিনি মদ্যপায়ী ছিলেন এবং অধিকাংশ সময় তিনি মাতাল অবস্থায় অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতেন। তিনি বিবাহ করেননি, তার বহু নারী সংসর্গের ঘটনাও ইতিহাসে পাওয়া যায়। এমন একজন মদ্যপ ও কামলিপ্সু মুসলিম নেতার নেতৃত্বে এমন কথা ছড়িয়ে পড়েছিল যে, কলকাতার শ্রমজীবী নীচু শ্রেণির মুসলিম লোকজন, যারা চোলাই করা মদ পান করতে ও বিনোদনের জন্য সস্তামূল্যে বেশ্যাগমনে অভ্যস্ত ছিল, তারা নাকি ‘লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তানের’ জোশে বলতো, ‘মদ পান করলে মুসলিম মালিকের দোকান থেকে কিনবে এবং মুসলিম ছাড়া কোনো হিন্দু বেশ্যার কাছে যাবে না।’ সত্য মিথ্যা যাই হোক, চেতনা ছিল এমন উদগ্র।
সোহরাওয়ার্দীর মুখ্যমন্ত্রিত্বের সময় কলকাতা শহর ২৪টি থানায় বিভক্ত ছিল। ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট জিন্নাহ ঘোষিত ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে’র এক মাস আগে সোহরাওয়ার্দীর নির্দেশে ২৪টির মধ্যে ২২টি থানার অফিসার-ইন-চার্জদের (ওসি) বদলি করে, সেসব থানায় তার পছন্দনীয় মুসলিম ওসি নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়। এর মধ্যে কি তার উদ্দেশ্য ‘সৎ’ উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হয়?
দাঙ্গা ঘটে এবং সেই দাঙ্গার রূপ ছিল ভয়াবহ। কলকাতার প্রতিটি হিন্দুপ্রধান এলাকায় হিন্দুরা দাঙ্গাকারীদের হাতে নিহত, আহত, নারীরা ধর্ষিত হয়। বাড়িঘর লুণ্ঠিত হয়, বহু বাড়ি ভস্মীভূত হয়। সোহরাওয়ার্দীর ছাত্র ও যুবক নেতা ও সমর্থকরা দাঙ্গায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেন । কারা সোহরাওয়ার্দীর সামনের কাতারের মাসলম্যান ও স্যাঙ্গাত ছিলেন, তাদের নাম ধাম পরিচয় বের করতে পুরাকীর্তি খুঁজে বের করার মতো খনন ও জটিল গবেষণা পরিচালনা করতে হবে বলে মনে হয় না। গবেষণা করাটা জরুরি বলে বিবেচনা করি।
অহিংস আন্দোলনের প্রবক্তা মোহনদাস করমদাঁদ গান্ধী কলকাতা দাঙ্গার জন্য সোহরাওয়ার্দীকে অভিযুক্ত করে তাকে ভর্ৎসনা করেন। সেজন্য তিনি যখন নোয়াখালীর দাঙ্গা থামাতে কলকাতা ত্যাগ করছিলেন, তার জন্য ট্রেনে প্রথম শ্রেণির কামরার রিজার্ভ করা ও সঙ্গে পুলিশ প্রটোকল দেওয়ার প্রস্তাব দেন, গান্ধীজি তা প্রত্যাখ্যান করে তার স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে উঠে নোয়াখালী যান। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা জিন্নাহও কলকাতা দাঙ্গা দমনে ব্যর্থতার জন্য সোহরাওয়ার্দীর প্রতি বিরক্ত হন এবং জিন্নাহ তার জীবদ্দশায় সোহরাওয়ার্দীকে আর কখনো কাছে টানেননি।  
হিন্দু নিধনকারী দাঙ্গাবাজদের একটি বড় অংশ ছিল পূর্ব বাংলার তরুণ মুসলিম তরুণ নেতারা, যারা সোহরাওয়ার্দীর অঙ্গুলি হেলনে চলত এবং তার দেওয়া মাসোহারায় দিন কাটাতো। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তাদের বড় অংশ পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। মুসলিম লীগের পূর্ব পাকিস্তানের নেতাদের সাথে মাওলানা ভাসানীসহ যাদের মতপার্থক্য হয়, তারা ভাসানীর নেতৃত্বে গঠন করেন আওয়ামী মুসলিম লীগ। সোহরাওয়ার্দী তার কলকাতার অপকর্মের কারণে সামনে আসতে পারছিলেন না। পেছন থেকে আওয়ামী মুসলিম লীগের কলকাঠি নাড়ার চেষ্টা করছিলেন এবং কয়েক বছরের মধ্যে মাওলানা ভাসানীকে ল্যাং মেরে তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি হন।
ইতিহাসের এই শানে নুজুল বর্ণনা করার কারণ হলো, আওয়ামী নেতাদের হাত ১৯৪৬ সাল থেকে হিন্দুদের রক্তে রঞ্জিত। ১৯৪৭ সাল থেকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে হিন্দু জনসংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পাওয়ার পেছনে যত না পাকিস্তান সরকার দায়ী ছিল, তার চেয়ে বেশি দায়ী ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগের লোকজন, যারা তাদের মূল সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন বা স্বার্থ আদায় না হওয়ার কারণে সংক্ষুব্ধ হয়ে দল ত্যাগ করেছিলেন।
এবার দেখা যাক, ডেমোগ্রাফিক পরিসংখ্যান কী বলে: ১৯৬১ সালে, অর্থ্যাৎ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ১৩ বছর পর ১৯৬১ সালে পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল ১৮.৫ শতাংশ। তখন থেকে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় পর্যন্ত হিন্দু জনসংখ্যা কমবেশি একই রকম ছিল। যুদ্ধের সময় শরণার্থী হিসেবে যেসব হিন্দু ভারতে চলে গিয়েছিলেন, তাদের অধিকাংশই স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন। বিপর্যয় আসে এর পর। আওয়ামী রাজ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে হিন্দু জনসংখ্যা নেমে আসে ১৩.৫ শতাংশে। ওই সময় দেশ ছিল ধর্মনিরপেক্ষ এবং তখন সকল ইসলামি ও মুসলিম দল ছিল নিষিদ্ধ। হিন্দুদের ওপর সামান্য নিগ্রহ হলেও এসব কাজ জঙ্গি, মৌলবাদী, জামায়াত-শিবিরের বলে নিজেদের অপরাধ অন্যের ওপর চাপানো আওয়ামী লীগের পুরোনো কৌশল।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে অপসারিত হওয়ার পর ১৯৮১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে হিন্দু জনসংখ্যা হ্রাস ছিল কম, তখন সংখ্যা ছিল ১২.১ শতাংশ। সামরিক শাসক এরশাদ ক্ষমতা নিয়ে ইসলামকে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ ঘোষণা করলে সঙ্গত কারণেই হিন্দুদের মধ্যে শঙ্কা বাড়ে এবং এরশাদের সেনাশাসনের নয় বছরে হিন্দুদের সংখ্যা কমে ১৯৯১ সালে দাঁড়ায় ১০.৫ শতাংশে। বলা বাহুল্য, আওয়ামী লীগ তাদের বোলচালে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ হলেও তারা সূক্ষ্মভাবে ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে বোঝাপড়া করেই চলে (যার প্রমাণ ২০০৬ সালে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সঙ্গে তাদের লিখিত চুক্তি। যে চুক্তিতে তারা অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে ক্ষমতায় গেলে কোরআন সুন্নাহ পরিপন্থী কোনো আইন প্রণয়ন করবে না বলে লিখিত ওয়াদা করেছিল। অতএব এরশাদের ‘ধর্মরাষ্ট্রে’ ধর্মনিরপেক্ষতার বাংলাদেশি শিখণ্ডি আওয়ামী লীগের কোনো আপত্তি ছিল না। তাদের প্রতারণা স্বয়ং আওয়ামী লীগের জন্য জান দিতে প্রস্তুত অনেক নেতাকর্মী বোঝেন কি বোঝেন না, আমার মতো ক্ষুদ্র মস্তিকের কারও বোধগম্য হবে না।
তারা ৭২ এর সংবিধান চালু করার দাবি করেন। কারণ ওতে আছে সাধের ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’। কিন্তু আওয়ামী লীগ ৭২ এর সংবিধানে ফিরে আসে না। দুর্গা পূজার সময় মণ্ডপে মণ্ডপে গিয়ে আওয়ামী ধর্মের অনুসারীরা শুধু বলেন- ‘ধর্ম  যার যার, উৎসব সবার।’ হিন্দু ভাইবোনেরাও এতে খুশি, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরাও খুশি। আমরা তো এসব বাকচাতুরির বহু আগে শৈশব থেকেই হিন্দুদের উৎসবে যেতে অভ্যস্ত। আওয়ামী লীগ মুখে এরশাদকে স্বৈরাচার বলে, কিন্তু এরশাদের ‘ধর্মরাষ্ট্রের সুফল পুরোপুরিই ভোগ করে।’ কারণ ‘ধর্মরাষ্ট্রের’ তকমাটা থাকলে এবং শেখ হাসিনা তবলিগ জামাতের আখেরি মোনাজাতে শামিল হয়ে কান্নার ভঙ্গিতে মুখ বাঁকিয়ে রাখলেও দাড়ি-টুপিওয়ালারা খুশি হন। মাশাআল্লাহ। খোদ আওয়ামী ঘরানার অর্থনীতিবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর আবুল বারাকাত তার এক গবেষণাপত্রে দেখিয়েছেন যে, বাংলাদেশে হিন্দুদের সম্পত্তির বেশির ভাগ দখল করেছে আওয়ামী লীগেরই লোকজন। ২০০০ সালে প্রকাশিত তার এই গবেষণাপত্রে দেখানো হয়েছে যে, হিন্দুদের বেহাত হওয়া জমিজমার ৪৪.২ শতাংশ দখল করেছে আওয়ামী লীগের দেশপ্রেমিকরা, ৩১.৭ শতাংশ ভোগদখল করছে বিএনপির লোকজন; ৫.৮ শতাংশ জাতীয় পার্টি, ৪.৮ শতাংশ জামায়াতে ইসলামীর লোকজন এবং বাদবাকি ১৩.৫ শতাংশ অন্যান্যরা।
পরস্ব হরণে আওয়ামী লীগ কখনো দ্বিধা করেনি বা লজ্জাবোধ করেনি। জাতির পিতার কন্যা হওয়ার দাবিতে অথবা ১৯৭৫ সালের আগস্টের বিপথগামী সেনাদের বিদ্রোহে তার পিতাসহ পরিবারের সকল সদস্য নিহত হওয়ার বিনিময় হিসেবে স্বয়ং শেখ হাসিনা যদি ১৯৯৬ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর বসবাসের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক বরাদ্দকৃত বর্তমান বাজারমূল্যে কয়েক হাজার কোটি টাকা অধিক মূল্যের ‘গণভবন’ মাত্র এক টাকায় নিজের নামে লিখে নেওয়াকে সঙ্গত মনে করেন, সেক্ষেত্রে তার অনুসারীরা অন্যের, বিশেষ করে হিন্দুদের সম্পত্তির ওপর নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠাকে অন্যায়, অযৌক্তিক বিবেচনা করবেন কেন? তারা দখল করবেন, মন্দির ভাঙবেন, ধর্ষণ করবেন এবং অন্যের ওপর দোষ চাপাবেন। আর দোষ চাপানোর সহজ শিকার তো আছেই - জঙ্গি, জামায়াত-শিবির!
হিন্দু সম্পত্তি দখলসংক্রান্ত আবুল বারাকাতের গবেষণাপত্র ২৪ বছর আগের। এর মাঝে বুড়িগঙ্গা নদীর নোংরা বিষাক্ত পানি গড়িয়ে বহুদূর পর্যন্ত চলে গেছে। হিন্দু সম্পত্তি দখলের চিত্রও পাল্টে গেছে। ২০০১-২০০৬Ñ এই ছয়টি সময় বাদ দিলে কদিন আগ পর্যন্ত ১৮টি বছর পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজত্ব ছিল হিন্দু-বান্ধব হিসেবে পরিচিত, খ্যাত ও সমাদৃত আওয়ামী লীগের। ২০০৯ এর পর তো আওয়ামী তাণ্ডবে জামায়াত বঙ্গোপসাগরের অথৈই লোনা পানিতে হাবুডুবু খেয়েছে। তারা দিশেহারা হয়ে কাটিয়েছে গত ১৬টি বছর।  হিন্দু সম্পত্তির যে শতাংশ আবুল বারাকাত জামায়াতের ভাগে দেখিয়েছেন, তর্কের খাতিরে ধরে নিই যে,  ওই জমি জামায়াতিদের হাতে ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক ‘সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা’ এবং ততধিক ঐতিহাসিক ‘বিচার বিভাগের অবাধ স্বাধীনতার’  ১৮ বছরে তারা তো তাদের নিজস্ব সবকিছু হারিয়ে পথে বসার অবস্থায় ছিলেন। অতএব শতভাগ ধরে নেওয়া যায়, তাদের ভাগেরটাও এখন আওয়ামী হাতে। বিএনপির ভাগে ফেলা ৩১.৭ শতাংশের বড় অংশও আওয়ামী উদরে ঢুকেছে। আবুল বারাকাতের উচিত নতুন করে গবেষণা করে তার আগের তথ্য-উপাত্ত সংশোধন করা।
আওয়ামী রাজত্বের সময় ২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর মানবাধিকার সংগঠন ‘আইন ও শালিস কেন্দ্র’ হিন্দুদের ওপর নিপীড়নের একটি চিত্র তুলে ধরেছে। তারা ২০১২ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত (পুরো শাসনামালই আওয়ামী লীগের) বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর ৩,৬৭৯টি আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। এ সময়ে ৫৫৯টি হিন্দু বাড়ি, হিন্দুদের ৪৪২টি দোকানে আগুন দেওয়া হয়েছে। ১,৬৭৮টি হিন্দু মন্দির আক্রমণ, অগ্নিসংযোগ এবং বহু মূর্তি ভাঙচুর করা হয়েছে। কেবল ২০১৪ সালেই নানা ঘটনায় ১১ জন হিন্দু নিহত, ৮৬২ জন আহত, ২ হিন্দু নারী ধর্ষিত হয়েছে। ২০১৬, ২০১৭ ও ২০২০ সালে কমপক্ষে ১০টি হিন্দু পরিবারকে তাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। ২০১৬ সালে ৭ জন হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছে।
আওয়ামী শাসনামলে কোনো দলের কার মাথায় কটি মাথা গজিয়েছিল যে, তারা ছাড়া আর কারও পক্ষে হিন্দু জমি, বাড়িঘর দখল করার সাহস করবে। হাজার হাজার মামলা আসামি হয়ে তারা কারাগারে আটকা ছিল অথবা ধরা পড়ার ভয়ে দৌড়ের ওপর ছিল। যা করার আওয়ামী লীগের লোকজনই একচ্ছত্রভাবে করেছে এবং বরাবর দোষ দিয়েছে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে।
লেখক : যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী প্রখ্যাত সাংবাদিক।
 
 

কমেন্ট বক্স