বাংলাদেশে এখন যেন রাজনীতির বাইরে কোন খবর নেই। এই রাজনীতির মূলে আছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন। নির্বাচন ২০২৪-এর প্রথম দিকে। তাহলে কী হবে। খেলা শুরু হয়ে গেছে এর মধ্যেই। এ খেলায় অংশ নিচ্ছে কেবল বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল নয়, বাইরের পরাশক্তিগুলোও। বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকা এখন বিদেশি কর্মকর্তা, কূটনীতিকদের চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। একদল ঢাকার অবস্থান ত্যাগ করতে না করতেই আরেক দল গিয়ে হাজির হচ্ছেন।
ঠিকানার গত ১২ জুলাই সংখ্যার প্রথম পৃষ্ঠাতে ১৪টি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি সংবাদই নির্বাচন কেন্দ্রিক। এবং সে নির্বাচন ঘিরে মানুষের মধ্যে কেবলই শঙ্কা, কেবলই উদ্বেগ। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে বাংলাদেশের মানুষের অভিজ্ঞতা, তাতে সেই পুরানো প্রবাদÑ ‘ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখে ডরায়’ মনে পড়ে যায়। যতই বলা হোক, সংবিধানিক বিধিব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সময় মতো জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচন করার সব ব্যবস্থা চূড়ান্ত করার কাজ সম্পন্ন করে চলেছে। কিন্তু বড় দুই দল এখন পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে তাদের যে মনোভাব ব্যক্ত করে চলেছে, তাতে ইসির নির্বাচন প্রস্তুতি সব ‘মাঠে মারা’ যায় কিনাÑ সেই শঙ্কা জনমনে বাসা বেঁধে আছে। যুক্তরাষ্ট্রের এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সফরের কারণে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি যে মনোভাব প্রকাশ করছে, সেটা তাদের আন্তরিক অভিব্যক্তি কিনাÑ তা নিয়ে মানুষের মনে যথেষ্ট শঙ্কা রয়ে গেছে।
দুই মহাদেশের দুই প্রতিনিধি দল দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবেÑ এমনটা কেউ ভেবে সাহস পাচ্ছে না। দুই দলেরই সভা-সমাবেশে যেভাবে মানুষের ঢল নামছে, তাতে দুই দলই যেভাবে বিজয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছে, তাতে কোন পক্ষই যে বিজয় ব্যতীত অন্য কোন ফল মেনে নেবে, এমনটা ভাবা ঠিক হবে না। কেননা, আন্দোলনের বর্তমান পর্যায়ে উভয়পক্ষই এক দফায় এসে দাঁড়িয়েছে। সকলেরই এক দাবি, এক দফা। কেউ স্লোগান তুলছে, ‘শেখ হাসিনাকে রেখে নির্বাচন নয়’। কারো দাবিÑ ‘শেখ হাসিনা সরকারের বাইরে অন্য কোন ফর্মুলায় নির্বাচন হওয়ার কোন সুযোগই নেই’। যদিও রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। তবে এবারও কেন যেনো সবার মনেই একটা আতঙ্ক, শেষ মুহূর্তে সব পক্ষেরই এমন ‘ধনুক ভাঙ্গা পণ’ থেকে কোন দুর্ঘটনা ঘটেও যেতে পারে।
ঠিকানার ১২ জুলাই সংখ্যার প্রথম পৃষ্ঠায় একটি নিউজ রয়েছে, যার শিরোনাম পড়লেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। শিরোনামটি- ‘মাঠে শক্তির মহড়া শুরু হয়ে গেছে’। এতদিন বাংলাদেশের মানুষ খেলা হওয়ার কথা শুনে আসছিল। এ কি সেই খেলা। সেই খেলা যদি শুরু হয়ে থাকে, তাহলে পরিণতি কী হবে সেই খেলার? সেই খেলায় কি গোল হবে? সেই গোল কি কেউ মেনে নেবে? যদি মেনে না নেয়, তবে সেই দলের সমর্থকরা সুবোধ বালকের মতো সেই গোল মেনে নেবে? মেনে যদি না নেয়, তবে আবার যে ২০১৪ এবং ২০১৮’র মতো আগুন জ্বলে উঠবে না, সে গ্যারান্টি কি ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা আমেরিকা, কিংবা চীন, ভারত দিতে পারবে?
যে গুমোট অবস্থা এখনই শুরু হয়ে গেছে, তা কি কেটে যাবে? জনগণের প্রার্থণা, যেনো তাই হয়। বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে আর যেনো কালো মেঘ দেখা না দেয়। মানুষ যেনো সত্যি সত্যি স্বস্তি পায়। আশঙ্কার কালো মেঘ কেটে নিয়ে স্বস্তির রোদে ঝলমল করে উঠুক রাজনীতির আকাশ।