Thikana News
০৪ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪

শৈশবের কথা

শৈশবের কথা
বুঝলে রিবা আমিও একসময় ছোট ছিলাম গ্রামে।
তুমিও তখন মাঝে মাঝে এই গ্রামে আসতে
ঘোড়ার গাড়িতে করে। আমি তখন তামাক খেতে
দাঁড়িয়ে অথবা খালের পাড়ে দাঁড়িয়ে তোমাকে
দেখতে পেতাম। যেখানে এক পাশে পুকুরপাড়ে
তালগাছ আর অপর পাশে ঘরবাড়ি। আরেক 
দিকে আমগাছ রাতে তার ফাঁক দিয়ে দেখা যায়
চাঁদ। খালের ওপারে আঁকাবাঁকা একটা পথ চলে
গেছে কোথায় হুরিজুরি বিলের দিকে। পাশে
মাচায় ঝুলে লাউগাছ, শিমগাছ, লুকোচুরি খেলে
চড়ুই পাখি। বর্ষায় পুঁটি মাছ লাফায় বাতাসি মাছ 
ধরা পড়ে খেতা জালে। আমার ধারণা রিবা তুমি
নিশ্চয়ই খেতা জাল চেনো না। খালটি চলে গেছে 
হুরিজুরি বিলে। সেখানে ডুবন্ত নৌকার গলুইয়ে
বসে থাকে বাল্ড ঈগল মাছ ধরার আশায়। কখনো 
রুই মাছ ধরে পায়ের নখে ঝুলন্ত মাছ নিয়ে
শিমুলের ডালে প্রকাণ্ড বাসায় এসে বসে। এই
গ্রামে আমি থাকতাম, খেলতাম চৈত্রের দুপুরে
আষাঢ়ের ঢলে বৃষ্টিতে জলে কাদায় আমি
খেলতাম। তুমিও আসতে রিবা আবার চলে যেতে 
শহরে। তখন এখানে আষাঢ়ের ঢলে কই মাছ
লাফিয়ে লাফিয়ে উজানে চলে। শরতের সাদা
জ্যোৎস্নায় পৌষের সকালে ওষমাখা দূর্বাঘাসে
পায়ে পায়ে হেঁটে যায় গরু। কুমড়াগাছের ডগায়
হলুদ ফুল করমচাগাছের পাশে দাঁড়িয়ে দেখতামÑ
হঠাৎ তুমি এলে ঘোড়ার গাড়িতে ধুলা উড়িয়ে
আবার চলেও গেলে।
আবার হেমন্তের শেষে আঁকাবাঁকা নদীতে বাঁশের
সাঁকোয়ে দাঁড়িয়ে দেখতাম মাছরাঙা পাখি
আকাশে ওড়ে এক জায়গায় স্থির, পাখা চলে কত
দ্রুত তারপর ঝাঁপ দিল জলে, তীক্ষè ঠোঁটে ঢুকে
যায় কাজুলি মাছের হৃৎপিণ্ড তুমি কি তা দেখতে
পেয়েছিলে? তুমি কখনো কিছুই দেখোনি, দেখোনি 
শিশিরভেজা ঘাসে পা ফেললে কেমন লাগে? তুমি
শিশির দেখোনি, পুকুরে কচুরিপানার ফুল দেখোনি।
তুমি ধানের শীষে, দেখোনি বর্ষায়, ঘাসফড়িং
দেখোনি শাপলা ফুল ও শাপলার পাতা পানিতে
ভাসে, চিল উড়ে যায়, ডুব দেয় বালুহাঁস, বিলের
জলে কেমনে মাছ লাফায়? একটি উড়ন্ত পাখির
পেছনে ছুটে ছুটে সকাল থেকে দুপুর হয়ে যায়।
ধানখেতে পাটখেতে কৃষকেরা কেমন গান গায়?
ঝাঁক ঝাঁক সাদা বক আর সোনালি চিল উড়ে।
সে তো কত দিন আগের কথা কিন্তু তুমি তার কিছুই দেখোনি।
সেই আমি একদিন তোমার মতো গায়ের মেঠো পথ
ছেড়ে, ঝিঙে ফুল ঝুপঝাড়, বাঁশঝাড় পাখির
কিচিরমিচির ছেড়ে, তালগাছের আগায় বাউই
পাখির বাসা বাতাসে উড়ে, বকেরা ঝিলের পাড়ে
বসে থাকে ডানকানা মাছের আশায়Ñওই সব
রঙিন স্বপ্নের দিন ছেড়ে আমি একদিন শহরে 
এলাম। তখন রিবা তুমি একটি দেয়ালের ওপাশে 
চিনতাম না হাত বাড়ালে তোমাকে ছোঁয়া যায়।
তখনো আমি স্বপ্নের ঘুরে দেখি কলমাইর পারে
ধবধবে সাদা কাশফুল যেন সাদা সাদা মেঘ তার
ভেতরে বাউই পাখির ঝাঁক, নদীতে ঝাকি জাল,
ডোল্লা জাল, ধর্মজালে মাছ। ওসব বুকের ভেতরে
বেদনা ও সুখ জমা করে আমি শহরে, পায়ের নিচে
কংক্রিট রাস্তায় রিকশা গাড়ি, কনককে দেখতে 
পাই বিউটি হোটেলে। আমিও তখন দেখতে ভুলে
যাই। ভুলে যাই বংশীর বাঁকে বড় ডোল্লা জালে
ধরা পড়ে বড় বড় বোয়াল মাছ। টেটাই গেঁথে ধরা 
হয় কেকলা মাছ। সকালে গাভি ডাকে হাম্বা,
পেটকা গোয়ালা এসে দুধ পানাই বালতিতে।
খালের জলে পাটপচা গন্ধ। বাঁশের আড়ে বাতাসে 
দুলে সিলভারের মতো সাদা সাদা পাটের আঁশ।
মনে পড়ে শীতের সময় খেজুরগাছে রসের দোনা।
মা খেজুরের রস জাল দিয়ে তৈরি করে মিষ্টি গুড়
সেই মিষ্টি গন্ধে পাড়া ভরপুর। চারিদিকে সর্ষের
হলুদ ফুল দিগন্তজুড়ে কেবল হলুদ আর হলুদ।
তুমি জানো রিবা? এখন আর সেই ধানের ক্ষেত
সর্ষের ক্ষেত নেই। ইটের ভাটায় শেষ হয়ে গেছে
সব। কয়লার বিষে আম জাম নারিকেল সবকিছু 
ঝরে যায় অকালে। যেই হুরিজুরি বিল, কল মাই 
নদী হিমালয়ের কাদায় মৃত। এখন সেখানে প্রচুর
ঘরবাড়ি, রাস্তায় সিএনজি চলে। একসময়
যেখানে কলাগাছের ভেলা অথবা ডিঙিনৌকা
চলত এখন চলে রিকশা, ভ্যানগাড়ি। আর যারা
এসব চালায়, তারা কখনো দেখেনি পালকি,
ঘোড়ার গাড়ি অথবা কাঁদায় আটকে যাওয়া,
জয়নাল আবেদীনের আঁকা গাড়ির চাকা।
 

কমেন্ট বক্স