সম্প্রতি এমন এক সেন্সর প্রযুক্তির স্মার্ট চশমা বানানোর দাবি করেছেন গবেষকরা, যার মাধ্যমে চোখের পলক শনাক্ত করা যাবে। আর একে স্মার্ট চশমার জগতে যুগান্তকারী উদ্ভাবন হিসেবে দেখছেন তারা।
এ নতুন প্রযুক্তিটি অনেকটা এমন যে, চশমাটি আপনার ত্বককে স্পর্শ না করেও কখন আপনি চোখের পলক ফেলতে পারেন তা বুঝতে পারে। গবেষকরা বলছেন, তাদের বানানো কোমল ও নমনীয় পর্দা বা ফিল্ম ঠিক এভাবেই কাজটি করতে পারে।
খুব কাছাকাছি কোনো বস্তুর উপস্থিতি শনাক্ত করার জন্য ডিজাইন করা এই নতুন প্রযুক্তিটি বিভিন্ন স্মার্ট ডিভাইসে কীভাবে কাজ করে সে বিষয়ে বিপ্লব ঘটাতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।
প্রচলিতভাবে নন-কন্টাক্ট বিভিন্ন সেন্সর কোনো বস্তুকে স্পর্শ না করেই তা পরিমাপ বা শনাক্ত করতে পারে। যেমন– ইনফ্রারেড থার্মোমিটার ও গাড়ির সেন্সর, যা গাড়ির কাছাকাছি থাকা বিভিন্ন বাধার বিষয়ে চালকদের সতর্ক করে।
সাধারণ ধরনের নন-কন্টাক্ট সেন্সর খুব কাছের ও ছোট নড়াচড়া শনাক্ত করতে ‘স্ট্যাটিক’ বা ‘স্থির’ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে।
তবে, এইসব সেন্সরের নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন– এগুলো শুধু নির্দিষ্ট বস্তু শনাক্ত করে, দ্রুত এদের চার্জ শেষ হয়ে যায় ও এগুলো তৈরি করা কঠিন।
শানলিন কিউ, ইয়িমিং ওয়াং ও ফুঝেন জুয়ানসহ গবেষকদের একটি দল এইসব সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ শুরু করেন। তারা একটি নমনীয় সেন্সর তৈরি করেছেন, যেখানে স্থির বিদ্যুৎকে আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায়।
গবেষকদের বানানো এ সেন্সরটি তিনটি স্তর দিয়ে তৈরি। উপরের স্তরটি ফ্লোরিনেটেড ইথিলিন প্রোপিলিন (এফইপি)। এটি এক ধরনের প্লাস্টিক, যা বৈদ্যুতিক চার্জ ধারণ করে; মাঝের স্তরটি একটি বৈদ্যুতিক পরিবাহী ফিল্ম এবং নিচের স্তরটি একটি নমনীয় প্লাস্টিকের বেইস।
এফইপি মূলত একটি ‘ইলেকট্রেট’ হিসাবে পরিচিত। এটি এমন একটি উপাদান, যা একটি ‘ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক’ ক্ষেত্র তৈরি করে, যেমন চুম্বক দিয়ে একটি চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে থাকে।
গবেষকরা এফইপি-ভিত্তিক সেন্সর চার্জ করে এটি ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করেন। কোনো বস্তু সেন্সরের কাছাকাছি যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এদের মধ্যে থাকা স্থির চার্জ বৈদ্যুতিক প্রবাহকে প্রভাবিত করে, এর ফলে কোনো বস্তুর সংস্পর্শে না এসেই সেন্সরটি বস্তুকে শনাক্ত করতে পারে।
এই স্বচ্ছ নমনীয় সেন্সরটি দুই থেকে ২০ মিলিমিটার বা এক ইঞ্চির সামান্য কম দূরত্ব থেকে বিভিন্ন উপকরণ যেমন কাঁচ, রাবার, অ্যালুমিনিয়াম ও কাগজ দিয়ে তৈরি বস্তু শনাক্ত করতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।
চমকপ্রদভাবে, এক চার্জে তিন হাজারবারের মতো কেনো বস্তুর কাছাকাছি আসা-যাওয়া শনাক্ত করা পর্যন্ত নিজের চার্জ বজায় রাখতে পেরেছে সেন্সরটি। এটি প্রায় দুই ঘন্টা স্থায়ী হয়েছে।
এ নতুন ফিল্ম প্রদর্শনের জন্য গবেষকরা এটিকে একটি চশমার লেন্সের ভেতরে জুড়ে দিয়েছেন। যখন কেউ এই চশমা পরেন তখন সেন্সর তাদের চোখের পাপড়ির নড়াচড়া শনাক্ত করার মাধ্যমে চোখের পলক ফেলার বিষয়টি শনাক্ত করতে পারে।
যারা কথা বলতে বা ইশারা ভাষা ব্যবহার করতে পারেন না এমন বিভিন্ন নন-কন্টাক্ট সেন্সর ব্যবহার করা লোকেদের সাহায্য করতে ভবিষ্যতে এই উদ্ভাবনী প্রযুক্তিটি ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে।
যুগান্তকারী সেন্সর প্রযুক্তির আমরা বুঝতে পারি কীভাবে পদার্থ বিজ্ঞানের অগ্রগতি আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে উন্নত করে এমন ব্যবহারিক প্রয়োগের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
ঠিকানা/এসআর