Thikana News
০৪ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪

ডিফিকাল্ট থেকে ক্রিটিক্যালে বিএনপি

বাংলাদেশে চার শক্তির প্রক্সি * নিশানার হেরফের
ডিফিকাল্ট থেকে ক্রিটিক্যালে বিএনপি বাংলাদেশে চার শক্তির প্রক্সি * নিশানার হেরফের
আর ইনিয়ে-বিনিয়ে নয়, যদি-কিন্তু দিয়েও নয়, একেবারে সোজাসাপ্টা ভারতবিরোধী অবস্থান নিয়েছে টানা ১৬-১৭ বছর দুর্গতিতে থাকা বিএনপি। দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের একটি বড় অংশের মূল্যায়ন, তাদেরকে এ ডিফিকাল্ট অবস্থায় ফেলার একান্ত হোতা ভারত। ফ্রন্টে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বা সরকার শুধু দিল্লির ছক বাস্তবায়ন করছে। আর টানা এবং অবিরাম নাকানিচুবানি খাচ্ছে বিএনপি। আগে বিষয়টি হিডেনে থাকলেও এখন তা একদম খোলাসা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ তথ্য জানান দিয়েছেন নিজ থেকেই। অনেকটা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়েই বলেছেন, এবারও ভারত পাশে না থাকলে নির্বাচন তোলা যেত না। অঘটন ঘটিয়ে দিত বড় বড় কয়েকটি দেশ।
এমন অবস্থায় বিএনপি আর অপেক্ষা করতে চাইছে না। এর আগে কয়েক দফায় বিএনপি চেষ্টা করেছে ভারত সরকার ও ক্ষমতাসীন বিজেপির সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন করতে। বোঝানোর চেষ্টা করেছে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ আর ভারতের কংগ্রেস সমান্তরাল দল। আদর্শিক ও নৈতিকভাবে বিজেপি ও বিএনপি অনেকটা সমমনা। বিশেষ করে, ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ প্রশ্নে। এসব নিয়ে দেনদরবারে বিজেপির একটি মহল থেকে বিএনপি যৎসামান্য সবুজ বার্তাও পেয়েছে। কিন্তু শেষতক ডিল তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গেই করেছে। আওয়ামী লীগকেই নির্ভরশীল মনে করেছে। আবার নির্ভরশীল মনে করেই ক্ষান্ত থাকেনি। বিএনপিকে কোণঠাসা করতে করতে একটা ডিফিকাল্ট পজিশনে নিয়ে গেছে। এ থেকে রক্ষার মিশনে এখন সিরিয়াস অবস্থানে বিএনপি। ডিফিকাল্টি কাটাতে গিয়ে দলটিকে নিতে হয়েছে ক্রিটিকাল অভিযাত্রা। দেশের অ্যান্টি-ইন্ডিয়ান সেন্টিমেন্টকে ক্যাশ করার পুরোনো হাই-এমবিশন তাদের। একসময় এটিই ছিল বিএনপির অন্যতম আইডেন্টিটি। যার মধ্যে ভাগ বসিয়ে দিয়েছে জামায়াতসহ ইসলামপন্থী কয়েকটি দল। এর বাইরে বাম ও মধ্যবাম কয়েকটি দলও ভারতবিরোধী অবস্থান নিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিয়ে যাচ্ছে। এসবের যাবতীয় নেতৃত্ব এখন এক হাতে নিতে চায় বিএনপি।
নির্বাচনের পর থেকেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ-বিরোধী কয়েকটি দলের তৎপরতায় শুরু হওয়া ‘ইন্ডিয়া আউট’ বা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ক্যাম্পেইনে বিএনপি এখন আর সংহতি নয়, নিজেদের একাত্ম করে নিয়েছে। বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, তাদের ভারতবিরোধী সাম্প্রতিক তৎপরতা গতানুগতিক ‘ট্র্যাডিশনাল ভারতবিরোধী রাজনীতি’ নয়। সরকারি মহলও বিএনপির এ মনোভাব জানে। এতে তেলেবেগুনে বিরক্ত তারা। সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দেওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘বাজারকে অস্থিতিশীল করে পণ্যের দাম বাড়ানো’। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বার্তা আরও বিধ্বংসী। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, সম্প্রতি বড় বড় কথা বলা কয়েকজন বিএনপি নেতা সরকারের সঙ্গে ‘লাইন’ দিয়েছিলেন। বেশি বাড়াবাড়ি করলে তাদের হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তিনি।
বিএনপি ও সমমনাদের ভারতীয় পণ্য বর্জন বা ভারত-বিরোধিতার জবাবে আওয়ামী লীগ নেতা ও মন্ত্রীদের কাউন্টার দিয়ে ভারতের ভূমিকার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে হচ্ছে। একে নিজেদের রাজনীতির জন্য লাভজনক মনে করছে বিএনপি। দলটির রাজনীতিতে ভারত-বিরোধিতার একটি ইতিহাস প্রেক্ষাপট রয়েছে। বিগত ১০-১৫ বছরে দলটির মধ্যে একটি অংশ বিভিন্ন সময়ে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরির চেষ্টাও করেছে। আবার কখনো দলের মধ্যেই ভারতবিরোধী গ্রুপ শক্তিশালী হয়ে সে চেষ্টাকে ব্যাহতও করেছে। এক গ্রুপের তাগিদে ২০১৩ সালে ভারতের তখনকার রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির ঢাকা সফরকালে সে সময়কার বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ বাতিল হয়েছে। পরে আরেক গ্রুপের পরামর্শ ও ব্যাখ্যাক্রমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় হোটেলে গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন খালেদা জিয়া। এসবের ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিএনপির বর্জন সত্ত্বেও এবং সে নির্বাচনের আগে ভারতীয় কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপ দেখেও বিএনপি তা হজম করেছে। এসবের জের বা পরিণাম এবং সমীকরণ মিলিয়ে বিএনপি এখন আর পেছনে ফিরে তাকাতে চায় না। চায় ভূমিকা স্পষ্ট করে সামনে বাড়তে।
এ চলতি পথেই ‘ইন্ডিয়া আউট’ বা ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলন। ভারতবিরোধী সেন্টিমেন্ট উসকে দিয়ে আওয়ামী লীগ ও সরকারকে কোণঠাসা করার অ্যাজেন্ডার পেছনে বিএনপির দেশি-বিদেশি হিতাকাক্সক্ষীদের বেশ সম্পৃক্ততার প্রাথমিক তথ্য সম্পর্কে সরকার অত্যন্ত ওয়াকিবহাল। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যেই ‘বয়কট ইন্ডিয়ান প্রোডাক্টস’ নামে ফেসবুক গ্রুপ খুলে ক্যাম্পেইন শুরু করেছে এই প্রচারণার সমর্থকদের একটি অংশ। সেখানে নানা পোস্টে মতামত দিচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। এর সমান্তরালে বাংলাদেশ চার শক্তির রিহার্সালের চারণভূমিতে পড়ে গেছে। আঞ্চলিক ও বৈশি^ক পরিস্থিতি বিবেচনায় এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট পর্যায়ে দিন দিন কেবল সামনে আসছে। মিয়ানমারে পশ্চিমা বিশ^ সমর্থিত ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট বা জাতীয় জোট সরকারের যোদ্ধাদের হাতে চীন-রাশিয়া-ভারত সমর্থিত সামরিক জান্তার পরাজয়ের স্পষ্টতার সঙ্গে প্রক্সিযুদ্ধের ক্ষেত্র সরে আসছে বাংলাদেশের দিকে।
বাংলাদেশের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন, ক্ষমতার অপরিবর্তনীয় জটে ভেতরে-বাইরে চতুর্মুখী এই প্রক্সি ওয়ারের তাপ-উত্তাপ বেশ স্পষ্ট। দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের দাবি ছুড়ে ফেলে দেওয়ার সরলীকরণও দৃষ্টিকটুভাবে লক্ষণীয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে শুধু মিয়ানমার থেকে ছোড়া গোলা এসেই পড়ছে না; বরং আরাকান আর্মি ও চিন ন্যাশনাল আর্মির হাতে মার খেয়ে পরাজিত বর্ডার গার্ড পুলিশ, এমনকি সেনা সদস্যরাও পালিয়ে আসছে জীবন বাঁচানোর জন্য। ২০২২ সালের ২১ ডিসেম্বর মার্কিন আইনে পরিণত বার্মা অ্যাক্টের স্তরগুলো ক্রমেই বাস্তবায়ন হয়ে চলছে। এ ক্ষেত্রে এ-যাবৎ বাংলাদেশের পক্ষে কার্যকর কোনো নীতিমালা এখনো অস্পষ্ট। সীমান্তের পাশে চারটি শক্তির প্রক্সি ওয়ারের ঝাঁজ পড়ছে। ভারত-চীন-রাশিয়া ত্রয়ী শক্তির বিপরীতে মার্কিন সুপার পাওয়ারের ছায়ায় মিয়ানমারে ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের অধীন আরাকান আর্মি রাখাইন দখল করে নিয়েছে। চীনের সমুদ্রবন্দর যেমন হাতছাড়া হয়েছে, তেমনি ভারতের প্রকল্পও ঝুঁকির মুখে পড়েছে। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে একটা জট পাকানো পরিস্থিতিতে পড়ে গেছে। শ্যাম রাখা না কূল রাখার এ চক্করে সবাইকেই রাখতে চাচ্ছে বাংলাদেশ। আবার ভারত-চীন-রাশিয়া অক্ষের কমন লক্ষ্যবস্তু বাংলাদেশ ভূখণ্ড। তিন শক্তিরই চাওয়া বাংলাদেশের ঘাড়ে বন্দুক রেখে তাদের কৌশলগত স্বার্থ হাসিল করা। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া বাংলাদেশ যেন তাদের বার্মা অ্যাক্ট বাস্তবায়নে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। এই ঘোরের মাঝেই আগামীর নিশানা। 

কমেন্ট বক্স