Thikana News
০৪ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪
শেয়ারবাজারে পাগলা ঘণ্টা * ব্যাংকপাড়ায় জোড়াতালি প্র

প্রবাসী আয়ে থাবার ফন্দি

প্রবাসী আয়ে থাবার ফন্দি
বিদেশি বা নামকাওয়াস্তের কোনো প্রতিষ্ঠান নয়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খাদ্য নিরাপত্তা-সংক্রান্ত জরিপই বলছে, কেবল খাদ্য কিনতেই ঋণ করে দেশের চার কোটি মানুষ। মানুষের পাঁচ মৌলিক চাহিদার মধ্যে ১ নম্বরে খাদ্য। নিয়মিত রোজগার দিয়ে এই চাহিদা মেটাতে পারছেন না অনেক মানুষ। খাদ্যঘাটতি পূরণে ঋণ করতে হয় দেশের ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ পরিবারকে। বছরে গড়ে ৪৯ হাজার টাকা ঋণ করে থাকে এসব  
পরিবার। আত্মীয়, মহাজন এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে থাকে পরিবারগুলো। খাদ্য নিরাপত্তা পরিসংখ্যান-২০২৩ নামে প্রতিবেদনটি গত ১৫ মার্চ শুক্রবার বিবিএসের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। দেশে খাদ্য নিরাপত্তা-সংক্রান্ত এ ধরনের জরিপ এটিই প্রথম। রিপোর্টটি বেশ ইন্টারেস্টিংও। বিবিএসের হিসাবে ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছেন। আর চরম নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছেন ১৭ লাখ মানুষ। প্রতিবেদনে তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বলতে খাদ্য গ্রহণ কমানোর উচ্চ আশঙ্কাকে বোঝানো হয়েছে। এটি ক্ষুধাসহ পুষ্টিহীনতার মতো গুরুতর অবস্থায় রূপ নিতে পারে। অন্যদিকে মাঝারি খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বলতে বোঝানো হয়েছে নিয়মিত স্বাস্থ্যকর, সুষম খাবার গ্রহণের অক্ষমতাকে। খাদ্যপণ্য বাবদ পরিবারের মাসিক ব্যয়ের হিসাবে দেখা যায়, জাতীয় পর্যায়ে খাদ্যসামগ্রীর পেছনে পরিবারপ্রতি মাসে গড় ব্যয় ১২ হাজার ৫৩ টাকা। গ্রামে এটি ১১ হাজার ৭১৮ টাকা, শহরে ১১ হাজার ৮৯০ টাকা। সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয় সিটি করপোরেশন এলাকায়Ñ১৪ হাজার ১২৫ টাকা। জরিপে প্রধান খাদ্যপণ্য চাল ও মাছ। এতে দেখা যায়, খাদ্যপণ্যে গ্রামের মানুষের যে খরচ হয়, তার ২৪ শতাংশই যায় চাল কিনতে।
রাষ্ট্রীয় আরেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের গোপন রিপোর্টও উদ্বেগজনক। তাদের রিপোর্ট কেবল ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে। দেশের ৫৪টি ব্যাংকের অবস্থা বিশ্লেষণ করে ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ মোট ৩৮টি ব্যাংককে দুর্বল ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ব্যাংক এখন দুর্বল। ‘রেড জোনে’র ব্যাংকগুলো সবচেয়ে খারাপ (পুওর) এবং ইয়েলো জোনের ব্যাংকগুলো দুর্বল (উইক) অবস্থায় রয়েছে। আর ‘গ্রিন জোনে’র ব্যাংকগুলো ভালো মানের (গুড)। ‘ইয়েলো জোনে’র ব্যাংকগুলো মধ্যবর্তী অবস্থায় রয়েছে। ৫৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১২টির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক, যার ৯টি ইতিমধ্যে রেড জোনে চলে গেছে। ইয়েলো জোনে আছে ২৯টি ব্যাংক, এর মধ্যে ৩টি ব্যাংক রেড জোনের খুব কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে। গ্রিন জোনে আছে মাত্র ১৬টি ব্যাংক। এর মধ্যে ৮টিই বিদেশি ব্যাংক। অর্থাৎ গ্রিন জোনে দেশীয় ব্যাংকের সংখ্যা মাত্র ৮। রিপোর্টটি তৈরি করা হয়েছে ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বিগত ছয়টি অর্ধবার্ষিক সময়ে ৫৪টি ব্যাংকের তথ্যের ভিত্তিতেই। দেশে সবল ব্যাংকের সঙ্গে যখন দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার আলোচনা জোরালো হচ্ছে, তখনই সামনে এল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গোপন প্রতিবেদনটি। তার ওপর দেশীয় ব্যাংকিং সেক্টরের এ অবস্থার মাঝে বিদেশি ঋণে কাহিল সরকার। বিদেশি ঋণ দুই বছরে বেড়ে দ্বিগুণ হওয়ার চোখ রাঙাচ্ছে। বিদেশি ঋণের আসল ও সুদ পরিশোধে ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারের ব্যয় হয়েছে ২৬ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রাক্কলন হলো, আগামী অর্থবছরে (২০২৪-২৫) এ বাবদ ব্যয় দাঁড়াবে ৫৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে আসল ৩৬ হাজার ৫০০ কোটি এবং সুদ ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মানে দুই বছরের মাথায় বিদেশি ঋণ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হবে। সরকারি খাতের বিদেশি ঋণের মধ্যে সরকারের নিজস্ব, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও সরকারি সংস্থার ঋণ রয়েছে। সরকারি সংস্থার ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭০৫ কোটি ডলারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি হারে সুদ ও কঠিন শর্তে নেওয়া এসব ঋণ সরকারি সংস্থাগুলোর দেওয়া পণ্য ও সেবার মূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। চাপে পড়ছে মানুষ। কিন্তু বিত্তবানদের সমস্যা হচ্ছে না। ঋণখেলাপি হওয়াও তাদের জন্য একধরনের স্মার্টনেস। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক প্রচলিত পদ্ধতি অনুসরণ করে তাদের ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। এ তালিকায় আলোচিত ঋণ জালিয়াতির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানগুলোও পড়তে পারে। কিন্তু সেই পথে যাওয়ার নজির নেই। বরং নজির আছে তাদের নামে-বেনামে আরও ঋণ নেওয়ার সুযোগ।
ব্যাংকের পরিচালক তথা মালিকপক্ষের জন্য এ সুযোগ আরও অবারিত। ব্যাংকের নাম পাল্টে ফেলার হিম্মত পর্যন্ত তারা রাখেন। ফার্মাস ব্যাংককে রাতারাতি পদ্মা ব্যাংক করতে তাদের কোনো সমস্যা হয়নি। লোকসানে পড়া সেই পদ্মা ব্যাংক এখন একীভূত হয়ে গেছে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে। একেও বলা হচ্ছে ঐতিহাসিক ঘটনা। সামনে এ ধরনের আরও ঐতিহাসিক ঘটনার ঘনঘটা কড়া নাড়ছে। এরই মধ্যে পাগলা ঘণ্টা বাজছে শেয়ারবাজারে। সেখানে একদিকে তারল্য সংকট, আরেকদিকে গুজবে বড় দরপতন। সূচক কমে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে এসে ঠেকেছে। জানুয়ারিতে ‘ফ্লোর প্রাইস’ প্রত্যাহারের পর বাজারে সূচক ও লেনদেন দুই-ই বাড়তে থাকে। কিন্তু এ সময়ে ভালো কোম্পানির চেয়ে মন্দ কোম্পানির শেয়ারদরই বেশি বেড়েছে। এমনকি কারসাজি করে বন্ধ কোম্পানির শেয়ারদরও বাড়ানো হয়েছে। এখন এসব কোম্পানির শেয়ারের দরপতন হচ্ছে। এ ছাড়া বাজারে তারল্যসংকট রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নানা গুজব। বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে গুজব ছড়িয়ে একটি চক্র বাজারকে চাঙে তুলে দিতে আর বাকি নেই। এখন পর্যন্ত সরকারের ভরসা করার জায়গা কেবল রেমিট্যান্সে। এ কারণে সেক্টরটিকে প্রণোদনা দিয়ে হলেও চাঙা রাখতে চায় সরকার। দেশে রিজার্ভ সংকটের এই সময়ে রেমিট্যান্স আনতে সরকারের নানামুখী উদ্যোগের অংশ হিসেবে বর্তমানে রেমিট্যান্সের ওপর পুরোপুরি কর অব্যাহতি রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের ওপর ২.৫৮ শতাংশ নগদ প্রণোদনাও দেওয়া হচ্ছে। সেখানেও এখন বিপত্তি। সরকারকে প্রবাসী আয়ের ওপর দেওয়া সুবিধা প্রত্যাহারের কানপড়া দেওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকেও এ-সংক্রান্ত কিছু পরামর্শ আসছে।
সরকারের বিভিন্ন ধরনের বন্ড, এমনকি শেয়ারবাজার থেকে আয়ের ওপর দেওয়া করছাড়ও বাতিল করার পক্ষে আইএমএফ। গত বছরের শুরুতে বাংলাদেশকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদনকালে সংস্থাটি ৩০টির মতো শর্ত পরিপালনের শর্ত দেয়, যার মধ্যে কর ব্যয় যৌক্তিক করার কথাও বলা হয়েছে। এ লক্ষ্যে এনবিআরও কর ব্যয় কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে, যার অংশ হিসেবে গত বছরই কিছু ভ্যাট ও কর সুবিধা কমানো হলেও রেমিট্যান্স এখনো অক্ষত আছে। সঙ্গে প্রণোদনাও। বাকিটা অপেক্ষার বিষয়।
 

কমেন্ট বক্স