Thikana News
০৭ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা রবিবার, ০৭ জুলাই ২০২৪

বিএনপির আন্দোলনের সাফল্য-ব্যর্থতা

বিএনপির আন্দোলনের সাফল্য-ব্যর্থতা
ঠিকানার গত ২৮ জুন সংখ্যার প্রথম পৃষ্ঠায় উপরে ও নিচে বিএনপিকে নিয়ে দুটি সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে। উপরের সংবাদটি বিএনপির জন্য হতাশাজনক হলেও নিচের সংবাদটি উৎসাহব্যঞ্জক। ‘ফাঁদে আটকা পড়ে গেছে বিএনপি’-এটা উপরের খবর। নিচে রয়েছে ‘ভোটের অধিকার নিশ্চিতে আন্দোলনে নামছে লাখ লাখ তরুণ’-এই শিরোনামের সংবাদটি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। দলটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে। এই ধনুকভাঙা পণ করলেও তাদের আন্দোলনে জনগণের পক্ষ থেকে তেমন সাড়া পাচ্ছিল না বিএনপি। তবে সাম্প্রতিককালে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততাও বাড়ছে। এতে আশার আলো দেখতে পাচ্ছে ক্ষমতাপ্রত্যাশী বিএনপি। এ কথা রাজনীতি বিশ্লেষকেরা খুব ভালো করেই জানেন, আন্দোলন অনেকটা জোয়ার-ভাটার মতো। তবে সরকারবিরোধী কোনো দল যেকোনো দাবি জানানো মাত্রই তাদের আন্দোলনের হালে পানি পায় না। এ জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। অনেক জীবনহানি-রক্তপাত, অনেক ক্ষয়-ক্ষতি, ধ্বংস সাধনের পর তবেই একটা আন্দোলন চূড়ান্ত পরিণতি পায়। অনেক সময় আন্দোলন সফল হয়, আবার অনেক সময়েই আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যায়।
‘ফাঁদে আটকা পড়ে গেছে বিএনপি’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরটির সারসংক্ষেপ হলো : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পতন চায় বিএনপি। তারা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং তার অধীনে নির্বাচন চায়। বরাবর তারা এ দাবি করে আসছে। কিন্তু এই সরকারের গঠনপদ্ধতি ও কাঠামো কী হবে, তা বলেনি। কিন্তু ক্ষমতাসীন সরকার ও দল কোনো অবস্থায়ই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় ফিরে না যাওয়ার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে আসছে। তাদের পক্ষে সর্বোচ্চ আদালতের রায় রয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে উত্তরহীন প্রশ্নÑএ ধরনের চরম বৈরী, বিপরীতমুখী অবস্থানে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে? সরকার তার অনুগত বিশ্বস্ত দলগুলোকে নিয়ে বিএনপিবিহীন নির্বাচন করিয়ে নিতে পারবে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মহল মনে করছেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে হঠাৎ করে রাষ্ট্রবিরোধী মামলা দায়েরের ঘটনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। নির্বাচনের পর দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি, নির্বাচিত সরকারকে হটানোর অসাধু প্রক্রিয়া যাতে বিএনপি ও তার ঘনিষ্ঠ প্রকাশ্য, অপ্রকাশ্য শক্তি পরিচালনার সুযোগ না পায়, সে ব্যবস্থা করার জন্যই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন। আবার এই মহল এও মনে করেন, অরাজনৈতিক কোনো শক্তি ক্ষমতায় এলে বিএনপিও রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দুই অবস্থাই তাদের জন্য সমার্থক। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীসহ আরো কয়েকটি ইসলামি দলকে নির্বাচন বর্জন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রাজপথের আন্দোলনে শরিক করা বিএনপির পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে। জামায়াত এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। সার্বিক পরিস্থিতিতে অনেকটা ফাঁদে আটকা পড়েছে বিএনপি।

‘ভোটের অধিকার নিশ্চিতে আন্দোলনে নামছে লাখ লাখ তরুণ’ শিরোনামের সংবাদটিতে বিএনপির নেতাদের বরাতে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকারের অধীনে দীর্ঘ সময় প্রায় ৪ কোটি ৭০ লাখ নতুন ভোটার কোনো ভোট দিতে পারেনি। তাই এই সরকারকে হটিয়ে ভোটের অধিকার নিশ্চিতে বিএনপিসহ অন্যান্য মতাদর্শী ছাত্রসংগঠনকে নিয়ে যুব-ছাত্রঐক্য গঠন করে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। কোরবানির ঈদের পর ছাত্রঐক্যের ব্যানারে সরকার পতন ও ভোটের অধিকার নিশ্চিতে নতুন কর্মসূচি আসবে। এ নিয়ে পর্দার আড়ালে অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের সঙ্গেও যোগাযোগ চলছে। আন্দোলনের ফরম্যাট দাঁড় করানো হচ্ছে। বিএনপির তারুণ্য সমাবেশ শেষ হলেই যৌথভাবে যুবঐক্যের ঘোষণা আসবে। এ জন্য বিএনপি আগেই নিজেদের দল নিয়ে ‘টেস্ট কেস’ করছে। এতে যে সাড়া পাওয়া গেছে, তার মাধ্যমে এখন যুবঐক্যের ব্যানারে আন্দোলনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেপ্টেম্বরের দিকে এই যুবঐক্যের কর্মসূচি আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের ভাষ্য।

ইতিহাস বলে, কোনো দল বা কোনো নেতা কোনো দেশে সারা জীবন নেতা থাকেন না বা কোনো দলও কখনো দেশের সরকারে চিরদিন থাকতে পারে না। তাই বিএনপি যদি জনগণের দাবি নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারে, তবে তারা সাফল্যের মুখ দেখতে পারে। আমাদের প্রত্যাশা আন্দোলনের নামে যেন দেশের শান্তি বিনষ্ট না হয়। জনগণের জীবন নিয়ে যেন ছিনিমিনি খেলা না হয়। মানুষের কল্যাণেই যেন হয় সরকারি, বিরোধী সব দলের রাজনীতি।


 

কমেন্ট বক্স