Thikana News
০৪ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪
বড়দের ছোট দৌড় ♦ দশাননে

দিল্লি তলে তলে তেলতেলে  ঢাকা-ওয়াশিংটন

দিল্লি তলে তলে তেলতেলে  ঢাকা-ওয়াশিংটন
শান্তি ফেরারি পূর্ব-পশ্চিমসহ সব দিকেই। আবারও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সদস্যদের। দুইশতের কাছাকাছি বিজিপি সদস্যকে জিম্মায় রেখেছে বিজিবি। বিদ্রোহী বা স্বাধীনতাকামীদের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণে বাঁচতে নতুন করে গত ১১ মার্চ বিজিপির এ সদস্যরা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির জামছড়ি সীমান্ত দিয়ে তারা বাংলাদেশে ঢোকে। বিজিবি ও স্থানীয়রা জানিয়েছে, মিয়ানমারের ঢেকু বুনিয়ার অভ্যন্তরে সে দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষে টিকতে  না পেরে বিজিপির সদস্যরা বাংলাদেশের সীমান্তের নো-ম্যান্স-ল্যান্ডে আশ্রয় নেয়। পরে জামছড়ি বিজিবির ক্যাম্পের সদস্যরা তাদের নিরস্ত্র করে বাংলাদেশের সীমান্তে আশ্রয় দেয়।
এর আগে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৩৩০ বিজিপি সদস্যকে ফেরত পাঠানো হয়। এ রকম পরিস্থিতিতে পুশব্যাক বা ফেরত পাঠানোর কাজ করেছে ভারতও। তারা ফেরত পাঠানোর কাজটি করেছে ফিঙ্গারপ্রিন্টসহ পর্যাপ্ত ইন্টারোগেশন ও তথ্য-সাবুদ রেখে। ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটার পর থেকে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের শরণার্থীদের প্রথম দলকে ভারত ফেরত পাঠিয়েছে। অথচ বাংলাদেশে ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে লাখ লাখ শরণার্থী আশ্রয় নিলেও তাদের একজনকেও এখন পর্যন্ত ফেরত পাঠাতে পারেনি। বন্ধু ভারত নিজেদের সমস্যার সমাধান ত্বরিৎ গতিতে করলেও অন্যদের দিকে তাকানোর সময় পায় না।
সেই যাত্রার পর বাংলাদেশসহ তিন প্রতিবেশী দেশ থেকে যাওয়া মুসলিমদের বের করে দেওয়ার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করেছে ভারত। এতে নিপীড়নের নতুন আতঙ্ক মুসলিম পরিবারগুলোর মধ্যে। সিএএ বা সংশোধিত নাগরিকত্ব নিবন্ধন আইন পাসের চার বছর পর গত ১১ মার্চ সন্ধ্যায় এটি কার্যকরের বিজ্ঞপ্তি দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। এর ধারাবাহিকতায় ১২ মার্চ থেকে শুরু হয় অনলাইনে আবেদনের প্রক্রিয়া। এ আবেদন যোগ্য বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে যাওয়া হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি, খ্রিষ্টানরা। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে ভারত গিয়ে যারা অন্তত ৫ বছর থেকেছেন, তারাই আবেদন করতে পারবেন। এ জন্য শুরুতে ১০০ রুপি এবং আবেদন মঞ্জুর হলে আরও ১০০ রুপি দিতে হবে। এই শ্রেণিভেদের বাইরে কেউ আবেদন করলে শুরুতে দিতে হবে ৫০০ রুপি। মঞ্জুর হলে দিতে হবে পাঁচ হাজার রুপি। এতে নিশ্চিত হুমকিতে পড়েছেন এই মানদণ্ডের বাইরে থাকা মুসলিমরা। তাই সিএএ কার্যকরের ঘোষণায় তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ভারত থেকে বের করে দেওয়া আর নির্যাতন-নিপীড়নের আতঙ্ক। ২০১৯ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে বিতর্কিত এই আইনটি পাস করে নরেন্দ্র মোদির সরকার। বরাবরই উপমহাদেশীয় ভূ-তলে দশ হাতে খেলে অভ্যস্ত ভারত। এটি তাদের বৈশিষ্ট্যের মতো। বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলে অনেকটা ব্ল্যাঙ্ক চেক বা ফাঁকা মাঠের মতো খেলছে তারা।
তাই বলে পশ্চিমারা পিছু হটে গেছে, এমনও নয়। গত সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইইউর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে একটি বার্তা এরই মধ্যে দিয়েছে। বেশ কিছু বিষয়ে নির্বাচন নিয়ে অনুকূল প্রতিবেদন দিলেও মানবাধিকার ও বিরোধী দলগুলোর প্রতি সরকারি দলের দমন-পীড়নের মতো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে গত সংসদ নির্বাচন কিছু গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, গণগ্রেফতারের মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা মারাত্মকভাবে সীমিত হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক দলগুলোর আসন ভাগাভাগি চুক্তি, আওয়ামী লীগের নিজস্ব প্রার্থী, ডামি প্রার্থী ও দলের সঙ্গে যুক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ভোটারদের স্বাধীনভাবে ভোট প্রদানের অধিকারের স্বীকৃতি দেয়নি। মিডিয়া এবং সুশীল সমাজও বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সহায়ক ছিল না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার কয়েকটি মিত্র দেশ বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হ‌ওয়ার পরপরই বিরূপ মন্তব্য করেছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই প্রতিবেদন গত সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে জোগান দিল নতুন মাত্রা।
সরকারের দিক থেকে এ ব্যাপারে বরাবরের মতোই নির্ভার মতিগতি। তলে তলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আপস হয়ে গেছে বার্তা দেওয়া সরকারপক্ষ থেকে দীর্ঘ সাত বছর পর সাগরে গ্যাস অনুসন্ধানে বাংলাদেশের দরপত্র আহ্বানের খবরও বেশ চাউর। নিজেরাই জানান দিচ্ছে, গভীর সমুদ্রের ১৫টি এবং অগভীরে ৯টি ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশি কোম্পানির সুযোগ তৈরির কথা। অফশোর বিডিং নিয়ে পেট্রোবাংলা আয়োজিত প্রেস কনফারেন্সে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ডক্টর তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলছেন, নেতিবাচক মন্তব্যকারীদের মুখে ছাই দিয়ে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশের আগ্রহের তথ্য দিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। বলার চেষ্টা করেছেন, মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমার জটিলতায় সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উদ্যোগ নেওয়া যায়নি। এর কারণ হিসেবে পুরোনো উৎপাদন-বণ্টন চুক্তি বা পিএসসিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে পেট্রোবাংলা। তবে গেল বছর উৎপাদন-বণ্টন চুক্তি হালনাগাদ করার পরই সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে তোড়জোড় শুরু হয়। পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধান কাজ নিয়ে না করে ফিরে গেছে কনকোফিলিপস, অস্ট্রেলিয়ার সান্তোস আর দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান দাইয়ু। তবে অফশোর দুটি ব্লকে কাজ করছে ভারতের ওএনজিসি।
বিশ্বজুড়ে আধিপত্য চর্চাকারী যুক্তরাষ্ট্র হালনাগাদ কূটনীতিতে দক্ষিণ এশিয়ার ছোট ছোট দেশগুলোর সঙ্গেও সরাসরি কাজ করছে। বাংলাদেশকে নিয়ে তাদের কূটনীতির ফয়সালা হয়েও হয়নি। তা ‘আর দিল্লির চশমায় নয়, যুক্তরাষ্ট্র এখন থেকে বাংলাদেশকে ওয়াশিংটনের চশমাতেই দেখবে’-এমন ঘোষণার পরও। ভারত-চীন রসায়নও এখানে বড় ফ্যাক্টর। এ বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্র নিজেও কেবল ভারত নয়, ছোট ছোট দেশের কাছেও শিকার হয়ে পড়ছে কখনো কখনো। তার ওপর দেশটিতে নির্বাচন আসন্ন। যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার কলকাঠিতে নাড়ানি দেওয়া ‘ডিপ স্টেট’ নিয়ে আবারও সমালোচনা। গত নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পরাজয়ের জন্য ডিপ স্টেটকে দায়ী করে বিভিন্ন সময়ে বক্তব্য রেখেছেন। ‘হয় ডিপ স্টেট আমেরিকাকে ধ্বংস করবে, নয়তো আমরা ডিপ স্টেটকে ধ্বংস করব’ বক্তব্য থেকেও এখনো সরেননি তিনি। এই ডিপ স্টেট সব সময় পুঁজিবাদের পক্ষে ক্রিয়াশীল। বিশাল পুঁজিলগ্নির হাতছানি এখন বাংলাদেশে। তা গভীর-অগভীর সমুদ্রের প্রাকৃতিক তেলে। আবার পুঁজিবাদের আধুনিক তাত্ত্বিক বিশ্ব আলোচিত নোবেল লরিয়েট ড. ইউনূসেও তেলতেলে।

কমেন্ট বক্স