Thikana News
০৬ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪

আজকের অশান্ত সময়ে ঈদুল আজহার তাৎপর্য

আজকের অশান্ত সময়ে ঈদুল আজহার তাৎপর্য
মুসলমান ধর্ম সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। আজ ২৮ জুন বুধবার ঈদুল আজহা উদযাপিত হচ্ছে। এই উৎসবকে অনেকে সামাজিক উৎসবও মনে করে। এই দিনে আল্লাহর উদ্দেশে হালাল পশু কোরবানি করা হয় বলে একে কোরবানির ঈদও বলা হয়ে থাকে। ধনী-দরিদ্র, সবল-দুর্বল, শেখ-সৈয়দ, খান-পাঠানÑসবাই এক সঙ্গে উদ্্যাপন করে ঈদ উৎসব।

প্রতি জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা উদ্্যাপিত হয়। কোরবানি ঈদের পেছনে রয়েছে স্রষ্টার কাছে তাঁর বান্দার আত্মত্যাগের এক মহান ইতিহাস। সেই ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় মুসলিম জাহানে আজও কোরবানি হচ্ছে। সে ইতিহাস হচ্ছে, হজরত ইবরাহিম (আ.) এক রাতে স্বপ্নে তাঁর স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছ থেকে আদিষ্ট হলেন, ‘আল্লাহর নামে তাঁকে তাঁর প্রিয় কোনো জান কোরবানি দিতে হবে।’ এভাবে একাধারে দুই রাত এবং তৃতীয় রাতেও তিনি স্বপ্নে দেখলেন, ‘তাঁকে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কোরবানি দেওয়ার জন্য আদেশ করছেন আল্লাহ পাক।’ তখন তিনি অনুধাবন করলেন তাঁর প্রিয়জন আর কেউ নয়, প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ.)-কেই আল্লাহ কোরবানি দিতে তাঁকে নির্দেশ করছেন। তিনি নিজেকে সামলে নিয়ে প্রিয় পুত্রকে বললেন তাঁর স্বপ্নের কথা। পুত্রের মধ্যেও ছিল আল্লাহর প্রতি সন্দেহাতীত বিশ্বাস, ইমানি জোর। তিনি সঙ্গে সঙ্গে পিতাকে আল্লাহর নির্দেশ পালনের তাগিদ দিলেন।

তখন হজরত ইবরাহিম (আ.) পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে মরুভূমির দূরবর্তী স্থানে নিয়ে গেলেন আল্লাহর আদেশ পালনে প্রাণপ্রিয় সন্তানকে কোরবানি করতে। সেখানে পুত্রকে কোরবানি করার জন্য উদ্যত হলে পুত্র বললেন, ‘হে পিতা, আপনি আপনার চোখ বেঁধে নিন, যাতে শেষ মুহূর্তে পুত্রস্নেহে আপনার মন দুর্বল হয়ে না পড়ে।’ পুত্রের কথায় পিতা চোখ বেঁধে নিয়ে পুত্রকে কোরবানি করলেন। কিন্তু চোখ খুলে তিনি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন! দেখলেন, তাঁর সামনে পুত্র ইসমাইল নন, কোরবানি হয়ে আছে একটি হালাল পশু। আল্লাহ তাঁকে জানিয়ে দিলেন, তিনি ইবরাহিম (আ.)-কে তাঁর ইমানের পরীক্ষা নিলেন এবং সে পরীক্ষায় পিতা-পুত্র দুজনই পাস করে গেছেন। সেই থেকে মহান আত্মত্যাগের অসিলায় আল্লাহ পাক সুস্থ ও সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য হজ ও কোরবানি ফরজ করে দিলেন। সেই আদর্শ অনুসরণ করে আমরা শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মত হওয়া সত্ত্বেও কোরবানি করে আসছি। কোরবানির ক্ষেত্রে বারবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে, কোরবানি করতে হবে নেক দিলে এবং হালাল উপার্জনে। অর্থাৎ আল্লাহর নির্দেশমতো এবং তার অন্যথা হলে সে কোরবানি আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। যেনতেনভাবে উপার্জিত অর্থে লোক দেখানোর জন্য লাখ লাখ টাকা দামের পশু কোরবানি করে আত্মতৃপ্তিতে ভুগলেও সে কোরবানি আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। আল্লাহর প্রতি আত্মনিবেদিত হয়ে তাঁর নির্দেশমতো কোরবানি দিলে সে কোরবানির পশুর রক্ত মাটি স্পর্শ করার আগেই আল্লাহর কাছে মঞ্জুর হয়ে যায়।

ধর্মীয় দিক ছাড়াও সামাজিকভাবেও হজ ও কোরবানির তাৎপর্য অসীম। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যেমন তেজীভাব দেখা দেয়, তেমনি মানুষের জন্য মানুষকে ত্যাগ করা এবং মানবিক ও সহমর্মী হতে শেখায় কোরবানি। যারা ধনী, তাদের মধ্যে এ সময় অনেকে ধন-সম্পদের জন্য জাকাতও দিয়ে থাকেন, যা গরিবদের মুখে হাসি ফোটাতে পারে। তা ছাড়া যারা কোরবানি দিয়ে থাকেন, তাদের কোরবানির গোশতের তিন ভাগের এক ভাগ গরিবদের মধ্যে, যাদের কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য হয় না, বিলি করতে হয়। সেই গোশত দিয়ে গরিবদের কোরবানির মাংসের অভাব পূরণ হয়। কোরবানি মানুষকে ‘মানুষ মানুষের জন্য’ এই চেতনায় সমৃদ্ধ হতে শিক্ষা দেয়। মানুষকে সৎপথে চলার, সৎ আয়ের জন্য সামর্থ্য দান করে। এক ভাগ আত্মীয়-পরিজনের মধ্যে বিলি করে দিতে হয়। আর একটি অংশ নিজের জন্য।

আমাদের প্রার্থনা, আল্লাহ পাক যেন সবাইকে তাঁর নির্দেশমতো কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য দেন এবং তিনি যেন সবার কোরবানি কবুল করে নেন। পৃথিবীজুড়ে এই অশান্ত সময়ে আল্লাহ শান্তি বর্ষণ করুন। দুর্নীতি, দুষ্কর্ম থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য আল্লাহ পাক সবাইকে সামর্থ্য দান করুন। সবার জীবনে কোরবানির ঈদ সফল ও সার্থক হোক।

ঈদুল আজহায় ঠিকানার পক্ষ থেকে তার অগণিত পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতাসহ প্রবাসের-স্বদেশের সব সহযোগী ও শুভানুধ্যায়ীকে ঈদের শুভেচ্ছা।

কমেন্ট বক্স