সাম্প্রতিক গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, বিশ্বের সকল ডেটা সেন্টার থেকে যে পরিমাণ গ্রিনহাউজ গ্যাস বের হয়, তা পুরো এয়ারলাইন্স শিল্পের চেয়েও বেশি।
বিভিন্ন এআই টুল পরিবেশের ওপর কেমন প্রভাব ফেলছে, তা খতিয়ে দেখা গুরুত্বপূর্ণ বলে সতর্কবার্তা দিয়েছেন গবেষকরা।
সম্প্রতি ‘রেডিওলজি’ (ইমেজিংয়ের মাধ্যমে রোগ শনাক্ত করার পদ্ধতি) খাতে এআই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়তে দেখা গেছে, যা নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশ পেয়েছে অলাভজনক সংস্থা ‘রেডিওলজিক্যাল সোসাইটি অব নর্থ আমেরিকার (আরএসএনএ) জার্নাল ‘রেডিওলজি’তে।
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে, ‘গ্রিনহাউস গ্যাস (জিএইচজি)’ নির্গমনে বড় ভূমিকা রাখছে স্বাস্থ্যসেবা ও মেডিকাল ইমেজিংয়ের মত বিষয়গুলো।
এক্ষেত্রে রেডিওলজি খাতের কর্মপদ্ধতির উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে বিভিন্ন এআই টুল, যেখানে ব্যবহার করা যেতে পারে অপ্টিমাইজড ইমেজিং প্রোটোকলের মত ব্যবস্থা।
এর ফলে, চিকিৎসার ক্ষেত্রে স্ক্যানিংয়ের সময় কমে আসার পাশপাশি রোগীর ঝামেলা কমিয়ে আনা সম্ভব। এ ছাড়া, কম দামী ইমেজিং ব্যবস্থা ব্যবহারের প্রবণতা কমানোর ক্ষেত্রেও এসব এআই টুল কাজে লাগতে পারে। তবে উদীয়মান এ প্রযুক্তি ব্যবহারের একটি নেতিবাচক দিকও রয়েছে।
এ গবেষণার ভাইস চেয়ারম্যান, ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টোর সহযোগী অধ্যাপক কেট হ্যানেম্যান বলেন, মেডিকেল ইমেজিংয়ে অনেক বেশি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়। তবে আমরা এসব তথ্য সংরক্ষণ (ডেটা স্টোরেজ) ও এআই টুলের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে সাধারণত চিন্তা করি না।
তিনি বলেন, এআই মডেলের উন্নয়ন ও বিস্তারে অনেক বিদ্যুৎ খরচ হয়। আর মেডিকেল ইমেজিং ও এআই প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তথ্য সংরক্ষণের চাহিদাও দ্রুত বাড়ছে।
এ গবেষণায় রেডিওলজিতে এআই টুল যোগ করার সুবিধা এবং পরিবেশের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাবের দিকগুলোতে নজর দিয়েছে গবেষণা দলটি, যেখানে এআইয়ের মাধ্যমে কাজের ধারা উন্নত করা, ছবি তোলার গতি বাড়ানো, চিকিৎসার খরচ কমানো এবং রোগীর অভিজ্ঞতাকে আগের চেয়ে উন্নত করার মত বিষয়গুলোতে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
হ্যানেম্যান বলেন, আমাদের সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি, পরিবেশের ওপর এআই টুলের নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে আনার সঙ্গে এর ইতিবাচক প্রভাবের ভারসাম্য আনার দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হল, রোগীর সার্বিক অবস্থার উন্নতি ঘটানো। তুলনামূলক কম শক্তি খরচ করে ও বর্জ্য উৎপাদনের মাত্রা কমিয়ে আনার মাধ্যমে আমরা এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চাই।
এআই মডেল বিকাশে বিশাল পরিমাণ ‘ট্রেইনিং ডেটা’ প্রয়োজন, যেখানে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে বছরে প্রায় শত কোটি চিকিৎসাবিষয়ক ছবি সংরক্ষণ করতে হয়। এর মধ্যে অনেক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই ক্লাউড স্টোরেজ ব্যবহার করে, যার মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য অফলাইনে সংরক্ষণ করা যায় এবং প্রয়োজন অনুসারে ডিজিটাল উপায়ে সেগুলোতে প্রবেশ করা যায়।
হ্যানেম্যান বলেন, আমরা একে ক্লাউড স্টোরেজ বললেও তথ্যগুলো আসলে এমন স্থানে রাখা হয়, যেখানে প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ হয়। আর সেইসব ডেটা সেন্টার ঠাণ্ডা হতেও অনেক সময় লাগে।
সাম্প্রতিক গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, বিশ্বের সকল ডেটা সেন্টার থেকে যে পরিমাণ গ্রিনহাউজ গ্যাস বের হয়, তা পুরো এয়ারলাইন্স শিল্পের চেয়েও বেশি। এটা খুবই বিস্ময়কর।
একটি ডেটা সেন্টারের অবস্থান এর স্থায়িত্বের ওপরও বড় প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে ডেটা সেন্টারটির অবস্থান এমন কোনও ঠাণ্ডা জলবায়ু বা স্থানে হয়ে থাকে, যেখানে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস রয়েছে।
ডেটা স্টোরেজের সামগ্রিক পরিবেশগত প্রভাব কমাতে গবেষকরা ডেটার বিভিন্ন উৎস ভাগ করে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, যেখানে অন্যান্য ডেটা সরবরাহক ও অংশীদারদের সহায়তায় বিদ্যুৎ খরচের বিষয়টি সমন্বয় করা যাবে।
ঠিকানা/এসআর