Thikana News
২২ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪


 

ভারতের কঠোর অবস্থানে বিব্রত যুক্তরাষ্ট্র

ভারতের কঠোর অবস্থানে বিব্রত যুক্তরাষ্ট্র


ভারত বরাবরই জামায়াতে ইসলামীকে তার রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে  চিহ্নিত করে তাদেরকে সেভাবে দেশে-বিদেশে মূল্যায়ন করে থাকে। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির মুক্তিযুদ্ধ ও ভারতবিরোধী নেতাদেরও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাদের রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা, নিরাপত্তাবিরোধী বলে চিহ্নিত করে আসছে। বিভিন্ন সময়ের তাদের কর্মকাণ্ডে ভারতীয় সংশ্লিষ্টরা এ সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পেয়েছে।
ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বিভিন্ন স্তরের দায়িত্বশীলরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট পর্যায়সমূহকে সর্বাধিক গুরুত্বের সঙ্গে অবহিত করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি বিদেশি কূটনৈতিক সূত্রে বাংলাদেশের নির্বাচন-পূর্ববর্তী ও নির্বাচন-পরবর্তী বিভিন্ন বিষয় আলোচনা-পর্যালোচনা করা হয়। ভারত কী কারণে বাংলাদেশের নির্বাচন সম্পর্কে দৃঢ় অবস্থান নেয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার বিপক্ষে জোরালো ভূমিকা নিয়ে প্রভাব খাটায়, তার বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ পশ্চিমা দেশসমূহ ছাড়াও জাপানসহ কয়েকটি শক্তিশালী দেশ ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা নির্বাচন-পরবর্তী সম্মিলিত বৈঠকে বসে তাদের মতামত বিচার-বিশ্লেষণ করেন। এতে ভারতীয় প্রতিনিধিকেও রাখা হয়। কূটনৈতিক সূত্রে আরও জানা যায়, একটি প্রভাবশালী দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতার বিরুদ্ধে এ উপমহাদেশেরই একটি দেশের শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ, বেশ কিছু তথ্য-প্রমাণও উপস্থাপন করা হয়। ভারতের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়। এমনও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জোট গঠনের প্রক্রিয়া থেকে ভারত সরে আসবে।
জানা যায়, ভারতের এমন কঠোর অবস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ভাবিয়ে তোলে এবং বাংলাদেশ প্রশ্নে তার নীতির পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়। তবে তাদের এই পরিবর্তন সাময়িক, স্বল্পমেয়াদি কি না পর্যবেক্ষণসাপেক্ষ বলেই কূটনৈতিক মহল মনে করেন। তারা অবশ্য এও মনে করেন, চীনের প্রতিপক্ষ ভারতকে অসন্তুষ্ট রেখে চীনকে মোকাবিলাসহ যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে তার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ দেশি-বিদেশি কোনো শক্তিকে বরদাশত না করার নীতিতে ভারতের অত্যন্ত কঠোর অবস্থানের কারণেই প্রধানত যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রশ্নে তার নীতির নাটকীয় পরিবর্তন আনে। ফলে ভারতবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত জামায়াতে ইসলামীর ব্যাপারে মার্কিন নীতির সাময়িক ভিন্নতা লক্ষ করা যায়।
কূটনৈতিক সূত্রে বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীন মোদি সরকার ভারত মহাসাগর, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থরক্ষাকারী হলেও জামায়াত-বিএনপিকে তারা তাদের রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা ও নিরাপত্তার জন্য নিরাপদ নয় বলেই মনে করে আসছে। বিশেষ করে, পাকিস্তানে শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে জামায়াত ও বিএনপির সর্বাধিক প্রভাবশালী মহলটির যোগাযোগ ও গভীর সম্পর্কের ব্যাপারে তারা উদ্বিগ্ন। তদানীন্তন পাকিস্তান আমল থেকেই জামায়াত ও বিএনপির মুক্তিযুদ্ধবিরোধী উল্লিখিত শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা এবং ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলে ভারতীয়দের হাতে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণও রয়েছে। এই সম্পর্কের সূত্র ধরেই বাংলাদেশের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকাকে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা তাদের নিরাপদ আশ্রয় ও প্রশিক্ষণস্থল হিসেবে বেছে নেয়। স্বাধীনতার পর বিএনপির শাসনামলে ভারতীয় বিচ্ছিন্নবাদীদের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ ও সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়।
গোয়েন্দা সূত্রে আরও জানা যায়, বেগম খালেদা জিয়ার পরম বিশ্বস্ত আবদুল মতিন চৌধুরী চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধী মুসলিম লীগ নেতা। খালেদা জিয়া তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। মতিন চৌধুরী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালেই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীসমূহকে অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা শুরু হয়। জোট সরকারের সময় অস্ত্রবোঝাই ১০ ট্রাক অস্ত্র ধরা পড়ার ঘটনাটিই কেবল প্রকাশ্যে আসে। মতিন চৌধুরী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকার সময় সড়কপথে, সমুদ্রপথে অস্ত্র পাচারের অনেক ঘটনা ঘটেছে। অস্ত্রবোঝাই জাহাজডুবির ঘটনাও এ সময় ঘটেছিল। এই মতিন চৌধুরী ও জামায়াতের পরামর্শে বেগম খালেদা জিয়া ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত সাক্ষাৎসূচি একতরফা বাতিল করে খালেদা জিয়া কূটনৈতিক শিষ্টাচার-বহির্ভূত এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত রেখেছিলন। দুুই দেশের সীমান্তবর্তী এলাকাসহ ভারতের অভ্যন্তরে সংঘটিত বোমাবাজির ঘটনাসমূহের সঙ্গে জামায়াতের সাবেক নেতাদের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছেন ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সে দেশ সফরকারী মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া, মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনান্ড লু, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তাসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে ভারত বাংলাদেশের উল্লিখিত শক্তিসমূহকে ভারতের নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য প্রত্যক্ষ হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। শক্তিশালী চীনকে মোকাবিলার পাশাপাশি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উন্নতি, সমৃদ্ধির স্বার্থে ভারতকে সন্তুষ্ট রাখা, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক উন্নত ও গভীরতর করার তাগিদ যেমনি যুক্তরাষ্ট্রকে বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে, তেমনি ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ বিদেশি শক্তিকে নিরুৎসাহিত করাও জরুরি হয়ে এসেছে। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে জামায়াত-বিএনপির ওপর থেকে দৃশ্যত হাত গুটিয়ে নেওয়ার মার্কিন নীতি তারই প্রতিফলন বলে কূটনৈতিক মহল মনে করেন।
ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নির্বাচনের সময় সরকারবিরোধী এবং বিএনপির পক্ষে ভূমিকা পালনকারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। নির্বাচিত করার দায়িত্ব পালন করার পরও তিনি নির্বাচন প্রশ্নে তার পূর্ববর্তী অবস্থানেই রয়েছেন। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি বলে গত ৪ ফেব্রুয়ারিও মন্তব্য করেন। পাশাপাশি সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাওয়ার এবং বাংলাদেশকে অধিকতর সাহায্য-সহযোগিতা দেওয়ার কথাও বলেছেন। প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশ প্রশ্নে তাহলে মার্কিন নীতি কী!

কমেন্ট বক্স