Thikana News
২১ জুন ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

হট চেয়ারে ঢাকা, দুর্ভোগে দিল্লি

হট চেয়ারে ঢাকা, দুর্ভোগে দিল্লি



 
আচ্ছা রকমের ফ্যাসাদে পড়েছে ভারত। কেবল বাংলাদেশ নয়, চীন-নেপাল-মালদ্বীপের পর এখন যন্ত্রণা শ্রীলঙ্কার দিক থেকেও। ভারত প্রশ্নে সেখানকার সরকারের স্বভাব কিছুটা বাংলাদেশের ড. ইউনূসের মতোই। শ্রীলঙ্কার নতুন বামপন্থী প্রেসিডেন্ট অনুড়া  কুমার দিশানায়েকে পরাজিতদের ওপর আঘাত না করার আহ্বান জানিয়েছেন। বাড়তি হিসেবে যোগ করেছেন নানা সংস্কার করে গরিবদের কর থেকে রেহাই দেওয়ার কথা। জানান, গরিব মানুষের জীবনমান পাল্টাবেন সবার আগে। চারদিক থেকে, বিশেষ করে বাংলাদেশের দিক থেকে এমন আঘাতের ধারণাই করেনি ভারত। কূটনৈতিক স্বভাব-বৈশিষ্ট্যমতো দিল্লি এখন ঢাকার সাথে মিলমিশ চায়। জাতিসংঘ সম্মেলন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে আন্তরিক বৈঠকও করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর। সামনের দিনগুলোতে আস্থা তৈরির আগ্রহ জানান। আবার চীনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেও চায় ভারত। যেই চীন এখন ব্যস্ত বাংলাদেশের গত আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা নিয়ে। চীনের ১০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেমে পড়েছেন এ কাজে। অবস্থার বেশি গুরুতরদের নিয়ে যেতে চায় নিজেদের দেশে। একে ড. ইউনূসের সরকারের প্রতি আস্থার স্মারক বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত।
এভাবে চারদিকে দৌড়ানো ছাড়া ভারতের এখন আর কোনো গতি নেই। ছুটে যায় রাশিয়ায়ও। দেশটির সেন্ট পিটার্সবার্গে বৈঠক করেছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। উভয় পক্ষই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নতির স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। বৈঠকে উভয় দেশের সীমান্ত ইস্যুতে সাম্প্রতিক যে অগ্রগতি হয়েছে, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ওয়াং বলেছেন, দুটি প্রাচীন পূর্ব সভ্যতা এবং উদীয়মান উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে চীন ও ভারতের উচিত স্বাধীনতা মেনে চলা, ঐক্য ও সহযোগিতা বেছে নেওয়া এবং একে অপরকে ‘গ্রাস করা’ থেকে বিরত থাকা। দুই দেশের সম্পর্ক ভালো অবস্থানে ফিরে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী। দোভালের আগ্রহ বিভেদ ভুলে ভারত ও চীনকে অভিন্ন উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করার দিকে।
২৮০ কোটি ভারতীয়কে আমলে নিলে চীন পুরো বিশ্বের কর্তৃত্ব পাবে বলে মন্ত্র দেন দোভাল। এসবের আসল কথা বঙ্গোপসাগর এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ঠেকানো। বাংলাদেশ এখানে মারাত্মক ফ্যাক্টর। ইউনূসকে ভয়। রাশিয়া-চীন-ভারত-ইরান অক্ষ গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে এ কারণেই বিবৃতি দিয়েছে বারবার। তার পরও সমীকরণ মেলেনি ইউনূস-ঝড়ে। তার ওপর শ্রীলঙ্কায় চীনপন্থী দিশানায়েকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন; যা ভারতকে দক্ষিণ এশিয়ায় কেবল নিঃসঙ্গ নয়, লং রানের খবরদারি থেকে ছিটকে দিয়েছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে যে সমাদর পেয়েছেন, তা ভারতের জন্য আরও মনঃকষ্টের। রেজিম বিদায়ের পর বাংলাদেশের এই মর্যাদার মাজেজা ভারত ভালো করে জানে। গত তিন দশকে বাংলাদেশের অন্য কোনো নেতা বা সরকারপ্রধান এমন কদর পাননি। বাংলাদেশে বারবার গণতন্ত্র হত্যা করার দায় ভারতকে নিতে হচ্ছে। উদ্দেশ্য ছিল দেশটিকে আরেকটি সিকিম বানানোর। সেই উদ্দেশ্য বুমেরাং হয়ে গেছে দিল্লির।
প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের জনগণের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের বন্ধুত্বের বদলে ভারত বাংলাদেশের জনগণকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে আওয়ামী লীগকেই একতরফা কাছে টেনেছে। এখন এর মাশুল বা কাফফারা দিতে হচ্ছে চারদিক থেকে। যেখানে বাংলাদেশের তিন দিক ভারতের মুঠোয়, সেখানে এখন ভারতের চারদিকেই ভারত-বিরোধিতা। আর বাংলাদেশের মিত্র সবদিকেই। বাংলাদেশের এখনকার সমস্যা একেবারেই অভ্যন্তরীণ। ক্ষমতামুখী রাজনীতির জেরে নির্বাচনের জন্য উতলার সমস্যা। বাস্তবতার নিরিখেই আগামী ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় ফেরার আশাবাদের বার্তা দিয়েছেন সেনাপ্রধান। এর অর্থ যারা বোঝার বুঝে নিয়েছেন। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে-বাইরে একটি মধ্যবর্তী ঝুটঝামেলা পাকছে। কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়ার মাঝে সেই ছাপ পড়ছে। নতুন সংবিধান লেখার যুক্তিবাদীরা বেশি তৎপর। বিপরীতে সংবিধান সংস্কার কমিটি থেকে এরই মধ্যে একজন মনজুর আহমেদ পদত্যাগ করেছেন। তার যুক্তি হচ্ছে- সংবিধান নতুন করে লেখার দরকার নেই, এটা করতে সাত-আট বছর লাগবে। এর পেছনে অন্য উদ্দেশ্যও দেখছেন তিনি। হাজারের বেশি মানুষ হত্যা, শত শত আহতের কাতরানোর মাঝে অন্য কিছুকে বাড়তি তথা মূল কাজ থেকে সরে যাওয়ার মতো নমুনা দেখার লোকও আছে।
এই নমুনার আগেই সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়ায় সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন খেপে যাওয়ার সংশয় কেটে গেছে। শঙ্কাটা বাস্তব হয়নি। পুলিশের দিক থেকে দেওয়া চিকন টোকাও ধরা পড়ে গেছে। রাস্তা আটকে দাবি বা বায়না ধরাও কমে এসেছে। সেনাবাহিনীকে দেওয়া ১৭ ক্ষমতার স্লো অ্যাকশন শুরু হয়েছে। আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, এবার সেনাবাহিনী মাঠে নামানোর কাজটি পতিত সরকারই করে গেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ঢাকাসহ সারা দেশে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে গত ১৯ জুলাই রাতে সারা দেশে কারফিউ জারি ও সেনা মোতায়েন করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। তাদের পতনের সময়ও সেনাবাহিনী মাঠেই ছিল। কিন্তু ওই সরকারের হুকুম তামিল করেনি। পুলিশের মতো সেনাবাহিনীকে আগ্রাসী কাজে খাটাতে না পারায় সরকারের পতনটা দ্রুত নিশ্চিত হয়ে যায়।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন দিনের মাথায় ৮ আগস্ট ক্ষমতা নেয় ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। এর পূর্বাপরে সারা দেশে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় ছিল পুলিশ। সে সময়টায় ছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে মাঠের পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিল সেনাবাহিনী। এর মাঝেও লেগেই থাকে নানা ঝামেলা। এর মাঝে জাতির উদ্দেশে দেওয়া দ্বিতীয় ভাষণে ড. ইউনূস জানানোর আর কিছু বাকি রাখেননি। সব প্রশ্নের জবাব জানিয়ে দিয়েছেন। বাকিটা দেওয়া হয়েছে সেনাবাহিনীকে ১৭ ক্ষমতা দেওয়ার মাধ্যমে। ১৭ প্রশ্নের জবাব একের মধ্যে দেওয়ার এক রেকর্ড এটি। নতুন করে আর তাকে জানাতে হচ্ছে না, কবে তিনি নির্বাচন দিয়ে বিদায় নেবেন। তার ওপর সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আবারও জানিয়েছেন ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তার বাহিনীর পূর্ণ সমর্থনের কথা। সেই সঙ্গে আভাস দিয়েছেন আগামী ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা। এর মধ্য দিয়ে কবে-কখন নির্বাচন, সেই জিজ্ঞাসার একটা জবাবও মিলেছে।
 
কমেন্ট বক্স