২০১৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মতিঝিলে সমাবেশ করার অনুমতি পেয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। এরপর দীর্ঘ এক দশক আত্মগোপনে থেকে বিভিন্ন দিবসসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। এ ছাড়া নানা সময়ে নানা ইস্যুতে ঝটিকা মিছিলে সীমাবদ্ধ ছিল জামায়াতের কর্মসূচি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ থেকে সরব হয়ে উঠেছে জামায়াত। রাজধানীসহ সারা দেশে প্রকাশ্যে কর্মসূচি পালন করার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে দলটির নানা কর্মকাণ্ড। চলছে জোরেশোরে প্রচারণা। অতীতের মতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান কিংবা তেমন কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে না তাদের। হঠাৎ জামায়াতের নির্বিঘ্নে কর্মসূচি পালন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। গুঞ্জন রয়েছে সরকারের সঙ্গে জামায়াতের আঁতাতেরও।
সূত্র জানায়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর দলটির আমির, সেক্রেটারি জেনারেল, নায়েবে আমিরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা মুক্তি পেয়েছেন। বিভিন্ন সময় জেলগেট থেকে আটক করা হলেও এবার তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই তারা জেলগেট পার হয়েছেন। গত রমজানে দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর পর প্রকাশ্যে রাজধানীতে ইফতার মাহফিল করেছে দলটি। এ ছাড়া রমজান মাসে প্রতিদিনই তারা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে বড় বড় কর্মসূচি পালন করেছে।
জানা গেছে, গত ১ মার্চ রাজধানীর বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। এ ছাড়া ২ মার্চ জামায়াত নেতা এটিএম আজহারের স্ত্রীর মৃত্যুতে রাজধানীর ধানমন্ডি ঈদগাহ ময়দানে জানাজায় ইমামতি করেন দলের ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমান। সেখানেও কেন্দ্রীয় সব নেতা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া দীর্ঘ পাঁচ বছর পর রমজানে বিএনপির উদ্যোগে রাজনীতিকদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে জামায়াতের আমিরসহ চার কেন্দ্রীয় নেতা অংশগ্রহণ করেন। সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যও দেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। এরপর হোটেল সোনারগাঁওয়ে কূটনীতিক, রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্টজনের সম্মানে প্রকাশ্যে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে জামায়াতে ইসলামী।
জামায়াতের নেতারা জানান, বর্তমানে জামায়াতের কয়েক ধাপে কর্মসূচি চলমান রয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশের প্রতিটি ইউনিটে চলছে তাদের এ কর্মসূচি। প্রকাশ্যে কর্মসূচি পালন করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। চলমান কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জনসংযোগ, তাপপ্রবাহের মধ্যে সাধারণ মানুষের মধ্যে খাবার পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ, তীব্র দাবদাহ থেকে পরিত্রাণের জন্য সালাতুল ইসতিসকার নামাজ। এসব কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে আগের মতো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন না হলেও বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটছে। সেগুলোকে পাত্তা দিচ্ছে না দলটি। দলের নেতাদের দাবি, রাজপথে নামলে কিছু প্রতিবন্ধকতা আসবেই। এগুলো মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে হবে। তবে সরকারের সঙ্গে আঁতাতের বিষয়ে তারা মুখ খুলতে নারাজ।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, বছরব্যাপী আমাদের বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি চলমান থাকে। অন্য সব দলের মতো নয়, আমাদের দলীয় অনেক কর্মসূচি থাকে। এত দিন আমাদের কর্মসূচি অনলাইনের মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা করা হতো। এখন আমাদের জনসংযোগ কর্মসূচি চলছে। তিনি বলেন, আগে আমরা অনলাইনে কিছুটা স্লো ছিলাম। কারণ সূত্র ধরে পুলিশ আমাদের সন্ধান করত। কিন্তু এখন দলটির অনলাইন শাখাকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। তারা আমাদের দলীয় নানা ধরনের কর্মকাণ্ড খুব জোরেশোরে অনলাইনে প্রচার করছে, যা দেশের জনগণ ভালোভাবেই নিয়েছে। প্রতিটি ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে। এতে জামায়াতের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে।