সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে বিরোধীদের ইঙ্গিত করে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিএনপির নাম উল্লেখ না করে তাদেরকে ইঙ্গিত করে এ অভিযোগ এনে বলেছেন, তারা গণতন্ত্র নস্যাৎ, নির্বাচিত সরকারকে অপসারণের চেষ্টা করছে। দেশি-বিদেশি কারা এই ভয়ংকর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তা খোলাসা করা হয়নি। নির্বাচিত সরকার দায়িত্বে থেকে দেশ পরিচালনার চার মাস শেষে সরকারের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি কর্তৃক এ ধরনের আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করার ঘটনা রাজনৈতিক অঙ্গনে, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার জন্ম দিয়েছে। প্রধান বিরোধী দলবিহীন নির্বাচন নিয়ে নির্বাচনের আগে নানা কথা, নানা প্রশ্ন, সংশয়-শঙ্কা ছিল। কিন্তু ৪২ শতাংশ ভোটারের অংশগ্রহণে নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর নির্বাচনকেন্দ্রিক সংশয়-শঙ্কার অবসান হয়। বিশেষ করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, পশ্চিমা বিশ্বসহ গোটা বিশ্ব নির্বাচন ও নির্বাচিত সরকারকে মেনে নিয়ে তার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। এক্ষণে সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্তের ঘটনা রাজনৈতিক মহলকে বিচলিত, উদ্বিগ্ন করছে।
ওবায়দুল কাদের শুধু দলের সাধারণ সম্পাদকই নন; সরকারের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, প্রধানমন্ত্রীর সবচেয়ে বিশ্বস্তজন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিরোধীদের ওপর বড় রকমের আঘাত হানার ক্ষেত্র তৈরির জন্য তিনি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনছেন, এমন কথাও বলা যায় না। ষড়যন্ত্রটা কী, কোথায় কে বা কারা করছেন, সেসব বিষয়ও ওবায়দুল কাদের খোলাসা করেননি। ষড়যন্ত্র প্রকাশ্যে নয়, গোপনেই হয়। ষড়যন্ত্রের জাল বিদীর্ণ করার পর সময়মতো তা হয়তো প্রকাশ করা হবে।
ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের একাধিক উচ্চ পর্যায়ের সূত্রমতে, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি এবং সরকারকে মধ্যবর্তী নির্বাচনে বাধ্য করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায় বিএনপি। ক্ষমতাসীন দলের অনেকের অভিযোগ, লন্ডনে বসে বিএনপির শীর্ষ নেতা তারেক রহমান সে পরিকল্পনা করছেন এবং তা বাস্তবায়নের নানা কৌশল ও প্রক্রিয়া করছেন। স্থায়ী কমিটি, কেন্দ্রীয় এবং জেলা, উপজেলা কমিটির নেতাদের সঙ্গে তারেক রহমান আবার আগের মতো মোবাইলে যোগাযোগ করছেন। ঢাকা থেকে একাধিক অরাজনৈতিক ব্যক্তি, ব্যবসায়ী এবং ঢাকা মহানগর বিএনপির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতার মাধ্যমে তারেক নিয়মিত বার্তা পাঠাচ্ছেন। এসব বার্তা সরকারি লোকজন যথারীতি পেয়ে যান। সেই সূত্রেই সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রের কথা পাওয়া গেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা সহযোগীরা বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির পক্ষে নয়। এখানে তাদের বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ আসবে তাদের। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা তাদের স্বার্থেই তারা প্রত্যাশা করেন। বিদেশিদের, বিদেশি মিত্রদের প্রত্যাশা অনুযায়ী বিএনপিও রাজনৈতিক অস্থিরতা, হিংসাত্মক কোনো পন্থায় না গিয়ে বিকল্প পথের সন্ধান করছে। বিএনপি থেকে বিদেশি রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহকে বলা হচ্ছে, ক্ষমতাসীন সরকার অবৈধভাবে নির্বাচিত, দেশের মানুষ তাদের নির্বাচিত করেনি, তাদের সঙ্গে কোনো চুক্তি বা সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করা হলে তার দায় আগামী সরকার নেবে না। জাতিসংঘের মহাসচিব, প্রভাবশালী দেশসমূহসহ অধিকাংশ দেশের সরকারের কাছে অনুরূপ বার্তা পাঠানো শুরু হয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে দুই লক্ষাধিক লোকের স্বাক্ষরযুক্ত আবেদন পাঠানো হচ্ছে। এতে দেশের কয়েকজন বরেণ্য ব্যক্তিও রয়েছেন। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সমাদৃত ও সুপরিচিতি কয়েকজনও তাদের মধ্যে রয়েছেন। ঢাকাস্থ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা, মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রধানদের কাছে উল্লিখিত বার্তা পাঠানো হয়েছে। ঢাকাস্থ জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়ক এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা যাতে পালন করেন, সে চেষ্টা করা হচ্ছে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, এসবের উদ্দেশ্য হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার তত্ত্বাবধানে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠান। আগামী বছরের প্রথম দিকের মধ্যেই তা চায় তারা। এসবই কল্পনা বিলাসিতা বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করলেও দেশি-বিদেশি খেলোয়াড়েরা বসে নেই।