জয়ী ও পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় পর্যায়ের বিভেদ- স্বতন্ত্রদের বিরোধ দলের কোন্দল উপজেলা-জেলা নেতৃত্বের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে এর অবসান করা না হলে রাজনৈতিক-সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সামনে উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এর নিয়ন্ত্রণহীন, রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের ৬২ জন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের পৃথক জোট করতে বারণ করা হয়েছে। তারা সংসদে সরকারের সমালোচনা করতে পারবেন। স্বতন্ত্র সদস্য হয়েও আওয়ামী লীগেই থাকবেন। বিজয়ী এই এমপিরা এবং সারা দেশে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী জয়ী, বিজিত প্রার্থীরা দলের জন্য দুর্ভাবনা হয়ে দেখা দিয়েছেন। দলীয় নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং তাদের মদদপুষ্ট ইউনিয়ন, উপজেলা আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলোর অনেক নেতা ও তাদের অনুসারী কর্মী-সমর্থকেরা বিপাকে পড়েছেন। দলীয়ভাবেই তারা অসুস্থ, প্রতিহিংসাত্মকমূলক প্রতিযোগিতারও সম্মুখীন হচ্ছেন। স্থানীয় নেতৃত্ব দখলের চেষ্টা করছেন স্বতন্ত্র এমপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অনুসারীরা। তাদের প্রতিহিংসামূলক তৎপরতায় সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারক মহল এ অবস্থাটা দলের জন্য ক্ষতিকর বলে উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন। জেলা, উপজেলা নেতাদের ওপর নির্ভর না করে কেন্দ্রীয়ভাবে কমিটি গঠন এবং সরেজমিনে দলীয় প্রতীকে ও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত এমপিদের নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটি ও জেলা কমিটির নেতাদের সমন্বয়ে দুটি কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। তারা ঢাকায় এবং জেলা-উপজেলায় গিয়ে নির্বাচিত দলীয় সকল এমপি ও এমপি পদপ্রার্থী এবং সব স্বতন্ত্র এমপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে সরেজমিনে সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করতে সচেষ্ট হবেন। দলের জেলা-উপজেলার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, এমনকি গোটা জেলা-উপজেলা কমিটির সঙ্গে দল ও সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব আলোচনায় বসতে পারেন। তবে স্বতন্ত্র এমপিদের সঙ্গে খোদ প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করায় পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলেই আশা করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের সার্বক্ষণিক দায়িত্ব থাকবে স্বতন্ত্র সদস্যদের নির্বাচনী এলাকার অবস্থা পর্যবেক্ষণের। এ জন্য পৃথক কমিটি না থাকলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা থাকবেন।
বিগত উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অধিকাংশ জায়গায় সংসদ সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য, কোনো কোনো মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা দল মনোনীত প্রার্থীদের বিপক্ষে ভূমিকা রাখেন। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারেও তাদের বৈরী ভূমিকা ছিল। অসুস্থ প্রতিযোগিতায় তৃণমূলের এ নির্বাচনে হিংসা, প্রতিহিংসা ছড়ায়। বহু স্থানে সংঘাত, সংঘর্ষ হয়। অনেক স্থানে তা রক্তক্ষয়ী রূপও হয়। সামনের উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিযোগিতা অধিকতর হিংসাত্মক ও রক্তক্ষয়ী হওয়ারও আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিএনপি এসব নির্বাচনে অংশ নিলে পরিস্থিতি সরকার ও সরকারি দলের প্রত্যাশার বাইরেও চলে যেতে পারে। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল এটাও মনে করেন, সাংগঠনিক ও রাজনৈতিকভাবে দুর্বল অবস্থায় থাকা বিএনপি নেতৃত্বের পক্ষে অদূর ভবিষ্যতে সে রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি করা সম্ভব না-ও হতে পারে।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, শীর্ষ নেতৃত্বের উদ্যোগ, নির্দেশ লঙ্ঘন করা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। শেষ পর্যন্ত তার নির্দেশ, নির্দেশনা অনুযায়ীই সকল দ্বন্দ্ব-বিরোধের অবসান ঘটিয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবেই কাজ করবেন। তবে তার আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে বিএনপি, জাতীয় পার্টি অনেক বেশি আসনে জয়ী হয়ে অধিকতর শক্তি অর্জন করলে তারা সরকার ও সরকারি দলের জন্য ভবিষ্যতে হুমকি হয়েই আবির্ভূত হবেন।